আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৬. অধ্যায়ঃ নফল

হাদীস নং: ১০২৯
অধ্যায়ঃ নফল
ইসতিখারার সালাতের প্রতি অনুপ্রেরণা এবং তা বর্জন প্রসঙ্গে
১০২৯. হযরত জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা) কুরআনের সূরার ন্যায় সকল বিষয়ে আমাদেরকে ইসতিখারা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন: তোমরা যখন কোন বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে, তখন দুই রাক'আত নফল সালাত আদায় করবে। তারপর এই দু'আ পাঠ করবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أستخيرك بعلمك وأستقدرك بقدرتك

وَأَسْأَلك من فضلك الْعَظِيم فَإنَّك تقدر وَلَا أقدر وَتعلم وَلَا أعلم وَأَنت علام الغيوب اللَّهُمَّ إِن كنت تعلم أَن هَذَا الْأَمر خير لي فِي ديني ومعاشي وعاقبة أَمْرِي أَو قَالَ عَاجل أَمْرِي وآجله فاقدره لي ويسره لي ثمَّ بَارك لي فِيهِ وَإِن كنت تعلم أَن هَذَا الْأَمر شَرّ لي فِي ديني ومعاشي وعاقبة أَمْرِي أَو قَالَ عَاجل أَمْرِي وآجله فاصرفه عني واصرفني عَنهُ واقدر لي الْخَيْر حَيْثُ كَانَ ثمَّ أرضني بِهِ
"হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের ভিত্তিতে তোমার নিকট কল্যাণ কামনা করি এবং তোমার শক্তি হতে শক্তি চাই। তোমার মহা অনুগ্রহ প্রত্যাশা করি। সকল শক্তি তোমার, আমার কোন শক্তি নেই। তুমিই সব কিছু জান, আমি কিছুই জানি না, তুমি অদৃশ্য বিষয়ে সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। হে আল্লাহ! আমার দীন, জীবন বিধান এবং পরিণাম হিসেবে যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য কল্যাণকর মনে কর, তবে আমাকে তার শক্তি দাও। আর তুমি যদি মনে কর যে, এই কাজ আমার ধর্ম, আমার জীবন ও পরিণাম হিসেবে অকল্যাণকর, তবে আমার থেকে তা দূরে রাখ এবং তা থেকে আমাকে দূরে রাখ, আমার জন্য যেখানে কল্যাণ নিহিত আছে, তাতে আমাকে শক্তি দাও এবং তার মাধ্যমে আমাকে সন্তুষ্ট কর।" তারপর সে তার চাহিদার কথা বলবে।
(বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবন মাজাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب النَّوَافِل
التَّرْغِيب فِي صَلَاة الاستخارة وَمَا جَاءَ فِي تَركهَا
1029 - وَعَن جَابر بن عبد الله رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يعلمنَا الاستخارة فِي الْأُمُور كلهَا كَمَا يعلمنَا السُّورَة من الْقُرْآن يَقُول إِذا هم أحدكُم بِالْأَمر فليركع رَكْعَتَيْنِ من غير الْفَرِيضَة ثمَّ ليقل اللَّهُمَّ إِنِّي أستخيرك بعلمك وأستقدرك بقدرتك
وَأَسْأَلك من فضلك الْعَظِيم فَإنَّك تقدر وَلَا أقدر وَتعلم وَلَا أعلم وَأَنت علام الغيوب اللَّهُمَّ إِن كنت تعلم أَن هَذَا الْأَمر خير لي فِي ديني ومعاشي وعاقبة أَمْرِي أَو قَالَ عَاجل أَمْرِي وآجله فاقدره لي ويسره لي ثمَّ بَارك لي فِيهِ وَإِن كنت تعلم أَن هَذَا الْأَمر شَرّ لي فِي ديني ومعاشي وعاقبة أَمْرِي أَو قَالَ عَاجل أَمْرِي وآجله فاصرفه عني واصرفني عَنهُ واقدر لي الْخَيْر حَيْثُ كَانَ ثمَّ أرضني بِهِ
قَالَ ويسمي حَاجته

رَوَاهُ البُخَارِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি দ্বারা অনুমান করা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ইস্তিখারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যে গুরুত্বের সঙ্গে তিনি কুরআন মাজীদের সূরা শেখাতেন, সেরকম গুরুত্বের সঙ্গে ইস্তিখারাও শেখাতেন। এতে ইস্তিখারার নিয়ম শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এরকম যে, প্রথমে দু'রাকাত নফল নামায পড়তে হবে। তারপর এ হাদীছে বর্ণিত দু'আটি পড়তে হবে। যে-কোনও দু'আয় কিবলামুখী হওয়া উত্তম। কাজেই নফল নামাযের পর কিবলামুখী থাকা অবস্থায়ই দু'আটি পড়া চাই। দু'আর আগে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম অর্থাৎ দরূদ শরীফ পড়ে নেওয়া উত্তম। এ ক্ষেত্রেও তাই করবে। হাদীছটিতে দু'আটির বর্ণনায় শব্দগত কিছু পার্থক্য আছে। সে পার্থক্যের কারণে দু'আটি দু'রকম হয়। নিচে দু'রকম শব্দেই আলাদা আলাদাভাবে দু'আটির উল্লেখ করা গেল।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِي ، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيْهِ. وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِيْ فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، فَاصْرِفْهُ عني، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই আপনার জ্ঞানের সাহায্যে, আপনার কাছে শক্তি চাই আপনার শক্তির সাহায্যে, এবং আপনার কাছে আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে অনুগ্রহ কামনা করি। আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতা রাখেন। আমি কোনও ক্ষমতা রাখি না। আপনি জানেন, আমি জানি না। আপনি যাবতীয় গুপ্ত বিষয়ে মহাজ্ঞানী। হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি এ বিষয়টি আমার পক্ষে আমার দীন, আমার জীবিকা ও আমার পরিণামের দিক থেকে কল্যাণকর হয়, তবে আমার জন্য এর ব্যবস্থা করে দিন এবং আমার পক্ষে এটা সহজ করে দিন। তারপর এতে আমাকে বরকত দান করুন। পক্ষান্তরে আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি এ বিষয়টি আমার পক্ষে আমার দীন, আমার জীবিকা ও আমার পরিণামের দিক থেকে অনিষ্টকর হয়, তবে এটা আমার থেকে সরিয়ে দিন এবং আমাকেও এর থেকে সরিয়ে দিন। এবং আমার জন্য কল্যাণের ব্যবস্থা করুন, তা যেখানেই থাকে। তারপর আমাকে তাতে সন্তুষ্ট করে দিন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ ، وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِيْ فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ. وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِيْ فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ ، فَاصْرِفْهُ عَنِّي ، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ.
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই আপনার জ্ঞানের সাহায্যে, আপনার কাছে শক্তি চাই আপনার শক্তির সাহায্যে, এবং আপনার কাছে আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে অনুগ্রহ কামনা করি। আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতা রাখেন। আমি কোনও ক্ষমতা রাখি না। আপনি জানেন, আমি জানি না। আপনি যাবতীয় গুপ্ত বিষয়ে মহাজ্ঞানী। হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি এ বিষয়টি আমার পক্ষে আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার দুনিয়া ও আখিরাতের পক্ষে কল্যাণকর হয়, তবে আমার জন্য এর ব্যবস্থা করে দিন এবং আমার পক্ষে এটা সহজ করে দিন। তারপর এতে আমাকে বরকত দান করুন। পক্ষান্তরে আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি এ বিষয়টি আমার পক্ষে আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার দুনিয়া ও আখিরাতের পক্ষে অনিষ্টকর হয়, তবে এটা আমার থেকে সরিয়ে দিন এবং আমাকেও এর থেকে সরিয়ে দিন। এবং আমার জন্য কল্যাণের ব্যবস্থা করুন, তা যেখানেই থাকে। তারপর আমাকে তাতে সন্তুষ্ট করে দিন।

দু'আটিতে দুই জায়গায় هَذَا الْأَمْرَ (এ বিষয়টি) আছে। দু'আটি পড়ার সময় এ শব্দ না বলে যে বিষয়ে ইস্তিখারা করা হয়, সে বিষয়টি উল্লেখ করবে।

দু'আটির ব্যাখ্যা

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ (হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই আপনার জ্ঞানের সাহায্যে)। অর্থাৎ যে বিষয়টি আমার সামনে এসেছে তা আমার জন্য ভালো না মন্দ আমি তা জানি না। এর খুঁটিনাটি সকল দিক আমার সামনে নেই। আপনি প্রত্যেকটি বিষয়ের যাবতীয় দিক সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। আপনি আপনার সে পরিপূর্ণ জ্ঞানের দ্বারা আমার জন্য কল্যাণের ফয়সালা করুন। আমার জন্য যা করণীয়, আমার অন্তরে তা স্পষ্ট করে দিন।

وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ (আপনার কাছে শক্তি চাই আপনার শক্তির সাহায্যে)। অর্থাৎ আমার পক্ষে যেটি কল্যাণকর, আমাকে তা করার শক্তি দিন। সকল বিষয়ে আপনি সর্বশক্তিমান। আপনি যাকে শক্তিদান করেন, সেই শক্তি পায়। আপনি শক্তি না দিলে কারও পক্ষে কোনওকিছু করা সম্ভব নয়।

وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ (এবং আপনার কাছে আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে অনুগ্রহ কামনা করি)। অর্থাৎ আপনি মহা অনুগ্রহশীল। আপনি নিজ অনুগ্রহে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাকে জ্ঞান ও শক্তিদান করুন। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রেই আমি আপনার অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী।

فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ (আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতা রাখেন। আমি কোনও ক্ষমতা রাখি না)। অর্থাৎ সম্ভাব্য সকল বিষয়েই আপনার ক্ষমতা আছে। আপনি যা করতে চান তাই করার ক্ষমতা রাখেন। আপনার ইচ্ছা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। অপরদিকে আমি এক দুর্বল বান্দা। আমার নিজস্ব কোনও ক্ষমতা নেই। আপনি আমাকে যতটুকু দেন, আমার ক্ষমতা কেবল ততটুকুই। আপনি আমাকে যা করার ক্ষমতা দেন, আমি কেবল তাই করতে পারি, তার বেশি নয়।

وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ (আপনি জানেন, আমি জানি না। আপনি যাবতীয় গুপ্ত বিষয়ে মহাজ্ঞানী)। কুল মাখলুকাতের প্রতিটি বিষয়ে আপনি পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন। মহাজগতের যা-কিছু আমাদের দৃষ্টির আড়ালে, সেসব সম্পর্কেও আপনার জ্ঞান পরিপূর্ণ। মহাবিশ্বের ছোট-বড় কোনওকিছুই আপনার জ্ঞানের বাইরে নয়। অন্যদিকে আমি আপনার এক অজ্ঞ বান্দা। আপনি আমাকে যতটুকু জ্ঞান দেন আমি কেবল ততটুকুই জানি, তার বেশি নয়। কাজেই যে বিষয়ে আমি ইস্তিখারা করছি, তার যা-কিছু আমার দৃষ্টির আড়ালে আছে, সে সম্পর্কে আমি পরিপূর্ণ অজ্ঞ। সুতরাং আপনি নিজ জ্ঞানে আমাকে এ বিষয়ের জ্ঞান দান করুন এবং যা কল্যাণকর, আমাকে তা করার শক্তি দিন।
اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِيْ فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي (হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি এ বিষয়টি আমার পক্ষে আমার দীন, আমার জীবিকা ও আমার পরিণামের দিক থেকে কল্যাণকর হয়)। অর্থাৎ যে কাজটি আমি করতে যাচ্ছি (যেমন সফরে যাওয়া, কোনও ব্যবসা শুরু করা, কোনও চাকরি বেছে নেওয়া, কোথাও বিবাহ করা অর্থাৎ পাত্রী বা পাত্র নির্বাচন করা ইত্যাদি), তা যদি আমার দীনদারি ও জীবিকার জন্য ক্ষতিকর না হয় এবং এর কারণে আখিরাতে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে না হয় কিংবা ভবিষ্যতে এটা কোনও ক্ষতির কারণ না হয়।

فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ (তবে আমার জন্য এর ব্যবস্থা করে দিন এবং আমার পক্ষে এটা সহজ করে দিন। তারপর এতে আমাকে বরকত দান করুন)। অর্থাৎ এটা যাতে আমি করতে পারি, সেই ফয়সালা আপনি করুন এবং এটা করার জন্য যা-কিছু আসবাব-উপকরণের দরকার হয় তারও ব্যবস্থা করে দিন। আর এর সম্মুখ থেকে সকল জটিলতা সরিয়ে দিয়ে আমাকে এটা সহজে করে ফেলার তাওফীক দান করুন। তারপর এ বিষয়টি যেন আমার জন্য বরকতপূর্ণ হয়, এটা যেন আমার জন্য সুফল বয়ে আনে এবং এটা সবরকম ক্ষতি ও অনিষ্টকরতা থেকে মুক্ত থাকে, সেই মেহেরবানীও আপনি করুন।

وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِيْ فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، فَاصْرِفْهُ عني، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ (পক্ষান্তরে আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি এ বিষয়টি আমার পক্ষে আমার দীন, আমার জীবিকা ও আমার পরিণামের দিক থেকে অনিষ্টকর হয়, তবে এটা আমার থেকে সরিয়ে দিন এবং আমাকেও এর থেকে সরিয়ে দিন)। অর্থাৎ এসকল দিক থেকে ক্ষতিকর হলে আপনি আপনার কুদরত ও হিকমত দিয়ে এ বিষয়টি আমার থেকে সরিয়ে দিন। আবার এটা যদি সরে যায় কিন্তু আমার নিজের মন এর থেকে না সরে; বরং মন বার বার এদিকেই ছুটে যায়, তবে তা আমার জন্য কঠিন পেরেশানির কারণ হবে। তাই এটাকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আমার নিজেকেও এর থেকে সরিয়ে দিন। আমার মন থেকে এ বিষয়টিকে সম্পূর্ণ মুছে দিন। যাতে আমার মন শান্ত থাকতে পারে এবং আমি স্বস্তিবোধ করতে পারি।

وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ (এবং আমার জন্য কল্যাণের ব্যবস্থা করুন, তা যেখানেই থাকে)। অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে আমার জন্য যা কল্যাণকর, যার ভেতর নিহিত আছে ছাওয়াব ও আপনার সন্তুষ্টি, তা যেখানেই থাকুক এবং যে সময়েই হোক, আমি যাতে তা করতে পারি সে ফয়সালা আপনি করুন এবং তা করার শক্তিও আমাকে দিন।

ثُمَّ أَرْضِنِي بِه (তারপর আমাকে তাতে সন্তুষ্ট করে দিন)। অর্থাৎ আমি যেন খুশিমনে তা গ্রহণ করতে পারি, আমি যেন আপনার সে নি'আমতকে কিছুতেই তুচ্ছ গণ্য না করি, তা নিয়ে যেন আমি কারও সঙ্গে হাসাদ না করি; বরং সর্বান্তকরণে ও সন্তুষ্টির সঙ্গে আমি তা মেনে নিতে পারি, আমাকে সেই তাওফীক দান করুন। তাতে তার পরিমাণ যাই হোক এবং তা অবিলম্বে হোক বা বিলম্বে।

وَعَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ (এবং আমার দুনিয়া ও আখিরাতের পক্ষে কল্যাণকর হয়)। عاجل মানে নগদ। বোঝানো উদ্দেশ্য দুনিয়া। আর آجل মানে বাকি। অর্থাৎ আখিরাত। দুনিয়ায় আমরা বর্তমানে আছি। তাই একে 'নগদ' নামে অভিহিত করা হয়েছে।

আর আখিরাত মৃত্যুর পরে আসবে। তাই তাকে 'বাকি' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। তো এ নগদ ও বাকি তথা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের পক্ষে যা কল্যাণকর, এ দু'আর ভেতর তাই চাওয়া হয়েছে। দুনিয়ার কল্যাণও জরুরি। কেননা দুনিয়ায় অকল্যাণ ও অমঙ্গলে জর্জরিত হতে থাকলে মানুষের পক্ষে আখিরাতের কল্যাণজনক কাজে মন দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই আখিরাতের কল্যাণের স্বার্থেই দুনিয়ার কল্যাণও জরুরি। ইসলামী শরী'আতের অনুসরণ মানুষের আখিরাতের কল্যাণের পাশাপাশি দুনিয়ার কল্যাণও নিশ্চিত করে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ইস্তিখারার এ দু'আটির মধ্যে বান্দার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। যেমন-
ক. এর মধ্যে রয়েছে বান্দার নিজ অজ্ঞতা ও আল্লাহ তা'আলার সর্বব্যাপী জ্ঞানের স্বীকারোক্তি। কাজেই কোনও অবস্থায়ই নিজ জ্ঞানের অহমিকা দেখানো উচিত নয়। বরং সর্বাবস্থায় নিজ অজ্ঞতা বা জ্ঞানের কমতি ঘোচানোর জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে জ্ঞানবৃদ্ধির দু'আ করা উচিত।

খ. দু'আটিতে স্বীকার করা হয়েছে যে, আমার কোনও ক্ষমতা নেই, আল্লাহ তা'আলাই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাই ক্ষমতার বড়াই না দেখিয়ে সর্বদা আল্লাহর সামনে নিজ অক্ষমতা প্রকাশ ও বিনয় প্রদর্শন করা উচিত। আল্লাহ তা'আলা বিনয়ীকে পসন্দ করেন।

গ. বান্দা যেহেতু জ্ঞান ও ক্ষমতায় দুর্বল, তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজের বেলায় নিজ জ্ঞান-বুদ্ধির প্রতি অতি আস্থার পরিচয় না দিয়ে বিজ্ঞজনদের সঙ্গে পরামর্শ ও আল্লাহ তা'আলার কাছে ইস্তিখারা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

ঘ. বান্দা যেহেতু পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে না, তাই এমন হতে পারে যে, সে যে বিষয়টিকে নিজের জন্য কল্যাণকর ভাবছে, প্রকৃতপক্ষে তার জন্য তা ক্ষতিকর। আবার সে যে বিষয়টিকে নিজের জন্য ক্ষতিকর ভাবছে, বাস্তবে তার জন্য সেটাই উপকারী। তাই সর্বদা আল্লাহ তা'আলার ফয়সালায় খুশি থাকা উচিত।

ঙ. প্রকৃত কল্যাণ সেটাই, যা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের পক্ষে শুভ হয়। তাই কোনওকিছুতে কেবল দুনিয়ার লাভ দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে নেই। তা আখিরাতের জন্য লাভজনক কি না, তাও ভাবতে হবে।

চ. কোনও কোনও জিনিস উপস্থিত লাভজনক মনে হয়। কিন্তু তার পরিণাম ভালো হয় না। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় পরিণামও ভেবে দেখা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)