আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৮. অধ্যায়ঃ পানাহার সংশ্লিষ্ট বিষয়

হাদীস নং: ৩২৩৬
অধ্যায়ঃ পানাহার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সিরকা ও যায়তুন খাওয়া এবং চাকু দ্বারা না কেটে গোশতের চর্বি খাওয়ার প্রতি অনুপ্রেরণা
৩২৩৬. হযরত জাবির (রা) বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর পরিবারের কাছে তরকারী চাইলেন। তারা বললেন: আমাদের কাছে সিরকা ব্যতীত কিছু নেই। তিনি তা চেয়ে নিলেন এবং তা দ্বারা রুটি খাইলেন এবং বললেন, সিরকা কতই না উত্তম তরকারী। সিরকা কতই না উত্তম তরকারী। জাবির (রা) বলেন, আমি নবী (ﷺ) থেকে সিরকা সম্পর্কে শুনতে পেয়ে তা পসন্দ করে নিলাম। তালহা ইবনে নাফি' (র) বলেন, আমি জাবির (রা) থেকে সিরকা সম্পর্কে শুনে তা পসন্দ করে নিলাম।
(মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ এর বর্ণনায় আছে। "সিরকা কতই না উত্তম তরকারী।")
كتاب الطعام
التَّرْغِيب فِي أكل الْخلّ وَالزَّيْت ونهس اللَّحْم دون تقطيعه بالسكين إِن صَحَّ الخبرهم
3236- عَن جَابر رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم سَأَلَ أَهله الْأدم فَقَالُوا مَا عندنَا إِلَّا الْخلّ فَدَعَا بِهِ فَجعل يَأْكُل بِهِ وَيَقُول نعم الإدام الْخلّ نعم الإدام الْخلّ نعم الإدام الْخلّ
قَالَ جَابر فَمَا زلت أحب الْخلّ مُنْذُ سَمعتهَا من نَبِي الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم
قَالَ طَلْحَة بن نَافِع وَمَا زلت أحب الْخلّ مُنْذُ سَمعتهَا من جَابر

رَوَاهُ مُسلم وروى أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه مِنْهُ نعم الإدام الْخلّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি দ্বারা আমরা অনুমান করতে পারি নবী-পরিবারে খাদ্যের কেমন অভাব ছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে তাঁর খাওয়ার জন্য রুটি রাখা হয়েছিল, যেমন কোনও কোনও বর্ণনায় আছে। কিন্তু সে রুটি খেতে হলে সঙ্গে কিছু একটা লাগবে তো। তাই তিনি ব্যঞ্জন চাইলেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন জানাল, ব্যঞ্জন বলতে কিছুই ঘরে নেই। না গোশত, না সবজি, না অন্য কিছু। আছে কেবল সিরকা। তিনি সে সিরকাই নিয়ে আসতে বললেন। তা-ই আনা হল। তিনি কি কোনও আক্ষেপ করলেন? তরকারি দেওয়া হল না বলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন? মোটেই না। তিনি পরম আনন্দে সিরকা দিয়ে রুটি খেতে শুরু করলেন এবং সিরকার প্রশংসা করে বলতে লাগলেন, সিরকা বেশ ভালো ব্যঞ্জন। এই কৃতজ্ঞতাবোধ, এই গুণগ্রাহিতা, এই মহানুভবতা নবীচরিত্রেরই বিশেষত্ব। সিরকা দিয়ে রুটি খাওয়াকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নয়। এক উপাদেয় খাবাররূপেই তিনি তা গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তা'আলার প্রতিটি নি'আমত মহামূল্যবান। খাবার, তা যতই সাধারণ হোক না কেন, মানুষের প্রাণরক্ষার উপকরণ। সামান্য একটু সিরকাও মৃতপ্রায় অভুক্তের প্রাণরক্ষার কারণ হতে পারে। তাই প্রকৃতপক্ষে তুচ্ছ নয় কোনও খাবারই। সুতরাং তাচ্ছিল্য করা নয়; বরং মূল্য দিতে হবে প্রতিটি খাবারেরই। সে শিক্ষাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আচরণের মধ্যে আমরা পাই। তিনি এর মাধ্যমে আমাদেরকে দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত হওয়ারও তা'লীম দিয়েছেন। দুনিয়ার কোনওকিছুর প্রতি লোভী হয়ো না। দামি খাবারের লোভে সাধারণ খাবারকে হেলা করো না। বরং লোভ সংবরণ করে সাধারণ খাবারো সন্তুষ্ট থাকো। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যখন যা আসে, পরমানন্দে তাই গ্রহণ করো। ইহজীবনের সুখ এরই মধ্যে নিহিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও খাবারকে হেলা করতে নেই। সবই আল্লাহ তা'আলার নি'আমত। তাই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তা গ্রহণ করা ও তার প্রশংসা করা উচিত।

খ. নিজ গরিবী হালের কারণে আক্ষেপ করতে নেই। আল্লাহ তা'আলা যখন যে অবস্থায় রাখেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান