আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
২১. অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
হাদীস নং: ৩৮৩১
অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে সম্পর্ক অটুট রাখার প্রতি অনুপ্রেরণা এবং সম্পর্ক ছিন্নকরার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৩৮৩১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ'স (রা) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: সেই ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, যে শুধু বিনিময় হিসেবে তা করে। বরং প্রকৃতপক্ষে সেই ব্যক্তিই আত্মীয়তা রক্ষাকারী, যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর সে তা পুনঃ স্থাপন করে।
(বুখারী, নিজ শব্দে, আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণিত।)
(বুখারী, নিজ শব্দে, আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণিত।)
كتاب البر والصلة
التَّرْغِيب فِي صلَة الرَّحِم وَإِن قطعت والترهيب من قطعهَا
3831- وَعَن عبد الله بن عَمْرو بن الْعَاصِ رَضِي الله عَنْهُمَا عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لَيْسَ الْوَاصِل بالمكافىء وَلَكِن الْوَاصِل الَّذِي إِذا قطعت رَحمَه وَصلهَا
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَاللَّفْظ لَهُ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَاللَّفْظ لَهُ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
অর্থাৎ ওই ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ আত্মীয়তা রক্ষাকারী বলা যায় না, যে তার আত্মীয়ের সঙ্গে ব্যবহারকালে তার প্রতি সেই আত্মীয়ের আচার-আচরণ বিবেচনায় রাখে। ফলে সে তার সঙ্গে যেমন ব্যবহার করে, এও তার সঙ্গে তেমন ব্যবহারই করে। সে সম্পর্ক রাখলে এও সম্পর্ক রাখে, আর সে সম্পর্ক না রাখলে এও রাখে না। এমনিভাবে ওই ব্যক্তি তার সঙ্গে যতটুকু সম্পর্ক রাখে সেও ততটুকু সম্পর্কই রাখে, তার বেশি নয়। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. বলেন-
لَيْسَ الْوَصْلُ أَنْ تَصِلَ مَنْ وَصَلَكَ، ذَلِكَ الْقِصَاصُ ، وَلكِنَّ الْوَصْلَ أَنْ تَصِلَ مَنْ قطَعَكَ
‘আত্মীয়তা রক্ষা এ নয় যে, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করবে তুমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করবে। এটা তো বদলা-বদলি। বরং আত্মীয়তা রক্ষা হলো এই যে, যে ব্যক্তি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে রাখবে। ৮৩
বুঝা গেল আত্মীয়ের প্রতি আচরণে অপরপক্ষের আচার-আচরণ বিবেচ্য নয়; বরং তার সঙ্গে আচরণ করতে হবে নিজের আদর্শিক স্থান থেকে। লক্ষ রাখতে হবে শরীআতের শিক্ষা। আমার কী করণীয় আমি সেটাই চিন্তা করব। সে কী করল তা দেখা আমার কাজ নয়। এ হাদীছের মূল বার্তা সেটাই। অপর এক হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا تَكُونُوا إِمَّعَةً، تَقُولُونَ: إِنْ أَحْسَنَ النَّاسُ أَحْسَنَّا، وَإِنْ ظَلَمُوا ظَلَمْنَا، وَلَكِنْ وَطِّنُوا أَنْفُسَكُمْ، إِنْ أَحْسَنَ النَّاسُ أَنْ تُحْسِنُوا، وَإِنْ أَسَاءُوا فَلَا تَظْلِمُوا
‘তোমরা ইম্মাআ (প্রতিক্রিয়াশীল আচরণকারী) হবে না যে, বলবে- লোকে ভালো ব্যবহার করলে আমরা ভালো ব্যবহার করব আর তারা জুলুম করলে আমরাও জুলুম করব। বরং তোমরা নিজেদেরকে (এই আদর্শের উপর) সুপ্রতিষ্ঠিত রাখ যে, লোকে ভালো ব্যবহার করলে তো ভালো ব্যবহার করবেই, আর যদি তারা মন্দ ব্যবহারও করে, তবুও তোমরা তাদের প্রতি জুলুম করবে না।৮৪
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত উকবা ইবন আমির রাযি.-কে লক্ষ্য করে নসীহত করেছিলেন-
يَا عُقْبَةُ بْنَ عَامِرٍ ، صِلْ مَنْ قَطَعَكَ ، وَأَعْطِ مَنْ حَرَمَكَ، وَاعْفُ عَمَّنْ ظَلَمَكَ
‘হে আমিরের পুত্র উকবা! তোমার সঙ্গে যে ব্যক্তি সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে রাখবে। যে ব্যক্তি তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে দান-দক্ষিণা করবে। আর তোমার প্রতি যে জুলুম করে, তুমি তাকে ক্ষমা করবে। ৮৫
আত্মীয়তা রক্ষা করা ও ছিন্ন করা হিসেবে মানুষ তিন স্তরের হতে পারে- ক. ওয়াসিল। অর্থাৎ যে ব্যক্তি সর্বাবস্থায় আত্মীয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে, অপরপক্ষ ভালো ব্যবহার করুক বা মন্দ ব্যবহার। খ. মুকাফি (বদলা দানকারী)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আত্মীয়ের সঙ্গে সমান সমান ব্যবহার করে। আত্মীয় ভালো ব্যবহার করলে সেও ভালো ব্যবহার করে, মন্দ ব্যবহার করলে সেও মন্দ ব্যবহার করে। গ. কাতি' (ছিন্নকারী)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আত্মীয়ের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করে, কিন্তু সে নিজে ভালো ব্যবহার কামনা করে। এর মধ্যে প্রথম স্তর প্রশংসনীয়। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে এ স্তরে থাকতেই উৎসাহ দেয় । দ্বিতীয় স্তর না প্রশংসনীয়, না নিন্দনীয়। এটা জায়েয বটে, তবে এটা আত্মশক্তিতে যারা দুর্বল তাদের স্তর। এ স্তরে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা মন্দের বদলা মন্দ দিতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন আর তা জায়েয থাকে না; নাজায়েয স্তরে নেমে যায়। তৃতীয় স্তর সম্পূর্ণ নাজায়েয ও নিন্দনীয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
প্রত্যেক আত্মীয়ের কর্তব্য অপর আত্মীয়ের সঙ্গে সর্বাবস্থায় সুসম্পর্ক রক্ষা করা। সে কেমন আচরণ করল সেটিকে নিজ আচরণের মাপকাঠি বানানো উচিত নয়।
৮৩. বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫৮৬
৮৪. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২০০৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৪৪
৮৫. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭৪৫২; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৭২৩
لَيْسَ الْوَصْلُ أَنْ تَصِلَ مَنْ وَصَلَكَ، ذَلِكَ الْقِصَاصُ ، وَلكِنَّ الْوَصْلَ أَنْ تَصِلَ مَنْ قطَعَكَ
‘আত্মীয়তা রক্ষা এ নয় যে, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করবে তুমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করবে। এটা তো বদলা-বদলি। বরং আত্মীয়তা রক্ষা হলো এই যে, যে ব্যক্তি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে রাখবে। ৮৩
বুঝা গেল আত্মীয়ের প্রতি আচরণে অপরপক্ষের আচার-আচরণ বিবেচ্য নয়; বরং তার সঙ্গে আচরণ করতে হবে নিজের আদর্শিক স্থান থেকে। লক্ষ রাখতে হবে শরীআতের শিক্ষা। আমার কী করণীয় আমি সেটাই চিন্তা করব। সে কী করল তা দেখা আমার কাজ নয়। এ হাদীছের মূল বার্তা সেটাই। অপর এক হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا تَكُونُوا إِمَّعَةً، تَقُولُونَ: إِنْ أَحْسَنَ النَّاسُ أَحْسَنَّا، وَإِنْ ظَلَمُوا ظَلَمْنَا، وَلَكِنْ وَطِّنُوا أَنْفُسَكُمْ، إِنْ أَحْسَنَ النَّاسُ أَنْ تُحْسِنُوا، وَإِنْ أَسَاءُوا فَلَا تَظْلِمُوا
‘তোমরা ইম্মাআ (প্রতিক্রিয়াশীল আচরণকারী) হবে না যে, বলবে- লোকে ভালো ব্যবহার করলে আমরা ভালো ব্যবহার করব আর তারা জুলুম করলে আমরাও জুলুম করব। বরং তোমরা নিজেদেরকে (এই আদর্শের উপর) সুপ্রতিষ্ঠিত রাখ যে, লোকে ভালো ব্যবহার করলে তো ভালো ব্যবহার করবেই, আর যদি তারা মন্দ ব্যবহারও করে, তবুও তোমরা তাদের প্রতি জুলুম করবে না।৮৪
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত উকবা ইবন আমির রাযি.-কে লক্ষ্য করে নসীহত করেছিলেন-
يَا عُقْبَةُ بْنَ عَامِرٍ ، صِلْ مَنْ قَطَعَكَ ، وَأَعْطِ مَنْ حَرَمَكَ، وَاعْفُ عَمَّنْ ظَلَمَكَ
‘হে আমিরের পুত্র উকবা! তোমার সঙ্গে যে ব্যক্তি সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে রাখবে। যে ব্যক্তি তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে দান-দক্ষিণা করবে। আর তোমার প্রতি যে জুলুম করে, তুমি তাকে ক্ষমা করবে। ৮৫
আত্মীয়তা রক্ষা করা ও ছিন্ন করা হিসেবে মানুষ তিন স্তরের হতে পারে- ক. ওয়াসিল। অর্থাৎ যে ব্যক্তি সর্বাবস্থায় আত্মীয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে, অপরপক্ষ ভালো ব্যবহার করুক বা মন্দ ব্যবহার। খ. মুকাফি (বদলা দানকারী)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আত্মীয়ের সঙ্গে সমান সমান ব্যবহার করে। আত্মীয় ভালো ব্যবহার করলে সেও ভালো ব্যবহার করে, মন্দ ব্যবহার করলে সেও মন্দ ব্যবহার করে। গ. কাতি' (ছিন্নকারী)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আত্মীয়ের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করে, কিন্তু সে নিজে ভালো ব্যবহার কামনা করে। এর মধ্যে প্রথম স্তর প্রশংসনীয়। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে এ স্তরে থাকতেই উৎসাহ দেয় । দ্বিতীয় স্তর না প্রশংসনীয়, না নিন্দনীয়। এটা জায়েয বটে, তবে এটা আত্মশক্তিতে যারা দুর্বল তাদের স্তর। এ স্তরে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা মন্দের বদলা মন্দ দিতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন আর তা জায়েয থাকে না; নাজায়েয স্তরে নেমে যায়। তৃতীয় স্তর সম্পূর্ণ নাজায়েয ও নিন্দনীয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
প্রত্যেক আত্মীয়ের কর্তব্য অপর আত্মীয়ের সঙ্গে সর্বাবস্থায় সুসম্পর্ক রক্ষা করা। সে কেমন আচরণ করল সেটিকে নিজ আচরণের মাপকাঠি বানানো উচিত নয়।
৮৩. বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫৮৬
৮৪. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২০০৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৪৪
৮৫. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭৪৫২; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৭২৩
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)