আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
১৪. অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
হাদীস নং: ২৬০১
অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
সর্বদা বেশি করে নবী করীম (ﷺ) -এর প্রতি দরূদ পাঠের ব্যাপারে উৎসাহ দান ও তাঁর আলোচনার সময় যে ব্যক্তি দরূদ পাঠ করে না, তার সম্পর্কে সতর্কবাণী
২৬০১. হযরত কা'ব ইবন উজরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) একদিন বললেনঃ তোমরা মিম্বরের কাছে উপস্থিত হও! আমরা উপস্থিত হলাম। তিনি যখন প্রথম সিঁড়িতে আরোহণ করলেন, বললেন, আমীন। তারপর যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে আরোহণ করলেন, বললেন আমীন। আবার যখন তৃতীয় সিঁড়িতে আরোহণ করলেন, তখনও বললেন, আমীন। তারপর তিনি যখন সিঁড়ি থেকে নেমে আসলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আজ আমরা আপনাকে এমন কথা বলতে শুনেছি, যা ইতোপূর্বে আর কখনো শুনিনি। তিনি বললেনঃ জিবরাঈল (আ) আমার সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন, ঐ ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে দূর হোক, যে রমযান পেল অথচ ক্ষমাপ্রাপ্ত হল না। আমি বললাম, আমীন। তারপর যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে আরোহণ করলাম, জিবরাঈল (আ) বললেন, ঐ ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক, যার সামনে আপনার আলোচনা হল অথচ সে দরূদ পাঠ করল না। আমি বললাম, আমীন। তারপর যখন তৃতীয় সিঁড়িতে আরোহণ করলাম, জিবরাঈল (আ) বললেন, ঐ ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে দূর হোক যে বার্ধক্যে উপনীত তার পিতামাতা উভয়কেই অথবা তাদের একজনকে পেল। কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাল না। আমি বললাম, আমীন।
(হাদীসটি হাকিম বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেনঃ এর সনদটি সহীহ।)
(হাদীসটি হাকিম বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেনঃ এর সনদটি সহীহ।)
كتاب الذّكر وَالدُّعَاء
التَّرْغِيب فِي إكثار الصَّلَاة على النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم والترهيب من تَركهَا عِنْد ذكره صلى الله عَلَيْهِ وَسلم كثيرا دَائِما
2601- وَعَن كَعْب بن عجْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم احضروا الْمِنْبَر فحضرنا فَلَمَّا ارْتقى دَرَجَة قَالَ آمين فَلَمَّا ارْتقى الدرجَة الثَّانِيَة قَالَ آمين فَلَمَّا ارْتقى الدرجَة الثَّالِثَة قَالَ آمين فَلَمَّا نزل قُلْنَا يَا رَسُول الله لقد سمعنَا مِنْك الْيَوْم شَيْئا مَا كُنَّا نَسْمَعهُ قَالَ إِن جِبْرِيل عرض لي فَقَالَ بعد من أدْرك رَمَضَان فَلم يغْفر لَهُ
قلت آمين فَلَمَّا رقيت الثَّانِيَة
قَالَ بعد من ذكرت عِنْده فَلم يصل عَلَيْك فَقلت آمين فَلَمَّا رقيت الثَّالِثَة قَالَ بعد من أدْرك أَبَوَيْهِ الْكبر عِنْده أَو أَحدهمَا فَلم يدْخلَاهُ الْجنَّة
قلت آمين
رَوَاهُ الْحَاكِم وَقَالَ صَحِيح الْإِسْنَاد
قلت آمين فَلَمَّا رقيت الثَّانِيَة
قَالَ بعد من ذكرت عِنْده فَلم يصل عَلَيْك فَقلت آمين فَلَمَّا رقيت الثَّالِثَة قَالَ بعد من أدْرك أَبَوَيْهِ الْكبر عِنْده أَو أَحدهمَا فَلم يدْخلَاهُ الْجنَّة
قلت آمين
رَوَاهُ الْحَاكِم وَقَالَ صَحِيح الْإِسْنَاد
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ জানাচ্ছে পিতা-মাতার দু'জনকেই বা তাদের কোনও একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পাওয়া জান্নাতলাভের একটি উপায়। এ অবস্থায় তাদের সেবাযত্ন করলে জান্নাত লাভ হয়। কাজেই কেউ যদি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের কোনও একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পায়, তবে তার কর্তব্য তাদের সেবাযত্নে লিপ্ত থাকা। এটা করলে তা তার জন্য জান্নাতলাভের একটি বড় উপায় হবে। কিন্তু কেউ যদি এতে অবহেলা করে এবং বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবাযত্ন করা হতে বিরত থাকে, তবে সে বড় হতভাগা। সে সুযোগ পেয়েও জান্নাতলাভ থেকে বঞ্চিত থাকল এবং নিজের জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে নিল।
বস্তুত পিতা-মাতার সেবাযত্নে অবহেলা করে এমন লোকই, যে নিজের খেয়াল-খুশিমত চলে এবং আল্লাহকে খুশি করার পরিবর্তে মনের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকে। নিজ খেয়াল-খুশিমত চলা ও মনের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকার দ্বারা যা হয় তা আল্লাহ তাআলার নাফরমানি ও পাপকর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। পাপকর্মের পরিণাম কেবলই জাহান্নাম। এ ব্যক্তি যেন জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের পথই বেছে নেয়। জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নাম বেছে নেওয়া মনুষ্যত্বের পরম লাঞ্ছনা।
হাদীছে আছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠছিলেন। এ অবস্থায় পরপর তিনবার আমীন বললেন। পরে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উপরে বর্ণিত তিন ব্যক্তির প্রতি লাঞ্ছিত হওয়ার অভিশাপ দিচ্ছিলেন আর তিনি তাতে আমীন বলছিলেন।৭৩
একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় এটা কত বড় ভয়ের কথা। সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বদ্দুআ করছেন আর তার জবাবে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলছেন! এটা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনও সন্দেহ থাকে কি? আল্লাহ, ফিরিশতা, নবী-রাসূল ও আখেরাতের উপর যার ঈমান আছে, তার তো এ বদ্দুআ শুনে ভয়ে কেঁপে উঠার কথা। এ অভিশাপ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে প্রত্যেক মুমিনের উচিত অতি সতর্কতার সঙ্গে হাদীছে বর্ণিত এ তিনওটি বিষয়ে মনোযোগী থাকা। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনলে ভক্তি ও মহব্বতের সঙ্গে দুরূদ পাঠ করবে, রমযান মাস আসলে সবরকম গুনাহ হতে বিরত থেকে একজন খাঁটি বান্দা ও সাচ্চা মুসলিমরূপে এ মাসটি কাটাবে এবং পরম যত্নের সঙ্গে বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবাযত্ন করবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পিতা-মাতার বার্ধক্য অবস্থায় তাদের সেবাযত্ন করা জান্নাতলাভের একটি বড় উপায় ।
খ. বৃদ্ধ পিতা-মাতার খেদমত করার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তাতে অবহেলা করার পরিণাম দুনিয়া ও আখেরাতের চরম লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা।
৭৩. বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৬৪৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩১৫; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১৪৭১
বস্তুত পিতা-মাতার সেবাযত্নে অবহেলা করে এমন লোকই, যে নিজের খেয়াল-খুশিমত চলে এবং আল্লাহকে খুশি করার পরিবর্তে মনের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকে। নিজ খেয়াল-খুশিমত চলা ও মনের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকার দ্বারা যা হয় তা আল্লাহ তাআলার নাফরমানি ও পাপকর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। পাপকর্মের পরিণাম কেবলই জাহান্নাম। এ ব্যক্তি যেন জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের পথই বেছে নেয়। জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নাম বেছে নেওয়া মনুষ্যত্বের পরম লাঞ্ছনা।
হাদীছে আছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠছিলেন। এ অবস্থায় পরপর তিনবার আমীন বললেন। পরে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উপরে বর্ণিত তিন ব্যক্তির প্রতি লাঞ্ছিত হওয়ার অভিশাপ দিচ্ছিলেন আর তিনি তাতে আমীন বলছিলেন।৭৩
একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় এটা কত বড় ভয়ের কথা। সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বদ্দুআ করছেন আর তার জবাবে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলছেন! এটা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনও সন্দেহ থাকে কি? আল্লাহ, ফিরিশতা, নবী-রাসূল ও আখেরাতের উপর যার ঈমান আছে, তার তো এ বদ্দুআ শুনে ভয়ে কেঁপে উঠার কথা। এ অভিশাপ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে প্রত্যেক মুমিনের উচিত অতি সতর্কতার সঙ্গে হাদীছে বর্ণিত এ তিনওটি বিষয়ে মনোযোগী থাকা। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনলে ভক্তি ও মহব্বতের সঙ্গে দুরূদ পাঠ করবে, রমযান মাস আসলে সবরকম গুনাহ হতে বিরত থেকে একজন খাঁটি বান্দা ও সাচ্চা মুসলিমরূপে এ মাসটি কাটাবে এবং পরম যত্নের সঙ্গে বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবাযত্ন করবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পিতা-মাতার বার্ধক্য অবস্থায় তাদের সেবাযত্ন করা জান্নাতলাভের একটি বড় উপায় ।
খ. বৃদ্ধ পিতা-মাতার খেদমত করার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তাতে অবহেলা করার পরিণাম দুনিয়া ও আখেরাতের চরম লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা।
৭৩. বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৬৪৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩১৫; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১৪৭১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)