আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৪. অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ

হাদীস নং: ২৩২৫
অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
যিকরের মজলিসসমূহে উপস্থিত হওয়া ও আল্লাহর যিক্‌রের উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়ার প্রতি উৎসাহ দান
২৩২৫. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহর একদল ফিরিশতা রয়েছে, যারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আল্লাহর যিকরকারীদের খুঁজে বেড়ায়। তারা যখন কোন জামায়াতকে আল্লাহর যিকররত দেখে, তখন তারা ডাকাডাকি করতে থাকে, তোমরা তোমাদের প্রয়োজন পূরণের দিকে এগিয়ে আস। তারপর তারা তাদেরকে নিকটতম আসমান পর্যন্ত নিজ নিজ ডানা দিয়ে ঘিরে ফেলে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তাদের প্রতিপালক তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন। অথচ তিনি তাদের অবস্থা ভালভাবেই অবগত রয়েছেন- আমার বান্দারা কি বলছে? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন। ফিরিশতাগণ উত্তর দেয়, তারা তোমার পরিবত্রতা বর্ণনা, মহত্ব ঘোষণা, তোমরা স্তবস্তূতি ও মর্যাদা বর্ণনা করছে। রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেনঃ আল্লাহ্ তখন জিজ্ঞাসা করেন। ওরা কি আমাকে দেখেছে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ জবাবে ফিরিশতাগণ তখন বলে, তোমার শপথ হে রব। তারা তোমাকে দেখে নাই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আল্লাহ্ তখন জিজ্ঞাসা করেন। তারা যদি আমাকে দেখত, তাহলে কি অবস্থা হতো? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ ফিরিশতারা তখন বলেঃ তারা যদি তোমাকে দেখত, তাহলে আরো বেশি ইবাদত করত এবং আরো বেশি পরিমাণে তোমার মর্যাদা বর্ণনা ও প্রশংসা করত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ্ তখন বলেনঃ ওরা আমার নিকট কি চায়? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ফিরিশতাগণ উত্তর দেয়, তোমার নিকট তারা জান্নাত চায়। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ্ প্রশ্ন করেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ফিরিশতাগণ উত্তর দেয়ঃ তোমার শপথ হে রব। তারা তা দেখে নাই। রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তখন বলেনঃ তারা যদি তা দেখত তাহলে কি অবস্থা হতো? রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ফিরিশতাগণ উত্তর দেয়। তারা যদি জান্নাত দেখত, তাহলে এর প্রতি বেশি লোভ করত, এর জন্য অধিক প্রার্থনা করত এবং এর প্রতি অধিক আগ্রহ প্রকাশ করত। আল্লাহ্ আবার প্রশ্ন করেন, তারা কোন জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে? ফিরিশতাগণ বলে, জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেনঃ আল্লাহ্ তখন বলেনঃ এরা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফিরিশতাগণ বলে, কসম তোমার। এরা জাহান্নাম দেখেনি। রাসূলুল্লাহ বলেন, আল্লাহ্ তখন বলেনঃ যদি এরা জাহান্নাম দেখত, তাহলে কি অবস্থা হতো? রাসূলুল্লাহ্ বলেন, ফিরিশতারা উত্তর দেয়ঃ যদি তারা জাহান্নাম দেখত, তাহলে তারা এ থেকে আরো বেশি পলায়নপর হতো এবং ভয়ে অধিক জড়সড় থাকত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তখন বলেনঃ আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি এদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তখন জনৈক ফিরিশতা বলেঃ তাদের মধ্যে অমুক এক ব্যক্তি সে তাদের দলভুক্ত নয়। ঘটনাচক্রে সে নিজের কোন প্রয়োজনে এখানে এসে পড়েছিল। আল্লাহ তখন বলেনঃ এরা এমন যে, তাদের সাথে উপবেশনকারীরা কেউই ভাগ্যাহত হয় না।
(হাদীসটি বুখারী বর্ণনা করেছেন। বর্ণিত শব্দমালা তাঁরই। মুসলিমও এটি বর্ণনা করেন। তাঁরা ভাষ্যটি হলঃ মহান আল্লাহর একদল অতিরিক্ত পর্যটক ফিরিশতা রয়েছেন, যারা যিক্‌রের মজলিস খুঁজে বেড়ান। তারা যখন এমন মজলিস পান যেখানে যিক্‌র হচ্ছে, তখন তাঁরাও সেখানে বসে যান এবং একজন অপরজনের সাথে ডানা মিলিয়ে যিক্‌রকারীদের ও আসমানের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানকে পূর্ণ করে দেন। যিক্‌রকারীগণ যখন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তখন এ সকল ফিরিশতা উপরে উঠতে থাকেন এবং আকাশে পৌছে যান। রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, মহান আল্লাহ তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি খুবই অবগত রয়েছেন, তোমরা কোথা হতে আসছো হে? তারা বলেনঃ আমরা তোমার ঐ বান্দাদের নিকট থেকে আসছি যারা পৃথিবীতে তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, তোমার মহত্ব বর্ণনা করছে, তোমার তাওহীদের ঘোষনা দিচ্ছে, তোমার প্রশংসাবাদ করছে এবং তোমার নিকট প্রার্থনা জানাচ্ছে। আল্লাহ বলেন, তারা আমার নিকট কিসের প্রার্থনা জানাচ্ছে? ফিরিশতাগণ বলেনঃ তোমার কাছে তারা তোমার জান্নাত চায়। আল্লাহ বলেনঃ তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে? তারা বলেন না, হে রব। আল্লাহ্ বলেন। তারা যদি আমার জান্নাত দেখত, তবে কেমন হতো? ফিরিশতাগণ বলেনঃ আর তারা তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনাও করেছে। আল্লাহ্ বলেনঃ কোন বস্তু থেকে তারা আমার কাছে পানাহ চায়? তারা বলেন, তোমার জাহান্নাম থেকে। আল্লাহ বলেন, তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেন, জ্বী না, হে রব। আল্লাহ বলেনঃ তারা যদি আমার জাহান্নাম দেখতে পেত তাহলে কি অবস্থা হতো? তারপর ফিরিশতাগণ বলেনঃ তোমার নিকট তারা ক্ষমাও প্রার্থনা করেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তখন বলেনঃ আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম, তারা যা চেয়েছে তা দিয়ে দিলাম এবং যে বস্তু থেকে পানাহ চেয়েছে, তা থেকে তাদেরকে নিভৃতি দিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ ফিরিশতাগণ তখন বলেনঃ হে রব। তাদের মধ্যে অমুক তো ঘোরতর পাপাচারী বান্দা; সে পথ চলছিল আর তাদের সাথে বসে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তখন বলেন, আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম। এরা এমন দল যে, তাদের সাথে যারা বসে যায়, তারাও ভাগ্যাহত হয় না।)
كتاب الذّكر وَالدُّعَاء
التَّرْغِيب فِي حُضُور مجَالِس الذّكر والاجتماع على ذكر الله تَعَالَى
2325- عَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِن لله مَلَائِكَة يطوفون فِي الطّرق يَلْتَمِسُونَ أهل الذّكر فَإِذا وجدوا قوما يذكرُونَ الله تنادوا هلموا إِلَى حَاجَتكُمْ فيحفونهم بأجنحتهم إِلَى السَّمَاء الدُّنْيَا
قَالَ فيسألهم رَبهم وَهُوَ أعلم بهم مَا يَقُول عبَادي قَالَ يَقُولُونَ يسبحونك ويكبرونك ويحمدونك ويمجدونك
قَالَ فَيَقُول هَل رأوني قَالَ فَيَقُولُونَ لَا وَالله يَا رب مَا رأوك قَالَ فَيَقُول فَكيف لَو رأوني قَالَ يَقُولُونَ لَو رأوك كَانُوا أَشد لَك عبَادَة وَأَشد لَك تمجيدا وَأكْثر لَك تسبيحا
قَالَ فَيَقُول فَمَا يَسْأَلُونِي قَالَ يَقُولُونَ يَسْأَلُونَك الْجنَّة قَالَ فَيَقُول وَهل رأوها قَالَ يَقُولُونَ لَا وَالله يَا رب مَا رأوها
قَالَ فَيَقُول فَكيف لَو رأوها قَالَ يَقُولُونَ لَو أَنهم رأوها كَانُوا أَشد عَلَيْهَا حرصا وَأَشد لَهَا طلبا وَأعظم فِيهَا رَغْبَة
قَالَ فمم يتعوذون قَالَ يتعوذون من النَّار
قَالَ فَيَقُول وَهل رأوها قَالَ يَقُولُونَ لَا وَالله مَا رأوها
قَالَ فَيَقُول فَكيف لَو رأوها قَالَ يَقُولُونَ لَو رأوها كَانُوا أَشد مِنْهَا فِرَارًا وَأَشد لَهَا مَخَافَة
قَالَ فَيَقُول أشهدكم أَنِّي قد غفرت لَهُم قَالَ يَقُول ملك من الْمَلَائِكَة فيهم فلَان لَيْسَ مِنْهُم إِنَّمَا جَاءَ لحَاجَة
قَالَ هم الْقَوْم لَا يشقى بهم جليسهم
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَاللَّفْظ لَهُ وَمُسلم
وَلَفظه قَالَ إِن لله تبَارك وَتَعَالَى مَلَائِكَة سيارة فضلاء يَبْتَغُونَ مجَالِس الذّكر فَإِذا وجدوا مَجْلِسا فِيهِ ذكر قعدوا مَعَهم وحف بَعضهم بَعْضًا بأجنحتهم حَتَّى يملؤوا مَا بَينهم وَبَين السَّمَاء فَإِذا تفَرقُوا عرجوا وصعدوا إِلَى السَّمَاء
قَالَ فيسألهم الله عز وَجل وَهُوَ أعلم من أَيْن جئْتُمْ فَيَقُولُونَ جِئْنَا من عِنْد عِبَادك فِي الأَرْض يسبحونك ويكبرونك ويهللونك ويحمدونك ويسألونك
قَالَ فَمَا يَسْأَلُونِي قَالُوا يَسْأَلُونَك جنتك
قَالَ وَهل رَأَوْا جنتي قَالُوا لَا يَا رب
قَالَ وَكَيف لَو رَأَوْا جنتي قَالُوا ويستجيرونك قَالَ ومم يستجيروني قَالُوا من نارك يَا رب
قَالَ وَهل رَأَوْا نَارِي قَالُوا لَا يَا رب
قَالَ فَكيف لَو رَأَوْا نَارِي قَالُوا ويستغفرونك
قَالَ فَيَقُول قد غفرت لَهُم وأعطيتهم مَا سَأَلُوا وأجرتهم مِمَّا استجاروا
قَالَ يَقُولُونَ رب فيهم فلَان عبد خطاء إِنَّمَا مر فَجَلَسَ مَعَهم قَالَ فَيَقُول وَله غفرت هم الْقَوْم لَا يشقى بهم جليسهم
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ২৩২৫ | মুসলিম বাংলা