আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৮. অধ্যায়ঃ সদকা

হাদীস নং: ১২৮৫
দান-খয়রাতের উৎসাহ দান, সামর্থ্যহীন ব্যক্তির প্রয়াস ও ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও দান প্রসংগ
১২৮৫. হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা) কে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি: তোমরা খেজুরের একাংশ দিয়ে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চেষ্টা কর। কেননা এই সামান্য দান বক্রতাকে সোজা করেই অপমৃত্যুকে রোধ করে এবং ক্ষুধার্ত ব্যক্তির বেলায় পরিতৃপ্ত ব্যক্তির পরিতৃপ্তির মতই কাজ করে।
(আবু ইয়ালা ও বাযযার। হাদীসটি হযরত আনাস, আবু হুরায়রা, আবু উমামা, নুমান ইব্‌ন্ বশীর প্রমুখ সাহাবী (রা) থেকেও বর্ণিত হয়েছে।)
التَّرْغِيب فِي الصَّدَقَة والحث عَلَيْهَا وَمَا جَاءَ فِي جهد الْمقل وَمن تصدق بِمَا لَا يجب
1285 - وَرُوِيَ عَن أبي بكر الصّديق رَضِي الله عَنهُ قَالَ سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم على أَعْوَاد الْمِنْبَر يَقُول اتَّقوا النَّار وَلَو بشق تَمْرَة فَإِنَّهَا تقيم العوج وتدفع ميتَة السوء وَتَقَع من الجائع موقعها من الشبعان

رَوَاهُ أَبُو يعلى وَالْبَزَّار وَقد رُوِيَ هَذَا الحَدِيث عَن أنس وَأبي هُرَيْرَة وَأبي أُمَامَة والنعمان بن بشير وَغَيرهم من الصَّحَابَة رَضِي الله عَنْهُم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে বলেছেন। জাহান্নাম পাপীদের ঠিকানা। সেখানে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তার প্রধান শাস্তিالنار (আগুন)। তাই জাহান্নামের অপর নামই। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা বার বার মানুষকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং এর থেকে বাঁচার তাগিদ দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ-

فاتقوا النار التي وقودها الناس والحجارة

অর্থ : তোমরা বাঁচ ওই আগুন থেকে, যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর। সূরা বাকারা, আয়াত ২৪.
জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধ পালন করা। অর্থাৎ সৎকর্ম করতে থাকা ও অসৎকর্ম পরিহার করে চলা। সৎকর্ম আছে বিভিন্ন রকম, যেমন পূর্বের হাদীছসমূহ দ্বারা আমরা জানতে পেরেছি। তার মধ্যে একটা সৎকর্ম বলা হয়েছে আল্লাহর পথে দান-সদাকা করা।

এ হাদীছেও প্রধানত সদাকার কথাই বলা হয়েছে যে, একটা খেজুরের একটি অংশ সদাকা করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচ। এর দ্বারা সর্বনিম্ন সামর্থ্যের কথা বোঝানো হয়েছে। কারও অবস্থা যদি এমন হয় যে, সে কোনও ক্ষুধার্তকে একটা মাত্র খেজুর দেওয়ারও সামর্থ্য রাখে না, অর্থাৎ দেওয়ার মত একটা খেজুরও তার কাছে নেই, একটা খেজুরের অর্ধেক মাত্র আছে, তবে সে সে অর্ধেকটুকুই দিয়ে দেবে। আল্লাহ তা'আলা মানুষের দানের অঙ্ক দেখেন না। তিনি দেখেন তার মন। অর্থাৎ তার মনে দেওয়ার ইচ্ছা আছে কি না। যদি দেওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী যা দেবে তা-ই আল্লাহর কাছে মূল্যবান। তাকেই আল্লাহ তার জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে কবূল করে নেবেন।

এরপর বলা হয়েছে যদি কারও অর্ধেকটুকু দেওয়ারও ক্ষমতা না থাকে, তবে তার যে আর জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোনও উপায় রইল না এমন নয়, সে এর জন্য অন্য কোনও উপায় অবলম্বন করতে পারে। সেরকম একটি উপায় হচ্ছে উত্তম কথা বলা।পূর্বে আমরা জানতে পেরেছি উত্তম কথা বলাও সদাকাতুল্য। অর্থাৎ এর দ্বারাও সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং যে ব্যক্তি দান-সদাকা করার সামর্থ্য রাখে না, সে যদি উত্তম কথা বলে, তবে এর মাধ্যমেও সে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারবে।

উত্তম কথা অতি ব্যাপক। এর মধ্যে যেমন কুরআন তিলাওয়াত ও যিকর-তাসবীহ ইত্যাদি রয়েছে, তেমনি মানুষকে সুপরামর্শ দেওয়া, সৎকাজের আদেশ করা, অসৎকাজে নিষেধ করা, বৈধ সুপারিশ করা, দীনী ইলম শেখানো, শোকার্তকে সান্ত্বনা দেওয়া ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ভালো ও মন্দ কোনও আমলকেই অবহেলা করতে নেই। আখিরাতে সবই নিজ চোখে দেখতে পাওয়া যাবে এবং তার পুরোপুরি প্রতিফলও দেওয়া হবে।

খ. দান-সদাকা জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি উপায়। কাজেই যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব দান-সদাকা করা উচিত।

গ. নিতান্ত গরীব ব্যক্তি যদি অতি সামান্য কিছুও দান করে, তবে তাও তার জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ হতে পারে। কাজেই সামান্য বলে তাকে তুচ্ছ মনে করতে নেই।

ঘ. উত্তম কথা বলাও যেহেতু জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়, তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত যথাসম্ভব ভালো ভালো কথা বলতে সচেষ্ট থাকা এবং কোনও অবস্থাতেই কোনও মন্দ কথা না বলা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ১২৮৫ | মুসলিম বাংলা