মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩
রিকাক অধ্যায়
আল্লাহর ভয়ে বের হওয়া চোখের পানির বরকত
১৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ মু'মিন বান্দার চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে মাছির মাথা পরিমাণ (এক ফোঁটা) পানি বের হয়ে তার চেহারার মধ্যে গড়িয়ে পড়লেও আল্লাহ অবশ্যই সে চেহারাকে দোযখের আগুনের জন্য হারাম করবেন। (ইবনে মাজাহ)
کتاب الرقاق
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَا مِنْ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ يَخْرُجُ مِنْ عَيْنَيْهِ دُمُوعٌ ، وَإِنْ كَانَ مِثْلَ رَأْسِ الذُّبَابِ ، مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ ، ثُمَّ تُصِيبُ شَيْئًا مِنْ حُرِّ وَجْهِهِ ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ » (رواه ابن ماجه)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

দোযখ আল্লাহর অসন্তুষ্টির স্থান, আল্লাহ যাদের উপর নারায একমাত্র তাদেরকে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে। মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট জীব এবং খালিক তাঁর মাখলুককে অফুরন্ত মহব্বত করেন। তাই তাঁর পথভ্রষ্ট বান্দা যখন তাঁর দিকে ফিরে আসে, তখন তিনি খুব সন্তুষ্ট হন। বস্তুত আল্লাহ যার উপর সন্তুষ্ট, সে কোনভাবে দোযখে যেতে পারে না।

উলামায়ে কিরাম মনে করেন, এ হাদীসে যে সুসংবাদ দান করা হয়েছে, তা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যারা দিনরাত গুনাহের মধ্যে লিপ্ত থাকে বা আকীদার দিক থেকে আল্লাহর শরীআতের বা আল্লাহর কোন একটি হুকুমের বিরোধিতা করে বা আল্লাহর আইনের প্রতি মানুষের অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে বা এমন সব অপরাধ করতে থাকে যার জন্য আল্লাহ দোযখ নির্ধারণ করে রেখেছেন। কিন্তু সারা রাজ্যের অপরাধের পরও যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি করে, নিজের অপরাধের জন্য খালেস মনে মাফ চায় এবং এ ধরনের গুনাহ না করার জন্য ওয়াদা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিতে পারেন। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গাফুরুর রাহীম। তাঁর কোন সিফাত কোন কিছুর দ্বারা সীমিত বা সীমাবদ্ধ নয়।

আল্লাহ তা'আলা কার তওবা কবুল করেন আর কার তওবা কবুল করেন না, তার উল্লেখ স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা সূরা নিসার ১৬-১৭ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনঃ "তাদের তওবা কবুলের হক আল্লাহর যিম্মাতে রয়েছে যারা নির্বুদ্ধিতাবশত মন্দ আমল করে এবং সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে। এ ধরনের লোকের প্রতি আল্লাহ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং আল্লাহ যাবতীয় জিনিসের খবর রাখেন এবং তিনি বিজ্ঞ হাকিম। তওবা তাদের জন্য নয়, যারা মন্দ আমল করতে থাকে। এমনকি তাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হলে তখন বলে, আমি এখন তওবা করলাম। এবং (এরূপভাবে) তওবা তাদের জন্য নয়, যারা মৃত্যু পর্যন্ত কাফির থাকে। এ ধরনের লোকের জন্য আমি কঠিন আযাব তৈরি করে রেখেছি।"

তাদের তওবা কবুল করা হয় না যারা আল্লাহকে ভয় করে না। তাঁর প্রতি বেপরোয়া মনোভাব পোষণ করে। সারা জীবন অপরাধে ডুবে থাকে। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে মৃত্যুর ফেরেশতাকে সামনে উপস্থিত দেখে তওবা করার জন্য প্রস্তুত হয়।

নবী করীম ﷺ-এর এক হাদীসে এ অবস্থা এভাবে বিবৃত হয়েছেঃ
"মৃত্যুর যন্ত্রণা (মৃত্যুর চিহ্ন) শুরু না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করেন।"

এটা এজন্য যে, যখন পরীক্ষার সময় শেষ হয় এবং জীবন গ্রন্থ পুরোপুরি সমাপ্ত হয়, তখন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার বা তাঁর কাছে অনুতাপ করার অবকাশ থাকে না। অনুরূপভাবে যে কাফির অবস্থায় মারা যায় এবং পরপারের জীবন-সীমান্তে পা রেখে নিজের চোখ দিয়ে দেখে যে, দুনিয়ার যিন্দেগীতে যা কিছু বিশুদ্ধ মনে করেছিল, তা সম্পূর্ণ বিপরীত ও মিথ্যা, তখন আল্লাহর কাছে তওবা করার এবং তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করার কোন সুযোগ তার জন্য অবশিষ্ট থাকে না।

অপরাধ করার পর বান্দা অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে এবং নিজের মন্দ আমলকে সংশোধিত করে নিলে আল্লাহ তা'আলা সংশোধিত ব্যক্তিকে অতীত অপরাধের জন্য কোন শাস্তি প্রদান করেন না। সংশোধিত ও অনুতপ্ত বান্দার প্রতি তিনি ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শন করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান