মা'আরিফুল হাদীস
ঈমান অধ্যায়
হাদীস নং: ১০২
ঈমান অধ্যায়
হাওযে কাওসার, পুলসিরাত ও মিযান
হাদীসে আখিরাতের যেসব জিনিসের বর্ণনা করা হয়, তাতে সাধারণতঃ তিনটি জিনিস যথা- (১) হাওযে কাওসার, (২) পুলসিরাত, (৩) মিযান উল্লিখিত হয়ে থাকে।
কোন কোন হাদীসে 'হাওয' এবং কোন কোন হাদীসে 'নহর' শব্দের দ্বারা কাওসার বুঝান হয়েছে। আবার কোন কোন হাদীস থেকে জানা যায় যে, কাওসার জান্নাতের মধ্যে অবস্থিত। আবার কোন কোন হাদীস থেকে জানা যায় যে, কাওসার জান্নাতের বাইরে অবস্থিত এবং ঈমানদারগণ জান্নাতে যাওয়ার পূর্বে এ হাওযের নিকটে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খেদমতে আকদাসে হাযির হবেন এবং তাঁর দস্ত মোবারক থেকে নেহায়ত শুভ্র, স্বচ্ছ এবং বে-ইনতেহা সুস্বাদু পানি করবেন। অনুসন্ধান ও গবেষণা থেকে অনুমিত হয় যে, কাওসারের মূল কেন্দ্রীয় জলাশয়, জান্নাতের অভ্যন্তরে অবস্থিত এবং জান্নাতের সর্বত্র তার শাখা নহরের ন্যায় প্রবাহিত। যে নহর হাওযে কাওসার নামে খ্যাত তা হাজার মাইল দৈর্ঘ্য ও প্রস্তের খুব সুন্দর একটি 'তালাব' (পুকুর) যা জান্নাতের বাইরে অবস্থিত। অবশ্য জান্নাতের ভিতরে অবস্থিত জলাশয়ের সাথে সংযুক্ত। এর অর্থ হল জান্নাতের ভিতরের জলাশয় থেকে বিভিন্ন নহরের মাধ্যমে পানি প্রবাহিত হয়ে বাইরে অবস্থিত হাওযে আসবে। আধুনিককালে বিভিন্ন শহরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থেকে কাওসারের এ বৈশিষ্ট্য অনুমান করা সহজ।
প্রণিধানযোগ্য বিষয় হল 'হাওয' শব্দের দ্বারা মানুষের দৃষ্টি দুনিয়ার হাওযের দিকে ধাবিত হতে পারে। কিন্তু অর্থ ও সুদৃশ্যের দিক থেকে হাওযে কাওসার দুনিয়ার হাওয থেকে এতটুকু বৈশিষ্টমণ্ডিত যতটুকু বেহেশতের অপরাপর সামগ্রী দুনিয়ার সাধারণ সামগ্রী থেকে বৈশিষ্টমণ্ডিত হবে। অধিকন্তু হাদীস থেকে জানা যায় যে, হাওযে কাওসার এমন প্রশস্ত ও বিস্তীর্ণ হবে যে, একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যেতে হলে একজন ভ্রমণকারীর একমাস সময় ব্যয়িত হবে। অপর এক হাদীসে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব এডেন এবং ওম্মানের মধ্যবর্তী দূরত্বের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, আখিরাতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে হাদীসে যে বিবরণ প্রদান করা হয়েছে তার আলোকেও এসব বিষয় বাস্তবে না দেখা পর্যন্ত সঠিকভাবে অনুধাবন করা যাবে না। বলা বাহুল্য, হাওয, সিরাত এবং মিযান এ ধরনেরই তিনটি বিষয়।
হাওযে কাওসারে নবী করীম (ﷺ)
হাদীসে আখিরাতের যেসব জিনিসের বর্ণনা করা হয়, তাতে সাধারণতঃ তিনটি জিনিস যথা- (১) হাওযে কাওসার, (২) পুলসিরাত, (৩) মিযান উল্লিখিত হয়ে থাকে।
কোন কোন হাদীসে 'হাওয' এবং কোন কোন হাদীসে 'নহর' শব্দের দ্বারা কাওসার বুঝান হয়েছে। আবার কোন কোন হাদীস থেকে জানা যায় যে, কাওসার জান্নাতের মধ্যে অবস্থিত। আবার কোন কোন হাদীস থেকে জানা যায় যে, কাওসার জান্নাতের বাইরে অবস্থিত এবং ঈমানদারগণ জান্নাতে যাওয়ার পূর্বে এ হাওযের নিকটে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খেদমতে আকদাসে হাযির হবেন এবং তাঁর দস্ত মোবারক থেকে নেহায়ত শুভ্র, স্বচ্ছ এবং বে-ইনতেহা সুস্বাদু পানি করবেন। অনুসন্ধান ও গবেষণা থেকে অনুমিত হয় যে, কাওসারের মূল কেন্দ্রীয় জলাশয়, জান্নাতের অভ্যন্তরে অবস্থিত এবং জান্নাতের সর্বত্র তার শাখা নহরের ন্যায় প্রবাহিত। যে নহর হাওযে কাওসার নামে খ্যাত তা হাজার মাইল দৈর্ঘ্য ও প্রস্তের খুব সুন্দর একটি 'তালাব' (পুকুর) যা জান্নাতের বাইরে অবস্থিত। অবশ্য জান্নাতের ভিতরে অবস্থিত জলাশয়ের সাথে সংযুক্ত। এর অর্থ হল জান্নাতের ভিতরের জলাশয় থেকে বিভিন্ন নহরের মাধ্যমে পানি প্রবাহিত হয়ে বাইরে অবস্থিত হাওযে আসবে। আধুনিককালে বিভিন্ন শহরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থেকে কাওসারের এ বৈশিষ্ট্য অনুমান করা সহজ।
প্রণিধানযোগ্য বিষয় হল 'হাওয' শব্দের দ্বারা মানুষের দৃষ্টি দুনিয়ার হাওযের দিকে ধাবিত হতে পারে। কিন্তু অর্থ ও সুদৃশ্যের দিক থেকে হাওযে কাওসার দুনিয়ার হাওয থেকে এতটুকু বৈশিষ্টমণ্ডিত যতটুকু বেহেশতের অপরাপর সামগ্রী দুনিয়ার সাধারণ সামগ্রী থেকে বৈশিষ্টমণ্ডিত হবে। অধিকন্তু হাদীস থেকে জানা যায় যে, হাওযে কাওসার এমন প্রশস্ত ও বিস্তীর্ণ হবে যে, একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যেতে হলে একজন ভ্রমণকারীর একমাস সময় ব্যয়িত হবে। অপর এক হাদীসে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব এডেন এবং ওম্মানের মধ্যবর্তী দূরত্বের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, আখিরাতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে হাদীসে যে বিবরণ প্রদান করা হয়েছে তার আলোকেও এসব বিষয় বাস্তবে না দেখা পর্যন্ত সঠিকভাবে অনুধাবন করা যাবে না। বলা বাহুল্য, হাওয, সিরাত এবং মিযান এ ধরনেরই তিনটি বিষয়।
হাওযে কাওসারে নবী করীম (ﷺ)
১০২. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আমি জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম। তখন একটি নহরের কাছে পৌছলাম। উহার উভয় পার্শ্ব ছিল ফাঁকা মুক্তা দিয়ে কুব্বা (গম্বুজাকৃতি) নির্মাণ করা ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। হে জিবরাঈল! এটা কি? তিনি বললেনঃ ইহা কাওসার যা আপনার রব আপনাকে দান করেছেন। রাসূল (ﷺ) দেখলেন তার তলদেশের মাটি সুরভিত মিশকের ন্যায় সুগন্ধি। -বুখারী
کتاب الایمان
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " بَيْنَا أَنَا أَسِيرُ فِي الجَنَّةِ، إِذَا أَنَا بِنَهَرٍ، حَافَتَاهُ قِبَابُ الدُّرِّ المُجَوَّفِ، قُلْتُ: مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: هَذَا الكَوْثَرُ، الَّذِي أَعْطَاكَ رَبُّكَ، فَإِذَا طِينُهُ مِسْكٌ أَذْفَرُ ".(رواه البخارى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
জান্নাত ভ্রমণকালে হাওযে কাওসারের নিকট উপস্থিত হওয়ার যে বিষয় নবী করীম (ﷺ) আলোচ্য হাদীসে উল্লেখ করেছেন তা সম্ভবতঃ শবে মে'রাজের ঘটনা। নবী করীম (ﷺ) -এর প্রশ্নের জবাবে জিবরাঈল (আ)-এর উক্তি এটা হাওয়ে কাওসার যা আপনার রব আপনাকে দান করেছেন তা কুরআন শরীফের আয়াত - إِنَّا أَعْطَيْنَكَ الْكَوْثَرُ এর দিকে ইঙ্গিত প্রদান করে। এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, আমি আপনাকে কাওসার প্রদান করেছি কাওসারের অর্থ হল প্রচুর কল্যাণ। আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে কল্যাণের যে ভাণ্ডার প্রদান করেছেন তা হল, কুরআন, শরীয়াত, উচ্চ রূহানী সিফাত, দুনিয়া এবং আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা প্রদান প্রভৃতি। যদিও এসব বিষয় কাওসারের অন্তর্ভুক্ত তবুও 'কাওসার' শব্দের খাস মিসদাক হল জান্নাতের প্রস্রবণ। এটা মনে রাখা দরকার যে দীন ও ঈমানের যে নি'আমত আল্লাহ তার রাসূল (ﷺ)-কে দান করেছেন এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর বেশুমার বান্দাহর নিকট পৌঁছেছে আখিরাতে হাওযে কাওসার এবং নহরে কাওসারের রূপ নিয়ে তার প্রকাশ ঘটবে এবং তা থেকে আল্লাহর বেশুমার বান্দাহ কল্যাণ লাভকরবে এবং তৃষ্ণা নিবারণ করবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)