আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২২. অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার

হাদীস নং: ৪০৭৫
অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
নম্রতা, ধীরস্থিরতা ও সহনশীলতার প্রতি অনুপ্রেরণা
৪০৭৫. হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহ কোমল ব্যক্তিকে যা দান করেন, কঠোর ব্যক্তিকে তা দান করেন না। আল্লাহ্ কাউকে ভালবাসলে তাকে কোমল করেন। যে পরিবার কোমলতা শূন্য, তারা (কল্যাণ থেকে) বঞ্চিত।
(তাবারানী বর্ণিত। তাঁর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত এবং মুসলিম ও আবু দাউদ (র) সংক্ষেপে এরূপ বর্ণনা করেন যে, তাকে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যাকে নম্রভাব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আবু দাউদের বর্ণনায় শব্দ বাড়িয়ে বলা হয়েছে।)
كتاب الأدب
التَّرْغِيب فِي الرِّفْق والأناة والحلم
4075- وَعَن جرير بن عبد الله رَضِي الله عَنهُ أَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ إِن الله عز وَجل ليعطي على الرِّفْق مَا لَا يُعْطي على الْخرق وَإِذا أحب الله عبدا أعطَاهُ الرِّفْق مَا من أهل بَيت يحرمُونَ الرِّفْق إِلَّا حرمُوا

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ وَرُوَاته ثِقَات وَرَوَاهُ مُسلم وَأَبُو دَاوُد
مُخْتَصرا من يحرم الرِّفْق يحرم الْخَيْر
زَاد أَبُو دَاوُد كُله

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কোমলতা থেকে বঞ্চিত থাকার অর্থ স্বভাব-চরিত্রে কোমলতা না থাকা এবং কাজকর্মে নরম ও কোমল হতে না পারা। যার স্বভাব-চরিত্রে কোমলতা নেই, সে সব কাজই করে কঠোরভাবে। নিজের জন্য যা করে তাও কঠোরভাবে করে এবং অন্যের প্রতি যে আচরণ করে তাতেও কঠোরতা ও রুক্ষতার পরিচয় দেয়। এ হাদীছ জানাচ্ছে, কোমলতা থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে। সুতরাং কঠোরভারে কাজকর্ম করায় এরূপ ব্যক্তি নিজেও কাজের সুফল লাভ করতে পারে না এবং অন্যের জন্য যা করে তাও সুফল দেয় না। তার প্রতিপালন, অভিভাবকত্ব, শিক্ষকতা কিংবা নেতৃত্ব কোনওকিছুই কল্যাণকর হয় না। বলাবাহুল্য, কল্যাণকর না হওয়ায় তার যাবতীয় প্রচেষ্টা কুফলই বয়ে আনে। সে নিজেও তার চেষ্টা ও শ্রমের সুফলের স্থানে কুফল ভোগ করে, অন্যরাও তার দ্বারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এক ব্যক্তি তার একটি মোরগকে বেঁধে রেখে কষ্ট দিত। একবার সে ঋণের দায়ে কয়েদ হয়ে যায়। বিখ্যাত ওলী মালিক ইবন দীনার রহ. তার এ অবস্থার কথা জানতে পেরে মন্তব্য করেছিলেন, এটা তার ওই মোরগটিকে কষ্ট দেওয়ারই পরিণাম।

অনেকেই নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, কিন্তু সে বুঝতে পারে না কেন সে এ দশায় পড়ল। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে হয়তো এর পেছনে তার কোনও কঠোর ও কঠিন আচরণই দায়ী। আল্লাহ তা'আলা পরম দয়ালু। বান্দার আচার-আচরণে কোমলতা থাকলে তাঁর পক্ষ থেকেও সে কোমল আচরণ পাবে বৈ কি। এটা পরীক্ষিত বিষয়। যে-কেউ মায়া-মমতা পরিত্যাগ করে কঠোরতা অবলম্বন করে, সে কোনও না কোনওভাবে অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হবেই। সুতরাং কেউ যদি আপন কাজে সুফল পেতে চায় এবং ভরপুর কল্যাণ ও বরকতলাভে ধন্য হতে চায়, তবে তার প্রকৃষ্ট উপায় হল প্রতিটি কাজ কোমলতা, সহিষ্ণুতা, ধীরস্থিরতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পাদন করা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

নিজে কল্যাণ লাভ করা ও অন্যের কল্যাণ সাধন করার লক্ষ্যে যাবতীয় কাজ কোমলতা ও মমতার সঙ্গে সম্পাদন করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান