আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
২১. অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
হাদীস নং: ৩৮৬৯
অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
ইয়াতীমের তত্ত্বাবধান, তার প্রতি দয়া প্রদর্শন, তার ভরণ-পোষণ এবং বিধবা ও দুঃস্থের সেবায় আত্মনিয়োগ করার প্রতি অনুপ্রেরণা
৩৮৬৯. হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: বিধবা ও মিসকিনের তত্ত্বাবধায়ক ব্যক্তি আল্লাহর নিকট আল্লাহর পথে জিহাদকারীর সমতুল্য। আমার মনে হয় তিনি আরো বলেছেন: সে ব্যক্তি লাগাতার রাত জাগরণকারী এবং একটানা সিয়াম পালনকারীর মত।
(বুখারী, মুসলিম ও ইবনে মাজা বর্ণিত। তবে ইবনে মাজার বর্ণনায় রয়েছে, বিধবা ও মিসকীনের তত্ত্বাবধানকারী আল্লাহর পথে জিহাদকারী, রাতে ইবাদতকারী এবং দিনে সিয়াম পালনকারীর ন্যায়।)
(বুখারী, মুসলিম ও ইবনে মাজা বর্ণিত। তবে ইবনে মাজার বর্ণনায় রয়েছে, বিধবা ও মিসকীনের তত্ত্বাবধানকারী আল্লাহর পথে জিহাদকারী, রাতে ইবাদতকারী এবং দিনে সিয়াম পালনকারীর ন্যায়।)
كتاب البر والصلة
التَّرْغِيب فِي كَفَالَة الْيَتِيم وَرَحمته وَالنَّفقَة عَلَيْهِ وَالسَّعْي على الأرملة والمسكين
3869- وَعَن أنس بن مَالك رَضِي الله عَنهُ عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ السَّاعِي على الأرملة والمسكين كالمجاهد فِي سَبِيل الله وَأَحْسبهُ قَالَ وكالقائم لَا يفتر وكالصائم لَا يفْطر
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَابْن مَاجَه إِلَّا أَنه قَالَ السَّاعِي على الأرملة والمسكين كالمجاهد فِي سَبِيل الله وكالذي يقوم اللَّيْل ويصوم النَّهَار
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَابْن مَاجَه إِلَّا أَنه قَالَ السَّاعِي على الأرملة والمسكين كالمجاهد فِي سَبِيل الله وكالذي يقوم اللَّيْل ويصوم النَّهَار
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে বিধবা ও মিসকীনদের সাহায্যকারীকে তুলনা করা হয়েছে আল্লাহর পথে মুজাহিদের সঙ্গে, অক্লান্তভাবে রাতভর নামায আদায়কারীর সঙ্গে এবং ওই ব্যক্তির সঙ্গে, যে একটানা নফল রাখতে থাকে। বিধবা-মিসকীনের সাহায্যকারীকে الساعي শব্দ দ্বারা ব্যক্তি করা হয়েছে। এর আক্ষরিক অর্থ দৌড়াদৌড়িকারী। শব্দটির উৎপত্তি سعي থেকে। এর অর্থ ধাবিত হওয়া। কুরআন মাজীদে আছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ
'হে মুমিনগণ! জুমআর দিন যখন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও।
ইয়াতীম ও বিধবার সাহায্যকারীর জন্য এ শব্দটির ব্যবহার দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য সবসময় এ কাজে তৎপর থাকা। এমন নয় যে, একবার কোনও ইয়াতীম বা বিধবার সাহায্য করল, তারপর আর কোনও খবর নেই। এটাও ছাওয়াবের কাজ বটে, কিন্তু হাদীছে বর্ণিত ফযীলত পেতে হলে এ কাজটিকে নিয়মিত আমল বানিয়ে নিতে হবে। আল্লাহর পথের মুজাহিদ যখনই জিহাদের ডাক আসে তাতে সাড়া দেয়, এমনিভাবে তাহাজ্জুদগুযার নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং নফল রোযাদার ব্যক্তি নিরবচ্ছিন্নভাবে রোযা রাখে, ঠিক তেমনিভাবে যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে ইয়াতীম ও বিধবার সাহায্য সহযোগিতায় সদা তৎপর থাকে, সে-ই ফযীলতে তাদের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। এরূপ ব্যক্তির ক্ষেত্রে আক্ষরিকভাবেও শব্দটির অর্থ পাওয়া যায়। কারণ তাকে এ কাজের জন্য বারবার ইয়াতীম ও বিধবাদের কাছে আসা-যাওয়া করতে হয়। সেজন্য দ্রুত হাঁটতে হয়, এমনকি প্রয়োজনে দৌড়াতেও হয়। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিয়মিত তৎপরতা বোঝানো।
ইয়াতীম ও বিধবাদের সাহায্য-সহযোগিতায় তৎপর ব্যক্তিকে উল্লিখিত তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে তুলনা করার কারণ হচ্ছে ওই তিন শ্রেণীর লোককে যেমন আপন আপন আমল চালিয়ে যাওয়ার জন্য কঠিন সবর অবলম্বন করতে হয় এবং নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে কঠোর মুজাহাদায় অবতীর্ণ হতে হয়, তেমনি এ কাজেও কঠিন সবর ও কঠোর মুজাহাদার দরকার হয়। যার মধ্যে এ গুণ নেই, তার পক্ষে নিয়মিতভাবে এ কাজ করে যাওয়া সম্ভব নয়। সে দু'-চারবার করেই ক্ষান্ত হয়ে যাবে। বিশেষত এ কাজে ইখলাস রক্ষার জন্য নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রামের প্রয়োজন হয়। কেননা পরোপকারের কাজটি এমন যে, নফস তাতে খ্যাতি ও প্রচারের দিকে খুব ঝোঁকে। নফস চায়, যাদের সেবা করা হয় তারা মানুষকে সে কথা বলুক। যখন যেখানে সুযোগ হয় নিজেরও তা বলতে খুব ইচ্ছা হয়। মনের এ ইচ্ছা কঠিন সংগ্রাম ছাড়া দমন করা সম্ভব হয় না। বলাবাহুল্য, আখেরাতের ছাওয়াব পেতে হলে নফসের সেই ইচ্ছা দমন করতেই হবে, তাতে সংগ্রাম যত কঠিনই হোক না কেন।
যাহোক এ কথা সকলেরই জানা যে, উল্লিখিত তিন শ্রেণীর লোক আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক বেশি মর্যাদাবান। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াতীম ও বিধবাদের সেবককে তাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এ সেবা কত মর্যাদাপূর্ণ এবং এর ছাওয়াব কত বেশি। কাজেই ধৈর্যের সঙ্গে এবং নফসের বিরুদ্ধে অবিরাম জিহাদে লিপ্ত থেকে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী এ মহান আমলটি করে যাওয়া চাই। কেননা এর দ্বারা এ দুর্বল শ্রেণীর দুঃখ-কষ্ট ও অভাব অনটন মোচন হয়, তাদের ইজ্জত ও সম্মানের হেফাজত হয় এবং তাদের দীন ও ঈমানেরও হয় সুরক্ষা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এদিকে মনোযোগী হওয়ার তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সরাসরি বিধবা ও ইয়াতীমদের সেবা করে যাওয়ার ফযীলত জানা গেল। আপন সামর্থ্য অনুযায়ী এ ফযীলত অর্জনের জন্য আমাদের সচেষ্ট থাকা চাই।
খ. পরোক্ষভাবে এটাও জানা গেল যে, আল্লাহর পথে জিহাদ করা, নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া এবং যতবেশি সম্ভব নফল রোযা রাখা অতি উচ্চস্তরের ইবাদত। যার সঙ্গে কোনওকিছুকে তুলনা করা হয়, মর্যাদায় সেটিই শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকে। সুতরাং এ আমলসমূহেও আমাদের পূর্ণ আগ্রহ ও চেষ্টা থাকা চাই।
২৯২. সূরা জুমু'আ (৬২), আয়াত ৯
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ
'হে মুমিনগণ! জুমআর দিন যখন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও।
ইয়াতীম ও বিধবার সাহায্যকারীর জন্য এ শব্দটির ব্যবহার দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য সবসময় এ কাজে তৎপর থাকা। এমন নয় যে, একবার কোনও ইয়াতীম বা বিধবার সাহায্য করল, তারপর আর কোনও খবর নেই। এটাও ছাওয়াবের কাজ বটে, কিন্তু হাদীছে বর্ণিত ফযীলত পেতে হলে এ কাজটিকে নিয়মিত আমল বানিয়ে নিতে হবে। আল্লাহর পথের মুজাহিদ যখনই জিহাদের ডাক আসে তাতে সাড়া দেয়, এমনিভাবে তাহাজ্জুদগুযার নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং নফল রোযাদার ব্যক্তি নিরবচ্ছিন্নভাবে রোযা রাখে, ঠিক তেমনিভাবে যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে ইয়াতীম ও বিধবার সাহায্য সহযোগিতায় সদা তৎপর থাকে, সে-ই ফযীলতে তাদের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। এরূপ ব্যক্তির ক্ষেত্রে আক্ষরিকভাবেও শব্দটির অর্থ পাওয়া যায়। কারণ তাকে এ কাজের জন্য বারবার ইয়াতীম ও বিধবাদের কাছে আসা-যাওয়া করতে হয়। সেজন্য দ্রুত হাঁটতে হয়, এমনকি প্রয়োজনে দৌড়াতেও হয়। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিয়মিত তৎপরতা বোঝানো।
ইয়াতীম ও বিধবাদের সাহায্য-সহযোগিতায় তৎপর ব্যক্তিকে উল্লিখিত তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে তুলনা করার কারণ হচ্ছে ওই তিন শ্রেণীর লোককে যেমন আপন আপন আমল চালিয়ে যাওয়ার জন্য কঠিন সবর অবলম্বন করতে হয় এবং নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে কঠোর মুজাহাদায় অবতীর্ণ হতে হয়, তেমনি এ কাজেও কঠিন সবর ও কঠোর মুজাহাদার দরকার হয়। যার মধ্যে এ গুণ নেই, তার পক্ষে নিয়মিতভাবে এ কাজ করে যাওয়া সম্ভব নয়। সে দু'-চারবার করেই ক্ষান্ত হয়ে যাবে। বিশেষত এ কাজে ইখলাস রক্ষার জন্য নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রামের প্রয়োজন হয়। কেননা পরোপকারের কাজটি এমন যে, নফস তাতে খ্যাতি ও প্রচারের দিকে খুব ঝোঁকে। নফস চায়, যাদের সেবা করা হয় তারা মানুষকে সে কথা বলুক। যখন যেখানে সুযোগ হয় নিজেরও তা বলতে খুব ইচ্ছা হয়। মনের এ ইচ্ছা কঠিন সংগ্রাম ছাড়া দমন করা সম্ভব হয় না। বলাবাহুল্য, আখেরাতের ছাওয়াব পেতে হলে নফসের সেই ইচ্ছা দমন করতেই হবে, তাতে সংগ্রাম যত কঠিনই হোক না কেন।
যাহোক এ কথা সকলেরই জানা যে, উল্লিখিত তিন শ্রেণীর লোক আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক বেশি মর্যাদাবান। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াতীম ও বিধবাদের সেবককে তাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এ সেবা কত মর্যাদাপূর্ণ এবং এর ছাওয়াব কত বেশি। কাজেই ধৈর্যের সঙ্গে এবং নফসের বিরুদ্ধে অবিরাম জিহাদে লিপ্ত থেকে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী এ মহান আমলটি করে যাওয়া চাই। কেননা এর দ্বারা এ দুর্বল শ্রেণীর দুঃখ-কষ্ট ও অভাব অনটন মোচন হয়, তাদের ইজ্জত ও সম্মানের হেফাজত হয় এবং তাদের দীন ও ঈমানেরও হয় সুরক্ষা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এদিকে মনোযোগী হওয়ার তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সরাসরি বিধবা ও ইয়াতীমদের সেবা করে যাওয়ার ফযীলত জানা গেল। আপন সামর্থ্য অনুযায়ী এ ফযীলত অর্জনের জন্য আমাদের সচেষ্ট থাকা চাই।
খ. পরোক্ষভাবে এটাও জানা গেল যে, আল্লাহর পথে জিহাদ করা, নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া এবং যতবেশি সম্ভব নফল রোযা রাখা অতি উচ্চস্তরের ইবাদত। যার সঙ্গে কোনওকিছুকে তুলনা করা হয়, মর্যাদায় সেটিই শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকে। সুতরাং এ আমলসমূহেও আমাদের পূর্ণ আগ্রহ ও চেষ্টা থাকা চাই।
২৯২. সূরা জুমু'আ (৬২), আয়াত ৯
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)