আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
২৫. অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত
হাদীস নং: ৫৪৭৩
অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত
পরিচ্ছেদ: হাশর ইত্যাদির বর্ণনা
৫৪৭৩. হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্ন আমর (রা) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন তোমরা একত্রিত হবে, তখন বলা হবে, এ উম্মাতের দরিদ্র ও অভাবী লোকেরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমরা কি আমল করেছ? তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে মুসিবতে ফেলেছ। তখন আমরা সবর করেছি। তুমি আমাদের পরিবর্তে অন্যদেরকে সম্পদ ও ক্ষমতার মালিক বানিয়েছ। আল্লাহ্ তা'আলা বলবেন, তোমরা সত্যই বলেছ। তিনি (রাসূলুল্লাহ) বলেন, তারপর তারা (ধনী) লোকজনের পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সম্পদশালী ও ক্ষমতাবান লোকদের জন্য তখনও কঠোর হিসাব অবশিষ্ট থাকবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, মু'মিনরা সেদিন কোথায় অবস্থান করবে? তিনি বললেন, তাদের জন্য নূরের কেদারা রাখা থাকবে, এবং মেঘমালা তাদেরকে ছায়া দেবে। এ দিনটি মু'মিনদের জন্য দিনের একটি লহমার চেয়েও সংক্ষিপ্ততর হবে।
(তাবারানী ও ইবন হিব্বান তাঁর 'সহীহ'-এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
[হাফিয (র) বলেনঃ], সহীহ হাদীসে আছে যে, 'দরিদ্রগণ ধনীদের পাঁচশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। দারিদ্র্যের ফযীলত' অধ্যায়ে হাদীসটি পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।)
(তাবারানী ও ইবন হিব্বান তাঁর 'সহীহ'-এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
[হাফিয (র) বলেনঃ], সহীহ হাদীসে আছে যে, 'দরিদ্রগণ ধনীদের পাঁচশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। দারিদ্র্যের ফযীলত' অধ্যায়ে হাদীসটি পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।)
كتاب البعث
فصل فِي الْحَشْر وَغَيره
5473- وَعَن عبد الله بن عَمْرو رَضِي الله عَنهُ عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ تجتمعون يَوْم الْقِيَامَة فَيُقَال أَيْن فُقَرَاء هَذِه الْأمة ومساكينها فَيقومُونَ فَيُقَال لَهُم مَاذَا عملتم فَيَقُولُونَ رَبنَا ابتليتنا فصبرنا وَوليت الْأَمْوَال وَالسُّلْطَان غَيرنَا فَيَقُول الله عز وَجل صَدقْتُمْ
قَالَ فَيدْخلُونَ الْجنَّة قبل النَّاس وَتبقى شدَّة الْحساب على ذَوي الْأَمْوَال وَالسُّلْطَان
قَالُوا فَأَيْنَ الْمُؤْمِنُونَ يَوْمئِذٍ قَالَ تُوضَع لَهُم كراسي من نور ويظلل عَلَيْهِم الْغَمَام يكون ذَلِك الْيَوْم أقصر على الْمُؤمنِينَ من سَاعَة من نَهَار
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ وَابْن حبَان فِي صَحِيحه
قَالَ الْحَافِظ وَقد صَحَّ أَن الْفُقَرَاء يدْخلُونَ الْجنَّة قبل الْأَغْنِيَاء بِخَمْسِمِائَة عَام وَتقدم ذَلِك فِي الْفقر
قَالَ فَيدْخلُونَ الْجنَّة قبل النَّاس وَتبقى شدَّة الْحساب على ذَوي الْأَمْوَال وَالسُّلْطَان
قَالُوا فَأَيْنَ الْمُؤْمِنُونَ يَوْمئِذٍ قَالَ تُوضَع لَهُم كراسي من نور ويظلل عَلَيْهِم الْغَمَام يكون ذَلِك الْيَوْم أقصر على الْمُؤمنِينَ من سَاعَة من نَهَار
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ وَابْن حبَان فِي صَحِيحه
قَالَ الْحَافِظ وَقد صَحَّ أَن الْفُقَرَاء يدْخلُونَ الْجنَّة قبل الْأَغْنِيَاء بِخَمْسِمِائَة عَام وَتقدم ذَلِك فِي الْفقر
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন যে, গরীবেরা ধনীদের পাঁচশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর কারণ, হিসাব-নিকাশের জন্য ধনীদের আটকে রাখা হবে। তারা কোন পথে সম্পদ অর্জন করেছিল এবং কোন কোন খাতে ব্যয় করেছিল সে সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। গরীবদের তো সে বালাই নেই।
হযরত মালিক ইবন দীনার রহ. এক সফরে নদীর এক পার থেকে অপর পারে গেলেন। ওপারে যেতেই কর আদায়কারীগণ ধরল। তোমার মালামালের কর দিয়ে যাও। তিনি দু'হাত উঁচু করে বললেন, দেখ কী আছে, নিয়ে নাও। তারা দেখল সঙ্গে মালামাল বলতে কিছুই নেই। তাদের তো ব্যস্ততা। শুধু শুধু কথা বলে সময় নষ্ট করার অবকাশ নেই। তাড়া দিয়ে বলল, যাও যাও! তিনি কতদূর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর নিজেকে সম্বোধন করে বললেন, ওহে দীনারের পুত্র মালিক। আখিরাতের বিষয়টি তো এমনই হবে। অর্থাৎ মাল নেই তো হিসাবও নেই। মাল থাকলে হিসাব দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকো।
এর দ্বারা বোঝা গেল ধনী দীনদার অপেক্ষা গরীব দীনদারের আখিরাতে পার হওয়া সহজ হবে। দীনদার ব্যক্তি ধনী হলে তার সম্পদের হিসাব দেওয়ার একটা ব্যাপার যেহেতু আছে, তাই তার কিছু না কিছু বিলম্ব অবশ্যই হবে। হাঁ, আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে বিনা হিসেবে পার করে দেবেন তাদের কথা আলাদা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. গরীবানা অবস্থা বাহ্যদৃষ্টিতে কষ্টকর হলেও আখিরাতের পক্ষে কল্যাণকর। তাই গরীবদের উচিত অভাব-অনটনের জন্য আক্ষেপ না করে ধৈর্য ও সহ্যের সঙ্গে দুনিয়ার জীবন পার করা।
খ. বিষয়টা যেহেতু জান্নাতে প্রবেশের, তাই দীনদারীর শর্ত অবশ্যই আছে। সুতরাং কেবল গরীবানা অবস্থার উপর নির্ভর করার সুযোগ নেই। নিজ দীন ও ঈমানেরও যত্ন নিতে হবে।
গ. বিলম্বে হলেও দীনদার ধনী ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে যাবে। তাই ধনী ব্যক্তিরও নিজ দ্বীনদারীর পরিচর্যা করা অবশ্যকর্তব্য।
হযরত মালিক ইবন দীনার রহ. এক সফরে নদীর এক পার থেকে অপর পারে গেলেন। ওপারে যেতেই কর আদায়কারীগণ ধরল। তোমার মালামালের কর দিয়ে যাও। তিনি দু'হাত উঁচু করে বললেন, দেখ কী আছে, নিয়ে নাও। তারা দেখল সঙ্গে মালামাল বলতে কিছুই নেই। তাদের তো ব্যস্ততা। শুধু শুধু কথা বলে সময় নষ্ট করার অবকাশ নেই। তাড়া দিয়ে বলল, যাও যাও! তিনি কতদূর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর নিজেকে সম্বোধন করে বললেন, ওহে দীনারের পুত্র মালিক। আখিরাতের বিষয়টি তো এমনই হবে। অর্থাৎ মাল নেই তো হিসাবও নেই। মাল থাকলে হিসাব দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকো।
এর দ্বারা বোঝা গেল ধনী দীনদার অপেক্ষা গরীব দীনদারের আখিরাতে পার হওয়া সহজ হবে। দীনদার ব্যক্তি ধনী হলে তার সম্পদের হিসাব দেওয়ার একটা ব্যাপার যেহেতু আছে, তাই তার কিছু না কিছু বিলম্ব অবশ্যই হবে। হাঁ, আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে বিনা হিসেবে পার করে দেবেন তাদের কথা আলাদা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. গরীবানা অবস্থা বাহ্যদৃষ্টিতে কষ্টকর হলেও আখিরাতের পক্ষে কল্যাণকর। তাই গরীবদের উচিত অভাব-অনটনের জন্য আক্ষেপ না করে ধৈর্য ও সহ্যের সঙ্গে দুনিয়ার জীবন পার করা।
খ. বিষয়টা যেহেতু জান্নাতে প্রবেশের, তাই দীনদারীর শর্ত অবশ্যই আছে। সুতরাং কেবল গরীবানা অবস্থার উপর নির্ভর করার সুযোগ নেই। নিজ দীন ও ঈমানেরও যত্ন নিতে হবে।
গ. বিলম্বে হলেও দীনদার ধনী ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে যাবে। তাই ধনী ব্যক্তিরও নিজ দ্বীনদারীর পরিচর্যা করা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)