আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
৫. অধ্যায়ঃ নামাজ
হাদীস নং: ৬৬৯
সালাতুল ফজর ও আসর সংরক্ষণের প্রতি অনুপ্রেরণা
৬৬৯. হযরত ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করবে, সে আল্লাহর যিম্মায় থাকবে। কাজেই তোমরা আল্লাহর যিম্মা বিনষ্ট করো না। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর যিম্মা বিনষ্ট করবে, আল্লাহ তার থেকে যিম্মা তলব করবেন, এমনকি তাকে অধোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
(আহমদ ও বাযযার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তাবারানী তার 'কাবীর' ও 'আওসাত' গ্রন্থে অনুরূপ বর্ণনা করেন।)
[এ হাদীসের প্রথমে রয়েছে একটি ঘটনাঃ] হাজ্জাজ-সালিম ইবন আবদুল্লাহকে জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করার নির্দেশ দিল। সালিম (র) তাকে বললেনঃ তুমি কি ফজরের সালাত আদায় করেছ? লোকটি বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তুমি চলে যাও। হাজ্জাজ তাকে বলল। তাকে হত্যা করতে তোমাকে কে বারণ করল?' সালিম (র) বললেনঃ আমার পিতা আমার কাছে এই মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ -কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করবে, সে ঐ দিন আল্লাহর যিম্মায় থাকবে। কাজেই আল্লাহ যার নিরাপত্তা বিধান করেছেন, তাকে হত্যা করা আমি অপসন্দ করলাম। হাজ্জাজ ইবন উমর (রা)-কে বললেন: আপনি কি এই হাদীস রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে শুনেছেন? ইবন উমর (রা) বললেনঃ হ্যাঁ!
[হাফিয মুনযিরী (র) বলেন:] প্রথম হাদীসে ইবন লাহীয়া এবং দ্বিতীয় হাদীসে ইয়াহইয়া ইবন আবদুল হামীদ হাম্মানী রয়েছেন।
(আহমদ ও বাযযার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তাবারানী তার 'কাবীর' ও 'আওসাত' গ্রন্থে অনুরূপ বর্ণনা করেন।)
[এ হাদীসের প্রথমে রয়েছে একটি ঘটনাঃ] হাজ্জাজ-সালিম ইবন আবদুল্লাহকে জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করার নির্দেশ দিল। সালিম (র) তাকে বললেনঃ তুমি কি ফজরের সালাত আদায় করেছ? লোকটি বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তুমি চলে যাও। হাজ্জাজ তাকে বলল। তাকে হত্যা করতে তোমাকে কে বারণ করল?' সালিম (র) বললেনঃ আমার পিতা আমার কাছে এই মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ -কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করবে, সে ঐ দিন আল্লাহর যিম্মায় থাকবে। কাজেই আল্লাহ যার নিরাপত্তা বিধান করেছেন, তাকে হত্যা করা আমি অপসন্দ করলাম। হাজ্জাজ ইবন উমর (রা)-কে বললেন: আপনি কি এই হাদীস রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে শুনেছেন? ইবন উমর (রা) বললেনঃ হ্যাঁ!
[হাফিয মুনযিরী (র) বলেন:] প্রথম হাদীসে ইবন লাহীয়া এবং দ্বিতীয় হাদীসে ইয়াহইয়া ইবন আবদুল হামীদ হাম্মানী রয়েছেন।
التَّرْغِيب فِي الْمُحَافظَة على الصُّبْح وَالْعصر
669 - وَعَن ابْن عمر رَضِي الله عَنْهُمَا أَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ من صلى الصُّبْح فَهُوَ فِي ذمَّة الله تبَارك وَتَعَالَى فَلَا تخفروا الله تبَارك وَتَعَالَى فِي ذمَّته فَإِنَّهُ من أَخْفَر ذمَّته طلبه الله تبَارك وَتَعَالَى حَتَّى يكبه على وَجهه
رَوَاهُ أَحْمد وَالْبَزَّار وَرَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ فِي الْكَبِير والأوسط بِنَحْوِهِ
وَفِي أول قصَّة وَهُوَ أَن الْحجَّاج أَمر سَالم بن عبد الله بقتل رجل فَقَالَ لَهُ سَالم أصليت الصُّبْح فَقَالَ الرجل نعم
فَقَالَ لَهُ انْطلق فَقَالَ لَهُ الْحجَّاج مَا مَنعك من قَتله فَقَالَ سَالم حَدثنِي أبي أَنه سمع رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول من صلى الصُّبْح كَانَ فِي جوَار الله يَوْمه فَكرِهت أَن أقتل رجلا أجاره الله فَقَالَ الْحجَّاج لِابْنِ عمر أَنْت سَمِعت هَذَا من رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ ابْن عمر نعم
قَالَ الْحَافِظ وَفِي الأولى ابْن لَهِيعَة وَفِي الثَّانِيَة يحيى بن عبد الحميد الْحمانِي
رَوَاهُ أَحْمد وَالْبَزَّار وَرَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ فِي الْكَبِير والأوسط بِنَحْوِهِ
وَفِي أول قصَّة وَهُوَ أَن الْحجَّاج أَمر سَالم بن عبد الله بقتل رجل فَقَالَ لَهُ سَالم أصليت الصُّبْح فَقَالَ الرجل نعم
فَقَالَ لَهُ انْطلق فَقَالَ لَهُ الْحجَّاج مَا مَنعك من قَتله فَقَالَ سَالم حَدثنِي أبي أَنه سمع رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول من صلى الصُّبْح كَانَ فِي جوَار الله يَوْمه فَكرِهت أَن أقتل رجلا أجاره الله فَقَالَ الْحجَّاج لِابْنِ عمر أَنْت سَمِعت هَذَا من رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ ابْن عمر نعم
قَالَ الْحَافِظ وَفِي الأولى ابْن لَهِيعَة وَفِي الثَّانِيَة يحيى بن عبد الحميد الْحمانِي
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে ফজরের নামায আদায়কারীর মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে- فَهُوَ فِي ذِمةِ اللَّه অর্থাৎ ফজরের নামায আদায়কারী আল্লাহ তাআলার যিম্মায় চলে যায়। আল্লাহর যিম্মায় চলে যাওয়ার অর্থ- আল্লাহ তাআলা তাকে নিরাপত্তা দান করেন। আল্লাহ তাআলা যাকে নিরাপত্তা দান করেন, প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য সে নিরাপত্তার মর্যাদা দেওয়া অর্থাৎ তার জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা রক্ষা করা, কোনওভাবে তার কোনও ক্ষতি না করা।
এ হাদীছে যিম্মাদারী দ্বারা রূপকার্থে নামাযও বোঝানো হতে পারে, যেহেতু যিম্মাদারী তথা নিরাপত্তা নামায আদায়ের ফলস্বরূপ। এ হিসেবে হাদীছটির অর্থ হবে-তোমরা ফজরের নামায ত্যাগ করো না এবং এ নামায আদায়ের ব্যাপারে কোনওরকম শিথিলতা প্রদর্শন করো না। কেননা তা করলে আল্লাহ ও তোমাদের মধ্যকার প্রতিশ্রুতি ভেঙে যাবে। পরিণামে আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে তলব করবেন । আর আল্লাহ তাআলা যাকে তলব করবেন এবং যাকে তাঁর প্রদত্ত দায়িত্বে অবহেলার কারণে পাকড়াও করবেন, তাকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
ফজরের নামাযের এ গুরুত্বের কারণ- তুলনামূলকভাবে এ নামায আদায় করা বেশি কঠিন। ঘুম থেকে উঠে এ নামায আদায় করতে অলসতা লাগে। তা সত্ত্বেও যারা এ নামায আদায় করে, বলা যায় তারা কেবল ইখলাসের কারণেই তা আদায় করে। আর যারা মুখলিস তারা আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে।
অথবা এ গুরুত্বের কারণ হচ্ছে, ফজরের নামায আদায় করা হয় দিনের শুরুতে। এ সময় মানুষ তাদের নিত্যদিনের নানা প্রয়োজনে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যতিব্যস্ততার মধ্যেও যারা আগে নামায পড়ে নেয়, তারা যেন দুনিয়ার উপর আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েই তা করে। স্বাভাবিকভাবেই যারা ফজরের নামাযে এরূপ যত্নবান থাকে, তারা অন্যান্য নামায আদায়েও কোনওরূপ অবহেলা করবে না। সুতরাং তারা যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সবটা সময় নির্বিঘ্নে নামায পড়তে পারে, তাই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেন, যা রক্ষা করা সকলের কর্তব্য।
ইবন হাজার হাইতামী রহ. মিশকাত শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে বলেন, যারা ফজরের নামায আদায় করে, যা কিনা অবশিষ্ট চার ওয়াক্ত নামায যথাযথ আদায়ের পক্ষে সহায়ক, কেউ যাতে তাদের কোনওরকম ক্ষতি না করে সেজন্য এ হাদীছটি একটি কঠোর সতর্কবাণী। এতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ তাদের কোনও ক্ষতি করলে পরিণামে তাকে কঠিন লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
ইমাম শা‘রানী রহ. ‘আল-হাউযুল মাওরূদ' গ্রন্থে বলেন, হাজ্জাজ ইবন ইয়ূসুফ অত্যন্ত নিষ্ঠুর শাসক হওয়া সত্ত্বেও কাউকে যখন তার কাছে ধরে আনা হত তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করতেন, তুমি ফজরের নামায পড়েছ? যদি সে পড়েছে বলে জানাত, তখন এ হাদীছের সতর্কবাণীর প্রতি লক্ষ করে তাকে নিরাপদে মুক্তি দিয়ে দিতেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ফজরের নামাযের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। কাজেই এ নামায আদায়ে বিন্দুমাত্র গড়িমসি করা উচিত নয়।
খ. যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করে সে যেহেতু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পেয়ে যায়, তাই তার যে-কোনওরকম ক্ষতি করা হতে বিরত থাকা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যকর্তব্য।
এ হাদীছে যিম্মাদারী দ্বারা রূপকার্থে নামাযও বোঝানো হতে পারে, যেহেতু যিম্মাদারী তথা নিরাপত্তা নামায আদায়ের ফলস্বরূপ। এ হিসেবে হাদীছটির অর্থ হবে-তোমরা ফজরের নামায ত্যাগ করো না এবং এ নামায আদায়ের ব্যাপারে কোনওরকম শিথিলতা প্রদর্শন করো না। কেননা তা করলে আল্লাহ ও তোমাদের মধ্যকার প্রতিশ্রুতি ভেঙে যাবে। পরিণামে আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে তলব করবেন । আর আল্লাহ তাআলা যাকে তলব করবেন এবং যাকে তাঁর প্রদত্ত দায়িত্বে অবহেলার কারণে পাকড়াও করবেন, তাকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
ফজরের নামাযের এ গুরুত্বের কারণ- তুলনামূলকভাবে এ নামায আদায় করা বেশি কঠিন। ঘুম থেকে উঠে এ নামায আদায় করতে অলসতা লাগে। তা সত্ত্বেও যারা এ নামায আদায় করে, বলা যায় তারা কেবল ইখলাসের কারণেই তা আদায় করে। আর যারা মুখলিস তারা আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে।
অথবা এ গুরুত্বের কারণ হচ্ছে, ফজরের নামায আদায় করা হয় দিনের শুরুতে। এ সময় মানুষ তাদের নিত্যদিনের নানা প্রয়োজনে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যতিব্যস্ততার মধ্যেও যারা আগে নামায পড়ে নেয়, তারা যেন দুনিয়ার উপর আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েই তা করে। স্বাভাবিকভাবেই যারা ফজরের নামাযে এরূপ যত্নবান থাকে, তারা অন্যান্য নামায আদায়েও কোনওরূপ অবহেলা করবে না। সুতরাং তারা যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সবটা সময় নির্বিঘ্নে নামায পড়তে পারে, তাই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেন, যা রক্ষা করা সকলের কর্তব্য।
ইবন হাজার হাইতামী রহ. মিশকাত শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে বলেন, যারা ফজরের নামায আদায় করে, যা কিনা অবশিষ্ট চার ওয়াক্ত নামায যথাযথ আদায়ের পক্ষে সহায়ক, কেউ যাতে তাদের কোনওরকম ক্ষতি না করে সেজন্য এ হাদীছটি একটি কঠোর সতর্কবাণী। এতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ তাদের কোনও ক্ষতি করলে পরিণামে তাকে কঠিন লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
ইমাম শা‘রানী রহ. ‘আল-হাউযুল মাওরূদ' গ্রন্থে বলেন, হাজ্জাজ ইবন ইয়ূসুফ অত্যন্ত নিষ্ঠুর শাসক হওয়া সত্ত্বেও কাউকে যখন তার কাছে ধরে আনা হত তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করতেন, তুমি ফজরের নামায পড়েছ? যদি সে পড়েছে বলে জানাত, তখন এ হাদীছের সতর্কবাণীর প্রতি লক্ষ করে তাকে নিরাপদে মুক্তি দিয়ে দিতেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ফজরের নামাযের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। কাজেই এ নামায আদায়ে বিন্দুমাত্র গড়িমসি করা উচিত নয়।
খ. যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করে সে যেহেতু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পেয়ে যায়, তাই তার যে-কোনওরকম ক্ষতি করা হতে বিরত থাকা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
