মা'আরিফুল হাদীস

ঈমান অধ্যায়

হাদীস নং: ১১৮
ঈমান অধ্যায়
জান্নাত ও তার নি'আমতসমূহ

আখিরাতের যিন্দেগীর যেসব হাকীকতের সম্পর্কের উপর ঈমান আনা এক মুমিন ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য এবং যার উপর ঈমান গ্রহণ না করে এক ব্যক্তি মুসলমান হতে পারে না জান্নাত ও জাহান্নাম সেসব বিষয়ের অন্তর্গত। এ দু'টো স্থান মানুষের অনন্ত ও চিরস্থায়ী নিবাস। কুরআন শরীফে জান্নাত ও তার নি'আমত এবং জাহান্নাম এবং তার তখলিফ সম্পর্কে এতবেশী বর্ণনা রয়েছে যে, যদি এসব সংকলিত করা হয় তাহলে এক পুস্তিকা হয়ে যাবে।
অনুরূপভাবে জান্নাত ও দোযখ সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলের হাদীসেও অনেক বিবরণ রয়েছে এবং যা থেকে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু উল্লেখ্য যে কুরআন এবং হাদীস শরীফে দোযখ এবং বেহেশত সম্পর্কে যে বিবরণ দান করা হয়েছে এবং তার আসল হাকীকত আখিরাতের যিন্দেগীতে পৌছার পর প্রকৃত ঘটনা বাস্তবে দেখে অনুধাবন করা যাবে। একটা উদাহরণের দ্বারা জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কিত যথার্থতা অনুধাবন করা যাবে। যদি কোন ব্যক্তি আমাদের পৃথিবীর কোন জমজমাট শহরের বাগান ও বাজারের বিবরণ আমাদেরকে প্রদান করে তাহলে তার বিবরণ বাস্তবের তুলনায় অনেক কম বিবেচিত হয়।

কুরআন ও হাদীসে জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে যে বিবরণ প্রদান করা হয়েছে তার দ্বারা জান্নাতের ভৌগোলিক বিবরণ বা নক্শা প্রদান করা নয় বরং তার লক্ষ্য হল দোযখের আযাব সম্পর্কে মানুষের মনে ভয়ভীতি উৎপাদন করা এবং দোযখে নিক্ষেপকারী মন্দ আমল থেকে তাদেরকে হেফাযত করা আর জান্নাত এবং তার ভোগ ও আরাম আয়াশ সম্পর্কে মানুষের মনে সখ ও আগ্রহ সৃষ্টি করা যাতে তারা জান্নাতের দিকে আকর্ষণকারী সুন্দর আমল করতে পারে। তাই এসব হাদীসের দাবী হল তা পাঠ করে বা শুনে আমাদের মনে ভয়ভীতি এবং আগ্রহ সৃষ্টি করা।

জান্নাত ও তার নিয়ামত যা চোখে দেখেনি, কানে শোনেনি এবং হৃদয় কল্পনা করেনি
১১৮. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরী করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং না তখনো কোন মানুষের হৃদয় কল্পনা করেছে। তোমরা যদি চাও তাহলে (কুরআনের আয়াত) তিলাওয়াত কর।" তাদের জন্য চোখ শীতলকারী যে নি'আমত লুকিয়ে রাখা হয়েছে তা কোন নফস জ্ঞাত নয়।"-বুখারী, মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ «أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ» (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটা হাদীসে কুদসী। যেসব হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন যে, আল্লাহ বলেছেন, অথচ তা কুরআন শরীফের অন্তর্গত নয় সেসব হাদীসকে হাদীসে কুদসী বলা হয়। আলোচ্য হাদীস এ ধরনের, এতে আল্লাহর নেক বান্দাহদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে যে, আখিরাতের যিন্দেগীতে তারা এমন উচ্চমানের জিনিস লাভ করবে যা দুনিয়াতে কোন লোক কখনও পায়নি, কোন চোখ তা দেখেনি, কোন কান তার বিবরণ শুনেনি এবং কোন মানুষের হৃদয় তার কল্পনাও করতে পারেনি। অধিকন্তু এতে বান্দাহদের জন্য আল্লাহর ভালবাসা এবং রহম করম পরিপূর্ণ শব্দাবলী...... রয়েছে। বান্দাহগণ কুরবান হোন দয়ালু প্রভুর এ রহম করমের জন্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান