মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

বিবাহ অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৪
বিবাহ অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: সহবাসের সময় যা ঘটে তা অন্যের কাছে বলা স্বামী-স্ত্রীর জন্য হারাম।
২৩৪। আবু নাদরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি তুফাওয়া গোত্রের জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি আবূ হুরায়রা (রা) এর মেহমান হলাম। আর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবীগণ (রা) এর মধ্যে কাউকে আবূ হুরায়রা (রা) এর চেয়ে বেশি অতিথি পরায়ন এবং অতিথি সৎকারে অধিক যত্নবান কাউকে দেখিনি। আমি যখন তাঁর কাছে ছিলাম তখন তিনি চৌকির উপর ছিলেন। আর তাঁর নীচে জনৈকা কালো দাসী ছিল। আর তার সাথে ছোট ছোট কংকর বা খেজুরের বীচিপূর্ণ একটি থলে ছিল। তিনি সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলছিলেন। যখন থলের মধ্যে তার একটিও অবশিষ্ট থাকল না তখন তিনি তাকে তা দিলেন। সে কংকর বা খেজুরর বীচিগুলিকে একত্রিত করে থলের মধ্যে রাখল। অতঃপর তাকে তা দিল। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে আমার এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পক্ষ থেকে হাদীস বর্ণনা করব না? আমি বললাম, নিশ্চয়ই, তিনি বললেন, আমি যখন জ্বরের যন্ত্রণায় মসজিদে গড়াগড়ি দিচ্ছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, দাউস বংশের যুবককে কে দেখেছে, দাউস বংশের যুবককে কে দেখেছে? জনৈক ব্যক্তি তাঁকে বলল, সে এ মসজিদের প্রান্তে জ্বরের যন্ত্রণায় গড়াগড়ি খাচ্ছে হে আল্লাহর রাসূল, আপনি তাকে সেখানে দেখতে পাবেন। তিনি এসে তাঁর হাত আমার উপর রেখে আমাকে সান্তনামূলক কথা বললেন। তাতে আমি উঠে দাঁড়ালাম। তিনি আমার কাছ থেকে চলে গিয়ে তাঁর নামায পড়ার স্থানে দাঁড়ালেন। সেদিন তাঁর সাথে দু' কাতার পুরুষ ও এক কাতার মহিলা বা দু' কাতার মহিলা ও এক কাতার পুরুষ ছিল। তিনি তাদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, যদি শয়তান আমাকে আমার নামায থেকে কিছু ভুলিয়ে দেয় তাহলে পুরুষেরা যেন তাসবীহ পড়ে এবং মহিলারা হাত তালি দেয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায পড়লেন। আর তাঁর নামায থেকে কিছু ভুলে গেলেন না। তিনি যখন সালাম ফিরালেন তখন পুরুষদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, তোমরা তোমাদের স্থানে অবস্থান করো। তোমাদের মধ্যে কি কেউ দরজা বন্ধ করে এবং পর্দা ঝুলিয়ে দিয়ে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে। অতঃপর বের হয়ে মানুষকে বলে, আমি আমার স্ত্রীর সাথে এরূপ করেছি, আমি আমার স্ত্রীর সাথে এরূপ করেছি? তারা চুপ থাকল। অতঃপর তিনি মহিলাদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি তা বলে? জনৈকা উদ্ভিন্ন যৌবনা নারী এক হাঁটু গেড়ে বসে গলা উঁচু করল যেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে দেখতে পান, আর তার কথা শুনতে পান। সে বলল, হাঁ, আল্লাহর শপথ, নিশ্চয়ই পুরুষেরা তা আলোচনা করে। আর নিশ্চয়ই মহিলারা তা আলোচনা করে। তিনি বললেন, যে তা করে তোমরা কি (বেহায়াপনা এবং নির্লজ্জতায়) তার উদাহরণ জান? যে তা করে তার উদাহরণ: পুরুষ শয়তান এবং মহিলা শয়তান। পুরুষ শয়তান মহিলা শয়তানের সাথে গলিতে সাক্ষাৎ করে তার সাথে সহবাস করে। আর মানুষ তাকিয়ে তার সহবাস করা দেখে। অতঃপর তিনি বললেন, কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে এবং কোন মহিলা অন্য মহিলার সাথে এক বিছানায় কোন প্রতিবন্ধক ছাড়া ঘুমাবে না, তবে পিতা তার পুত্রের সাথে এবং পুত্র তার পিতার সাথে এক বিছানায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়া ঘুমাতে পারবে। তিনি বলেন, আর তিনি তৃতীয় বিষয় বর্ণনা করেছেন যা আমি ভুলে গিয়েছি। "পুরুষের জন্য বৈধ প্রসাধনী যার গন্ধ আছে রং নেই। আর মহিলার জন্য বৈধ প্রসাধনী যার রং আছে গন্ধ নেই।"
(আবূ দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, বায়হাকী) হাদীসটির সনদে তুফাওয়া গোত্রের জনৈক ব্যক্তি আছেন। তিনি অজ্ঞাত বর্ণনাকারী।)
كتاب النكاح
باب نهي الزوجين عن التحديث بما يجرى حال الوقاع
عن ابى نضرة (1) عن رجل من الطفاوة (2) قال نزلت على ابى هريرة قال ولم ادرك من صحابة رسول الله صلى الله عليه وسلم رجلا أشد تشميرا (3) ولا أقوم على ضيف منه فبينما أنا عنده وهو على سرير له وأسفل منه جارية سوداء ومعه كيس فيه حصى او نوى يقول سبحان الله سبحان الله حتى اذا أنفذ (4) ما فى الكيس القاه اليها فجمعته فجعلته فى الكيس ثم دفعته اليه, فقال لى ألا أحدثك عنى وعن رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قلت بلى, قال فانى بينما أنا أوعك (5) فى مسجد المدينة اذ دخل علىّ رسول اله صلى الله عليه وسلم المسجد فقال من أحسّ (6) الفتى الدوسى من احس الفتى الدوسى؟ فقال له قائل هو ذاك يوعك فى جانب المسجد حيث ترى يا رسول الله, فجاء فوضع يده علىّ وقال لى معروفا (7) فقمت فانطلق حتى قام فى مقامه الذى يصلى فيه ومعه يومئذ صفان من رجال وصف من نساء أو صفان (8) من نساء وصف من رجال, فاقبل عليهم فقال ان أنسائى الشيطان شيئا من صلاتى (9) فليسبح القوم وليصفق النساء, فصلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ولم ينس من صلاته شيئا, فلما سلم أقبل عليهم بوجهه فقال مجالسكم (10) هل منكم من اذا أتى أهله أغلق بابه وارخى ستره ثم يخرج فيتحدث فيقول فعلت باهلى كذا وفعلت باهلى كذا؟ فسكتوا فأقبل على النساء فقال هل منكن من تحدث؟ فجثث (11) فتاة كعاب على إحدى ركبتيها وتطاولت (12) ليراها رسول الله صلى الله عليه وسلم ويسمع كلامها فقالت إى والله (13) إنهم ليحدِّثون وإنهن ليحدّثن, فقال هل تدرون ما مثل من فعل ذلك؟ (14) ان مثل من فعل ذلك مثل شيطان وشيطانة لقى احدهما صاحبه بالسكة قضى حاجته منها والناس ينظرون اليه, ثم قال ألا لا يفضين (15) رجل الى رجل ولا امرأة الى امرأة الا الى ولد أو والد, قال وذكر ثالثة فنسيتها ألا إن طيب الرجل ما وجد ريحه ولم يظهر لونه (1) ألا ان طيب النساء ما ظهر لونه ولم يوجد ريحه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা দুই নারী-পুরুষের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন, অতটা ঘনিষ্ঠতা অন্য কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে হয় না। অন্যসব ক্ষেত্রে দুই ব্যক্তি যতই কাছাকাছি হোক, একটা আড়াল ও অন্তরাল উভয়ের মধ্যে থাকেই, যা ভেদ করার কোনও সুযোগ তাদের নেই। এক দাম্পত্য সম্পর্কই এমন, যেখানে আল্লাহ তা'আলা দু'জনের মধ্যে কোনও আড়াল রাখেননি। সে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা একান্তই তাদের নিজস্ব ভূবন। এখানে যেমন অন্যের কোনও প্রবেশাধিকার নেই, তেমনি তাদেরও সেখানে অন্য কাউকে টেনে আনার সুযোগ নেই। সে সুযোগ নেই কথাবার্তার ভেতর দিয়েও। অর্থাৎ তাদের একান্ত ঘনিষ্ঠতা ও অন্যসব গোপনীয় বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করে দিয়ে তাকে এ অঙ্গনের সঙ্গে পরিচিত করা কোনওক্রমেই জায়েয নয়। এটা এক রকম বিশ্বাসঘাতকতা। এটা অঙ্গীকার ভঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। এটা যেমন স্বামীর জন্য জায়েয নয়, তেমনি জায়েয নয় স্ত্রীর জন্যও। এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে অন্যের কাছে দায়বদ্ধ। বৈবাহিক চুক্তির মাধ্যমেই যেন তারা পরস্পরে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে যায় যে, তাদের মধ্যকার গোপনীয় কোনওকিছুই তারা অন্যের কাছে প্রকাশ করবে না।

তা প্রকাশ করা যেমন অঙ্গীকার ভঙ্গের অন্তর্ভুক্ত, তেমনি তা চরম নির্লজ্জতাও বটে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে স্বামী-স্ত্রী তাদের নিবিড় ঘনিষ্ঠতার কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করে, কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহ তা'আলার কাছে মর্যাদার দিক থেকে সবচে নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তার মানে তারা নিকৃষ্টদের কাতারভুক্ত হয়ে জাহান্নামে চলে যাবে। কী কঠিন সতর্কবাণী! প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীর এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকা দরকার। যত অন্তরঙ্গ বন্ধু বা প্রাণের বান্ধবীই হোক, স্বামী বা স্ত্রী কেউই তাদের কাছে নিজেদের একান্ত বিষয়সমূহ কিছুতেই প্রকাশ করবে না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার গোপনীয় বিষয়সমূহ অন্যের কাছে প্রকাশ করা কঠিন পাপ। এর থেকে প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান