আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৮. অধ্যায়ঃ সদকা

হাদীস নং: ১১৩১
যাকাত অনাদায়ের প্রতি ভীতি প্রদর্শন ও অলংকারের যাকাত
১১৩১. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: কোন সোনা ও রূপার মালিক যদি এগুলোর হক (যাকাত) আদায় না করে, তবে কিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের শয্যা বিছানো হবে। তারপর জাহান্নামের আগুনে ঐ সব (সোনা ও রূপা) উত্তপ্ত করে তা দিয়ে তার পাঁজরে, ললাটে ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। এরপর যখন এর তাপ কমে যাবে, তখন পুনরায় তা উত্তপ্ত করা হবে। এভাবে চলতে থাকবে দিনভর, যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, যে পর্যন্ত না বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা হবে। এরপর দেখান হবে তার পথ হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে। বলা হয়ঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! উট সম্বন্ধে বিধান কি? তিনি বললেন: উটের হক হল, পানিপান করার দিন তা দোহন করা। উটের মালিক যদি এর হক আদায় না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে এক প্রশস্ত প্রান্তরে অধঃমুখী করে শায়িত করা হবে। তারপর ঐ উট পূর্বের চেয়েও অধিক মোটা তাজা অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে। এমন কি তার বাচ্চাও বাদ পড়বে না এবং স্বীয় খুরের দ্বারা উটের মালিক যদি তার হক আদায় না করে থাকে, তবে তাকে পায়ে দলন করতে থাকবে ও মুখে কাটতে থাকবে। মালিককে দলিত করে একটি চলে গেলে অপরটি আসবে। এমন করে এ দলন প্রক্রিয়া চলতে থাকবে ঐ দিন পর্যন্ত, যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এরপর লোকদের ফায়সালা হবে। পথ দেখানো হবে তাকে হয় জান্নাতের দিকে, নতুবা জাহান্নামের দিকে। প্রশ্ন করা হল : ইয়া রাসূলাল্লাহ! গরু ও ছাগলের হক কি? তিনি বললেন: গরু ও ছাগলের মালিক যদি তাদের হক আদায় না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে একটি প্রশস্ত সমতল প্রান্তরে শুইয়ে দেওয়া হবে। এরপর গরু-ছাগল তাকে তাদের খুরদ্বারা দলিত মথিত এবং শিংদ্বারা আঘাত করতে থাকবে। সে দিন সে সেগুলোর কোন একটিও অনুপস্থিত দেখতে পাবে না এবং তাদের মধ্যে গরু ও ছাগলের শিংবিহীন, উল্টো শিং এবং ভাংগা শিং বিশিষ্টও থাকবে না। (দলন ও আঘাতের পর) এদের প্রথম দলটি যখন চলে যাবে, তখন দ্বিতীয় দলটি এসে যাবে। ঐ দিনটি পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে। অবশেষে যখন লোকদের বিচার অনুষ্ঠান শেষ হবে, তখন তাকে পথ প্রদর্শন করা হবে হয় জান্নাতের দিকে, নতুবা জাহান্নামের দিকে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঘোড়ার হক কি? উত্তরে তিনি বললেন: ঘোড়া তিন প্রকার। ঘোড়া কারো জন্য পাপ স্বরূপ হবে। আর কারো জন্য হবে আবরণ, আবার কারো জন্য তা হবে পুণ্য। যার ঘোড়া পাপ স্বরূপ হবে, এ হলো সে ব্যক্তি, যে তার ঘোড়া প্রতিপালন করছে লোকদের মাঝে অহংকার প্রকাশ এবং মুসলমানদের শত্রুতা পোষণের জন্যে। এ ঘোড়াই হবে তার জন্য পাপের কারণ। যে ঘোড়া কারো জন্য আবরণ স্বরূপ হবে, এ হলো সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য প্রস্তুত রেখেছে এবং পিঠ ও ঘাড়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আল্লাহর হকের কথাও সে ভুলে যায়নি। এ ঘোড়াই হবে তার জন্য ঢাল স্বরূপ। আর যে ঘোড়া মালিকের জন্য পূণ্য স্বরূপ হবে, তা হলো ঐ ব্যক্তির ঘোড়া, যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর পথে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বাগান বা সবুজ তৃণভূমিতে বেঁধে রেখেছে। ঘোড়াটি ঐ চারণ ভূমি থেকে যে পরিমাণ ভক্ষণ করবে, এর বিনিময়ে তাকে পূণ্য দেওয়া হবে। অনুরূপভাবে এর মল-মূত্রের বিনিময়েও তাকে পূণ্য দেওয়া হবে। আর ঘোড়াটি রশি ছিঁড়ে এক বা দুটি টিলা অতিক্রম করলে, তার প্রতিটি পদচিহ্ন ও গোবরের বিনিময়েও তাকে সওয়াব দেওয়া হবে। যদি মালিক ঘোড়াটি নিয়ে কোন নদী-নালা অতিক্রম করে এবং মালিক ঘোড়াটিকে পানিপান করানোর ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ঘোড়াটি কিছু পানিপান করে, তবে যে পরিমাণ পানিপান করেছে, সে পরিমাণ নেকী তাকে দেওয়া হবে। এরপর জিজ্ঞেস করা হলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! গাধা সম্পর্কে কোন বিধান আছে কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ গাধা সম্পর্কে আমার নিকট কোন আদেশ অবতীর্ণ হয়নি। যে আয়াতে ক্ষুদ্র ও ব্যাপকতা স্থান পেয়েছে, তা হল এইঃ
فَمن يعْمل مِثْقَال ذرة خيرا يره وَمن يعْمل مِثْقَال ذرة شرا يره
"কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলে তাও দেখতে পাবে।" (সূরা যিলযালঃ ৭-৮)।
(বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। শব্দমালা মুসলিমের এবং নাসাঈ শরীফে এটি সংক্ষেপে উদ্ধৃত হয়েছে।)
التَّرْهِيب من منع الزَّكَاة وَمَا جَاءَ فِي زَكَاة الْحلِيّ
1131 - عَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مَا من صَاحب ذهب وَلَا فضَّة لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقّهَا إِلَّا إِذا كَانَ يَوْم الْقِيَامَة صفحت لَهُ صفايح من نَار فأحمي عَلَيْهَا فِي نَار جَهَنَّم فيكوى بهَا جنبه وجبينه وظهره كلما بردت أُعِيدَت لَهُ فِي يَوْم كَانَ مِقْدَاره خمسين ألف سنة حَتَّى يقْضى بَين الْعباد فَيرى سَبيله إِمَّا إِلَى الْجنَّة وَإِمَّا إِلَى النَّار
قيل يَا رَسُول الله فالإبل قَالَ وَلَا صَاحب إبل لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقّهَا وَمن حَقّهَا حلبها يَوْم وردهَا إِلَّا إِذا كَانَ يَوْم الْقِيَامَة بطح لَهَا بقاع قرقر أوفر مَا كَانَت لَا يفقد مِنْهَا فصيلا وَاحِدًا تطؤه بأخفافها وتعضه بأفواهها كلما مر عَلَيْهِ أولاها رد عَلَيْهِ أخراها فِي يَوْم كَانَ مِقْدَاره خمسين ألف سنة حَتَّى يقْضى بَين الْعباد فَيرى سَبيله إِمَّا إِلَى الْجنَّة وَإِمَّا إِلَى النَّار
قيل يَا رَسُول الله فالبقر وَالْغنم قَالَ وَلَا صَاحب بقر وَلَا غنم لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقّهَا إِلَّا إِذا كَانَ يَوْم الْقِيَامَة بطح لَهَا بقاع قرقر أوفر مَا كَانَت لَا يفقد مِنْهَا شَيْئا لَيْسَ مِنْهَا عقصاء وَلَا جلحاء وَلَا عضباء تنطحه بقرونها وتطؤه بأظلافها كلما مر عَلَيْهِ أَولهَا رد عَلَيْهِ آخرهَا فِي يَوْم كَانَ مِقْدَاره خمسين ألف سنة حَتَّى يقْضى بَين الْعباد فَيرى سَبيله إِمَّا إِلَى الْجنَّة وَإِمَّا إِلَى النَّار
قيل يَا رَسُول الله فالخيل قَالَ الْخَيل ثَلَاثَة هِيَ لرجل وزر وَهِي لرجل ستر وَهِي لرجل أجر فَأَما الَّتِي هِيَ لَهُ وزر فَرجل ربطها رِيَاء وفخرا ونواء لاهل الْإِسْلَام فَهِيَ لَهُ وزر وَأما الَّتِي هِيَ لَهُ ستر فَرجل ربطها فِي سَبِيل الله ثمَّ لم ينس حق الله فِي ظُهُورهَا وَلَا رقابها فَهِيَ لَهُ ستر وَأما الَّتِي هِيَ لَهُ أجر فَرجل ربطها فِي سَبِيل الله لاهل الْإِسْلَام فِي مرج أَو رَوْضَة فَمَا أكلت من ذَلِك المرج أَو الرَّوْضَة من شَيْء إِلَّا كتب لَهُ عدد مَا أكلت حَسَنَات وَكتب لَهُ عدد أرواثها وَأَبْوَالهَا حَسَنَات وَلَا تقطع طولهَا فاستنت شرفا أَو شرفين إِلَّا كتب لَهُ عدد آثارها وأرواثها حَسَنَات وَلَا مر بهَا صَاحبهَا على نهر فَشَرِبت مِنْهُ وَلَا يُرِيد أَن يسقيها إِلَّا كتب الله تَعَالَى لَهُ عدد مَا شربت حَسَنَات
قيل يَا رَسُول الله فالحمر قَالَ مَا أنزل عَليّ فِي الْحمر إِلَّا هَذِه الْآيَة الفاذة الجامعة {فَمن يعْمل مِثْقَال ذرة خيرا يره وَمن يعْمل مِثْقَال ذرة شرا يره} الزلزلة 7 8

رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَاللَّفْظ لَهُ وَالنَّسَائِيّ مُخْتَصرا
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ১১৩১ | মুসলিম বাংলা