আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
২২. অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
হাদীস নং: ৪১৯৫
অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
ক্রোধের প্রতি ভীতি প্রদর্শন এবং তা দূর করা ও সংবরণ করার প্রতি অনুপ্রেরণা এবং ক্রোধের সময় করণীয়
৪১৯৫. হযরত সুলায়মান ইবনে সুরাদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা নবী-এর নিকট দুই ব্যক্তি পরস্পর গালাগালি করছিল। তাদের একজন তীব্রভাবে ক্ষুদ্ধ হল, এমন কি তার চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করল এবং কণ্ঠনালীর শিরাসমূহ স্ফীত হয়ে উঠল। তখন নবী (ﷺ) তার দিকে তাকিয়ে বলেনঃ আমি এমন একটি বাক্য জানি, যদি লোকটি তা পাঠ করে, তবে তার এ অবস্থা দূরীভূত হয়ে যাবে। আর তা হল :«أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» (আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি।) নবী (ﷺ) থেকে যে ব্যক্তি উক্ত হাদীসটি শুনেছিল, সে ঐ ক্ষুদ্ধ ব্যক্তির কাছে গিয়ে বলল, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এখনই বলেছেন: আমি এমন একটি বাক্য জানি যদি সে (ক্ষুব্ধ ব্যক্তি) যদি তা বলে, তবে তার এ অবস্থা দূরীভূত হয়ে যাবে।
আর তাহল- «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» তখন লোকটি তাকে বলল, তুমি কি আমাকে পাগল মনে করছ?
(বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত।)
আর তাহল- «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» তখন লোকটি তাকে বলল, তুমি কি আমাকে পাগল মনে করছ?
(বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত।)
كتاب الأدب
التَّرْهِيب من الْغَضَب وَالتَّرْغِيب فِي دَفعه وكظمه وَمَا يفعل عِنْد الْغَضَب
4195- وَعَن سُلَيْمَان بن صرد رَضِي الله عَنهُ قَالَ استب رجلَانِ عِنْد النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَجعل أَحدهمَا يغْضب ويحمر وَجهه وتنتفخ أوداجه فَنظر إِلَيْهِ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ إِنِّي لأعْلم كلمة لَو قَالَهَا لذهب عَنهُ ذَا أعوذ بِاللَّه من الشَّيْطَان الرَّجِيم فَقَامَ إِلَى الرجل رجل مِمَّن سمع النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ هَل تَدْرِي مَا قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم آنِفا قَالَ لَا قَالَ إِنِّي لأعْلم كلمة لَو قَالَهَا لذهب ذَا أعوذ بِاللَّه من الشَّيْطَان الرَّجِيم فَقَالَ لَهُ الرجل أمجنونا تراني
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীছে দুই ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা পরস্পর গালাগালি করছিল, তাদের নাম সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। প্রশ্ন হতে পারে, সাহাবী হয়েও তাঁরা এরকম অসমীচীন কাজ কেন করছিলেন? উত্তর হল, হতে পারে তাঁরা নওমুসলিম ছিলেন ও ইসলামী আদব-কায়দা তাঁরা পুরোপুরি শিখে উঠেননি। হঠাৎ করেই জীবনে আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে, এমনটা সকলের ক্ষেত্রে আশা করা যায় না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যের বদৌলতে রাতারাতি পরিবর্তন অধিকাংশের জীবনেই ঘটেছিল। তবে স্বভাবগত কাঠিন্যের কারণে কারও কারও পরিবর্তনে কিছুটা সময়ও লেগেছিল, বিশেষত যারা বেদুঈন সাহাবী ছিলেন। কিছুটা সময় লাগলেও একপর্যায়ে তাদের জীবনে যে পরিবর্তন আসে, সে কারণে নিঃসন্দেহে তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে আছেন। তাঁদের আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল প্রথমদিকে কারও কারও দ্বারা ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে গেলেও সতর্ক করার পর তাওবা করতে ও নিজেদের সংশোধনে মনোযোগী হতে বিলম্ব করতেন না।
যাহোক যে দু'জনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল, তাদের একজনের ক্রোধের মাত্রা ছিল খুব বেশি। রাগে চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং গলার রগ ফুলে উঠেছিল। অতিরিক্ত রাগের ক্ষেত্রে অনেকেরই এমন হতে দেখা যায়। এরূপ রাগে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তখন এমন এমন কাণ্ড করে বসে, যা দ্বারা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। সেরকম ক্ষতিকর কাজ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আগেই রাগ সংবরণ করে ফেলা চাই। এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সংবরণের উপায় শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছে-
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
এর অর্থ 'আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি।
আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, অন্তরে ক্রোধ সঞ্চারে শয়তানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। ক্রুদ্ধ অবস্থায় হিতাহিত জ্ঞান লোপ পাওয়ার কারণে শয়তান তাকে দিয়ে তার কাঙ্ক্ষিত সব কাজ করিয়ে নিতে পারে। তাই শয়তান ক্রোধ সঞ্চারে উস্কানি দেয় এবং তা যাতে বাড়তে থাকে সেই চেষ্টা চালায়। ‘আউযুবিল্লাহ’ পাঠ বা আল্লাহর আশ্রয়গ্রহণ এমনই এক অস্ত্র, যা ধারণ করলে শয়তান পালাতে বাধ্য হয় এবং তার প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।
অপর এক হাদীছে রাগ নিবারণের জন্য ওযু করতে বলা হয়েছে। তার তাৎপর্য এই যে, শয়তান আগুনের সৃষ্টি। তার কারসাজিতেই ব্যক্তির অন্তরে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে। ওযূ করলে সে আগুনে পানি ঢালা হয়। ফলে রাগ নিভে যায়। তাছাড়া ওযূ করার দ্বারা ক্রোধের বিষয় থেকে ব্যক্তির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, যেহেতু ওযূ করতে কিছুটা সময় খরচ হয় এবং আলাদা আলাদাভাবে একেকটি অঙ্গ ধোওয়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। ততক্ষণে রাগ প্রশমিত হয়ে যায়। এছাড়াও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাগের সময় দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়। বসা থাকলে শুয়ে পড়। তাতেও রাগ না দূর হলে ওযূ করে দু' রাক'আত নামায পড়। এসব ব্যবস্থা অবলম্বনের পর নিতান্ত হতভাগা ছাড়া আর কারও রাগ বাকি থাকতে পারে না।
রাগ দমনের জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতকিছু শিক্ষা এজন্যই দিয়েছেন যে, পূর্বে যেমনটা বলা হয়েছে ক্রুদ্ধ ব্যক্তি কাণ্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে যে-কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে ফেলতে পারে, যার প্রতিকার সারা জীবনেও সম্ভব হয় না। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে হাদীছের শিক্ষা অনুযায়ী আমল করে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের তাওফীক দান করুন- আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছেও রাগে ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
খ. রাগে যেহেতু শয়তানের ভূমিকা থাকে, তাই রাগ উঠলে ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়া উচিত।
গ. ওযূ করাও রাগ নিবারণের পক্ষে সহায়ক।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা ইসলামী শিক্ষার পূর্ণাঙ্গতা উপলব্ধি করা যায়। রাগ প্রশমিত করার জন্যও ইসলাম কী কার্যকরী শিক্ষা দান করেছে!
যাহোক যে দু'জনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল, তাদের একজনের ক্রোধের মাত্রা ছিল খুব বেশি। রাগে চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং গলার রগ ফুলে উঠেছিল। অতিরিক্ত রাগের ক্ষেত্রে অনেকেরই এমন হতে দেখা যায়। এরূপ রাগে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তখন এমন এমন কাণ্ড করে বসে, যা দ্বারা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। সেরকম ক্ষতিকর কাজ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আগেই রাগ সংবরণ করে ফেলা চাই। এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সংবরণের উপায় শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছে-
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
এর অর্থ 'আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি।
আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, অন্তরে ক্রোধ সঞ্চারে শয়তানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। ক্রুদ্ধ অবস্থায় হিতাহিত জ্ঞান লোপ পাওয়ার কারণে শয়তান তাকে দিয়ে তার কাঙ্ক্ষিত সব কাজ করিয়ে নিতে পারে। তাই শয়তান ক্রোধ সঞ্চারে উস্কানি দেয় এবং তা যাতে বাড়তে থাকে সেই চেষ্টা চালায়। ‘আউযুবিল্লাহ’ পাঠ বা আল্লাহর আশ্রয়গ্রহণ এমনই এক অস্ত্র, যা ধারণ করলে শয়তান পালাতে বাধ্য হয় এবং তার প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।
অপর এক হাদীছে রাগ নিবারণের জন্য ওযু করতে বলা হয়েছে। তার তাৎপর্য এই যে, শয়তান আগুনের সৃষ্টি। তার কারসাজিতেই ব্যক্তির অন্তরে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে। ওযূ করলে সে আগুনে পানি ঢালা হয়। ফলে রাগ নিভে যায়। তাছাড়া ওযূ করার দ্বারা ক্রোধের বিষয় থেকে ব্যক্তির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, যেহেতু ওযূ করতে কিছুটা সময় খরচ হয় এবং আলাদা আলাদাভাবে একেকটি অঙ্গ ধোওয়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। ততক্ষণে রাগ প্রশমিত হয়ে যায়। এছাড়াও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাগের সময় দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়। বসা থাকলে শুয়ে পড়। তাতেও রাগ না দূর হলে ওযূ করে দু' রাক'আত নামায পড়। এসব ব্যবস্থা অবলম্বনের পর নিতান্ত হতভাগা ছাড়া আর কারও রাগ বাকি থাকতে পারে না।
রাগ দমনের জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতকিছু শিক্ষা এজন্যই দিয়েছেন যে, পূর্বে যেমনটা বলা হয়েছে ক্রুদ্ধ ব্যক্তি কাণ্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে যে-কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে ফেলতে পারে, যার প্রতিকার সারা জীবনেও সম্ভব হয় না। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে হাদীছের শিক্ষা অনুযায়ী আমল করে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের তাওফীক দান করুন- আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছেও রাগে ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
খ. রাগে যেহেতু শয়তানের ভূমিকা থাকে, তাই রাগ উঠলে ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়া উচিত।
গ. ওযূ করাও রাগ নিবারণের পক্ষে সহায়ক।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা ইসলামী শিক্ষার পূর্ণাঙ্গতা উপলব্ধি করা যায়। রাগ প্রশমিত করার জন্যও ইসলাম কী কার্যকরী শিক্ষা দান করেছে!
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)