আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৪. অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ

হাদীস নং: ২৩৩৯
অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
মানুষ কোন মজলিসে বসল অথচ আল্লাহর যিকর ও তাঁর নবী মুহাম্মদ-এর প্রতি দরূদ পাঠ করলনা, এ প্রসঙ্গে সতর্কবাণী
২৩৩৯. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) সূত্রে নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কতিপয় লোক যখন কোন মজলিসে বসে অথচ এতে তারা আল্লাহর যিকর করে না এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদ প্রেরণ করে না, তখন এ মজলিসটি তাদের ক্ষতি ও মন্দ পরিণামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন আর তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।
(হাদীসটি আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। বর্ণিত শব্দমালা তিরমিযীর। তিরমিযী বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান। ইবন আবুদ-দুনিয়া এবং বায়হাকীও এটি উপরোক্ত শব্দমালায় বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদের ভাষ্য হল নিম্নরূপঃ যে ব্যক্তি কোন মজলিসে বসল অথচ এতে আল্লাহর যিকর করল না, তার এ মজলিসটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষতির কারণ হবে। যে ব্যক্তি শয্যাগ্রহণ করল আর এতে আল্লাহর যিকর করল না, এটি তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষতির কারণ হবে। আর যে ব্যক্তি কোন পথ চলবে অথচ এতে আল্লাহর যিকির করল না, তার এ পথ চলার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষতির কারণ হবে।
(হাদীসটি আহমদ, ইব্‌ন আবুদ-দুনিয়া, নাসাঈ এবং ইবন হিব্বান তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে আবু দাউদের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।)
كتاب الذّكر وَالدُّعَاء
التَّرْهِيب من أَن يجلس الْإِنْسَان مَجْلِسا لَا يذكر الله فِيهِ وَلَا يصلى على نبيه مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم
2339- عَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ مَا جلس قوم مَجْلِسا لم يذكرُوا الله فِيهِ وَلم يصلوا على نَبِيّهم إِلَّا كَانَ عَلَيْهِم ترة فَإِن شَاءَ عذبهم وَإِن شَاءَ غفر لَهُم
رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وَاللَّفْظ لَهُ وَقَالَ حَدِيث حسن وَرَوَاهُ بِهَذَا اللَّفْظ ابْن أبي الدُّنْيَا وَالْبَيْهَقِيّ
وَلَفظ أبي دَاوُد قَالَ من قعد مقْعدا لم يذكر الله فِيهِ كَانَ عَلَيْهِ من الله ترة وَمن اضْطجع مضجعا لَا يذكر الله فِيهِ كَانَت عَلَيْهِ من الله ترة وَمَا مَشى أحد ممشى لَا يذكر الله
فِيهِ إِلَّا كَانَ عَلَيْهِ من الله ترة

وَرَوَاهُ أَحْمد وَابْن أبي الدُّنْيَا وَالنَّسَائِيّ وَابْن حبَان فِي صَحِيحه كلهم بِنَحْوِ أبي دَاوُد

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে প্রতিটি মজলিস ও সভা-সেমিনারে আল্লাহ তা'আলার যিকির ও স্মরণ করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। মজলিসে বিভিন্ন লোক একত্র হয়। তাতে নানারকম কথা হয়। সেসব কথা মানুষের অন্তরে উদাসীনতা সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যায়। সে গাফলাতের ভেতর মজলিসের পুরোটা সময়ই কেটে যায়। অথচ মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত কত মূল্যবান। এ মূল্যবান সময় নষ্ট করার কারণে কিয়ামতের দিন বড়ই আক্ষেপ হবে। দুনিয়ার সময়টা তো আখিরাতের পুঁজি সংগ্রহের জন্যই। সে পুঁজি সংগ্রহ ছাড়া এমনি এমনিই সময়টা নষ্ট হয়ে যাওয়া কতইনা ক্ষতিকর। তাই এ হাদীছে আমাদের সতর্ক করা হয়েছে যেন আমরা কোনও মজলিস অবহেলার ভেতর না কাটাই। অর্থাৎ এমনভাবে না কাটে যে, তাতে আল্লাহর কোনও যিকির করা হয়নি। যিকির কথাটি ব্যাপক। কুরআন তিলাওয়াত, সুবহানাল্লাহ-আলহামদুলিল্লাহ জপা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা, নসীহত করা, দরূদ পড়া সবই আল্লাহর যিকির। এসব যিকিরের যে-কোনও একটি করলেও মজলিস মূল্যবান হয়ে হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদপাঠ অতি মূল্যবান যিকির। এ যিকির যত বেশি করা যায় ততোই লাভ। কোনওরকমের যিকির না করাটা নেহাৎ ক্ষতিকর। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الا كان عليهم ترة (তাদের জন্য সে মজলিস ক্ষতির কারণ হবে)। ترة এর অর্থ ক্ষতি,দায়,আক্ষেপ, এরূপ মজলিসকে আক্ষেপের কারণ বলা হয়েছে। আক্ষেপ হবে অহেতুক সময় নষ্ট হওয়ার কারণে। যিকিরবিহীন সময় পার করা সময় নষ্ট করাই বটে। অপচয় তো কোনওকিছুরই জায়েয নেই। এ অবস্থায় মহামূল্যবান সময় নষ্ট করা কীভাবে জায়েয হতে পারে? তা মোটেই জায়েয নয়; বরং অপরাধ। তাই তো এর পরে ইরশাদ হয়েছে-
فَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ، وَإِن شَاءَ غَفَرَ أَنَّهُمْ (আল্লাহ চাইলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আর চাইলে তাদেরকে ক্ষমা করবেন) বোঝা গেল প্রতিটি মজলিসে আল্লাহ তা'আলার কোনও না কোনওরকমের যিকির ও স্মরণ অবশ্যই করা চাই। তা না করলে আখিরাতে শান্তিপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। হাঁ, আল্লাহ তা'আলা মহাক্ষমাশীল। তিনি চাইলে ক্ষমাও করতে পারেন। কিন্তু ক্ষমা করতে পারেন বলে গাফলাতি করা কিছুতেই জায়েয হতে পারে না। মনে ভয় থাকলেই ক্ষমার আশা থাকে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যে-কোনও মজলিসে কিছু না কিছু যিকির অবশ্যই করা চাই।

খ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদপাঠ অতি মূল্যবান যিকির।

গ. সময় অতি মূল্যবান। তা অহেতুক নষ্ট করতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান