আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
১৪. অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
হাদীস নং: ২৪০৭
অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
বিভিন্ন প্রকার তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পাঠের প্রতি উৎসাহ প্রদান
২৪০৭. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানকে তিনশ ষাটটি জোড়ার উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। যে ব্যক্তি এই জোড়াগুলোর সংখ্যা হিসাবে তিনশ' ষাটবার আল্লাহু আকবর বলবে, আলহামদু লিল্লাহ পড়বে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, সুবহানাল্লাহ বলবে, আস্তাগফিরুল্লাহ বলবে, মুসলমানদের চলার পথ থেকে কোন পাথরখণ্ড সরিয়ে দিবে অথবা কোন কাঁটা অথবা হাঁড় অপসারণ করবে অথবা সৎকাজের আদেশ করবে অথবা অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে, সে লোকটি এমন অবস্থায় সন্ধ্যায় উপনীত হবে যে, সে নিজেকে জাহান্নাম থেকে (নিরাপদ দূরত্বে) সরিয়ে নিয়েছে। আবূ তাওবা বলেন, আমার উস্তাদ অনেক সময় এমন বলেছেনঃ সে ব্যক্তি এমন অবস্থায় পৃথিবীতে বিচরণ করবে যে, নিজেকে জাহান্নাম থেকে....।
(হাদীসটি মুসলিম ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন। )
(হাদীসটি মুসলিম ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন। )
كتاب الذّكر وَالدُّعَاء
التَّرْغِيب فِي التَّسْبِيح وَالتَّكْبِير والتهليل والتحميد على اخْتِلَاف أَنْوَاعه
2407- وَعَن عَائِشَة رَضِي الله عَنْهَا أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ خلق كل إِنْسَان من بني آدم على سِتِّينَ وثلاثمائة مفصل
من كبر الله وَحمد الله وَهَلل الله وَسبح الله واستغفر الله وعزل حجرا عَن طَرِيق الْمُسلمين أَو شَوْكَة أَو عظما عَن طَرِيق الْمُسلمين أَو أَمر بِمَعْرُوف أَو نهى عَن مُنكر عدد تِلْكَ السِّتين والثلاثمائة فَإِنَّهُ يُمْسِي يَوْمئِذٍ وَقد زحزح نَفسه عَن النَّار
قَالَ أَبُو تَوْبَة وَرُبمَا قَالَ يمشي يَعْنِي بالشين الْمُعْجَمَة
رَوَاهُ مُسلم وَالنَّسَائِيّ
من كبر الله وَحمد الله وَهَلل الله وَسبح الله واستغفر الله وعزل حجرا عَن طَرِيق الْمُسلمين أَو شَوْكَة أَو عظما عَن طَرِيق الْمُسلمين أَو أَمر بِمَعْرُوف أَو نهى عَن مُنكر عدد تِلْكَ السِّتين والثلاثمائة فَإِنَّهُ يُمْسِي يَوْمئِذٍ وَقد زحزح نَفسه عَن النَّار
قَالَ أَبُو تَوْبَة وَرُبمَا قَالَ يمشي يَعْنِي بالشين الْمُعْجَمَة
رَوَاهُ مُسلم وَالنَّسَائِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে মানবদেহের জোড়াসমূহ ও প্রতিটি অঙ্গ যে আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং এর শোকর আদায়ের উপায় শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
মানবদেহের জোড়াসমূহ কত বড় নিআমত তা একটু চিন্তা করলেই বুঝে আসে। এ জোড়াসমূহের কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার অত্যন্ত সহজ হয়েছে। এগুলো না থাকলে সারা শরীর অখণ্ড এক কাঠের গুঁড়ি বা পাথরের মূর্তির মত হত। না তা ইচ্ছামত নাড়াচাড়া করা যেত আর না সুবিধামত ব্যবহার করা সম্ভব হত। আল্লাহ জাল্লা শানুহু সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য যেমন পৃথক পৃথক অঙ্গ সৃষ্টি করেছেন, তেমনি ব্যবহারের সুবিধার্থে অঙ্গসমূহকে সুনিপুণভাবে পরস্পর জুড়ে দিয়েছেন।
প্রথমত অঙ্গসমূহের সুসমঞ্জস সৃষ্টি ও তার যথোপযুক্ত সন্ধিস্থাপন আল্লাহ তাআলার বিশাল নিআমত। তারপর এসব অঙ্গ ও অঙ্গসন্ধি সুস্থ ও সক্রিয় রাখা তাঁর অতি বড় মেহেরবানী। আমাদের প্রতি তিনি এ মেহেরবানী নিত্যদিন জারি রাখছেন। মানুষ সাধারণত দিন শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে বিশ্রাম যায় আবার ভোরবেলা সুস্থ ও চনমনে শরীর নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়ে।
প্রতিদিন সকালবেলা আমরা আমাদের প্রতিটি অঙ্গকে সুস্থ ও সচল পাই। কখনও এমনও হয়ে যায় যে, ঘুম থেকে উঠার পর দেখা গেল হাঁটুতে খিল ধরে গেছে। আগের মত স্বাভাবিক নড়াচড়া করছে না। যার এমন হয় সে বুঝতে পারে হাঁটুর জোড়াটি কত বড় নিআমত। এতদিন সে কেমন অবলীলায় চলাফেরা করত, আজ তার চলতে কত কষ্ট। তারপরও অন্যসব অঙ্গ যেহেতু অবিকল আছে, তাই তার জীবন সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়নি। সে তার বেশিরভাগ অঙ্গ নিয়ে সচল রয়েছে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তার সবগুলো অঙ্গ বিকল করে দিতে পারতেন। বিশেষত এ কারণেও যে, অঙ্গগুলো তো আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেক ব্যবহার করা হয় না। প্রতিটি অঙ্গ আল্লাহ তাআলার কত বড় নিআমত। এর কোনওটিকেই পাপকর্মে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু হামেশাই তা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা এ নিআমত কেড়ে না নিয়ে বহাল তবিয়তে রেখে দিয়েছেন। তো ঘুম থেকে জাগার পর যখন এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তাদের সন্ধিসমূহ সুস্থ-সবল দেখতে পাওয়া যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই কর্তব্য হয়ে পড়ে এসবের সৃষ্টিকর্তা ও রক্ষাকর্তার সামনে নিজেকে একজন শোকরগুযার বান্দারূপে পেশ করা। এ হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সংক্ষিপ্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ বাক্যে এ বিষয়টাই তুলে ধরেছেন।
সূর্যোদয়ের মাধ্যমে মানুষ নিত্যনতুন দিন পায়। এভাবে প্রতিদিন নতুন করে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও অস্থিসমূহের নিআমত হাসিল করে। তাই প্রতিদিন নতুন করে আল্লাহর শোকর আদায় করা তার কর্তব্য হয়ে যায়। সদাকা আদায় কর্তব্য বলে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সারাদিন যাতে সবগুলো অঙ্গ সুস্থ ও সক্রিয় থাকে এবং নিজ গুনাহের কারণে কোনও অঙ্গ কেড়ে নেওয়া না হয়, তাও প্রত্যেকেরই একান্ত কাম্য। এ কামনা যাতে পূরণ হয়, সে লক্ষ্যেও সদাকা আদায় করা কর্তব্য। কেননা সদাকা দ্বারা বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন الصدقة تطفئ غضب الرب، وتدفع ميتة السوء ‘সদাকা আল্লাহর ক্রোধ নিবারণ করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে।
মানবদেহে ৩৬০টি জোড়া আছে। প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে একটি সদাকা ওয়াজিব হলে প্রতিদিন সর্বমোট ৩৬০টি সদাকা দেওয়া কর্তব্য হয়। বাহ্যত বিষয়টা কঠিন। কোনও কোনও সাহাবী প্রশ্নও করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ৩৬০টি সদাকা দেওয়া কী করে সম্ভব? তার উত্তরে তিনি এ হাদীছ পেশ করেন, যা দ্বারা জানা গেল যে, সদাকা বলতে কেবল অর্থ-সম্পদ খরচ করাই বোঝায় না; বরং যে-কোনও নফল ইবাদত-বন্দেগীকেও সদাকা বলে। এ হাদীছে সেরকম কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তার জোড়াসমূহ আল্লাহপ্রদত্ত অনেক বড় নিআমত। আমাদের কর্তব্য এর শোকর আদায় করা।
খ. সদাকা দ্বারা বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত হয়। তাই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাতে বিপদ আপদ থেকে মুক্ত থাকে, সে লক্ষ্যে সদাকা করা চাই।
মানবদেহের জোড়াসমূহ কত বড় নিআমত তা একটু চিন্তা করলেই বুঝে আসে। এ জোড়াসমূহের কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার অত্যন্ত সহজ হয়েছে। এগুলো না থাকলে সারা শরীর অখণ্ড এক কাঠের গুঁড়ি বা পাথরের মূর্তির মত হত। না তা ইচ্ছামত নাড়াচাড়া করা যেত আর না সুবিধামত ব্যবহার করা সম্ভব হত। আল্লাহ জাল্লা শানুহু সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য যেমন পৃথক পৃথক অঙ্গ সৃষ্টি করেছেন, তেমনি ব্যবহারের সুবিধার্থে অঙ্গসমূহকে সুনিপুণভাবে পরস্পর জুড়ে দিয়েছেন।
প্রথমত অঙ্গসমূহের সুসমঞ্জস সৃষ্টি ও তার যথোপযুক্ত সন্ধিস্থাপন আল্লাহ তাআলার বিশাল নিআমত। তারপর এসব অঙ্গ ও অঙ্গসন্ধি সুস্থ ও সক্রিয় রাখা তাঁর অতি বড় মেহেরবানী। আমাদের প্রতি তিনি এ মেহেরবানী নিত্যদিন জারি রাখছেন। মানুষ সাধারণত দিন শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে বিশ্রাম যায় আবার ভোরবেলা সুস্থ ও চনমনে শরীর নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়ে।
প্রতিদিন সকালবেলা আমরা আমাদের প্রতিটি অঙ্গকে সুস্থ ও সচল পাই। কখনও এমনও হয়ে যায় যে, ঘুম থেকে উঠার পর দেখা গেল হাঁটুতে খিল ধরে গেছে। আগের মত স্বাভাবিক নড়াচড়া করছে না। যার এমন হয় সে বুঝতে পারে হাঁটুর জোড়াটি কত বড় নিআমত। এতদিন সে কেমন অবলীলায় চলাফেরা করত, আজ তার চলতে কত কষ্ট। তারপরও অন্যসব অঙ্গ যেহেতু অবিকল আছে, তাই তার জীবন সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়নি। সে তার বেশিরভাগ অঙ্গ নিয়ে সচল রয়েছে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তার সবগুলো অঙ্গ বিকল করে দিতে পারতেন। বিশেষত এ কারণেও যে, অঙ্গগুলো তো আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেক ব্যবহার করা হয় না। প্রতিটি অঙ্গ আল্লাহ তাআলার কত বড় নিআমত। এর কোনওটিকেই পাপকর্মে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু হামেশাই তা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা এ নিআমত কেড়ে না নিয়ে বহাল তবিয়তে রেখে দিয়েছেন। তো ঘুম থেকে জাগার পর যখন এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তাদের সন্ধিসমূহ সুস্থ-সবল দেখতে পাওয়া যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই কর্তব্য হয়ে পড়ে এসবের সৃষ্টিকর্তা ও রক্ষাকর্তার সামনে নিজেকে একজন শোকরগুযার বান্দারূপে পেশ করা। এ হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সংক্ষিপ্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ বাক্যে এ বিষয়টাই তুলে ধরেছেন।
সূর্যোদয়ের মাধ্যমে মানুষ নিত্যনতুন দিন পায়। এভাবে প্রতিদিন নতুন করে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও অস্থিসমূহের নিআমত হাসিল করে। তাই প্রতিদিন নতুন করে আল্লাহর শোকর আদায় করা তার কর্তব্য হয়ে যায়। সদাকা আদায় কর্তব্য বলে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সারাদিন যাতে সবগুলো অঙ্গ সুস্থ ও সক্রিয় থাকে এবং নিজ গুনাহের কারণে কোনও অঙ্গ কেড়ে নেওয়া না হয়, তাও প্রত্যেকেরই একান্ত কাম্য। এ কামনা যাতে পূরণ হয়, সে লক্ষ্যেও সদাকা আদায় করা কর্তব্য। কেননা সদাকা দ্বারা বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন الصدقة تطفئ غضب الرب، وتدفع ميتة السوء ‘সদাকা আল্লাহর ক্রোধ নিবারণ করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে।
মানবদেহে ৩৬০টি জোড়া আছে। প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে একটি সদাকা ওয়াজিব হলে প্রতিদিন সর্বমোট ৩৬০টি সদাকা দেওয়া কর্তব্য হয়। বাহ্যত বিষয়টা কঠিন। কোনও কোনও সাহাবী প্রশ্নও করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ৩৬০টি সদাকা দেওয়া কী করে সম্ভব? তার উত্তরে তিনি এ হাদীছ পেশ করেন, যা দ্বারা জানা গেল যে, সদাকা বলতে কেবল অর্থ-সম্পদ খরচ করাই বোঝায় না; বরং যে-কোনও নফল ইবাদত-বন্দেগীকেও সদাকা বলে। এ হাদীছে সেরকম কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তার জোড়াসমূহ আল্লাহপ্রদত্ত অনেক বড় নিআমত। আমাদের কর্তব্য এর শোকর আদায় করা।
খ. সদাকা দ্বারা বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত হয়। তাই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাতে বিপদ আপদ থেকে মুক্ত থাকে, সে লক্ষ্যে সদাকা করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)