আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৫. অধ্যায়ঃ নামাজ

হাদীস নং: ৬০১
বিজন এলাকায় সালাত আদায়ের প্রতি অনুপ্রেরণা।
[হাফিয (র) বলেন]: কোন কোন আলিম জামা'আতে সালাত আদায় অপেক্ষা বিজন এলাকার সালাত আদায় উত্তম মনে করেন।
৬০১. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: জামা'আতে সালাত আদায়ে রয়েছে পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব। কেউ যদি পরিপূর্ণ রুকু-সিজদাসহ বিজন এলাকায় সালাত আদায় করে, তার জন্য রয়েছে পঞ্চাশ গুণ সওয়াব।
(আবূ দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আবদুল ওয়াহিদ ইবন যিয়াদ এই হাদীস সম্পর্কে বলেনঃ বিজন এলাকার সালাত আদায়ে জামা'আতের দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে। হাকিম নিজ শব্দে হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং বলেন: বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী এ হাদীসখানা সহীহ। হাদীসের মূল অংশ বুখারী ও অন্যান্যদের মত এবং ইবন হিব্বান তাঁর নিজ শব্দযোগে 'সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: কারো একাকী সালাত আদায় অপেক্ষা জামা'আতে সালাত আদায়ে পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব দেওয়া হয়। আর কেউ যদি বিজন এলাকায় রুকু-সিজদা পূর্ণভাবে আদায়সহ সালাত আদায় করে, তাকে দেওয়া হয় পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সওয়াব (মর্যাদা)।
التَّرْغِيب فِي الصَّلَاة فِي الفلاة قَالَ الْحَافِظ رَحمَه الله وَقد ذهب بعض الْعلمَاء إِلَى تفضيلها على الصَّلَاة فِي الْجَمَاعَة
601 - وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم الصَّلَاة فِي الْجَمَاعَة تعدل خمْسا وَعشْرين صَلَاة فَإِذا صلاهَا فِي فلاة فَأَتمَّ ركوعها وسجودها بلغت خمسين صَلَاة
رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَقَالَ قَالَ عبد الْوَاحِد بن زِيَاد فِي هَذَا الحَدِيث صَلَاة الرجل فِي الفلاة تضَاعف على صلَاته فِي الْجَمَاعَة
رَوَاهُ الْحَاكِم بِلَفْظِهِ وَقَالَ صَحِيح على شَرطهمَا وَصدر الحَدِيث عِنْد البُخَارِيّ وَغَيره وَرَوَاهُ ابْن حبَان فِي صَحِيحه وَلَفظه قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم صَلَاة الرجل فِي جمَاعَة تزيد على صلَاته وَحده بِخمْس وَعشْرين دَرَجَة فَإِن صلاهَا بِأَرْض قي فَأَتمَّ ركوعها وسجودها تكْتب صلَاته بِخَمْسِينَ دَرَجَة

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাচ্ছেন যে, নিজ ঘরে বা বাজারের দোকানে একাকী নামায পড়া অপেক্ষা মসজিদে জামাতের সংগে নামায আদায় করলে তার ফযীলত পঁচিশ গুণ বেশি হয়। মসজিদে জামাতের সংগে নামায পড়লে তার ফযীলত যে এত বেশি, তার কারণ কি? যা অন্য হাদীছ দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, তার কারণ কেবল নামাযের নিয়তে পথচলা। ঘরে বা দোকানে নামায পড়লে নামায পড়া হয় বটে, কিন্তু নামাযের নিয়তে পথচলা হয় না। আবার কেউ যদি এমনিই পথ চলে কিন্তু নামাযের নিয়ত না থাকে, তা দ্বারাও এই বাড়তি ফযীলত হাসিল হয় না। এই বাড়তি ফযীলত কেবল নামাযের নিয়তে মসজিদে গমনের কারণে।
এই মহান নিয়তের কারণে পথ চলাটা এত দামি হয়ে যায় যে, মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে যতগুলি কদম ফেলা হয় তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা এক স্তর বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। বোঝাই যাচ্ছে মসজিদ পর্যন্ত যার পথ যতবেশি দূরে হবে, তার মর্যাদাও তত বাড়বে এবং ততবেশি গুনাহ মাফ হবে। অপর এক হাদীছে আছে, একবার বনূ সালিমা গোত্র তাদের মহল্লা ছেড়ে মসজিদের নিকটে এসে বসবাসের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিল। কারণ তাদের মহল্লা মসজিদ থেকে দূরে ছিল। মসজিদে যাতায়াতে বেশি সময় লাগত এবং অনেক সময় কষ্টও হত। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, তারা মসজিদের কাছাকাছি এসে বসবাস করতে চাচ্ছে, তখন তিনি তাদেরকে তা থেকে বারণ করলেন এবং বললেন, হে বনূ সালিমা! আপন জায়গায়ই বাস করতে থাক। তাতে তোমাদের কদমে কদমে ছওয়াব লেখা হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জামাতে নামায পড়ার ফযীলত জানা যায়। সুতরাং যতসম্ভব জামাতের সাথে নামায আদায়ে যত্নবান থাকা উচিত।

খ. মসজিদে গমনের উদ্দেশ্য যেহেতু নামায পড়া, তাই পথ চলাকালে সেই নিয়ত অন্তরে জাগ্রত রাখা উচিত, যাতে পথচলাটা ধীরশান্ত পদক্ষেপে হয় এবং গোটা পথ মুসল্লীসুলভ ভাবভঙ্গি বজায় থাকে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ৬০১ | মুসলিম বাংলা