আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৮. অধ্যায়ঃ পানাহার সংশ্লিষ্ট বিষয়

হাদীস নং: ৩২৩৭
অধ্যায়ঃ পানাহার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সিরকা ও যায়তুন খাওয়া এবং চাকু দ্বারা না কেটে গোশতের চর্বি খাওয়ার প্রতি অনুপ্রেরণা
৩২৩৭. হযরত উম্মু হানী বিনত আবু তালিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার নিকট আসেন এবং বলেন: তোমাদের কাছে কিছু আছে কি? আমি বললাম, না তবে শুকনা রুটি এবং সিরকা আছে। নবী (ﷺ) বলেনঃ তা আমার নিকট নিয়ে এসো। কেননা, যে ঘরে সিরকা আছে, সে ঘর তরকারী শূন্য নয়। তিরমিযী বর্ণিত।
(ইমাম তিরমিযী (র) বলেনঃ হাদীসটি হাসান-গরীব। ইমাম ইবনে মাজাহ (র) মুহাম্মাদ ইবনে যাযান থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমার নিকট উম্মু সা'দ (র) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা)-এর নিকট ছিলাম এমন সময় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আয়েশা (রা)-এর নিকট আসেন। তিনি বলেন, কোন খাবার আছে কি? তিনি বললেনঃ আমাদের নিকট রুটি, খেজুর ও সিরকা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, সিরকা কতই না উত্তম তরকারী। হে আল্লাহ্! সিরকায় বরকত দাও। কেননা, তা আমার পূর্ববর্তী আম্বিয়া কিরামের তরকারী এবং যে ঘরে সিরকা থাকে, সে ঘর তরকারী শূন্য নয়।)
كتاب الطعام
التَّرْغِيب فِي أكل الْخلّ وَالزَّيْت ونهس اللَّحْم دون تقطيعه بالسكين إِن صَحَّ الخبرهم
3237- وَعَن أم هانىء بنت أبي طَالب رَضِي الله عَنْهَا قَالَت دخل عَليّ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ هَل عنْدكُمْ من شَيْء فَقلت لَا إِلَّا كسرة يابسة وخل فَقَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قربيه
فَمَا افْتقر بَيت من إدام فِيهِ خل

رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ حَدِيث حسن غَرِيب
وروى ابْن مَاجَه عَن مُحَمَّد بن زَاذَان قَالَ حَدَّثتنِي أم سعد رَضِي الله عَنْهَا قَالَت دخل رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم على عَائِشَة وَأَنا عِنْدهَا فَقَالَ هَل من غداء قَالَت عندنَا خبز وتمر وخل فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم نعم الإدام الْخلّ اللَّهُمَّ بَارك فِي الْخلّ فَإِنَّهُ كَانَ إدام الْأَنْبِيَاء قبلي وَلم يقفر بَيت فِيهِ خل

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি দ্বারা আমরা অনুমান করতে পারি নবী-পরিবারে খাদ্যের কেমন অভাব ছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে তাঁর খাওয়ার জন্য রুটি রাখা হয়েছিল, যেমন কোনও কোনও বর্ণনায় আছে। কিন্তু সে রুটি খেতে হলে সঙ্গে কিছু একটা লাগবে তো। তাই তিনি ব্যঞ্জন চাইলেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন জানাল, ব্যঞ্জন বলতে কিছুই ঘরে নেই। না গোশত, না সবজি, না অন্য কিছু। আছে কেবল সিরকা। তিনি সে সিরকাই নিয়ে আসতে বললেন। তা-ই আনা হল। তিনি কি কোনও আক্ষেপ করলেন? তরকারি দেওয়া হল না বলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন? মোটেই না। তিনি পরম আনন্দে সিরকা দিয়ে রুটি খেতে শুরু করলেন এবং সিরকার প্রশংসা করে বলতে লাগলেন, সিরকা বেশ ভালো ব্যঞ্জন। এই কৃতজ্ঞতাবোধ, এই গুণগ্রাহিতা, এই মহানুভবতা নবীচরিত্রেরই বিশেষত্ব। সিরকা দিয়ে রুটি খাওয়াকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নয়। এক উপাদেয় খাবাররূপেই তিনি তা গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তা'আলার প্রতিটি নি'আমত মহামূল্যবান। খাবার, তা যতই সাধারণ হোক না কেন, মানুষের প্রাণরক্ষার উপকরণ। সামান্য একটু সিরকাও মৃতপ্রায় অভুক্তের প্রাণরক্ষার কারণ হতে পারে। তাই প্রকৃতপক্ষে তুচ্ছ নয় কোনও খাবারই। সুতরাং তাচ্ছিল্য করা নয়; বরং মূল্য দিতে হবে প্রতিটি খাবারেরই। সে শিক্ষাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আচরণের মধ্যে আমরা পাই। তিনি এর মাধ্যমে আমাদেরকে দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত হওয়ারও তা'লীম দিয়েছেন। দুনিয়ার কোনওকিছুর প্রতি লোভী হয়ো না। দামি খাবারের লোভে সাধারণ খাবারকে হেলা করো না। বরং লোভ সংবরণ করে সাধারণ খাবারো সন্তুষ্ট থাকো। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যখন যা আসে, পরমানন্দে তাই গ্রহণ করো। ইহজীবনের সুখ এরই মধ্যে নিহিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও খাবারকে হেলা করতে নেই। সবই আল্লাহ তা'আলার নি'আমত। তাই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তা গ্রহণ করা ও তার প্রশংসা করা উচিত।

খ. নিজ গরিবী হালের কারণে আক্ষেপ করতে নেই। আল্লাহ তা'আলা যখন যে অবস্থায় রাখেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান