আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৮. অধ্যায়ঃ সদকা

হাদীস নং: ১২৭৬
দান-খয়রাতের উৎসাহ দান, সামর্থ্যহীন ব্যক্তির প্রয়াস ও ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও দান প্রসংগ
১২৭৬. হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: দান সম্পদকে কিছুমাত্র হ্রাস করে না। কোন বান্দা দান করার জন্য হাত বাড়ালে তা ভিক্ষুকের হাতে পৌছার পূর্বেই আল্লাহর হাতে গিয়ে পড়ে। কোন বান্দা উপায় থাকা সত্ত্বেও নিজের জন্যে ভিক্ষাবৃত্তির দ্বার খুললে আল্লাহ্ তার জন্য দারিদ্র্যের দ্বার খুলে দেন।
(হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন।)
التَّرْغِيب فِي الصَّدَقَة والحث عَلَيْهَا وَمَا جَاءَ فِي جهد الْمقل وَمن تصدق بِمَا لَا يجب
1276 - وَرُوِيَ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا يرفعهُ قَالَ مَا نقصت صَدَقَة من مَال وَمَا مد عبد يَده بِصَدقَة إِلَّا ألقيت فِي يَد الله قبل أَن تقع فِي يَد السَّائِل وَلَا فتح عبد بَاب مَسْأَلَة لَهُ عَنْهَا غنى إِلَّا فتح الله لَهُ بَاب فقر

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

দানশীলতা সম্পর্কে বলা হয়েছে-
مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ (দান-খয়রাত সম্পদ কমায় না)। কমায় তো না-ই; বরং বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন আয়াত ও হাদীছ দ্বারা তা জানা যায়। এটা হয় দুই রকমে। দুনিয়া ও আখিরাতে। দুনিয়ায় হয় এভাবে যে, দান করলে সম্পদে বরকত হয়, বাহ্যিকভাবেও যা দান করা হয়েছে তারচে' আরও বেশি পাওয়া যায় এবং তার বিনিময়ে নানা বিপদ- আপদ ও কষ্ট-ক্লেশ থেকে আত্মরক্ষা হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ
‘তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, তিনি তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন।’(সূরা সাবা' (৩৪), আয়াত ৩৯)
দান করলে যে আরও বেশি পাওয়া যায়, এটা একটা পরীক্ষিত বিষয়। ইমাম ফাকিহানী রহ. বলেন, বিশ্বস্ত এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন, তিনি বিশ দিরহাম থেকে এক দিরহাম দান করে দিয়েছিলেন। পরে ওজন করে দেখেন তা থেকে একটুও কমেনি। আমার নিজেরও এরকম হয়েছে। বস্তুত এরকম অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। যারা দান-খয়রাত করে অভ্যস্ত, তারা এটা ভালোভাবেই জানে।

প্রকাশ থাকে যে, এখানে যদি ফরয দান-সদাকা বোঝানো হয়, তবে তা দ্বারা কমে না এ কারণে যে, যা দেওয়া হয় সেটা তো দাতার উপর দেনা ছিল। তা অন্যের হক, যা কার সম্পদের মধ্যে মিশ্রিত ছিল। তা দিয়ে দেওয়ার দ্বারা দায় শোধ হয়েছে এবং তার সম্পদ অন্যের হক থেকে মুক্ত হয়েছে। কাজেই কমার কোনও প্রশ্ন নেই।

ভিক্ষা করার পরিণতি
وَلَا فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ ‘কোনও বান্দা (মানুষের কাছে) চাওয়ার দরজা খুললে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য দারিদ্র্যের দুয়ার খুলে দেন'। অর্থাৎ নিতান্ত ঠেকার অবস্থা না হলে যদি কেউ অন্যের কাছে অর্থসাহায্য চায়, তবে পরিণামে তার অভাব-অনটন আরও বেড়ে যায়। তার উচিত ছিল আল্লাহ তা'আলার উপর ভরসা করা, তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং নিজে পরিশ্রম করা। তা না করে সে অন্যের মালের উপর ভরসা করেছে এবং ঠেকায় পড়ার ভান ধরেছে। এ কারণে 'যেমন কর্ম তেমন ফল' এ নিয়ম অনুযায়ী সে অধিকতর অভাবের শাস্তি ভোগ করার উপযুক্ত হয়ে গেছে। সে ভিক্ষা করে হয়তো কিছু টাকা জমায়। অন্যদিকে এমন এক বিপদ দাঁড়িয়ে যায়, যদ্দরুন সেই জমানো টাকা সবটাই খরচ হয়ে যায়। আর এভাবে যেমনটা অভাব সে প্রকাশ করেছিল তারচে'ও বেশি অভাবের শিকার হয়ে যায়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দান-খয়রাত দ্বারা সম্পদ কমে না। তাই কমে যাওয়ার আশঙ্কায় দান-খয়রাত থেকে পিছিয়ে থাকা উচিত নয়।

খ. অন্যের কাছে অর্থসাহায্য প্রার্থনা করার দ্বারা অর্থের অভাব দূর হয় না; আরও বাড়ে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ১২৭৬ | মুসলিম বাংলা