আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
৮. অধ্যায়ঃ সদকা
হাদীস নং: ১৩১৯
দান-খয়রাতের উৎসাহ দান, সামর্থ্যহীন ব্যক্তির প্রয়াস ও ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও দান প্রসংগ
১৩১৯. হযরত মুগীরা ইব্ন আবদুল্লাহ্ জুফী (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর সাহাবী খাফ্ফা ইব্ন খাসফা (রা)-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি একজন স্থলদেহী লোকের দিকে বার বার চোখ তুলে দেখছিলেন। আমি বললাম, আপনি তার দিকে চেয়ে কি দেখছেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর মুখ থেকে শোনা একটি হাদীস আমার স্মরণপটে উদিত হয়েছে। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা) কে বলতে শুনে ছিলাম: তোমরা কি জান বলী পুরুষ কে? আমরা বলেছিলাম যে ব্যক্তি অন্যকে ধরাশায়ী করে ফেলে। তিনি বলেছিলেন, প্রকৃত বলী সেই, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। তোমরা বলতে পার আঁটকুড়ে কে? আমরা বলেছিলাম, যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে না। তিনি বললেন, প্রকৃত আঁটকুড়ে হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার সন্তানাদি রয়েছে; কিন্তু একটি সন্তানকেও সে পূর্বে পাঠিয়ে দেয়নি।
এরপর তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব কে? আমরা বললাম, যার কোন অর্থ-সম্পদ নেই। তিনি বললেন, বরং চরম নিঃস্ব হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যার যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে; কিন্তু তার সম্পদ থেকে কিছুই সে অগ্রিম পাঠায়নি (অর্থাৎ দান করেনি)।
(হাদীসটি বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। তবে এর সনদটি পরীক্ষা সাপেক্ষ।)
এরপর তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব কে? আমরা বললাম, যার কোন অর্থ-সম্পদ নেই। তিনি বললেন, বরং চরম নিঃস্ব হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যার যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে; কিন্তু তার সম্পদ থেকে কিছুই সে অগ্রিম পাঠায়নি (অর্থাৎ দান করেনি)।
(হাদীসটি বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। তবে এর সনদটি পরীক্ষা সাপেক্ষ।)
التَّرْغِيب فِي الصَّدَقَة والحث عَلَيْهَا وَمَا جَاءَ فِي جهد الْمقل وَمن تصدق بِمَا لَا يجب
1319 - وَعَن الْمُغيرَة بن عبد الله الْجعْفِيّ قَالَ جلسنا إِلَى رجل من أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يُقَال لَهُ خصفة بن خصفة فَجعل ينظر إِلَى رجل سمين فَقلت لَهُ مَا تنظر إِلَيْهِ فَقَالَ ذكرت حَدِيثا سمعته من رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم سمعته يَقُول هَل تَدْرُونَ مَا الشَّديد قُلْنَا الرجل يصرع الرجل
قَالَ إِن الشَّديد كل الشَّديد الَّذِي يملك نَفسه عِنْد الْغَضَب تَدْرُونَ مَا الرقوب قُلْنَا الرجل الَّذِي لَا يُولد لَهُ
قَالَ إِن الرقوب الرجل الَّذِي لَهُ الْوَلَد لم يقدم مِنْهُم شَيْئا ثمَّ قَالَ تَدْرُونَ مَا الصعلوك قَالَ قُلْنَا الرجل الَّذِي لَا مَال لَهُ قَالَ إِن الصعلوك كل الصعلوك الَّذِي لَهُ المَال لم يقدم مِنْهُ شَيْئا
رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ وَينظر سَنَده
قَالَ إِن الشَّديد كل الشَّديد الَّذِي يملك نَفسه عِنْد الْغَضَب تَدْرُونَ مَا الرقوب قُلْنَا الرجل الَّذِي لَا يُولد لَهُ
قَالَ إِن الرقوب الرجل الَّذِي لَهُ الْوَلَد لم يقدم مِنْهُم شَيْئا ثمَّ قَالَ تَدْرُونَ مَا الصعلوك قَالَ قُلْنَا الرجل الَّذِي لَا مَال لَهُ قَالَ إِن الصعلوك كل الصعلوك الَّذِي لَهُ المَال لم يقدم مِنْهُ شَيْئا
رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ وَينظر سَنَده
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে দৈহিক বীরত্বের উপর আত্মিক বীরত্বকে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে। দৈহিক বীরত্বও বীরত্ব বটে এবং তার উপযুক্ত ব্যবহার দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক কল্যাণ লাভ করা যায়, কিন্তু আত্মিক বীরত্বের কল্যাণ অনেক বেশি। কারণ এর দ্বারা সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী শত্রু শয়তানকে পরাভূত করা যায়। শয়তানই মানুষের অন্তরে রাগের আগুন জ্বালায়। শয়তান জানে, এ আগুন দ্বারা দুনিয়ায় কোনও ব্যক্তিকে প্রজ্জ্বলিত করা গেলে সে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবেই। কেননা মানুষ যখন রাগে আগুন হয়, তখন সে কেবল নিজেই জ্বলে না, অন্যকেও জ্বালিয়ে ছারখার করে। তখন তার দ্বারা জান-মালের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়। এমন এমন ক্ষতি সে করে ফেলে, যার প্রতিকারও করা সম্ভব হয় না। আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে, ঘরদোরে আগুন দেয়, গাছপালা কেটে ফেলে, মারপিট করে ও স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। এমনও শোনা গেছে রাগের বশে নিজ সন্তানকে মারতে মারতে এমনকি মেরেই ফেলেছে। অনেকে রাগের বশে কুফরী কথা পর্যন্ত বলে ফেলে। শয়তান তো এইই চায়। মানুষ খুনোখুনি করুক, বেঈমান হয়ে যাক ও সংসার ভাঙ্গুক। রাগের আগুন জ্বালিয়ে সে ঠিকই তা ভাঙাতে সক্ষম হয়। তো আত্মিক শক্তি দ্বারা এহেন শত্রুর সংগেই লড়াই করা হয়। একই সংগে লড়াই চলে নফসের বিরুদ্ধেও। রাগের সময় মানুষের নফস নিয়ন্ত্রণহারা হয়ে যেতে চায়। সে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারলে বহিঃশত্রু শয়তানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে এবং ব্যক্তিকে দিয়ে শরী'আত বিরোধী কাজ করানোর প্রয়াস পায়। এমনকি যেই শারীরিক শক্তি দ্বারা মানুষ কাফির-বেঈমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হয়, সেখানেও নফস দূরভিসন্ধি চালায়। ব্যক্তির নিয়ত নষ্ট করে দিয়ে তাকে এ মহাসংগ্রামের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করে। তাই তো হাদীছ দ্বারা জানা যায়, কোনও কোনও মুজাহিদ, দানবীর ও আলেম-কারীকে নিয়ত সহীহ না হওয়ার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। নিয়ত নষ্ট করে সেখানে রিয়ার অনুপ্রবেশ নফসের কারসাজিতেই ঘটে। সবরকম আমলেই নফস তার কারসাজি চালায়। তাই দৈহিক শক্তির সুফল পেতেও আত্মিক শক্তির ব্যবহার ও নফসের চাহিদা দমনের প্রয়োজন হয়। এজন্যই নফসের সংগে জিহাদকে হাদীছে 'বড় জিহাদ' নামে অভিহিত করা হয়েছে। তা বড় জিহাদ এ কারণে যে, সকল আমলে থাবা বিস্তারকারী এহেন শত্রুকে পরাস্ত করতে হলে অনেক বড় আত্মিক শক্তির প্রয়োজন পড়ে।
রাগের সময় নফস খুব বেশি কার্যকর থাকে। ফলে রাগ ক্রমে বাড়তে থাকে, বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। রাগ যাতে সে পর্যায়ে পৌঁছতে না পারে, তার আগেই কর্তব্য রাগ বশীভূত করা ও নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এটা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব, যে রিয়াযাত-সাধনার মাধ্যমে নিজেকে সকল ক্ষেত্রে নবী মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী বানাতে সক্ষম হয়। এরূপ ব্যক্তির ক্রোধ সীমালঙ্ঘন করতে পারে না। ফলে তার দ্বারা এমন কোনও কাজ হয় না, যা তার দীন-দুনিয়া বরবাদ করে দেয়।
এ হাদীছে ক্রোধকালে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, যা দ্বারা বোঝা যায় ক্রুদ্ধ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং শরী'আতে এটাও কাম্য নয় যে, মানুষের বিলকুল রাগ না উঠুক। রাগ একটা স্বভাবগত বিষয়। যে-কোনও অপ্রীতিকর অবস্থার ক্ষেত্রে রাগ উঠবেই। বরং দীনের দিক থেকে যা অপ্রীতিকর, সে ক্ষেত্রে রাগ উঠা তো ঈমানের অঙ্গ। সেখানে রাগ করাই উচিত। সুতরাং রাগমাত্রই খারাপ নয়। খারাপ হচ্ছে রাগের অপব্যবহার। অর্থাৎ শরী'আতে যে ক্ষেত্রে রাগের প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয়, সে ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা ও রাগ অনুযায়ী কাজ করা। এরূপ ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কাম্য। এটা যে করতে পারে, সেই প্রকৃত বীর।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এটাও সবর। এরূপ সবরকারী প্রকৃত বীর। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য যখনই কোনও কারণে রাগ ওঠে, এ হাদীছের কথা স্মরণ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।
খ. রাগ যেহেতু স্বভাবগত বিষয়, তাই তা সম্পূর্ণ নির্মূল করে ফেলা কখনও সম্ভব নয়। কেবল এর অনুচিত ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।
রাগের সময় নফস খুব বেশি কার্যকর থাকে। ফলে রাগ ক্রমে বাড়তে থাকে, বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। রাগ যাতে সে পর্যায়ে পৌঁছতে না পারে, তার আগেই কর্তব্য রাগ বশীভূত করা ও নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এটা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব, যে রিয়াযাত-সাধনার মাধ্যমে নিজেকে সকল ক্ষেত্রে নবী মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী বানাতে সক্ষম হয়। এরূপ ব্যক্তির ক্রোধ সীমালঙ্ঘন করতে পারে না। ফলে তার দ্বারা এমন কোনও কাজ হয় না, যা তার দীন-দুনিয়া বরবাদ করে দেয়।
এ হাদীছে ক্রোধকালে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, যা দ্বারা বোঝা যায় ক্রুদ্ধ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং শরী'আতে এটাও কাম্য নয় যে, মানুষের বিলকুল রাগ না উঠুক। রাগ একটা স্বভাবগত বিষয়। যে-কোনও অপ্রীতিকর অবস্থার ক্ষেত্রে রাগ উঠবেই। বরং দীনের দিক থেকে যা অপ্রীতিকর, সে ক্ষেত্রে রাগ উঠা তো ঈমানের অঙ্গ। সেখানে রাগ করাই উচিত। সুতরাং রাগমাত্রই খারাপ নয়। খারাপ হচ্ছে রাগের অপব্যবহার। অর্থাৎ শরী'আতে যে ক্ষেত্রে রাগের প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয়, সে ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা ও রাগ অনুযায়ী কাজ করা। এরূপ ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কাম্য। এটা যে করতে পারে, সেই প্রকৃত বীর।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এটাও সবর। এরূপ সবরকারী প্রকৃত বীর। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য যখনই কোনও কারণে রাগ ওঠে, এ হাদীছের কথা স্মরণ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।
খ. রাগ যেহেতু স্বভাবগত বিষয়, তাই তা সম্পূর্ণ নির্মূল করে ফেলা কখনও সম্ভব নয়। কেবল এর অনুচিত ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
