আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৯. অধ্যায়ঃ রোযা

হাদীস নং: ১৪৯৯
অধ্যায়ঃ রোযা
পুণ্যলাভের আশায় রমযানের রোযা পালন ও রমযানের রাতসমূহে বিশেষত লায়লাতুল কদরে
ইবাদতের প্রতি উৎসাহ দান ও এর ফযীলত প্রসঙ্গ
১৪৯৯. হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত যে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে একথা বলতে শুনেছেন: রমযান মাসের আগমন উপলক্ষে জান্নাতকে এক বৎসর পর্যন্ত সজ্জিত করা হতে থাকে। তারপর থেকে রমযানের প্রথম রাত আসে তখন আরশের নীচ থেকে একটি বায়ু প্রবাহ প্রবাহিত হয় যাকে 'মুসীরা' নামে অভিহিত করা হয়, এতে জান্নাতের বৃক্ষসমূহের পাতা ও দরজার পাটসমূহের কড়াগুলো দুলতে থাকে এবং এতে এমন একটি মধুর আওয়ায় শ্রুত হয় যে, এর চেয়ে সুন্দর আওয়ায কোন শ্রোতাই কোনদিন শুনেনি। এ সময় জান্নাতের হূরগণ এসে জান্নাতের উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে। আল্লাহর নিকট কেউ কি প্রস্তাব দেয়ার মত আছে যে, তিনি তাকে বিয়ে দিবেন? তারপর হুরগণ বলে, হে জান্নাতের রক্ষী রিদওয়ান। এটি কোন রাত ? রিদওয়ান উত্তর দিয়ে বলে এটি রমযান মাসের প্রথম রাত। আজ মুহাম্মদ ﷺ -এর উম্মতের রোযাদারদের জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, মহান আল্লাহ্ তখন বলেন, হে রিদওয়ান। আহমদ ﷺ -এর উম্মতের রোযাদারদের জন্য জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে রাখ। হে জিবরাঈল। তুমি পৃথিবীতে অবতরণ কর এবং দুর্ধর্ষ শয়তানগুলোকে বন্দী করে শিকল পরিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে দাও, যাতে তারা আমার প্রিয় নবী মুহাম্মদ-এর উম্মতের রোযাগুলো নষ্ট করতে না পারে।
রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন, মহান আল্লাহ্ রমযানের প্রতি রাতে এক ঘোষণাকারীকে তিনবার এ ঘোষণা দিতে বলেন: কোন প্রার্থনাকারী আছে যে, আমি তার প্রার্থিত বস্তু প্রদান করব? কোন তাওবাকারী আছে যে, আমি তার তওবার কবুল করব? কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে যে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? কে আছে যে ধনী ও সামর্থ্যবানকে করয প্রদান করবে, যে নিঃস্ব নয়। ঠিকমত ঋণ পরিশোধকারী যালিম নয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, মহান আল্লাহ্ রমযানের প্রতিদিন ইফতারের সময় এমন দশ লক্ষ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যাদের উপর জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গিয়েছিল। তারপর যখন রমযানের শেষ দিনটি আসে, তখন আল্লাহ্ এ মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে পরিমাণ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন, এই এক দিনেই সেই পরিমাণ মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রদান করেন। আর যখন লায়লাতুল কদর আসে, মহান আল্লাহ্ জিবরাঈল (আ)-কে পৃথিবীতে অবতরণের নির্দেশ দেন। জিবরাঈল (আ) তখন ফিরিশতাদের একটি জামা'আত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। তাদের সাথে একটি সবুজ পতাকা থাকে। তারা এটি কা'বা শীর্ষে উড্ডীন করেন। জিবরাঈল (আ)-এর একশত পাখা রয়েছে। এগুলোর দু'টি পাখা এমন যে, এই রাত্র ছাড়া অন্য কোন সময় এগুলো তিনি বিস্তৃত করেন না। এই রাত্রে যখন এগুলো বিস্তৃত করেন তখন পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। জিবরাঈল (আ) ফিরিশতাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন যাতে করে তারা প্রতিটি দণ্ডায়মান উপবিষ্ট নামাযে রত ও যিকিরকারী ব্যক্তিকে সালাম করতে থাকে। তারা তাদের সাথে মুসাফাহা করে ও তাদের দু'আয় আমীন বলতে থাকে। এ অবস্থাটি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। যখন ফজর উদিত হয়, তখন জিবরাঈল (আ) ডাক দিয়ে বলেন: হে ফিরিশতাদের দল। ফিরে চল। ফিরে চল। ফিরিশতাগণ তখন বলে, হে জিবরাঈল। আহমদ ﷺ -এর উম্মতের মু'মিনদের প্রয়োজনের ব্যাপারে আল্লাহ্ কি করেছেন ? জিবরাঈল বলেন, আল্লাহ এ রাতে তাদের প্রতি কৃপা দৃষ্টি করেছেন। তাই তাদের চার প্রকার লোক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ও গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ তারা কারা? তিনি বললেন: মদ্যপানে অভ্যন্ত ব্যক্তি, পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ও মুশাহিন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল। মুশাহিন কে? তিনি বললেন, হিংসুক ও শত্রুতার অগ্নি প্রজ্জলনকারী ব্যক্তি। তারপর যখন ঈদুল ফিতরের রাত আসে, তখন একে পুরস্কার বিতরণের রাত বলে অভিহিত করা হয়। তারপর যখন ঈদের দিনের সকাল হয়, আল্লাহ্ তা'আলা প্রতি জনপদের ফিরিশতাদেরকে প্রেরণ করেন। তারা পৃথিবীতে অবতরণ করে এবং প্রতিটি গলি মুখে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর তারা এমনভাবে ডাক দেন যে, জিন্ন ও মানুষ ব্যতীত সবাই এর আওয়ায শুনতে পান। তারা বলতে থাকেন হে উম্মতে মুহাম্মদী। তোমরা দয়ালু প্রভুর দিকে বেরিয়ে আস। তিনি বিরাট পুরস্কার দিবেন এবং বড় গুনাহও ক্ষমা করে দিবেন। তারা যখন ঈদগাহে বেরিয়ে আসে, তখন মহান আল্লাহ্ ফিরিশতাদেরকে বলেন, শ্রমিক যখন কাজ সম্পন্ন করে ফেলে, তখন তার কি প্রতিদান হওয়া উচিত? রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন, ফিরিশতাগণ তখন বলতে থাকেন, হে আমাদের ইলাহ্ ও প্রভু! তার প্রতিদান তো এটিই যে, আপনি তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেবেন। আল্লাহ তখন বলেন, হে আমার ফিরিশতাগণ। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, রমযানে রোযা পালন ও রাত্রি জাগরণের বিনিময়ে আমি তাদের জন্য আমার মাগফিরাত ও সন্তুষ্টি দিয়ে দিলাম। তিনি আরও বলেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর। আমার ইয্যত ও মহত্বের শপথ। আজ তোমাদের এই সমাবেশে তোমরা আখিরাতের জন্য যাই প্রার্থনা করবে, আমি দিয়ে দিব। আর দুনিয়ার জন্য যা প্রার্থনা করবে তাতে তোমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখব। আমার ইযযতের শপথ যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আমাকে ভয় করে চলবে, আমি তোমাদেরকে অপমানিত করব না, হকদারদের সম্মুখে তোমাদেরকে অপদস্থ করব না। তোমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় ফিরে যাও। তোমরা আমাকে খুশি করেছ, আমিও তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। অতএব ফিরিশতাগণ খুশি হন এবং মহান আল্লাহর এই উম্মতকে রমযান মাস শেষে যা দান করেন তা দেখে তারা আনন্দিত হয়।
(হাদীসটি শায়খ ইবন হিব্বান 'কিতাবুস সওয়াবে' বর্ণনা করেছেন। বায়হাকীও এটি বর্ণনা করেন। বর্ণিত শব্দসমূহ তাঁরই। হাদীসটির সনদে এমন কোন বর্ণনাকারী নেই, যিনি সর্ব সম্মতভাবেই দুর্বল।)
كتاب الصَّوْم
التَّرْغِيب فِي صِيَام رَمَضَان احتسابا وَقيام ليله سِيمَا لَيْلَة الْقدر وَمَا جَاءَ فِي فَضله
1499- وَرُوِيَ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا أَنه سمع رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول إِن الْجنَّة لتنجد وتزين من الْحول إِلَى الْحول لدُخُول شهر رَمَضَان فَإِذا كَانَت أول لَيْلَة من شهر رَمَضَان هبت ريح من تَحت الْعَرْش يُقَال لَهَا المثيرة فتصفق ورق أَشجَار الْجنان وَحلق المصاريع فَيسمع لذَلِك طنين لم يسمع السامعون أحسن مِنْهُ فَتبرز الْحور الْعين حَتَّى يَقِفن بَين شرف الْجنَّة فينادين هَل من خَاطب إِلَى الله فيزوجه ثمَّ يقلن الْحور الْعين يَا رضوَان الْجنَّة مَا هَذِه اللَّيْلَة فيجيبهن بِالتَّلْبِيَةِ ثمَّ يَقُول هَذِه أول لَيْلَة من شهر رَمَضَان فتحت
أَبْوَاب الْجنَّة للصائمين من أمة مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ وَيَقُول الله عز وَجل يَا رضوَان افْتَحْ أَبْوَاب الْجنان وَيَا مَالك أغلق أَبْوَاب الْجَحِيم عَن الصائمين من أمة أَحْمد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَيَا جِبْرَائِيل اهبط إِلَى الأَرْض فاصفد مَرَدَة الشَّيَاطِين وغلهم بالأغلال ثمَّ اقذفهم فِي الْبحار حَتَّى لَا يفسدوا على أمة مُحَمَّد حَبِيبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم صِيَامهمْ
قَالَ وَيَقُول الله عز وَجل فِي كل لَيْلَة من شهر رَمَضَان لمناد يُنَادي ثَلَاث مَرَّات هَل من سَائل فَأعْطِيه سؤله هَل من تائب فأتوب عَلَيْهِ هَل من مُسْتَغْفِر فَأغْفِر لَهُ من يقْرض المليء غير العدوم والوفي غير الظلوم
قَالَ وَللَّه عز وَجل فِي كل يَوْم من شهر رَمَضَان عِنْد الْإِفْطَار ألف ألف عَتيق من النَّار كلهم قد استوجبوا النَّار فَإِذا كَانَ آخر يَوْم من شهر رَمَضَان أعتق الله فِي ذَلِك الْيَوْم بِقدر مَا أعتق من أول الشَّهْر إِلَى آخِره وَإِذا كَانَت لَيْلَة الْقدر يَأْمر الله عز وَجل جِبْرَائِيل عَلَيْهِ السَّلَام فيهبط فِي كبكبة من الْمَلَائِكَة وَمَعَهُمْ لِوَاء أَخْضَر فيركزوا اللِّوَاء على ظهر الْكَعْبَة وَله مائَة جنَاح مِنْهَا جَنَاحَانِ لَا ينشرهما إِلَّا فِي تِلْكَ اللَّيْلَة فينشرهما فِي تِلْكَ اللَّيْلَة فيجاوزان الْمشرق إِلَى الْمغرب فيحث جِبْرَائِيل عَلَيْهِ السَّلَام الْمَلَائِكَة فِي هَذِه اللَّيْلَة فيسلمون على كل قَائِم وقاعد ومصل وذاكر ويصافحونهم ويؤمنون على دُعَائِهِمْ حَتَّى يطلع الْفجْر فَإِذا طلع الْفجْر يُنَادي جِبْرَائِيل عَلَيْهِ السَّلَام معاشر الْمَلَائِكَة الرحيل الرحيل فَيَقُولُونَ يَا جِبْرَائِيل فَمَا صنع الله فِي حوائج الْمُؤمنِينَ من أمة أَحْمد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَيَقُول نظر الله إِلَيْهِم فِي هَذِه اللَّيْلَة فَعَفَا عَنْهُم وَغفر لَهُم إِلَّا أَرْبَعَة فَقُلْنَا يَا رَسُول الله من هم قَالَ رجل مدمن خمر وعاق لوَالِديهِ وقاطع رحم ومشاحن
قُلْنَا يَا رَسُول الله مَا المشاحن قَالَ هُوَ المصارم فَإِذا كَانَت لَيْلَة الْفطر سميت تِلْكَ اللَّيْلَة لَيْلَة الْجَائِزَة فَإِذا كَانَت غَدَاة الْفطر بعث الله عز وَجل الْمَلَائِكَة فِي كل بِلَاد فيهبطون إِلَى الأَرْض فَيقومُونَ على أَفْوَاه السكَك فينادون بِصَوْت يسمع من خلق الله عز وَجل إِلَّا الْجِنّ وَالْإِنْس فَيَقُولُونَ يَا أمة مُحَمَّد اخْرُجُوا إِلَى رب كريم يُعْطي الجزيل وَيَعْفُو عَن الْعَظِيم فَإِذا برزوا إِلَى مصلاهم يَقُول الله عز وَجل للْمَلَائكَة مَا جَزَاء الْأَجِير إِذا عمل عمله قَالَ فَتَقول الْمَلَائِكَة إلهنا وَسَيِّدنَا جَزَاؤُهُ أَن توفيه أجره
قَالَ فَيَقُول فَإِنِّي أشهدكم يَا ملائكتي أَنِّي قد جعلت ثوابهم من صِيَامهمْ شهر رَمَضَان وقيامهم رضاي ومغفرتي وَيَقُول يَا عبَادي سلوني فَوَعِزَّتِي وَجَلَالِي لَا تَسْأَلُونِي الْيَوْم شَيْئا فِي جمعكم لآخرتكم إِلَّا أَعطيتكُم وَلَا لدنياكم إِلَّا نظرت لكم فَوَعِزَّتِي لأسترن عَلَيْكُم عثراتكم مَا راقبتموني وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لَا أخزيكم وَلَا أفضحكم بَين أَصْحَاب
الْحُدُود وَانْصَرفُوا مغفورا لكم قد أرضيتموني ورضيت عَنْكُم فتفرح الْمَلَائِكَة وتستبشر بِمَا يُعْطي الله عز وَجل هَذِه الْأمة إِذا أفطروا من شهر رَمَضَان

رَوَاهُ الشَّيْخ ابْن حبَان فِي كتاب الثَّوَاب وَالْبَيْهَقِيّ وَاللَّفْظ لَهُ وَلَيْسَ فِي إِسْنَاده من أجمع على ضعفه
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ১৪৯৯ | মুসলিম বাংলা