মা'আরিফুল হাদীস

ঈমান অধ্যায়

হাদীস নং: ১০৯
ঈমান অধ্যায়
শাফা'আত

হাদীস শরীফে হাশরের ময়দানের যেসব ঘটনাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে এবং যার উপর ঈমান আনা একজন বিশ্বাসী ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য তার মধ্যে আল্লাহর রাসূলের শাফা'আতের বিষয়টি অন্যতম। শাফা'আত সংক্রান্ত হাদীসের সংখ্যা খুব বেশী এবং একই ধরনের হাদীস একাধিকবার বিবৃত হয়েছে।
হাদীসবেত্তাগণ এসব হাদীস থেকে এ রায় কায়েম করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর শাফা'আত কয়েক ধরনের হবে এবং বার বার হবে। হাশরের ময়দানের লোকজন যখন ভীত ও সন্ত্রস্ত থাকবে, একটু নড়াচড়া করারও সাহস পাবে না এবং আদম (আ) থেকে শুরু করে ঈসা (আ) পর্যন্ত তামাম উলুম আযম পয়গম্বর ইয়া নফসি ইয়া নফসি করতে থাকবেন এবং কারও জন্য শাফা'আত করার মত সাহস থাকবে না। তখন সাধারণ হাশরবাসীদের দরখাস্তের পরপ্রেক্ষিতে এবং তাদের কষ্ট ও দুশ্চিন্তায় ব্যথিত হয়ে সর্বপ্রথম আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হিম্মত করে অগ্রসর হবেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের লুতফ ও করমের উপর ভরসা করবেন এবং অত্যন্ত বিনয় ও আদবের সাথে রাব্বুল ইযযতের দরবারে হাশরবাসীদের জন্য সুপারিশ করবেন। হাশরের ময়দানের লোকদেরকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি প্রদান এবং তাদের হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য আখেরী নবী (ﷺ) আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে দরখাস্ত পেশ করবেন। কিয়ামতের দিন মহামহিম আল্লাহর দরবারে এটাই হবে প্রথম শাফা'আত এবং তা আখেরী নবীর পক্ষ থেকে হবে। অতঃপর হিসাব ও ফয়সালার কাজ শুরু হবে। পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে যে, এই শাফা'আত সাধারণ আহলে মাহশরের জন্য হবে। এজন্য এটা শাফা'আতে কুবরা (বড় শাফা'আত) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) তার উম্মতের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সব ব্যক্তি গুনাহের কারণে জাহান্নামের শাস্তি প্রাপ্ত হবে বা জাহান্নামের নিক্ষিপ্ত হবে সে সব ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন। তার এ সুপারিশও কবুল হবে। তাঁর সুপারিশের কারণে তাঁর উম্মতদের গুনাহগারদের এক বিরাট অংশ জাহান্নাম থেকে বের হবে। এছাড়াও তিনি তাঁর উম্মতের সৎকর্মশীল ব্যক্তিদেরকে বিনা হিসেবে বেহেশতে প্রবেশ করার জন্য আল্লাহর দরবারে দরখাস্ত পেশ করবেন। তার এ আরযি মোতাবেক বিনা হিসাবে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করা অনুমতি প্রদান করা হবে। অনুরূপভাবে তিনি তাঁর উম্মতের বহু সংখ্যক ব্যক্তির মর্যাদার উন্নতির জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ পেশ করবেন। হাদীসে বিভিন্ন পর্যায়ের শাফা'আত এবং বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে।
হাদীস থেকে একথাও জানা যায় যে, নবী করীম (ﷺ) -এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাফা'আতের দরজা উন্মুক্ত হওয়ার পর অন্যন্য নবীগণ এবং সালেহীনে উম্মত তাদের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের জন্য শাফা'আত করবেন। এমন কি নাবালিগ অবস্থায় মৃত সন্তানগণও তাদের পিতামাতার জন্য সুপারিশ করবেন। অনুরূপভাবে কোন কোন সৎকর্মশীল ব্যক্তি তাদের ভক্ত ও খাদিমদের জন্য সুপারিশ করবেন। তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে এবং এসব সুপারিশের কারণে বিরাট সংখ্যক লোক পরিত্রাণ লাভ করবে।
উল্লেখ্য যে, এসব শাফা'আত আল্লাহ্ তা'আলার ইচ্ছা এবং হুকুম মোতাবেক হবে। অন্যথায় কোন নবী, কোন ফিরিশতাও আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোন এক ব্যক্তিকেও দোযখ থেকে বের করতে পারবে না। এমন কি আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তির পক্ষে কেহ কথা পর্যন্ত বলতে সক্ষম হবেন না।

مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَہٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِہٖ

-তাঁর অনুমতি ব্যতিত কে তাঁর নিকট শাফা'আত করতে পারে? অন্যত্র বলা হয়েছেঃ-

ولا يَشْفَعُونَ إلا لمن أذن له

যার জন্য তিনি রাজী একমাত্র তার জন্যই তারা সুপারিশ করতে পারেন।

ওলামায়ে কিরাম বলেছেন যে, শাফা'আতকারীর মর্যাদা ও সম্মানের জন্যই তাদের শাফা'আত কবুল করা হবে। অন্যথায় আল্লাহর ফায়সালার বিপরীত কিছু বলার শক্তি এবং সাধ্য কার রয়েছে?
يفعل ما يشاء ويحكم ما يريد

শাফা'আতে কুবরার পূর্বে হাশরবাসীদের অস্থিরতা
১০৯. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন (যখন গোটা মানবজাতি হাশরের ময়দানে একত্র হবে তখন) মানুষের মধ্যে চরম সন্ত্রাস ও কঠিন ভীর হবে। তারা আদম (আ)-এর খেদমতে হাযির হবে এবং বলবে, আপনার রবের কাছে (আমাদের জন্য) সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আমি এ কাজের উপযুক্ত নই, বরং ইবরাহীম (আ)-এর নিকট যাও, কেননা তিনি দয়াময় রহমানের প্রিয়বন্ধু (খলীল)। অতঃপর তারা ইবরাহীম (আ)-এর নিকট হাযির হবে। তিনি বলবেন: আমি একাজের উপযুক্ত নই, বরং তোমরা মূসা (আ)-এর নিকটে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি কথোপকথন করেছেন।
অতঃপর তারা মূসা (আ)-এর নিকট হাযির হবে। তিনি বলবেন: আমি এ কাজের উপযুক্ত নই, বরং তোমরা ঈসা (আ)-এর নিকট যাও। কেননা, তিনি আল্লাহর রূহ ও তাঁর কালেমা। অতঃপর তারা ঈসা (আ)-এর নিকট যাবে। তিনি বলবেন আমি এ কাজের উপযুক্ত নই। বরং তোমাদের অবশ্যই মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নিকট যাওয়া উচিত। অতঃপর তারা আমার নিকট আসবে। আমি বলব: এটা আমার কাজ, অতঃপর আমি আমার রবের নিকট অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে এবং ঐ সময় আল্লাহ্ আমার উপর তার প্রশংসা সূচক এক বিশেষ বাক্য ইলহাম করবেন। যা এখন আমার জানা নেই। সেই বাক্যে আমি আল্লাহর প্রশংসা করব। এবং তাঁর সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। (মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, তিনি এক সপ্তাহ এভাবে সিজদায় পড়ে থাকবেন।) অতঃপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠাও, বল তোমার কথা শুনা হবে, প্রার্থনা কর তোমাকে দান করা হবে, সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। আমি বলবঃ ইয়া রব! আমার উম্মত! আমার উম্মত! তখন বলা হবে যাও, যাদের অন্তরে বালির দানার পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে বের করে আন। আমি যাব এবং তা করব। অতঃপর ফিরে এসে আমি ইলহামকৃত বাক্যে আল্লাহর প্রশংসা করব এবং তাঁর সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। বলা হবে হে মুহম্মদ! তোমার মাথা ওঠাও, বল তোমার কথা শোনা হবে, প্রার্থনা কর তোমাকে দান করা হবে, সুপারিশ কর কবুল করা হবে। আমি বলবঃ ইয়া বর! আমার উম্মত, আমার উম্মত। বলা হবে যাও, যার অন্তরে অনু পরিমাণ বা সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাদের বের কর। অতঃপর আমি ফিরে যাব এবং তাই করব। আবার এসে সেই বাক্যে তাঁর প্রশংসা করব এবং তাঁর সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। বলা হবে হে মাহাম্মদ! মাথা ওঠাও। বল, তোমার কথা শুনা হবে, সওয়াল কর দেয়া হবে, সুপারশ কর কবুল করা হবে। অতঃপর আমি বলব: হে রব! আমার উম্মত! আমার উম্মত! তখন বলা হবে যাও, যাদের অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও অনেক অনেক কম ঈমান আছে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে এস। অতএব আমি তাই করব। চতুর্থবার এসে আমি ইলহামকৃত বাক্যে আল্লাহর প্রশংসা করব এবং তাঁর সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা ওঠাও। বল, তোমার কথা শুনা হবে, প্রার্থনা কর দান করা হবে, সুপারিশ কর কবুল করা হবে। আমি বলব? হে আমার রব! যারা লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ পড়েছিল তাদের ব্যাপারে আমাকে অনুমতি দিন। আল্লাহ বলবেন, এ কাজ তোমার নয়, আমার ইযযত, আমার সম্মান আমার গৌরব ও আমার মহত্বের শপথ। আমি অবশ্যই তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করব, যারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পড়েছিল। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ" إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ مَاجَ النَّاسُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، فَيَأْتُونَ آدَمَ فَيَقُولُونَ لَهُ: اشْفَعْ لِذُرِّيَّتِكَ، فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِإِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَإِنَّهُ خَلِيلُ اللهِ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَإِنَّهُ كَلِيمُ اللهِ، فَيُؤْتَى مُوسَى، فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِعِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ ، فَإِنَّهُ رُوحُ اللهِ وَكَلِمَتُهُ، فَيُؤتَى عِيسَى، فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأُوتَى، فَأَقُولُ: أَنَا لَهَا، فَأَنْطَلِقُ فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي، فَيُؤْذَنُ لِي، فَأَقُومُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَأَحْمَدُهُ بِمَحَامِدَ لَا أَقْدِرُ عَلَيْهِ الْآنَ، يُلْهِمُنِيهِ اللهُ، ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا، فَيُقَالُ لِي: يَا مُحَمَّدُ، ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ: يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: رَبِّ، أُمَّتِي أُمَّتِي، فَيُقَالُ: انْطَلِقْ، فَمَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ بُرَّةٍ، أَوْ شَعِيرَةٍ مِنْ إِيمَانٍ، فَأَخْرِجْهُ مِنْهَا، فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ، ثُمَّ أَرْجِعُ إِلَى رَبِّي فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ، ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا، فَيُقَالُ لِي: يَا مُحَمَّدُ، ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: أُمَّتِي أُمَّتِي، فَيُقَالُ لِي: انْطَلِقْ فَمَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجْهُ مِنْهَا، فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ، ثُمَّ أَعُودُ إِلَى رَبِّي فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ، ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا، فَيُقَالُ لِي: يَا مُحَمَّدُ، ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ، أُمَّتِي أُمَّتِي، فَيُقَالُ لِي: انْطَلِقْ فَمَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ أَدْنَى أَدْنَى أَدْنَى مِنْ مِثْقَالِ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجْهُ مِنَ النَّارِ فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ "، هَذَا حَدِيثُ أَنَسٍ الَّذِي أَنْبَأَنَا بِهِ، فَخَرَجْنَا مِنْ عِنْدِهِ، فَلَمَّا كُنَّا بِظَهْرِ الْجَبَّانِ، قُلْنَا: لَوْ مِلْنَا إِلَى الْحَسَنِ فَسَلَّمْنَا عَلَيْهِ وَهُوَ مُسْتَخْفٍ فِي دَارِ أَبِي خَلِيفَةَ، قَالَ: فَدَخَلْنَا عَلَيْهِ، فَسَلَّمْنَا عَلَيْهِ، فَقُلْنَا: يَا أَبَا سَعِيدٍ، جِئْنَا مِنْ عِنْدِ أَخِيكَ أَبِي حَمْزَةَ، فَلَمْ نَسْمَعْ مِثْلَ حَدِيثٍ حَدَّثَنَاهُ فِي الشَّفَاعَةِ، قَالَ: هِيَهِ، فَحَدَّثْنَاهُ الْحَدِيثَ، فَقَالَ: هِيَهِ قُلْنَا: مَا زَادَنَا، قَالَ: قَدْ حَدَّثَنَا بِهِ مُنْذُ عِشْرِينَ سَنَةً وَهُوَ يَوْمَئِذٍ جَمِيعٌ، وَلَقَدْ تَرَكَ شَيْئًا مَا أَدْرِي أَنَسِيَ الشَّيْخُ، أَوْ كَرِهَ أَنْ يُحَدِّثَكُمْ، فَتَتَّكِلُوا، قُلْنَا لَهُ: حَدِّثْنَا، فَضَحِكَ وَقَالَ: {خُلِقَ الْإِنْسَانُ مِنْ عَجَلٍ} ، مَا ذَكَرْتُ لَكُمْ هَذَا إِلَّا وَأَنَا أُرِيدُ أَنْ أُحَدِّثَكُمُوهُ، " ثُمَّ أَرْجِعُ إِلَى رَبِّي فِي الرَّابِعَةِ، فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ، ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا، فَيُقَالُ لِي: يَا مُحَمَّدُ، ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ، ائْذَنْ لِي فِيمَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، قَالَ: لَيْسَ ذَاكَ لَكَ - أَوْ قَالَ: لَيْسَ ذَاكَ إِلَيْكَ - وَلَكِنْ وَعِزَّتِي وَكِبْرِيَائِي وَعَظَمَتِي وَجِبْرِيَائِي، لَأُخْرِجَنَّ مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، " (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসের কতিপয় বিষয়ের ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে-
(১) বার্লির দানা বা সরিষার দানা পরিমাণ বা তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণ ঈমান থাকার যে উল্লেখ হাদীসে করা হয়েছে তার অর্থ হল ঈমানের নূরের বিশেষ পর্যায়। এ ঈমানের এ অবস্থা আমরা উপলব্ধি করতে না পারলেও আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তা অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন এবং আল্লাহর অনুমতি সহকারে ঈমানের এসব পর্যায়ের অধিকারীদেরকে দোযখ থেকে বের করবেন।

২) হাদীসের শেষাংশে একথা বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উম্মতের (জন্য তিনবার শাফা'আত করার পর চতুর্থবার আল্লাহর দরবারে আবেদন করবেন যে, যারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছিল তাদেরকে দোযখ থেকে বের করার অনুমতি তাকে প্রদান করা হোক। তার অর্থ হলো, যারা তওহীদের দাওয়াত কবুল করেছিল এবং ঈমান গ্রহণ করেছিল, কিন্তু দোযখ থেকে নাযাত লাভ এবং জান্নাতে যাওয়ার জন্য কোন আমল করেনি। অর্থাৎ যারা সামান্য ঈমান এবং তওহীদের এতেকাদের অধিকারী হবেন, কিন্তু সৎকর্ম শূন্য হবেন, নবী করীম (ﷺ) তাদেরকেও দোযখ থেকে বের করার জন্য আল্লাহ তা'আলার অনুমতি প্রার্থনা করবেন। বুখারী এবং মুসলিম শরীফে উল্লিখিত এবং আবু সাঈদ খুদরী (রা)-এর বর্ণিত হাদীসে সম্ভবতঃ এ শ্রেণীর লোক সম্পর্কে বলা হয়েছে: لم يعملوا خيراً قط তারা কোন সময় কোন নেক আমল করেনি। আল্লাহ্ তার নবী (ﷺ)-কে বলবেন- ليس ذالك لك অর্থাৎ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার বিষয়টি আপনার জন্য রাখিনি। অর্থাৎ এ কাজ আপনার জন্য নয় বরং এটা আপনার ইযযত, জালাল শ্রেষ্ঠত্ব এবং فعال لما يريد শব্দের শানের জন্য সমীচীন এবং আমি স্বয়ং নিজে তা করব। আমি মনে করি যারা ঈমান আনার পর মোটেই আমল করেনি তাদেরকে দোযখ থেকে বের করা নবীর জন্য সমীচীন নয় বরং তাদেরকে ক্ষমা করার ব্যাপারটি আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত।

(৩) আলোচ্য হাদীসে বিষয়টি কিঞ্চিৎ সংক্ষিপ্তভাবে বলা হয়েছে। হাশরের দিন লোকজন আদম (আ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করার পর এবং ইবরাহীম (আ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করার পূর্বে নূহ (আ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন বলে বুখারী এবং মুসলিম শরীফের অপর এক রেওয়ায়েতে উল্লিখিত হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য হাদীসে নূহ (আ)-এর নাম উল্লেখিত হয়নি। এ হাদীসে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উম্মতের শাফা'আতের বিষয় উল্লেখিত হয়েছে। অথচ অনুমিত হয় যে, তিনি সর্বপ্রথম আহলে মাহশরদের হিসাব এবং ফয়সালার জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করেছেন যা 'শাফা'আতে কুবরা' হিসেবে আখ্যায়িত। হিসাব এবং ফায়সালার পরিণতি হিসেবে যখন তাঁর উম্মতের মন্দ আমলকারীগণকে দোযখের দিকে পরিচালিত হবে তখন তিনি তাদেরকে দোযখ থেকে বের করার জন্য আল্লাহর নিকট শাফা'আত করবেন।

(৪) কিয়ামতের দিন লোকজন শাফা'আতকারীদের যে অনুসন্ধান করবেন তার প্রয়োজনীয়তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের মনে সৃষ্টি করবেন এবং তারা প্রথম আদম (আ)-এর নিকট গমন করবেন। অতঃপর তার উপদেশ মোতাবেক নূহ (আ)-এর নিকট, নূহ (আ)-এর নির্দেশক্রমে ইবরাহীম (আ), অনুরূপভাবে মূসা (আ) এবং ঈসা (আ)-এর নিকট লোকজন যাবে। এসব আল্লাহর তরফ থেকে হবে এবং এজন্য হবে যে, যাতে লোকজন বাস্তবতা জানতে সক্ষম হয় যে, মাকামে মাহমূদ এবং শাফা'আতের (কুবরা) বিরাট মর্যাদা একমাত্র আখেরী নবীর জন্য নির্দিষ্ট। মোটকথা হাশরবাসীদের নিকট রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুমহান মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এসব করা হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান