মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

শিষ্টাচার, নসীহত, হিকমত এবং কম কথায় অধিক অর্থ পূর্ণ বিষয়ের বর্ণনায় উৎসাহ প্রদান অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৩
শিষ্টাচার, নসীহত, হিকমত এবং কম কথায় অধিক অর্থ পূর্ণ বিষয়ের বর্ণনায় উৎসাহ প্রদান অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: ছয়টি গুণের সংখ্যা দিয়ে আরম্ভ বিষয়াদি প্রসঙ্গে
৮৩. খুরাইম ইবন ফাতিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমল ছয় প্রকারের, আর মানুষ চার শ্রেণীতে বিভক্ত। (আমলের ব্যাখ্যা:) ছয় প্রকার আমলসমূহ দুই প্রকারে বিভক্ত। প্রথম প্রকার আমলের জন্য জান্নাত ওয়াজিব, দ্বিতীয় প্রকার আমলের জন্য জাহান্নাম ওয়াজির। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকার আমল সমান সমান অর্থাৎ বৃদ্ধি না করে সমান পুরস্কার দেওয়া হবে। পঞ্চম প্রকার একটি উত্তম কাজের বিনিময়ে দশগুণ বৃদ্ধি করা হবে। আর ষষ্ঠ প্রকার একটি উত্তম কাজের বিনিময় সাতশত গুণ বৃদ্ধি করা হবে। দুই শ্রেণীর মানুষ, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক না করে মৃত্যুবরণ করেছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছু শিরিক করে মৃত্যুবরণ করেছে, যে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, আর দুটি কাজে যতটুকু করবে ততটুকুই দেয়া হবে, যে ব্যক্তি ভাল কাজের চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত সে কাজটি করার জন্য তার অন্তরে অনুভূতি জাগ্রত হয়, কিন্তু সে কাজটি করে না। এবং তার সম্পর্কে আল্লাহ জানেন, তার জন্য তা উত্তম কাজ হিসাবে লেখা হবে। যে ব্যক্তি একটি খারাপ কাজ করবে, তার জন্য একটি খারাপ কাজই লেখা হবে। যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করবে, তার বিনিময়ে দশটি নেকী লেখা হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করবে, তার জন্য সাতশত নেকী লেখা হবে।
মানুষের মধ্যে প্রথম প্রকার: তারা, যারা দুনিয়ায় প্রাচুর্যের অধিকারী কিন্তু আখিরাতে হবে গরিব (যেমন-কাফিরগণ ও ফাসিকগণ)। দ্বিতীয় প্রকার: যারা দুনিয়ায় গরীব কিন্তু আখিরাতে হবে প্রাচুর্যের অধিকারী। তৃতীয় প্রকার: যারা দুনিয়া-আখিরাত উভয় ক্ষেত্রেই প্রাচুর্যের অধিকারী। চতুর্থ প্রকার: যারা দুনিয়া-আখিরাত উভয় ক্ষেত্রেই গরিব।
كتاب جامع للأدب والمواعظ والحكم وجوامع الكلم في الترغيبات
باب السداسيات المبدوءة بعدد
عن خريم بن فاتك (1) قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الأعمال ستة (2) والناس أربعة (3) فموجبتان (4) ومثل بمثل وحسنة بعشر أمثالها (5) وحسنة بسبعمائة (6) فإما الموجبتان فمن مات لا يشرك بالله شيئا دخل الجنة ومن مات يشرك بالله شيئا دخل النار ولما مثل بمثل فمن هم بحسنة حتى يشعرها قلبه (7) ويعلمها الله منه كتبت له حسنة ومن عمل سيئة كتبت عليه سيئة (8) ومن عمل حسنة فبعشر أمثالها (9) ومن انفق نفقة في سبيل الله فحسنه بسبعمائة (10) وأما الناس فموسع عليه في الدنيا مقتور عليه في الآخرة (11) ومقتور عليه في الدنيا موسع عليه في الآخرة (12) ومقتور عليه في الدنيا والآخرة وموسع عليه في الدنيا والآخرة

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করবে না অর্থাৎ তাঁকে তাঁর সত্তা ও গুণাবলীতে এক জানবে এবং একমাত্র তাঁকেই ইবাদতের উপযুক্ত বলে বিশ্বাস করবে, তাঁর সত্তা ও গুণাবলীতে কাউকে শরীক করবে না এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কারও বা তাঁর সঙ্গে অন্য কারও ইবাদতও করবে না আর এ অবস্থায় মারা যাবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। যদি সে কবীরা গুনাহ না করে থাকে, তবে তো শুরুতেই জান্নাতে যাবে। আর যদি কবীরা গুনাহ করে থাকে, তবে তার বিষয়টি আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছাধীন থাকবে। আল্লাহ তা'আলা চাইলে নিজ অনুগ্রহে তাকে ক্ষমা করবেন। ফলে শুরুতেই সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। আর চাইলে আল্লাহ তা'আলা তাকে তার গুনাহ পরিমাণ শাস্তিও দান করতে পারেন। সে শাস্তিভোগের পর জান্নাত লাভ করবে।

জাহান্নাম অবধারিতকারী বিষয় সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে কোনও কিছুকে শরীক করা অবস্থায় মারা
যায়, সে অনন্তকাল জাহান্নামবাস করবে। সে কখনওই জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবে না। এরূপ ব্যক্তি কিতাবী হোক বা মূর্তিপূজারী কিংবা অন্য কোনও কাফের
সম্প্রদায়ের লোক হোক, সবার ক্ষেত্রেই একই বিধান যে, তাকে স্থায়ীভাবে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আরেক শিরক হচ্ছে খফী বা গুপ্ত শিরক। ইবাদত-বন্দেগীতে যদি মানুষকে দেখানোর নিয়ত থাকে, তবে সেটাই গুপ্ত শিরক। পরিভাষায় একে রিয়া বলে। রিয়াকার ব্যক্তি গুনাহগার মুমিন। কাজেই তার জাহান্নামের শাস্তিভোগ স্থায়ী হবে না। একসময় সে ঈমানের বদৌলতে অবশ্যই মুক্তি পাবে।
যে ব্যক্তি মুনাফিক, অন্তরে ঈমান নেই অথচ মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত-বন্দেগী করে, প্রকৃতপক্ষে সে কাফের। দুনিয়ার বিচারে তাকে মুসলিম গণ্য করা হলেও আখিরাতে সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামেই থাকবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ দ্বারা শিরক না করার গুরুত্ব ও শিরকে লিপ্ত হওয়ার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জানা গেল। সুতরাং জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতলাভের আশায় আমরা অবশ্যই মৃত্যু পর্যন্ত সর্বপ্রকার শিরক পরিহার করে চলব। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান