মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

বিবাহ অধ্যায়

হাদীস নং: ২৪২
বিবাহ অধ্যায়
স্বামী-স্ত্রীর হক এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি রক্ষা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদসমূহ

পরিচ্ছেদ: স্বামী-স্ত্রীর সার্বিক হক।
২৪২। আবূ হুররা রাকাশীর চাচা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যিলহজ্জ মাসের বারো তারিখ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উটনীর লাগাম ধরে ছিলাম (তিনি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন।) আর তাতে আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাহচর্যে আল্লাহ ভয় করবে, কেননা তারা তোমাদের কাছে বন্দিনী, তাদের কোন কর্তৃত্ব নেই। তাদের জন্য তোমাদের উপর দু'টি হক আছে এবং তোমাদের জন্য তাদের উপর দু'টি হক আছে। তারা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে তোমাদর বিছানা ব্যবহার করতে দিবে না। আর তোমরা যাকে অপছন্দ কর তারা তাকে তোমাদের ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিবে না। যদি তোমরা তাদের অবাধ্যতার ভয় কর তাহলে তাদেরকে হিতোপদেশ দিবে, শয়নক্ষেত্রে তাদের এড়িয়ে চলবে, তাদেরকে যখম না হয় এবং হাড় ভেঙ্গে না যায় এমন লঘু মার দিবে। আর তাদেরকে সমাজ প্রথা অনুযায়ী খোর পোষ দিবে। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত রূপে গ্রহণ করেছ, আর তাদের লজ্জা স্থানকে আল্লাহ তা'আলার ইরশাদ দ্বারা হালাল করেছ।আল্লাহ তা'আলার ইরশাদ:
فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَثَ وَرُبَعَ .
(তবে তোমরা বিয়ে করবে যাকে তোমাদের পছন্দ হয়। নারীদের মধ্যে দু'টি তিনটি কিংবা চারটি।" সূরা নিসা: ৩)
(আহমদ ইবন্ আবদুর রহমান আল বান্না বলেছেন, আমি হাদীসটিকে এ বর্ণনা সূত্রে ইমাম আহমদ ছাড়া অন্য কারও নিকট অবগত হইনি। এর সনদ উত্তম। আবূ দাউদ, নাসাঈ এবং ইবন মাজাহ আমর ইবন আহওয়াছ (রা) থেকে এর সমর্থক হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তিরমিযী বলেছেন, এটি সহীহ হাদীস। মুসলিম এবং আবু দাউদ ও নবী (ﷺ)-এর হজ্জের বিধানে জাবির (রা) থেকে এর সমর্থক হাদীস বর্ণনা করেছেন।)
كتاب النكاح
أبواب حقوق الزوجين واحسان العشرة

باب جامع لحقوق الزوجين
عن ابى حرة الرقاشى (3) عن عمه (4) قال كنت آخذا بزمام ناقة رسول الله صلى الله عليه وسلم فى أوسط (5) أيام التشريق (فذكر حديثا طويلا) (6) وفيه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فاتقوا الله فى النساء فانهن عندكم عوان (7) لا يملكن لانفسهن شيئا, وإن لهن عليكم ولكم عليهن حقان, لا يوطئن فراشكم احدا غيركم. ولا يأذن فى بيوتكم لأحد تكرهونه (8) , فان خفتم نشوزهن (9) فعظوهن واهجروهن فى المضاجع واضربوهن ضربا غير نبرِّح (10) قال حميد قلت للحسن ما المبرح؟ قال المؤثر, ولهن رزقهن وكسوتهن بالمعروف (11) وإنما أخذتموهن بامانة الله (1) واستحللتم فروجهن بكلمة الله (2) عز وجل

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি বিদায় হজ্জে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেওয়া ভাষণের অংশবিশেষ। ভাষণের শুরুতে তিনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান করেন। তারপর উপস্থিত শ্রোতাদের লক্ষ্য করে ওয়াজ ও নসীহত করেন। তারপর বিশেষভাবে নারীদের সম্পর্কে অসিয়ত করেন।

فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٍ عِنْدَكُمْ (তারা তো তোমাদের কাছে আবদ্ধ আছে)। ইমাম নববী রহ. বলেন, عَوَانٍ শব্দটি عانية -এর বহুবচন। এর অর্থ বন্দিনী। বিবাহের পর স্ত্রী যেহেতু স্বামীর কর্তৃত্বাধীন এসে যায়, তাই তাকে বন্দিনীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে, সে তার পিতামাতা, ভাই-বেরাদার ছেড়ে স্বামীর ঘরে চলে এসেছে। স্বামী তো তার পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজন নিয়েই আছে, কিন্তু সে তাদের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এখন এক স্বামীই তার আশ্রয় এবং একান্তভাবে তার কাছেই আবদ্ধ। তার অনুমতি ছাড়া বাইরে কোথাও যেতে পারে না। তাকে তার ঘরেই থাকতে হয়। এ আবদ্ধতার দাবি স্বামী সর্বদা তার সঙ্গে প্রীতিকর আন্তরিকতাপূর্ণ ও আচরণ করবে।

হাদীসে আছে- لَيْسَ تَمْلِكُوْنَ مِنْهُنَّ شَيْئًا (তোমরা তাদের কাছে এছাড়া অন্য কোনওকিছুর মালিকানা রাখ না)। অর্থাৎ তাদের উপর তোমাদের কর্তৃত্ব কেবল এতটুকুই যে, তারা তোমাদের ঘরেই অবস্থান করবে। তোমাদেরই জন্য নিজেদের নিবেদিত ও সংরক্ষিত রাখবে এবং তোমাদের ঘর-সংসারের দেখভাল করবে। এর বাইরে তাদের উপর তোমরা আর কোনও অধিকার খাটাতে পার না। তো যেহেতু তোমাদেরই জন্য তারা নিবেদিত এবং তোমাদেরই কাছে তারা আটকা, তাই তোমাদের কর্তব্য তাদের প্রতি সদাচরণ করা, তাদেরকে ইজ্জত ও সম্মানের সঙ্গে রাখা।

এর ব্যতিক্রম আচরণ তাদের সঙ্গে কখন করা যাবে, সে সম্পর্কে হাদীসে আছে- إِلَّا أَنْ يَأْتِيْنَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ (অবশ্য তারা প্রকাশ্য অশিষ্টকর্মে লিপ্ত হলে ভিন্ন কথা) । প্রকাশ্য অশিষ্টকর্ম বলতে স্বামীর শরীআতসম্মত হুকুম অমান্য করা, বেপর্দা হওয়া, পরপুরুষের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ রাখা ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। যদি এরূপ কিছু করে তখন স্বামীর কর্তব্য তাকে সংশোধন করা। সে ক্ষেত্রে মাত্রানুসারে কঠোরতা অবলম্বনেরও অবকাশ আছে।

সংশোধনমূলক ব্যবস্থার পর্যায়ক্রম
হাদীসে পর্যায়ক্রম বলে দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে (তারা সেরকম কিছু করলে তাদেরকে তোমরা বিছানায় পরিত্যাগ করবে এবং তাদেরকে এমনভাবে মারবে, যা কঠোর-কঠিন হবে না)। 'বিছানায় পরিত্যাগ করা - এর অর্থ তার প্রতি একরকম অভিমান প্রকাশ। সে কারণেই তার সঙ্গে এক চাদরে থাকবে না ও মেলামেশা করবে না। স্ত্রী আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ও সমঝদার হলে তার সংশোধনের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কাজেই এতটুকুতে সংশোধন হয়ে গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা অবলম্বন করা যাবে না। কিন্তু এতে কাজ না হলে সে ব্যবস্থা অবলম্বনের সুযোগ আছে। ব্যবস্থাটি হচ্ছে লঘু মার দেওয়া।

লঘু মারের অর্থ এমনভাবে মারা, যাতে সে আহত না হয়, শরীরে দাগ না পড়ে এবং বেশি কষ্টও না পায়। তাই কেউ কেউ বলেন, লাঠি বা চাবুক দিয়ে মারবে না। হাত দিয়ে বা রুমাল পেঁচিয়ে তা দ্বারা মারতে পারে। ইমাম ইযযদ্দীন ইবন আব্দুস সালাম রহ. বলেন, সে মারাটাও জায়েয হবে কেবল তখনই, যখন জানা যাবে বা প্রবল ধারণা হবে যে, এর দ্বারা তার সংশোধন হবে। যদি মনে হয় এটা উপকার দেবে না, তখন মারা জায়েয হবে না।

হাদীসে আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا
(যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা করবে না)। অর্থাৎ শুরু থেকেই তারা যদি তোমাদের কথা মেনে চলে, তবে শুধু শুধু তার দোষ খুঁজবে না এবং কল্পিত দোষের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাবে না। আর যদি বাস্তবিক কোনও দোষ করে থাকে, তারপর তোমাদের গৃহীত ব্যবস্থা দ্বারা সংশোধন হয়ে যায়, তবে এরপর আর সে দোষ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে না; বরং তা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবে। শরীআতের দৃষ্টিতে দোষ করার পর সংশোধন হয়ে গেলে সে এমন পর্যায়ে চলে যায়, যেন দোষ করেইনি। এক হাদীছে আছে-
التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ
‘গুনাহ থেকে তাওবাকারী ওই ব্যক্তিতুল্য, যার কোনও গুনাহ নেই।’৩৩১

উল্লেখ্য, স্ত্রীর সংশোধন সম্পর্কিত হাদীছের এ বক্তব্য কুরআন মাজীদের আয়াত থেকে গৃহীত। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ
‘আর যে সকল স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা কর, (প্রথমে) তাদেরকে বোঝাও এবং (তাতে কাজ না হলে) তাদেরকে শয়ন শয্যায় একা ছেড়ে দাও এবং (তাতেও সংশোধন না হলে) তাদেরকে প্রহার করতে পার।৩৩২

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক হকসমূহ
হাদীসে আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেকের অন্যের উপর সুনির্দিষ্ট হক থাকার ঘোষণা দান করেন। তারপর প্রত্যেকের হকসমূহও স্পষ্ট করে দেন। প্রথমে স্ত্রীর উপর স্বামীর দু'টি হক উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে- فَحَقكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوْطِئنَ فُرُشَكُمْ مَنْ تَكْرَهُونَ (তাদের উপর তোমাদের হক হল তারা তোমাদের অপসন্দনীয় কাউকে তোমাদের বিছানা ব্যবহার করতে দেবে না)। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন পরপুরুষের সঙ্গে নির্জন অবস্থান। কাযী ইয়ায রহে বলেন, আরবদের মধ্যে পরপুরুষের সঙ্গে পরনারীর নির্জনে কথাবার্তা বলার আম রেওয়াজ ছিল। তারা এটাকে দোষ মনে করত না এবং এটাকে সন্দেহের চোখেও দেখা হত না। কিন্তু ইসলাম এটাকে কঠিনভাবে নিষেধ করেছে। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ، وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ
কোনও পুরুষ যেন কোনও নারীর সঙ্গে কিছুতেই নির্জনে অবস্থান না করে এবং কোনও নারী যেন কিছুতেই মাহরাম ছাড়া সফর না করে।৩৩৩

অপর এক হাদীছে আছে-
لا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةِ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ
কোনও পুরুষ কোনও নারীর সঙ্গে নির্জনে অবস্থান করলে সেখানে অবশ্যই তৃতীয়জন থাকে শয়তান।৩৩৪

অথবা এর দ্বারা স্বামী অপসন্দ করে এমন কাউকেই স্বামীর খাস কামরায় প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে, তাতে সে স্ত্রীর মাহরাম আত্মীয় হোক বা পরপুরুষ হোক। এ নিষেধাজ্ঞা সকলকেই শামিল করে।
স্বামীর দ্বিতীয় হক হচ্ছে— وَلَا يَأْذَنَّ فِي بُيُوتِكُمْ لِمَنْ تَكْرَهُونَ (এবং সে তোমাদের ঘরে তোমাদের অপসন্দের কাউকে প্রবেশ করার অনুমতি দেবে না)। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের ঘরে যাদের প্রবেশ পসন্দ কর না, সে তাদের কাউকে প্রবেশ করার অনুমতি দেবে না। এটাও স্বামীর হক। এটা রক্ষা করা স্ত্রীর কর্তব্য। এর মধ্যে নারী, পুরুষ, আত্মীয়, অনাত্মীয় নির্বিশেষে সকলেই শামিল। স্ত্রী কেবল এমন কাউকেই ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারে, যার ব্যাপারে জানা আছে বা প্রবল ধারণা হয় যে, স্বামী তার প্রবেশ অপসন্দ করবে না। এ বিষয়ে মূল বিধান তো এই যে, যার সম্পর্কে সরাসরি বা পরোক্ষ অনুমতি নেই, তার জন্য কারও গৃহে প্রবেশ জায়েয নয়। এরকম প্রবেশ যেমন সেই ব্যক্তির জন্য জায়েয নেই, তেমনি গৃহকর্তার হুকুম ছাড়া এরকম লোককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়াও কারও জন্য জায়েয নেই। তা জায়েয নেই স্ত্রীর জন্যও।

হাদীসে আছে স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَلَا وَحَقَّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ
(শোন, তোমাদের উপর তাদের হক হল তোমরা তাদের পোশাক ও খাবারে তাদের প্রতি সদাচরণ করবে)। অর্থাৎ সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতাভেদে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীদেরকে খোরপোশ দেবে। ধনী দেবে তার অবস্থা অনুযায়ী এবং গরীবও তার অবস্থা অনুযায়ী। ধনী ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে খোরপোশ দিতে কার্পণ্য করে এবং তাকে গরীবদের হালে রাখে, তবে এটা একরকম জুলুম গণ্য হবে। আবার স্ত্রীও যদি স্বামীর কাছে তার সামর্থ্যের ঊর্ধ্বে খোরপোশ দাবি করে, তাও তার উপর জুলুমই বটে। উভয়ের কর্তব্য উভয়ের সামর্থ্য বিবেচনায় রাখা। খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে এটাও লক্ষণীয় যে, স্ত্রীর পিতৃগৃহে যদি মেয়েদের রান্নাবান্না করার রেওয়াজ না থাকে, তবে এরকম স্ত্রীকে রান্নাবান্নার কষ্টে ফেলা জায়েয হবে না। সে ক্ষেত্রে স্বামীর কর্তব্য হবে রান্নাবান্নার আলাদা ব্যবস্থা করা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. স্ত্রীকে নিজ গৃহে থাকতে বাধ্য করা এবং অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে না দেওয়া স্বামীর অধিকার। তার এ অধিকারের ব্যাপারে সচেতন থাকা স্ত্রীর একান্ত কর্তব্য।

খ. স্ত্রী মা-বাবা ছেড়ে স্বামীগৃহে আবদ্ধ থাকে। তাই স্বামীর কর্তব্য এর মূল্যায়ন করা এবং তার প্রতি আন্তরিক, সহনশীল ও সহানুভূতিশীল হয়ে থাকা। সে তার প্রতি এমন উদার ও প্রীতিপূর্ণ আচরণ করবে, যাতে স্ত্রীর পক্ষে গৃহে অবস্থান স্বস্তিকর হয় এবং গৃহের সংকীর্ণ সীমানা তার কাছে বিস্তীর্ণ ভূবন বলে মনে হয়।

গ. স্ত্রীর ভুলত্রুটি হলে তার সংশোধনকল্পে স্বামীর কর্তব্য পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা অবলম্বন করা, যেমনটা হাদীছে বলা হয়েছে। লক্ষ রাখা চাই যাতে লঘু ভুলে গুরুদণ্ড না হয়ে যায়।

ঘ. স্বামীর যেমন স্ত্রীর উপর অধিকার আছে, তেমনি স্বামীর উপরও স্ত্রীর অধিকার আছে। স্বামীর কর্তব্য সে অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা।

ঙ. স্ত্রীর খোরপোশে স্বামীর কর্তব্য আপন সামর্থ্য বিবেচনায় রাখা।

৩৩১. সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৪২৫০; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০২৮১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২০৫৬১; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬৭৮০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫৭১

৩৩২. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩৪

৩৩৩. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩০০৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩৪১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৭৩১; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১২২০৫; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৫৪১৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫০৫৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৮৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৯৩৪

৩৩৪. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৭১; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১৮১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৫৮৬; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৩২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৬৯৬; তাবারানী, আল মুজামুস সগীর, হাদীছ নং ২৪৫; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৫৭৪; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা, হাদীছ নং ১৪৩
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান