আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৬. অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়

হাদীস নং: ৩০০২
অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়
স্বামীর প্রতি তার স্ত্রীর হক আদায় ও তার প্রতি সদাচরণ এবং স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর হক আদায় ও আনুগত্য করার অনুপ্রেরণা এবং স্বামীর হক বিনষ্ট করা ও বিরোধিতা করার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৩০০২. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-বলেছেন: স্বামী যদি স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে, আর সে না আসে এবং স্বামী অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়; তবে ভোর হওয়া পর্যন্ত ফিরিশতাগণ তার প্রতি অভিসম্পাত দিতে থাকেন।
(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসাঈ বর্ণিত। বুখারী ও মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: “যাঁর হাতে আমার জীবন, সেই সত্তার শপথ! যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে, আর স্ত্রী তা অস্বীকার করে, তবে আসমানবাসী (ফিরিশতাগণ) তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে, যতক্ষণে স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট না হয়।"
বুখারী, মুসলিম ও নাসাঈ শরীফে আছে, "যখন স্ত্রী তার স্বামীর বিছানা বর্জন করে রাত কাটায়, ভোর পর্যন্ত ফিরিশতা তার প্রতি অভিসম্পাত দিতে থাকে।"
ইবনে আব্বাস (রা) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস সালাত অধ্যায়ে আগে উল্লেখিত হয়েছে। তিনি বলেন: তিন ব্যক্তির সালাত তাদের মাথায় এক বিঘত উপরেও উঠে না (অর্থাৎ তাদের সালাত কবুল করা হয় না)। তারা হলঃ ১. ইমাম-শাসক যার প্রতি তার কাওম (শরী'আত সম্মত কারণে) অসন্তুষ্ট, ২. স্ত্রী, যে এমন অবস্থায় থাকে যে, তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট এবং ৩. দুই ভাই, যারা পরস্পরে আত্মীয়তার সম্পর্ক কর্তনকারী।
ইবনে মাজাহ ও ইবনে হিব্বানের সহীহ গ্রন্থে বর্ণিত। তবে শব্দমালা ইমাম ইবনে মাজাহ (র)-এর। ইমাম তিরমিযী (র) আবু উমামা (রা) সূত্রে অনুরূপ হাদীস হাসান সনদে বর্ণনা করেন। দাসের পালিয়ে যাওয়া, অধ্যায়ও এরূপ হাদীস আলোচিত হয়েছে।)
كتاب النكاح
ترغيب الزَّوْج فِي الْوَفَاء بِحَق زَوجته وَحسن عشرتها وَالْمَرْأَة بِحَق زَوجهَا وطاعته وترهيبها من إِسْقَاطه ومخالفته
3002- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِذا دَعَا الرجل امْرَأَته إِلَى فرَاشه فَلم تأته فَبَاتَ غَضْبَان عَلَيْهَا لعنتها الْمَلَائِكَة حَتَّى تصبح

رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
وَفِي رِوَايَة للْبُخَارِيّ وَمُسلم قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَالَّذِي نَفسِي بِيَدِهِ مَا من رجل يَدْعُو امْرَأَته إِلَى فرَاشه فتأبى عَلَيْهِ إِلَّا كَانَ الَّذِي فِي السَّمَاء ساخطا عَلَيْهَا حَتَّى يرضى عَنْهَا
وَفِي رِوَايَة لَهما وَالنَّسَائِيّ إِذا باتت الْمَرْأَة هاجرة فرَاش زَوجهَا لعنتها الْمَلَائِكَة حَتَّى تصبح
وَتقدم فِي الصَّلَاة حَدِيث ابْن عَبَّاس عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم ثَلَاثَة لَا ترْتَفع صلَاتهم فَوق رؤوسهم شبْرًا رجل أم قوما وهم لَهُ كَارِهُون وَامْرَأَة باتت وَزوجهَا عَلَيْهَا ساخط وَأَخَوَانِ متصارمان
رَوَاهُ ابْن مَاجَه وَابْن حبَان فِي صَحِيحه وَاللَّفْظ لِابْنِ مَاجَه وروى التِّرْمِذِيّ نَحوه من حَدِيث أبي أُمَامَة وَحسنه وَتقدم فِي إباق العَبْد

হাদীসের ব্যাখ্যা:

স্বামীর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীর বিছানায় আসতে অস্বীকৃতির বিষয়ে হাদীসে কঠিন ধমকি বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন হাদীসে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আর কোন কোন হাদীসে ফেরেশতাদের লানতের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যাইহোক ফিরিশতাদের এ লা'নত করা এবং আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্ট হওয়ার কারণ হল শরীআতে বিবাহের বিধান যে উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে, স্ত্রীর আচরণ তার পরিপন্থী। এ বিধানের একটি বড় উদ্দেশ্য জৈবচাহিদা পূরণ। ইসলাম মানুষের স্বভাবগত কোনও চাহিদাকেই সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেনি; বরং তা বৈধভাবে পূরণের ব্যবস্থা দান করেছে। পেটে ক্ষুধা লাগা একটি স্বভাবগত বিষয়। এর জন্য মানুষের খাদ্যচাহিদা দেখা দেয়। এ চাহিদা পূরণের জন্য চাইলে মানুষ যে-কোনও উপায়ই অবলম্বন করতে পারে। কিন্তু শরীআত এ ব্যাপারে সীমারেখা টেনে দিয়েছে। কোনও উপায়কে বৈধ করেছে এবং কোনওটাকে অবৈধ বলেছে। মানুষের কর্তব্য অবৈধ উপায় পরিহার করে ক্ষুধা নিবারণের বৈধ উপায় অবলম্বন করা।

কামচাহিদার ব্যাপারটাও সেরকমই। এর জন্য নানা অবৈধ উপায় আছে, কিন্তু শরীআত তা হারাম করেছে। মানুষ যাতে বৈধ উপায়ে এ চাহিদা পূরণ করতে পারে, সে লক্ষ্যেই বিবাহের ব্যবস্থা দান করেছে। কাজেই স্ত্রী যদি স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়, তবে এটা হবে সে লক্ষ্যের পরিপন্থী। এ ক্ষেত্রে স্বামী হয়তো চাহিদা অবদমন করতে বাধ্য হবে, যা তার শরীরের উপর এক অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ। সে হিসেবে স্ত্রীর পক্ষ থেকে তার উপর একরকম জুলুম করা হবে। অন্যথায় স্বামী অবৈধ কোনও পন্থা অবলম্বন করবে। এতে যে গুনাহ হয়, বলাবাহুল্য তার দায় স্ত্রীর উপরও বর্তায়। এ কারণেই ফিরিশতাদের লা'নত ও আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি।

উল্লেখ্য, স্ত্রীর সাড়াদান না করাটা যদি ওজরবশত হয়, তবে স্বামীর কর্তব্য সে ওজর বিবেচনা করা। কারও কারও স্থায়ী ওজরও থাকে। সে ক্ষেত্রে যদি আরেকটি বিবাহের সামর্থ্য থাকে এবং স্বামীও তাতে আগ্রহ প্রকাশ করে, তবে স্ত্রীর তাতে বাধা হওয়া সমীচীন নয়। স্বামীর যদি দ্বিতীয় বিবাহের সামর্থ্য না থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে সে নিজেও মা'যূর বৈকি। তার কর্তব্য হবে সংযম অবলম্বন করা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. স্বামীর বিশেষ ডাকে সাড়া না দেওয়া স্ত্রীর জন্য গুরুতর পাপ। প্রত্যেক স্ত্রীর এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান