আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৬. অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়

হাদীস নং: ২৯৯৫
অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়
স্বামীর প্রতি তার স্ত্রীর হক আদায় ও তার প্রতি সদাচরণ এবং স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর হক আদায় ও আনুগত্য করার অনুপ্রেরণা এবং স্বামীর হক বিনষ্ট করা ও বিরোধিতা করার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
২৯৯৫. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন বাড়ীতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় স্বামীর অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর সিয়াম (নফল রোযা) পালন করা সমীচীন নয়। স্বামীর ঘরে তার অনুমতি ব্যতীত কাউকে প্রবেশের অনুমতিও স্ত্রী দিতে পারবে না।
(বুখারী (র) নিজ শব্দযোগে, মুসলিম এবং এতদ্ব্যতীত অপরাপর গ্রন্থাবলী বর্ণিত।)
كتاب النكاح
ترغيب الزَّوْج فِي الْوَفَاء بِحَق زَوجته وَحسن عشرتها وَالْمَرْأَة بِحَق زَوجهَا وطاعته وترهيبها من إِسْقَاطه ومخالفته
2995- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لَا يحل لامْرَأَة أَن تَصُوم وَزوجهَا شَاهد إِلَّا بِإِذْنِهِ وَلَا تَأذن فِي بَيته إِلَّا بِإِذْنِهِ

رَوَاهُ البُخَارِيّ وَاللَّفْظ لَهُ وَمُسلم وَغَيرهمَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর জন্য দুটি কাজ অবৈধ করা হয়েছে। তার একটি হচ্ছে নফল রোযা রাখা, আরেকটি হচ্ছে কাউকে ঘরে ঢুকতে অনুমতি দেওয়া। স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে এ কারণে যে, তাতে করে স্বামীর হক আদায় বিঘ্নিত হতে পারে।
যে-কোনও ইবাদত নফল শুরু করলে তা পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। কাজেই স্ত্রী যদি নফল রোযা রাখে, তার তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এখন স্বামীর যদি এমন কোনও প্রয়োজন দেখা দেয়, যা মেটাতে গেলে তার রোযা ভাঙতে হবে, তবে পরে তা কাযা করা জরুরি হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে এক তো ইবাদত শুরুর পর তা ভাঙতে হচ্ছে, যা পসন্দনীয় নয়। আবার পরে কাযা করাটাও সম্ভব নাও হতে পারে। যদি আগেই মৃত্যু হয়ে যায়, তবে একটা ওয়াজিব আমলের দায় নিয়েই মৃত্যু হল। আর যদি স্থায়ীভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, যদ্দরুন রোযা রাখা সম্ভব না হয়, তবে ফিদয়া দিতে হবে। মোটকথা কোনও-না কোনও বিপত্তি থেকেই যায়। এর থেকে বাঁচার উপায় হল স্বামী উপস্থিত থাকাকালে তার অনুমতি ছাড়া রোযা রাখা হতে বিরত থাকা।
স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে ঢোকার অনুমতি দেওয়াও নাজায়েয বলা হয়েছে। এটা মাহরাম, গায়রে মাহরাম, পুরুষ ও নারী সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিনা অনুমতিতে এদের কাউকেই ঢোকার অনুমতি দেওয়া জায়েয নেই।
অবশ্য অনুমতির বিষয়টি সুস্পষ্ট কথায় হওয়া জরুরি নয়। কারও ক্ষেত্রে যদি বোঝা যায় তাকে প্রবেশের অনুমতি দিলে স্বামী নারাজ হবে না, তবে তার নারাজ না হওয়াকেই অনুমতিরূপে ধরা যাবে। যেমন স্ত্রীর দিকের বা স্বামীর দিকের এমন কোনও আত্মীয় যদি আসে, যার সঙ্গে স্বামীর কোনও ঝগড়া-ফাসাদ নেই এবং তাকে প্রবেশ করতে দিলে সে নারাজও হবে না; বরং প্রবেশ করতে না দিলেই নারাজ হওয়ার আশঙ্কা, তবে সে ক্ষেত্রে তার অনুমতি ছাড়াও তাকে প্রবেশ করতে দিতে পারবে; বরং দেওয়াটাই সমীচীন হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছটির শিক্ষা সুস্পষ্ট। স্বামীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমতি ছাড়া স্ত্রী নফল রোযা রাখবে না এবং কাউকে গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান