মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

বিবাহ অধ্যায়

হাদীস নং: ২৬০
বিবাহ অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: স্বামীর উপর স্ত্রীর হক।
২৬০। আব্দুল্লাহ ইবন যাম'আ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে উপদেশ দিতে শুনলাম। তিনি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য হক এবং তাদের স্বামীদের প্রাপ্য হক সম্পর্কে উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন, কেন তোমাদের কেউ তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত প্রহার করে। যখন সে দিনের শেষে বা রাতের শেষে তার সাথে সহবাস করবে।
(বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ)
كتاب النكاح
باب حق الزوجة على الزوج
عن عبد الله بن زمعة (11) قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يذكر النساء فوعظ فيهن (12) وقال علام يضرب (وفي لفظ يجلد) (1) أحدكم امرأته (زاد فى رواية ضرب العبد) (2) ولعله أن يضاجعها من آخر النهار أو آخر الليل

হাদীসের ব্যাখ্যা:

স্ত্রীকে মারধর করা কেন

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীকে দাস (দাসী)-এর মত পেটাতে নিষেধ করেছেন। দাস-দাসীর সঙ্গে তুলনা করার উদ্দেশ্য সাধারণভাবে দাস-দাসীকে মারার বৈধতাদানের জন্য নয়। বিভিন্ন হাদীছে দাস-দাসীকেও মারধর করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাঁ, কারও সংশোধনের জন্য হালকা মারধরের প্রয়োজন বোধ হলে সেটা ভিন্ন কথা। না হয় কেবল নিজের মনের ঝাল মেটানোর জন্য দাস-দাসীকে পেটানো বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত শাস্তিদান করা কোনওক্রমেই বৈধ নয়। তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে মূলত সেকালের মানুষের সাধারণ রেওয়াজ হিসেবে।
জাহিলী যুগে দাস-দাসীকে মানুষই মনে করা হত না। তাই তাদের সঙ্গে আচার আচরণও মানবিক ছিল না। কথায় কথায় মারধর করা হত। মারতে মারতে অনেক সময় মেরেই ফেলা হত। এ অন্যায় প্রবণতার সঙ্গে তুলনা করেই বলা হয়েছে যে, দাস দাসীকে যেমন অন্যায়ভাবে মারধর করতে দ্বিধাবোধ করা হয় না, তেমনি তোমাদের অনেকেও স্ত্রীকেও অন্যায়ভাবে মারধর করে থাকে। এটা কিছুতেই সমীচীন নয়। দাস দাসীকেই যখন অন্যায়ভাবে মারা যায় না, তখন স্ত্রীকে কিভাবে অন্যায় মারধর করা যায়? তোমরা যেমন আদমসন্তান, তারাও তেমনি একই আদমসন্তান। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে তাদের অভিভাবক বানিয়েছেন, সেটা মারধর করার জন্য নয়; বরং দাম্পত্যজীবন যাতে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ হয় সেজন্য। তোমাদের কর্তব্য তাদের যথাযথ হক আদায় করা ও তাদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলা।
তাদেরকে মারধর করা যে কত ঘৃণ্য কাজ, তা স্পষ্ট করার জন্য এর পরই তিনি দিনশেষে তার সঙ্গে মেলামেশা করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ এটা কোনও বুদ্ধিমান ও রুচিশীল লোকের কাজ হতে পারে না যে, দিনের বেলা স্ত্রীকে মারবে এবং দিনশেষে তার সঙ্গে মেলামেশা করবে। মানবিক মেলামেশা করাটা পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং আগ্রহ-উৎসাহের উপর নির্ভরশীল। সবকিছু গায়ের জোরে সারাটা একরকম পশুত্ব, তা মানুষের কাজ হতে পারে না। মেলামেশা করাটা যখন দাম্পত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, তখন তা যাতে সম্পূর্ণ মানবিক হয় সেজন্য মন-মানসিকতা সম্পূর্ণ অমলিন ও স্ফুর্তিপূর্ণ থাকা জরুরি। অন্যায় মারধর করাটা এর সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. স্ত্রীর সঙ্গে দাসীসুলভ আচরণ করতে নেই।

খ. স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে মারা জায়েয নয়। এমনকি স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা ভদ্র ও রুচিশীল ব্যক্তির কাজ নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান