মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭
রিকাক অধ্যায়
পরহেযগার লোক যে কোন স্থানে থাকুক না কেন, আমার সবচেয়ে সন্নিকটবর্তী
১৭. মু'আয ইবন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে ইয়েমেনে প্রেরণ করেন তখন তিনি ও [নবী ﷺ তাঁর সাথে বের হোন। মু'আয (রা) (ঘোড়া বা উটের পিঠে) সওয়ার ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সওয়ারীর সাথে পায়ে হেঁটে চলছিলেন এবং তাঁকে উপদেশ দিচ্ছিলেন। উপদেশ প্রদানের পর তিনি বললেনঃ হে মু'আয। সম্ভবত এ বছরের পর আমার সাথে তোমার সাক্ষাত হবে না। এবং (তার পরিবর্তে) সম্ভবত তুমি আমার এ মসজিদ ও আমার কবর দর্শন করবে। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বিচ্ছেদের জন্য মু'আয (রা) খুব কাঁদলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং মদীনার দিকে চেহারা করে বললেন: মুত্তাকি বা পরহেযগার যে কোন লোক হোক এবং যে কোন স্থানে থাকুক না কেন, তারা আমার নিকটবর্তী মানুষ।
کتاب الرقاق
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ : لَمَّا بَعَثَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْيَمَنِ خَرَجَ مَعَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوصِيهِ وَمُعَاذٌ رَاكِبٌ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي تَحْتَ رَاحِلَتِهِ ، فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ : " يَا مُعَاذُ إِنَّكَ عَسَى أَنْ لَا تَلْقَانِي بَعْدَ عَامِي هَذَا وَلَعَلَّكَ أنَ تَمُرَّ بِمَسْجِدِي هَذَا ، وَقَبْرِي " . فَبَكَى مُعَاذٌ جَشَعًا لِفِرَاقِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، ثُمَّ الْتَفَتَ فَأَقْبَلَ بِوَجْهِهِ نَحْوَ الْمَدِينَةِ فَقَالَ : " إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُونَ مَنْ كَانُوا وَحَيْثُ كَانُوا " (رواه احمد)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া মান-মর্যাদা ও আল্লাহর রাসূলের নৈকট্যের সঠিক মাপকাঠি। যার মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, যে জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহর হুকুম মুতাবিক করার চেষ্টা করে, হালাল-হারামের পার্থক্য করে এবং কোন কাজ করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন আর কোন কাজ করলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন, এ খেয়াল সদা-সর্বদা নিজের মনের মধ্যে রাখে, সে দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে থাকুক না কেন এবং তার গোত্র-বংশ, ভাষা ও বর্ণ যাই হোক না কেন, সে আল্লাহর রাসূলের নিকটবর্তী। সে দুনিয়ার যিন্দেগীতে প্রকৃতপক্ষে রাসূলের জামাআতে শামিল এবং আখিরাতের জীবনেও রাসূল ও সকল মুত্তাকী পরহেযগারের সংগে থাকবে। যার মনে তাকওয়া নেই এবং যে আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালন করে না, সম্পর্কের দিক দিয়ে সে নবী করীম ﷺ-এর নিকটে থাকলে বা সে নবী করীম ﷺ-এর গোত্রের লোক হলে কিংবা নবী ﷺ-এর ভাষায় কথা বললেও সে তাঁর নিকটবর্তী নয়, তাঁর জামাআতভুক্ত নয়। তাই ইয়েমেনের আবূ হুরায়রা (রা), ইরানের সালমান ফারসী (রা), আবিসিনিয়ার বিলাল (রা) এবং রোমের মুসায়্যিব (রা) আল্লাহর রাসূল ﷺ-এর নিকটবর্তী এবং তাঁর জামাআতভুক্ত ছিলেন। পক্ষান্তরে আবূ জাহল, আবূ লাহাব বংশ ও ভাষার দিক থেকে রাসূলের নিকটবর্তী হলেও তারা রাসূল ﷺ থেকে অনেক দূরে ছিল, মতবাদ ও আদর্শের দুনিয়ায় স্থান-কাল ও বংশ মর্যাদার কোন স্থান নেই। আসমানী মতবাদ ও আদর্শে বিশ্বাসী সকল মানুষ এক উম্মত ও এক জামাআতভুক্ত; আর রাসূল ﷺ তার নেতা। তাই নবীর বিচ্ছেদ ব্যাথায় কাতর মু'আয (রা)-কে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য নবী করীম ﷺ বলেছেন, দুনিয়া ও আখিরাতের সকল সৎব্যক্তির ন্যায় তিনি সুদূর ইয়েমেনে থাকলেও নবীর দলে শামিল থাকবেন। তাঁর দুঃখ করার কোন কারণ নেই।

মদীনার দিকে নবী করীম ﷺ কেন মুখ ফিরিয়ে নিলেন, তার কারণ কারও জানা নেই। এক্ষেত্রে দুটো সম্ভাবনা হতে পারে।

এক: মু'আয (রা)-এর চোখে পানি দেখে সম্ভবত তাঁর চোখেও পানি এসেছিল।

দুই: বিশ্বস্ত সহচর মু'আয (রা)-কে দূরদেশে প্রেরণ করার মুহূর্তে নবীজীর চোখে হয়তো পানি এসেছিল। মু'আয (রা) তা দেখলে হয়ত তিনি আরো কাঁদবেন, তাই তিনি তাঁর দৃষ্টি মদীনার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ভাব ও মহব্বতের দুনিয়ায় এ ধরনের ঘটনা বিরল নয়।

মু'আয (রা) তাঁর যানবাহনের উপর সওয়ার ছিলেন। আর নবীজী পায়ে হেঁটে তাঁর সাথে চলছিলেন। মু'আয (রা) নবী করীম ﷺ-এর হুকুমে তা করেছিলেন বলে আমাদের ধারণা। নবী করীম ﷺ এ উদাহরণের দ্বারা উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, অধীনস্থদেরকে এরূপ করতে দিলে পদস্থ ব্যক্তির মর্যাদার কোন ক্ষতি হয় না, বরং তাতে পদস্থ ব্যক্তির মহব্বত ও মহানুভবতার প্রকাশ ঘটে। নায়েবে রাসূলের আসনে যারা সমাসীন, তারা তা অনুসরণ করলে খুবই কল্যাণকর ফল পাওয়া যাবে। এ হাদীসে বর্ণিত যাবতীয় বিষয়ের উপর যাতে আমল করতে পারি তার তাওফীক আল্লাহ আমাদের দান করুন। আমীন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান