আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
১৪. অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
হাদীস নং: ২৪০৫
অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
বিভিন্ন প্রকার তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পাঠের প্রতি উৎসাহ প্রদান
২৪০৫. হযরত আবু যর (রা) থেকে বর্ণিত যে, কিছু সংখ্যক সাহাবী নবী করীম (ﷺ)-কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সম্পদশালী লোকেরা তো সব পুণ্য নিয়ে গেল। আমাদের মত তারাও সালাত আদায় করে, আমরা যেরূপ সাওম পালন করি, তারাও সেরূপ সাওম পালন করে আর তারা নিজেদের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে দান-খয়রাত করে। তিনি বললেন, আল্লাহ কি তোমাদের জন্য দান-খয়রাত করার মত কিছু দেননি? প্রতিটি 'সুবহানাল্লাহ' দ্বারা দানের পুণ্য লাভ হয়, প্রতিটি 'আল্লাহু আকবর' একটি সাদকা তুল্য। প্রতিটি আলহামদুলিল্লাহ একটি সাদকাতুল্য, সৎকাজের আদেশ দান একটি সাদ্কা। মন্দ কাজে নিষেধ করা একটি সাদকা। তোমাদের কারো স্ত্রী সঙ্গমেও সাদকার পুণ্য রয়েছে। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ নিজের কাম চরিতার্থ করবে, আর এতেও তার জন্য পুণ্য হবে? তিনি বললেন, তোমরা বলতো, যদি এটি সে হারাম ক্ষেত্রে চরিতার্থ করত, তাহলে কি গুনাহ হতো না, তাই সে যখন এটি হালাল ক্ষেত্রে চরিতার্থ করবে, তখন তার পুণ্য হবে।
(হাদীসটি মুসলিম ও ইবন মাজাহ বর্ণনা করেছেন।)
(হাদীসটি মুসলিম ও ইবন মাজাহ বর্ণনা করেছেন।)
كتاب الذّكر وَالدُّعَاء
التَّرْغِيب فِي التَّسْبِيح وَالتَّكْبِير والتهليل والتحميد على اخْتِلَاف أَنْوَاعه
2405- وَعَن أبي ذَر رَضِي الله عَنهُ أَن نَاسا من أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالُوا للنَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَا رَسُول الله ذهب أهل الدُّثُور بِالْأُجُورِ يصلونَ كَمَا نصلي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُوم وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُول أَمْوَالهم قَالَ أوليس قد جعل الله لكم مَا تصدقُونَ بِهِ إِن بِكُل تَسْبِيحَة صَدَقَة وكل تَكْبِيرَة صَدَقَة وكل تَحْمِيدَة صَدَقَة وَأمر بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَة وَنهي عَن مُنكر صَدَقَة وَفِي بضع أحدكُم صَدَقَة
قَالُوا يَا رَسُول الله أَيَأتِي أَحَدنَا شَهْوَته وَيكون لَهُ فِيهَا أجر قَالَ أَرَأَيْتُم لَو وَضعهَا فِي حرَام كَانَ عَلَيْهِ وزر فَكَذَلِك إِذا وَضعهَا فِي الْحَلَال كَانَ لَهُ أجر
رَوَاهُ مُسلم وَابْن مَاجَه
قَالُوا يَا رَسُول الله أَيَأتِي أَحَدنَا شَهْوَته وَيكون لَهُ فِيهَا أجر قَالَ أَرَأَيْتُم لَو وَضعهَا فِي حرَام كَانَ عَلَيْهِ وزر فَكَذَلِك إِذا وَضعهَا فِي الْحَلَال كَانَ لَهُ أجر
رَوَاهُ مُسلم وَابْن مَاجَه
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা সাহাবায়ে কিরামের ছাওয়াব ও পুণ্যার্জনের কী তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল তা অনুমান করা যায়। তখন গরীবগণ পুণ্যার্জনের সকল ক্ষেত্রে ধনীদের পাশাপাশি ছিল। কিন্তু ধনীগণ দান-সদাকার মাধ্যমে যে ছাওয়াব অর্জন করতেন তা করতে না পারার কারণে গরীব সাহাবীদের মনে আক্ষেপ ছিল। এ হাদীছে তাঁরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সে আক্ষেপের কথাই প্রকাশ করেছেন এবং জানতে চেয়েছেন কিভাবে তাঁরা তাঁদের এ কমতিটুকু পূরণ করতে পারেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরীব সাহাবীদের সে আক্ষেপের কদর করেন এবং মমতাভরে তাদেরকে উপায় বাতলে দেন, যা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
এ হাদীছেও তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদিকে সদাকা সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর পথে দানখয়রাত করলে যে ছাওয়াব পাওয়া যায়, এর মাধ্যমেও তেমনি ছাওয়াব পাওয়া যায়। কাজেই যাদের বেশি টাকাপয়সা নেই, সেই গরীবগণ বেশি বেশি তাসবীহ-তাহলীল ও যিকর-আযকারের মাধ্যমে দান-সদাকার দ্বারা পুণ্য অর্জন করতে না পারার প্রতিকার করতে পারে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে গরীব সাহাবীদেরকে সে পথই দেখিয়েছেন।
বলা হয়েছে স্ত্রী সহবাসেও সদাকার ছাওয়াব হয়। এটা প্রমাণ করে সহীহ নিয়ত দ্বারা মুবাহ কাজও 'ইবাদতে পরিণত হয়। স্ত্রী সহবাসে যদি স্ত্রীর হক আদায় করা, নিজ চরিত্রের হেফাজত করা, স্ত্রীর চরিত্রের হেফাজত করা, তাদের উভয়ের নজরের হেফাজত করা এবং সুসন্তান কামনা করার নিয়ত থাকে, তবে এটা কেবল একটা পার্থিব কাজ হিসেবেই থেকে যায় না; বরং 'ইবাদতের মর্যাদা লাভ করে। এই একই কথা পানাহার করা, হাট-বাজারে যাওয়া, বেচাকেনা করা, চাষাবাদ করা এমনকি বিশ্রাম করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইখলাস ও সহীহ নিয়তের দ্বারা যে-কোনও পার্থিব কাজ, যদি তা শরী'আতসম্মত পন্থায় করা হয়, তবে ‘ইবাদতে পরিণত হয়ে যায় এবং তার বিনিময়ে প্রভূত ছাওয়াব অর্জন করা যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় সাহাবায়ে কিরামের অন্তরে ছাওয়াব হাসিলের আকাঙ্ক্ষা কত তীব্র ছিল। অনুরূপ আকাঙ্ক্ষা যাতে আমাদের অন্তরেও এসে যায়, আমাদের উচিত সে উপায় খোঁজা।
খ. গরীবদের উচিত দান-সদাকা করতে না পারার কারণে আক্ষেপ না করে যিকর ও তিলাওয়াত দ্বারা তার প্রতিকারে সচেষ্ট থাকা।
গ. যে-কোনও মুবাহ কাজ ইখলাস ও নেক নিয়তের সাথে করা উচিত। তাতেও "ইবাদতের ছাওয়াব হবে।
এ হাদীছেও তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদিকে সদাকা সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর পথে দানখয়রাত করলে যে ছাওয়াব পাওয়া যায়, এর মাধ্যমেও তেমনি ছাওয়াব পাওয়া যায়। কাজেই যাদের বেশি টাকাপয়সা নেই, সেই গরীবগণ বেশি বেশি তাসবীহ-তাহলীল ও যিকর-আযকারের মাধ্যমে দান-সদাকার দ্বারা পুণ্য অর্জন করতে না পারার প্রতিকার করতে পারে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে গরীব সাহাবীদেরকে সে পথই দেখিয়েছেন।
বলা হয়েছে স্ত্রী সহবাসেও সদাকার ছাওয়াব হয়। এটা প্রমাণ করে সহীহ নিয়ত দ্বারা মুবাহ কাজও 'ইবাদতে পরিণত হয়। স্ত্রী সহবাসে যদি স্ত্রীর হক আদায় করা, নিজ চরিত্রের হেফাজত করা, স্ত্রীর চরিত্রের হেফাজত করা, তাদের উভয়ের নজরের হেফাজত করা এবং সুসন্তান কামনা করার নিয়ত থাকে, তবে এটা কেবল একটা পার্থিব কাজ হিসেবেই থেকে যায় না; বরং 'ইবাদতের মর্যাদা লাভ করে। এই একই কথা পানাহার করা, হাট-বাজারে যাওয়া, বেচাকেনা করা, চাষাবাদ করা এমনকি বিশ্রাম করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইখলাস ও সহীহ নিয়তের দ্বারা যে-কোনও পার্থিব কাজ, যদি তা শরী'আতসম্মত পন্থায় করা হয়, তবে ‘ইবাদতে পরিণত হয়ে যায় এবং তার বিনিময়ে প্রভূত ছাওয়াব অর্জন করা যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় সাহাবায়ে কিরামের অন্তরে ছাওয়াব হাসিলের আকাঙ্ক্ষা কত তীব্র ছিল। অনুরূপ আকাঙ্ক্ষা যাতে আমাদের অন্তরেও এসে যায়, আমাদের উচিত সে উপায় খোঁজা।
খ. গরীবদের উচিত দান-সদাকা করতে না পারার কারণে আক্ষেপ না করে যিকর ও তিলাওয়াত দ্বারা তার প্রতিকারে সচেষ্ট থাকা।
গ. যে-কোনও মুবাহ কাজ ইখলাস ও নেক নিয়তের সাথে করা উচিত। তাতেও "ইবাদতের ছাওয়াব হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)