আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২১. অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার

হাদীস নং: ৩৭৮১
অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
অধ্যায় : সদ্ব্যবহার, সুসম্পর্ক ইত্যাদি।
পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার, তাদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা, তাদের আনুগত্যের প্রতি গুরুত্বারোপ, তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং মৃত্যুর পর তাদের বন্ধুবর্গের প্রতি সদাচরণের প্রতি অনুপ্রেরণা
৩৭৮১. হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী (ﷺ) মিম্বারে উঠে বলেন, আমীন, আমীন, আমীন। অতঃপর তিনি (এর রহস্য ব্যক্ত করে) বলেন, ’’আমার নিকট জিবরীল (আ) উপস্থিত হয়ে বললেন, ’হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি পিতামাতার একজনকে পেল, অথচ সে (তাদের সাথে) সদাচরণ না করে মৃত্যুবরণ করল, সে জাহান্নামী। আল্লাহ তাকে রহমত থেকে বঞ্চিত করুন। আপনি আমীন বলুন। আমি আমীন বললাম। তারপর তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি রামাযান মাস পেল, অথচ সে পাপ নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে রহমত থেকে বঞ্চিত করুন। আপনি আমীন বলুন। আমি আমীন বললাম। এরপর তিনি বলেন: যার নিকট আপনার নাম (মুহাম্মাদ) উচ্চারণ করা হল, অথচ সে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ না করে মৃত্যুবরণ করল, সে জাহান্নামী। আল্লাহ্ তাকে রহমত থেকে বঞ্চিত করুন। আপনি আমীন বলুন। তখন আমি আমীন বললাম।
তাবারানী কয়েকটি সূত্রে বর্ণনা করেন। তবে একটি সূত্র উত্তম। ইবনে হিব্বান তাঁর সহীহ গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তার শব্দমালা এরূপ- "যে ব্যক্তি তাঁর পিতামাতা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে পেল, অথচ সে তাদের সাথে সদাচরণ না করে মৃত্যুবরণ করল, সে জাহান্নামী। আল্লাহ্ তাকে রহমত থেকে বঞ্চিত করুন। আপনি আমীন বলুন।
অনুরূপ তিনি হাসান ইবনে মালিক হুয়াইরিছ হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা সূত্রে বর্ণনা করেছেন যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীসটি হাকিম ও অন্যান্যগণ কা'ব ইবনে উযরা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হাদীসের শেষাংশে বলেন, তিনি (নবী ﷺ) বলেছেন: "এরপর আমি যখন মিম্বারের তৃতীয় সিঁড়িতে উঠি, তখন তিনি (জিব্‌রাঈল) বলেনঃ "যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধ বয়সে পেল অথচ জান্নাতী হতে পারল না। আমি বললাম, আমীন।" অনুরূপ পেছনে বর্ণিত হয়েছে।
(তাবারানী (র) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) সূত্রে অনুরূপ এই হাদীসটি বর্ণনা করেন। তার বর্ণনায় আছে, "যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অথবা তাদের একজনকে পেল অথচ তাদের সাথে সদাচরণ করল না, সে জাহান্নামী। আল্লাহ তাকে রহমত থেকে বঞ্চিত করবেন এবং তাকে ধ্বংস করবেন। আমি বললাম, আমীন।")
كتاب البر والصلة
كتاب الْبر والصلة وَغَيرهمَا
التَّرْغِيب فِي بر الْوَالِدين وصلتهما وتأكيد طاعتهما وَالْإِحْسَان إِلَيْهِمَا وبر أصدقائهما من بعدهمَا
3781- وَعَن جَابر يَعْنِي ابْن سَمُرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ صعد النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم الْمِنْبَر فَقَالَ آمين آمين آمين
قَالَ أَتَانِي جِبْرِيل عَلَيْهِ الصَّلَاة وَالسَّلَام فَقَالَ يَا مُحَمَّد من أدْرك أحد أَبَوَيْهِ فَمَاتَ فَدخل النَّار فَأَبْعَده الله فَقل آمين فَقلت آمين فَقَالَ يَا مُحَمَّد من أدْرك شهر رَمَضَان فَمَاتَ فَلم يغْفر لَهُ فَأدْخل النَّار فَأَبْعَده الله فَقل آمين فَقلت آمين
قَالَ وَمن ذكرت عِنْده فَلم يصل عَلَيْك فَمَاتَ فَدخل النَّار فَأَبْعَده الله فَقل آمين فَقلت آمين
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ بأسانيد أَحدهَا حسن وَرَوَاهُ ابْن حبَان فِي صَحِيحه من حَدِيث أبي هُرَيْرَة إِلَّا أَنه قَالَ فِيهِ وَمن أدْرك أَبَوَيْهِ أَو أَحدهمَا فَلم يَبرهُمَا فَمَاتَ فَدخل النَّار فَأَبْعَده الله قل آمين
فَقلت آمين
رَوَاهُ أَيْضا من حَدِيث الْحسن بن مَالك الْحُوَيْرِث عَن أَبِيه عَن جده وَتقدم وَرَوَاهُ الْحَاكِم وَغَيره من حَدِيث كَعْب بن عجْرَة وَقَالَ فِي آخِره فَلَمَّا رقيت الثَّالِثَة قَالَ بعد من أدْرك أَبَوَيْهِ الْكبر عِنْده أَو أَحدهمَا فَلم يدْخلَاهُ الْجنَّة
قلت آمين وَتقدم أَيْضا

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ من حَدِيث ابْن عَبَّاس بِنَحْوِهِ وَفِيه وَمن أدْرك وَالِديهِ أَو أَحدهمَا فَلم يَبرهُمَا دخل النَّار فَأَبْعَده الله وأسحقه قلت آمين

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ জানাচ্ছে পিতা-মাতার দু'জনকেই বা তাদের কোনও একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পাওয়া জান্নাতলাভের একটি উপায়। এ অবস্থায় তাদের সেবাযত্ন করলে জান্নাত লাভ হয়। কাজেই কেউ যদি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের কোনও একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পায়, তবে তার কর্তব্য তাদের সেবাযত্নে লিপ্ত থাকা। এটা করলে তা তার জন্য জান্নাতলাভের একটি বড় উপায় হবে। কিন্তু কেউ যদি এতে অবহেলা করে এবং বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবাযত্ন করা হতে বিরত থাকে, তবে সে বড় হতভাগা। সে সুযোগ পেয়েও জান্নাতলাভ থেকে বঞ্চিত থাকল এবং নিজের জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে নিল।

বস্তুত পিতা-মাতার সেবাযত্নে অবহেলা করে এমন লোকই, যে নিজের খেয়াল-খুশিমত চলে এবং আল্লাহকে খুশি করার পরিবর্তে মনের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকে। নিজ খেয়াল-খুশিমত চলা ও মনের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকার দ্বারা যা হয় তা আল্লাহ তাআলার নাফরমানি ও পাপকর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। পাপকর্মের পরিণাম কেবলই জাহান্নাম। এ ব্যক্তি যেন জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের পথই বেছে নেয়। জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নাম বেছে নেওয়া মনুষ্যত্বের পরম লাঞ্ছনা।

হাদীছে আছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠছিলেন। এ অবস্থায় পরপর তিনবার আমীন বললেন। পরে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উপরে বর্ণিত তিন ব্যক্তির প্রতি লাঞ্ছিত হওয়ার অভিশাপ দিচ্ছিলেন আর তিনি তাতে আমীন বলছিলেন।৭৩

একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় এটা কত বড় ভয়ের কথা। সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বদ্দুআ করছেন আর তার জবাবে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলছেন! এটা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনও সন্দেহ থাকে কি? আল্লাহ, ফিরিশতা, নবী-রাসূল ও আখেরাতের উপর যার ঈমান আছে, তার তো এ বদ্দুআ শুনে ভয়ে কেঁপে উঠার কথা। এ অভিশাপ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে প্রত্যেক মুমিনের উচিত অতি সতর্কতার সঙ্গে হাদীছে বর্ণিত এ তিনওটি বিষয়ে মনোযোগী থাকা। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনলে ভক্তি ও মহব্বতের সঙ্গে দুরূদ পাঠ করবে, রমযান মাস আসলে সবরকম গুনাহ হতে বিরত থেকে একজন খাঁটি বান্দা ও সাচ্চা মুসলিমরূপে এ মাসটি কাটাবে এবং পরম যত্নের সঙ্গে বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবাযত্ন করবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পিতা-মাতার বার্ধক্য অবস্থায় তাদের সেবাযত্ন করা জান্নাতলাভের একটি বড় উপায় ।

খ. বৃদ্ধ পিতা-মাতার খেদমত করার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তাতে অবহেলা করার পরিণাম দুনিয়া ও আখেরাতের চরম লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা।

৭৩. বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৬৪৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩১৫; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১৪৭১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান