মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

বিবাহ অধ্যায়

হাদীস নং: ২৬১
বিবাহ অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: স্বামীর উপর স্ত্রীর হক।
২৬১। লাকীত ইবন সবিরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ), আমার স্ত্রী আছে। তারপর তিনি তার ঝগড়াঠে হওয়া এবং তার দুর্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, তুমি তাকে তালাক দাও। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, তার সাথে আমার দীর্ঘদিনের সাহচর্য এবং তার থেকে আমার সন্তান রয়েছে। তিনি বললেন, তুমি তাকে তোমার স্ত্রীরূপে রাখবে, আর তাকে উপদেশ দিবে। যদি তার মধ্যে কোন কল্যাণ থাকে তাহলে সে তোমার উপদেশ অনুযায়ী কাজ করবে। তুমি তোমার স্ত্রীকে তোমার দাসীর মত মারবে না।
(হাদীসটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ, যা এই কিতাবের রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চারিত্রিক গুণাবলির পর্বে তাঁর উদারতা শীর্ষক পরিচ্ছেদে আসবে। শাফিয়ী, ইবন খুযায়মা, ইবন হিব্বান, বায়হাকী, হাকিম। হাকিম হাদীসটিকে সহীহ হাদীস বলেছেন এবং যাহাবী তাঁর কথা সমর্থন করেছেন।)
كتاب النكاح
باب حق الزوجة على الزوج
عن لقيط بن صبرة (3) قال يا رسول الله ان الله ان لى امرأة فذكر من طول لسانها وايذائها فقال طلقها، قال يا رسول الله انها ذات صحبة وولد، قال فأمسكها وأمرها (4) فان بك فيها خير فستفعل (5) ولا تضرب ظعينتك (6) ضربك امتك

হাদীসের ব্যাখ্যা:

স্ত্রীকে মারধর করা কেন

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীকে দাস (দাসী)-এর মত পেটাতে নিষেধ করেছেন। দাস-দাসীর সঙ্গে তুলনা করার উদ্দেশ্য সাধারণভাবে দাস-দাসীকে মারার বৈধতাদানের জন্য নয়। বিভিন্ন হাদীছে দাস-দাসীকেও মারধর করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাঁ, কারও সংশোধনের জন্য হালকা মারধরের প্রয়োজন বোধ হলে সেটা ভিন্ন কথা। না হয় কেবল নিজের মনের ঝাল মেটানোর জন্য দাস-দাসীকে পেটানো বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত শাস্তিদান করা কোনওক্রমেই বৈধ নয়। তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে মূলত সেকালের মানুষের সাধারণ রেওয়াজ হিসেবে।
জাহিলী যুগে দাস-দাসীকে মানুষই মনে করা হত না। তাই তাদের সঙ্গে আচার আচরণও মানবিক ছিল না। কথায় কথায় মারধর করা হত। মারতে মারতে অনেক সময় মেরেই ফেলা হত। এ অন্যায় প্রবণতার সঙ্গে তুলনা করেই বলা হয়েছে যে, দাস দাসীকে যেমন অন্যায়ভাবে মারধর করতে দ্বিধাবোধ করা হয় না, তেমনি তোমাদের অনেকেও স্ত্রীকেও অন্যায়ভাবে মারধর করে থাকে। এটা কিছুতেই সমীচীন নয়। দাস দাসীকেই যখন অন্যায়ভাবে মারা যায় না, তখন স্ত্রীকে কিভাবে অন্যায় মারধর করা যায়? তোমরা যেমন আদমসন্তান, তারাও তেমনি একই আদমসন্তান। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে তাদের অভিভাবক বানিয়েছেন, সেটা মারধর করার জন্য নয়; বরং দাম্পত্যজীবন যাতে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ হয় সেজন্য। তোমাদের কর্তব্য তাদের যথাযথ হক আদায় করা ও তাদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলা।
এটা কোনও বুদ্ধিমান ও রুচিশীল লোকের কাজ হতে পারে না যে, দিনের বেলা স্ত্রীকে মারবে এবং দিনশেষে তার সঙ্গে মেলামেশা করবে। মানবিক মেলামেশা করাটা পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং আগ্রহ-উৎসাহের উপর নির্ভরশীল। সবকিছু গায়ের জোরে সারাটা একরকম পশুত্ব, তা মানুষের কাজ হতে পারে না। মেলামেশা করাটা যখন দাম্পত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, তখন তা যাতে সম্পূর্ণ মানবিক হয় সেজন্য মন-মানসিকতা সম্পূর্ণ অমলিন ও স্ফুর্তিপূর্ণ থাকা জরুরি। অন্যায় মারধর করাটা এর সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. স্ত্রীর সঙ্গে দাসীসুলভ আচরণ করতে নেই।

খ. স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে মারা জায়েয নয়। এমনকি স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা ভদ্র ও রুচিশীল ব্যক্তির কাজ নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান