আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২০. অধ্যায়ঃ হদ্দ

হাদীস নং: ৩৬৩৩
অধ্যায়ঃ হদ্দ
প্রতিবেশীর স্ত্রী ও যার স্বামী অনুপস্থিত, এমন নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার প্রতি ভীতি প্রদর্শন এবং লজ্জাস্থান সংযত রাখার প্রতি অনুপ্রেরণা
৩৬৩৩. হযরত আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে একজন মদ্যপায়ীকে উপস্থিত করা হল। তখন তিনি বলেনঃ হে লোক সকল! আল্লাহর (বিধান) সীমালংঘন থেকে বিরত থাক। কাজেই যে ব্যক্তি এ ধরনের কোন অপরাধে জড়িত হয়, সে যেন আল্লাহর রহমতের পর্দায় তা গোপন করে রাখে। কেননা, যে ব্যক্তি আমার কাছে তা প্রকাশ করবে, আল্লাহর বিধান তার প্রতি কার্যকর করা হবে। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করেন:
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ
"তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ্ ডাকে না। আল্লাহ্ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না।" (সূরা ফুরকান: ৬৮)। তিনি বলেনঃ (উক্ত আয়াতে) ব্যভিচারকে 'শিরক বিল্লাহর' সাথে মিলিয়ে বলা হয়েছে। তিনি বললেন: ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন সে মু'মিন থাকে না।
(রাযীন বর্ণিত। হাদীসের নীতিমালার সূত্রে এরূপ পাইনি।)
كتاب الحدود
التَّرْهِيب من الزِّنَا سِيمَا بحليلة الْجَار والمغيبة وَالتَّرْغِيب فِي حفظ الْفرج
3633- وَعَن عبد الله رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أُتِي بِرَجُل قد شرب فَقَالَ يَا أَيهَا النَّاس قد آن لكم أَن تنتهوا عَن حُدُود الله فَمن أصَاب من هَذِه القاذورة شَيْئا فليستتر بستر الله فَإِنَّهُ من يبد لنا صفحته نقم عَلَيْهِ كتاب الله وَقَرَأَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَالَّذين لَا يدعونَ مَعَ الله إِلَهًا آخر وَلَا يقتلُون النَّفس الَّتِي حرم الله إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يزنون الْفرْقَان 86
وَقَالَ قرن الزِّنَا مَعَ الشّرك وَقَالَ وَلَا يَزْنِي الزَّانِي حِين يَزْنِي وَهُوَ مُؤمن

ذكره رزين وَلم أره بِهَذَا السِّيَاق فِي الْأُصُول

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন اجتنبوا هذه القاذورة التي نهى الله عنها، فمن ألم بشيء منها، فليستتر بستر الله 'আল্লাহ তাআলা যা নিষেধ করেছেন, সেই (পাপ) পঙ্কিলতা পরিহার কর। কেউ তাতে লিপ্ত হয়ে পড়লে সে যেন আল্লাহর পর্দায় নিজেকে আড়াল করে রাখে।[১]
আল্লাহর পর্দায় নিজেকে আড়াল করার অর্থ নিজের থেকে গুনাহের কথা প্রকাশ না করা। বান্দা যতক্ষণ সীমালঙ্ঘন না করে, ততক্ষণ আল্লাহ তাআলা তার দোষ গোপন রাখেন। তিনি সাত্তারুল উয়ুব বান্দার দোষত্রুটি গোপনকারী। তাঁর পক্ষ থেকে গোপন রাখাটাই তাঁর পর্দা। সুতরাং যে ব্যক্তি তাঁর সে পর্দার মর্যাদা রক্ষা করবে অর্থাৎ নিজের পক্ষ থেকে পাপ প্রকাশ করবে না, আল্লাহ তাআলাও তার প্রতি রহমতের আচরণ করবেন। তাঁর রহমত তাঁর ক্রোধের উপর প্রবল। তিনি দুনিয়ায় যার দোষ গোপন রাখবেন, আখেরাতে তাকে কিছুতেই লাঞ্ছিত করবেন না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা বান্দার প্রতি আল্লাহর অসীম দয়ার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি নিজ দয়ায় সহজে বান্দার দোষ প্রকাশ করেন না। নিজ দয়ার পর্দা দিয়ে তা ঢেকে রাখেন। তাই বান্দারও কর্তব্য নিজের থেকে তা প্রকাশ না করা।

খ. কিছুতেই যাতে গুনাহ না হয়ে যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। তারপরও যে গুনাহ গোপনে হয়ে যায়, তা প্রকাশ না করা।

গ. গোপনে গুনাহ করার পর নিজের পক্ষ থেকে তা প্রকাশ করা একরকম ধৃষ্টতা, আল্লাহর পর্দার প্রতি অশ্রদ্ধা ও একরকম নির্লজ্জতার বহিঃপ্রকাশ। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।

[১] মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১৩৩৪২; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ৯১; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৭৬০১; আস্ সুনানুস্ সগীর, হাদীছ নং ২৭২৯; ফাতহুল বারী, ১০ খণ্ড, ৫৯৮ পৃষ্ঠা (হাকিম, আল-মুস্তাদরাক-এর বরাতে)
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান