আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২২. অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার

হাদীস নং: ৪১২৬
অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
সালামের ব্যাপক প্রসারের প্রতি অনুপ্রেরণা ও তার ফযীলত এবং যে ব্যক্তি তার সম্মানে দাঁড়ানো কামনা করে, তার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৪১২৬. হযরত ইমরান ইবনে হুসায়ন (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর নিকট এসে বলল : আস-সালামু আলাইকুম। তিনি তার সালামের জবাব দেন। এরপর লোকটি বলল। তখন নবী (ﷺ) বলেন : তোমার আমলনামায় দশ নেকী এরপর আর এক ব্যক্তি এসে বলল: আস্-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তিনি তার সালামের জবাব দেন। লোকটি বসে পড়লো। তিনি বলেন: তোমার আমলনামায় বিশ নেকী। পরে আর এক ব্যক্তি এসে বলল, আস্-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। তিনি তাঁর সালামের জবাব দেন। লোকটি বসে পড়লো। তিনি বলেন: তোমার আমলনামায় ত্রিশ নেক।
(আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণিত। ইমাম তিরমিযী (র) বলেনঃ হাদীসটি হাসান। নাসাঈ ও বায়হাকী। ইমাম বায়হাকীর মতে এই হাদীসের সনদ উত্তম। ইমাম আবু দাউদ (র) এটি আবু মারহুম সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আবূ মারহুমের নাম আবদুর রহীম ইবনে মায়মূন। তিনি সাহল ইবনে মু'আয (র) থেকে, তিনি তার পিতা (মু'আয) থেকে মারফু' সনদসূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাউদ (র) আরো বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন। তিনি (বারী) বলেন: "এরপর এক ব্যক্তি এসে বলল: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু। তখন তিনি (নবী ﷺ বলেন, তোমার অমলনামায় চল্লিশ নেকী। এভাবে যত বাড়াবে, তত নেকী বাড়িয়ে লেখা হবে"।)
كتاب الأدب
التَّرْغِيب فِي إفشاء السَّلَام وَمَا جَاءَ فِي فَضله وترهيب الْمَرْء من حب الْقيام لَهُ
4126- وَعَن عمرَان بن الْحصين رَضِي الله عَنهُ قَالَ جَاءَ رجل إِلَى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ السَّلَام عَلَيْكُم فَرد عَلَيْهِ ثمَّ جلس فَقَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عشر ثمَّ جَاءَ آخر فَقَالَ السَّلَام عَلَيْكُم وَرَحْمَة الله فَرد فَجَلَسَ فَقَالَ عشرُون ثمَّ جَاءَ آخر فَقَالَ السَّلَام عَلَيْكُم وَرَحْمَة الله وَبَرَكَاته فَرد فَجَلَسَ فَقَالَ ثَلَاثُونَ

رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وَحسنه
وَالنَّسَائِيّ وَالْبَيْهَقِيّ وَحسنه أَيْضا وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُد أَيْضا من طَرِيق أبي مَرْحُوم واسْمه عبد الرَّحِيم بن مَيْمُون عَن سهل بن معَاذ عَن أَبِيه مَرْفُوعا بِنَحْوِهِ
وَزَاد ثمَّ أَتَى آخر فَقَالَ السَّلَام عَلَيْكُم وَرَحْمَة الله وَبَرَكَاته ومغفرته فَقَالَ أَرْبَعُونَ
قَالَ هَكَذَا تكون الْفَضَائِل

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি দ্বারা জানা যায়, সালামের সংক্ষিপ্ত রূপ হল- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (তোমাদের সালাম)। এর মাঝামাঝি রূপ হল- السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ الله (তোমাদের প্রতি সালাম ও আল্লাহর রহমত)। এখানে একটি শব্দ বেশি আছে। তা হল রাহমাতুল্লাহ। পরিপূর্ণ রূপ হল- السَّلامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ( তোমাদের প্রতি সালাম ও আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত)। এখানে দু'টি শব্দ বেশি- রাহমাতুল্লাহ এবং বারাকাতুহু।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে পরপর তিন ব্যক্তি আসল। প্রথম ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত রূপে সালাম দিয়েছে। তাতে কেবল 'সালাম' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার সালামের অনুরূপ উত্তর দিলেন এবং বললেন, দশ। অর্থাৎ দশ নেকী হল। শব্দ যেহেতু একটি, তাই মূলত নেকীও হয় একটি। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা সব নেকীকেই দশগুণ বৃদ্ধি করেন। সে হিসেবে দশ নেকী বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে সালাম দিয়েছে দুই শব্দে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামেরও অনুরূপ উত্তর দিলেন এবং বললেন, বিশ (নেকী হয়েছে)।

তৃতীয় ব্যক্তি এসে পরিপূর্ণরূপে সালাম দিয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামেরও অনুরূপ উত্তর দিলেন এবং এ সালামে তিন শব্দ থাকায় বললেন, ত্রিশ (নেকী হয়েছে)।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা পরিপূর্ণরূপে সালাম দেওয়ার প্রতি উৎসাহদান করেছেন। অর্থাৎ উত্তম হল السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ- এই পরিপূর্ণ রূপে সালাম দেওয়া। কারণ এতে বেশি নেকী পাওয়া যায়। মূলত বেশি বেশি নেকী অর্জন করাই ইহজীবনের প্রধান কাজ। এ জগৎ আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। এখানে যত নেকী কামাই করা যাবে, আখিরাতে তার ততো বেশি সুফল ভোগ করা যাবে। বলাবাহুল্য, পরিপূর্ণরূপে সালাম দেওয়া হলে তার উত্তরও পরিপূর্ণরূপেই দিতে হবে।

লক্ষণীয়, প্রথম ব্যক্তি সংক্ষিপ্তরূপে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি মাঝামাঝিরূপে সালাম দিলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তিরস্কার করেননি যে, শব্দ কম ব্যবহার করলে কেন? বরং তাদেরকেও সালামের জবাব দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা যথাক্রমে দশ ও বিশ নেকী পেয়েছে। শব্দ কম হয়েছে বলে তাদের সালাম বৃথা যায়নি। যে যতটুকু বলেছে ততটুকুর ছাওয়াব অবশ্যই পাবে। বোঝা গেল সালাম সংক্ষিপ্তরূপে দেওয়াও জায়েয। যদিও শব্দ যত বেশি হবে ছাওয়াবও ততো বেশি মিলবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সালামের প্রত্যেক শব্দে দশ নেকী।

খ. সালাম সংক্ষিপ্তরূপে দেওয়া অর্থাৎ কেবল আসসালামু আলাইকুম বলাও জায়েয। এতটুকু বললেও সালাম দেওয়ার কর্তব্য পালন হয়ে যাবে।

গ. পরিপূর্ণরূপে সালাম দেওয়া উত্তম।

ঘ. কোনও সৎকর্মই বৃথা যায় না, যদিও তা ন্যূনতম পরিমাণে হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান