মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

৭. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৯০
নামাযের অধ্যায়
(৯) পরিচ্ছেদঃ নামায শুরু করা এবং খুশুর সাথে আদায় করা প্রসঙ্গে।
(৪৯০) মুতাররিফ তার পিতা (আব্দুল্লাহ ইবন শিখখির রা.) থেকে বলেন,আমি নবী (ﷺ) –কে সালাত রত অবস্থায় দেখেছি যে, তাঁর বুক থেকে (কুরআন তিলাওয়াতের) এমন আওয়াজ বের হচ্ছিল যেমন চুলার আগুনে তপ্ত হ্যাঁড়ি থেকে (বাষ্পের) আওয়াজ নির্গত হয়।
(একই বর্ণনাকারী থেকে দ্বিতীয় সূত্রে বর্ণিত) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সালাত আদায়ে রত দেখি।এ সময়ে ক্রন্দনের কারণে তাঁর বুকের মধ্যে কড়াইয়ের মধ্যে ফুটন্ত তরকারির শব্দের মতো শব্দ হচ্ছিল।
كتاب الصلاة
(9) باب افتتاح الصلاة والخشوع فيها
(490) عن مطرف (5) عن أبيه رضى الله عنه قال انتهيت إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو يصلى ولصدره أزير (6) كأزير المرجل
(وعنه من طريق ثان) (1) عن أبيه قال رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم وفى صدره أزيز كأزيز المرجل من البكاء

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে শিখখীর রাযি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। তিনি নামাযে কিভাবে কাঁদতেন, একটি দৃষ্টান্ত দ্বারা তা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন- (আর কান্নার কারণে তাঁর পেট থেকে হাঁড়ির আওয়াজের মত আওয়াজ বের হচ্ছিল)। অর্থাৎ চুলায় চড়ানো হাঁড়ির ভাত, তরকারি বা পানি ইত্যাদি যখন উথলে ওঠে এবং তা টগবগ করে ফোঁটে, তখন সে হাঁড়ি থেকে যেমন আওয়াজ শোনা যায়, নামায অবস্থায় ঠিক সেরকম আওয়াজ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেট থেকেও শোনা যাচ্ছিল। এটা ছিল তাঁর কান্নার আওয়াজ। আল্লাহ তা'আলাকে তিনিই সবচে' বেশি জানতেন, যে কারণে আল্লাহ তা'আলাকে ভয়ও করতেন সবচে বেশি তিনিই।

নামাযে মহান রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়ানো হয়। নামাযে তাঁর কালাম তিলাওয়াত করা হয়। নামাযের এ শান এবং আল্লাহ তা'আলার কালামের ওজন ও মাহাত্ম্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশি আর কে বুঝতে পারে? তিনি যখন নামাযে দাঁড়াতেন, তখন বন্দেগী ও আবদিয়্যাতের অদৃশ্য এক জগতে হারিয়ে যেতেন। আল্লাহ তা'আলার মুশাহাদা ও রূহানী দীদারের অনির্বচনীয় এক ভূবনে তিনি পাড়ি জমাতেন। এ সময় আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব এবং তাঁর গৌরব-মহিমার প্রভাবে ভীত-বিহ্বলতার উচ্ছ্বসিত আবেগ তাঁর দেহমন ছাপিয়ে যেত। তাঁর বুকের ভেতর কান্নার কলরোল শুরু হয়ে যেত। সে কান্নাকেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবন শিখীর রাযি. টগবগ করে ফোঁটা হাঁড়ির আওয়াজের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আল্লাহ তা'আলার গৌরব-মহিমার অনুভবে যাদের অন্তর ভরপুর থাকে, তাদের নামাযে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের এ চরিত্র বিদ্যমান থাকে। তাঁরা পূর্ণ খুশু-খুযু'র সঙ্গে নামায পড়ে থাকেন। তাই নামায অবস্থায় তাদেরও কান্না চলে আসে। হযরত উমর ফারূক রাযি. নামাযে হু হু করে কাঁদতে থাকতেন। তাঁর কান্নার আওয়াজ কয়েক কাতার দূর থেকেও শোনা যেত। উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. নামাযের ভেতর কোনও কোনও আয়াত বারবার পড়তেন আর কাঁদতে থাকতেন। এভাবে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যেত। অনেকের সম্পর্কে জানা যায়, নামাযে একটি মাত্র আয়াত সারারাত পড়েছেন আর কেঁদেছেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের সে হাল আমাদেরও কিছুটা দান করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

নামায পড়া চাই পরিপূর্ণ খুশু-খুযূ'র সঙ্গে। ক্রন্দন করা বা ক্রন্দনের ভাব সৃষ্টি করাও খুশু-খুযূ'র অংশ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ - হাদীস নং ৪৯০ | মুসলিম বাংলা