মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং:
রিকাক অধ্যায়
আল্লাহর ভয় ও আখিরাতের চিন্তা

ঈমানের পর মানুষের জীবনকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে ও একে সাফল্যের স্তরে পৌঁছাতে যেহেতু সবচেয়ে বড় ভূমিকা আল্লাহ্ তা'আলার ভয় ও পরকাল-ভাবনার থাকে, তাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উম্মতের মধ্যে এ দু'টি গুণ সৃষ্টি করার জন্য বিশেষভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি কখনো এ ভয় ও চিন্তার উপকারিতা ও ফযীলত বর্ণনা করতেন, আবার কখনো আল্লাহ্ তা'আলার ক্রোধ ও শক্তিমত্তা এবং আখেরাতের ঐ কঠিন ও ভয়াবহ অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন, যেগুলোর স্মরণ দ্বারা মানুষের অন্তরে এ দু'টি অবস্থার সৃষ্টি হত।
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিখ্যাত সাহাবী হযরত হানযালা (রাঃ)-এর একটি হাদীস- যা কয়েক পৃষ্ঠা পরেই আপনি দেখতে পাবেন- এর দ্বারাও জানা যায় যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসের বিশেষ আলোচ্য বিষয় যেন এটাই ছিল। সাহাবায়ে কেরাম যখন তাঁর দরবারে হাজির হতেন এবং আখেরাত ও জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য শুনতেন, তখন তাদের অবস্থা এই হত যে, জান্নাত ও জাহান্নাম যেন তাদের চোখের সামনে।
হাদীসের কেবল বর্তমান ভান্ডার থেকেও যদি এ ধরনের সব হাদীস একত্রিত করা হয়, যেগুলোর উদ্দেশ্য আল্লাহর ভয় ও পরকাল-ভাবনা সৃষ্টি করা, তাহলে নিঃসন্দেহে এ ধরনের হাদীস দিয়েই একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব তৈরী হয়ে যেতে পারে। এখানে এ বিষয়ের উপর সামান্য কয়েকটি হাদীসের উল্লেখ করা হল:

নবী করীম ﷺ যা জানতেন তা মানুষ জানলে খুব বেশি কাঁদত এবং অল্প হাসত
১. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, আবুল কাসিম ﷺ বলেছেনঃ যাঁর হাতে প্রাণ রয়েছে তাঁর কসম! আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তাহলে তোমরা খুব বেশি কাঁদতে এবং অল্প হাসতে। (বুখারী)
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ أَبُو القَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ ، لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ ، لَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا وَلَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا » (رواه البخارى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী করীম ﷺ এই হাদীসে ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য জগত সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবীকে ভয় প্রদর্শনকারী এবং সুসংবাদ দানকারী হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাই মানুষকে অদৃশ্য জগতের হাকীকত সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক করার জন্য তিনি তাঁর নবীকে অদৃশ্য জগত অবলোকন করার ক্ষমতা দান করেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নবী করীম ﷺ এমন সব জিনিস দেখতেন যা সাধারণ মানুষের চোখ দেখতে অক্ষম এবং এমন সব কথাবার্তা শুনতেন যা সাধারণ কান শুনতে অক্ষম। মৃত্যুর পর মানুষ যে যিন্দেগীতে পদার্পণ করে, তার বিভিন্ন মনযিলের বাস্তব-চিত্র নবী করীম ﷺ-এর সামনে রয়েছে। আলোচ্য হাদীসে রাসূল করীম ﷺ সে চিত্রের দিকে-ইঙ্গিত করেছেন। তিনি মানুষ জাতিকে আখিরাতের জীবন সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, আখিরাতের বিভিন্ন মহলের অবস্থা খুবই ভয়াবহ ও কঠিন। তা অতিক্রম করার পাথেয় সঞ্চয়ের জন্য দুনিয়াতে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। বলাবাহুল্য, যে ব্যক্তি আখিরাতের প্রতি উদাসীন নয় এবং দুনিয়ার জীবনের বেহুদা আরাম-আয়েশে নিজেকে লিপ্ত করেনি, সে আখিরাতের জীবনে আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানী লাভ করতে সক্ষম হবে। হাসি চিত্ত-চাঞ্চল্য নির্ভাবনময় জীবনের পরিচায়ক এবং কান্না বিরাট দায়িত্ব পালন করার ব্যাকুলতার প্রতীক। তাই আখিরাতের জীবনের সঠিক জ্ঞান যার রয়েছে, সে কখনো হাসি-তামাশার মধ্যে নিজেকে লিপ্ত করতে পারে না। সে দিন-রাত আখিরাতের জীবনের কামিয়াবী সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান