আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
২২. অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
হাদীস নং: ৪০৯৫
অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
নম্রতা, ধীরস্থিরতা ও সহনশীলতার প্রতি অনুপ্রেরণা
৪০৯৫. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: ঐ ব্যক্তি বীর নয়, যে তার প্রতিপক্ষকে পরাভূত করে বরং প্রকৃত বীর ঐ ব্যক্তি, যে ক্রোধান্বিত অবস্থায় নিজকে সংবরণ করতে পারে।
(বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত।
হাফিয মুনযিরী (র) বলেন: ইনশাআল্লাহ্ باب في الغضب ودفعه অনুচ্ছেদে এ বিষয়ক হাদীস আসবে।)
(বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত।
হাফিয মুনযিরী (র) বলেন: ইনশাআল্লাহ্ باب في الغضب ودفعه অনুচ্ছেদে এ বিষয়ক হাদীস আসবে।)
كتاب الأدب
التَّرْغِيب فِي الرِّفْق والأناة والحلم
4095- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لَيْسَ الشَّديد بالصرعة إِنَّمَا الشَّديد الَّذِي يملك نَفسه عِنْد الْغَضَب
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم
قَالَ الْحَافِظ وَسَيَأْتِي بَاب فِي الْغَضَب وَدفعه إِن شَاءَ الله تَعَالَى
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم
قَالَ الْحَافِظ وَسَيَأْتِي بَاب فِي الْغَضَب وَدفعه إِن شَاءَ الله تَعَالَى
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে দৈহিক বীরত্বের উপর আত্মিক বীরত্বকে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে। দৈহিক বীরত্বও বীরত্ব বটে এবং তার উপযুক্ত ব্যবহার দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক কল্যাণ লাভ করা যায়, কিন্তু আত্মিক বীরত্বের কল্যাণ অনেক বেশি। কারণ এর দ্বারা সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী শত্রু শয়তানকে পরাভূত করা যায়। শয়তানই মানুষের অন্তরে রাগের আগুন জ্বালায়। শয়তান জানে, এ আগুন দ্বারা দুনিয়ায় কোনও ব্যক্তিকে প্রজ্জ্বলিত করা গেলে সে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবেই। কেননা মানুষ যখন রাগে আগুন হয়, তখন সে কেবল নিজেই জ্বলে না, অন্যকেও জ্বালিয়ে ছারখার করে। তখন তার দ্বারা জান-মালের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়। এমন এমন ক্ষতি সে করে ফেলে, যার প্রতিকারও করা সম্ভব হয় না। আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে, ঘরদোরে আগুন দেয়, গাছপালা কেটে ফেলে, মারপিট করে ও স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। এমনও শোনা গেছে রাগের বশে নিজ সন্তানকে মারতে মারতে এমনকি মেরেই ফেলেছে। অনেকে রাগের বশে কুফরী কথা পর্যন্ত বলে ফেলে। শয়তান তো এইই চায়। মানুষ খুনোখুনি করুক, বেঈমান হয়ে যাক ও সংসার ভাঙ্গুক। রাগের আগুন জ্বালিয়ে সে ঠিকই তা ভাঙাতে সক্ষম হয়। তো আত্মিক শক্তি দ্বারা এহেন শত্রুর সংগেই লড়াই করা হয়। একই সংগে লড়াই চলে নফসের বিরুদ্ধেও। রাগের সময় মানুষের নফস নিয়ন্ত্রণহারা হয়ে যেতে চায়। সে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারলে বহিঃশত্রু শয়তানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে এবং ব্যক্তিকে দিয়ে শরী'আত বিরোধী কাজ করানোর প্রয়াস পায়। এমনকি যেই শারীরিক শক্তি দ্বারা মানুষ কাফির-বেঈমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হয়, সেখানেও নফস দূরভিসন্ধি চালায়। ব্যক্তির নিয়ত নষ্ট করে দিয়ে তাকে এ মহাসংগ্রামের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করে। তাই তো হাদীছ দ্বারা জানা যায়, কোনও কোনও মুজাহিদ, দানবীর ও আলেম-কারীকে নিয়ত সহীহ না হওয়ার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। নিয়ত নষ্ট করে সেখানে রিয়ার অনুপ্রবেশ নফসের কারসাজিতেই ঘটে। সবরকম আমলেই নফস তার কারসাজি চালায়। তাই দৈহিক শক্তির সুফল পেতেও আত্মিক শক্তির ব্যবহার ও নফসের চাহিদা দমনের প্রয়োজন হয়। এজন্যই নফসের সংগে জিহাদকে হাদীছে 'বড় জিহাদ' নামে অভিহিত করা হয়েছে। তা বড় জিহাদ এ কারণে যে, সকল আমলে থাবা বিস্তারকারী এহেন শত্রুকে পরাস্ত করতে হলে অনেক বড় আত্মিক শক্তির প্রয়োজন পড়ে।
রাগের সময় নফস খুব বেশি কার্যকর থাকে। ফলে রাগ ক্রমে বাড়তে থাকে, বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। রাগ যাতে সে পর্যায়ে পৌঁছতে না পারে, তার আগেই কর্তব্য রাগ বশীভূত করা ও নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এটা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব, যে রিয়াযাত-সাধনার মাধ্যমে নিজেকে সকল ক্ষেত্রে নবী মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী বানাতে সক্ষম হয়। এরূপ ব্যক্তির ক্রোধ সীমালঙ্ঘন করতে পারে না। ফলে তার দ্বারা এমন কোনও কাজ হয় না, যা তার দীন-দুনিয়া বরবাদ করে দেয়।
এ হাদীছে ক্রোধকালে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, যা দ্বারা বোঝা যায় ক্রুদ্ধ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং শরী'আতে এটাও কাম্য নয় যে, মানুষের বিলকুল রাগ না উঠুক। রাগ একটা স্বভাবগত বিষয়। যে-কোনও অপ্রীতিকর অবস্থার ক্ষেত্রে রাগ উঠবেই। বরং দীনের দিক থেকে যা অপ্রীতিকর, সে ক্ষেত্রে রাগ উঠা তো ঈমানের অঙ্গ। সেখানে রাগ করাই উচিত। সুতরাং রাগমাত্রই খারাপ নয়। খারাপ হচ্ছে রাগের অপব্যবহার। অর্থাৎ শরী'আতে যে ক্ষেত্রে রাগের প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয়, সে ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা ও রাগ অনুযায়ী কাজ করা। এরূপ ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কাম্য। এটা যে করতে পারে, সেই প্রকৃত বীর।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এটাও সবর। এরূপ সবরকারী প্রকৃত বীর। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য যখনই কোনও কারণে রাগ ওঠে, এ হাদীছের কথা স্মরণ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।
খ. রাগ যেহেতু স্বভাবগত বিষয়, তাই তা সম্পূর্ণ নির্মূল করে ফেলা কখনও সম্ভব নয়। কেবল এর অনুচিত ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।
রাগের সময় নফস খুব বেশি কার্যকর থাকে। ফলে রাগ ক্রমে বাড়তে থাকে, বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। রাগ যাতে সে পর্যায়ে পৌঁছতে না পারে, তার আগেই কর্তব্য রাগ বশীভূত করা ও নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এটা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব, যে রিয়াযাত-সাধনার মাধ্যমে নিজেকে সকল ক্ষেত্রে নবী মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী বানাতে সক্ষম হয়। এরূপ ব্যক্তির ক্রোধ সীমালঙ্ঘন করতে পারে না। ফলে তার দ্বারা এমন কোনও কাজ হয় না, যা তার দীন-দুনিয়া বরবাদ করে দেয়।
এ হাদীছে ক্রোধকালে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, যা দ্বারা বোঝা যায় ক্রুদ্ধ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং শরী'আতে এটাও কাম্য নয় যে, মানুষের বিলকুল রাগ না উঠুক। রাগ একটা স্বভাবগত বিষয়। যে-কোনও অপ্রীতিকর অবস্থার ক্ষেত্রে রাগ উঠবেই। বরং দীনের দিক থেকে যা অপ্রীতিকর, সে ক্ষেত্রে রাগ উঠা তো ঈমানের অঙ্গ। সেখানে রাগ করাই উচিত। সুতরাং রাগমাত্রই খারাপ নয়। খারাপ হচ্ছে রাগের অপব্যবহার। অর্থাৎ শরী'আতে যে ক্ষেত্রে রাগের প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয়, সে ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা ও রাগ অনুযায়ী কাজ করা। এরূপ ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কাম্য। এটা যে করতে পারে, সেই প্রকৃত বীর।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এটাও সবর। এরূপ সবরকারী প্রকৃত বীর। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য যখনই কোনও কারণে রাগ ওঠে, এ হাদীছের কথা স্মরণ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।
খ. রাগ যেহেতু স্বভাবগত বিষয়, তাই তা সম্পূর্ণ নির্মূল করে ফেলা কখনও সম্ভব নয়। কেবল এর অনুচিত ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)