আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৫. অধ্যায়ঃ নামাজ

হাদীস নং: ৫৯৫
জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে বের হওয়া এবং জামাআত না পাওয়া সত্ত্বেও মসজিদে আসার প্রতি অনুপ্রেরণা
৫৯৫. হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: জামআত বর্জনকারী যদি জানত যে, পায়ে হেঁটে জামআতে অংশ গ্রহণ করে সালাত আদায়ে কী সওয়াব রয়েছে, তাহলে সে দুই হাত-পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও জামাআতে অংশগ্রহণ করত।
(তাবারানী, হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সালাতের জামা'আত বর্জনের ভয়াবহ পরিণাম' অধ্যায়ে এ বিষয়ে ইনশা আল্লাহ দীর্ঘ হাদীসের আলোচনা আসবে।)
التَّرْغِيب فِي صَلَاة الْجَمَاعَة وَمَا جَاءَ فِيمَن خرج يُرِيد الْجَمَاعَة فَوجدَ النَّاس قد صلوا
595 - وَعَن أبي أُمَامَة رَضِي الله عَنهُ أَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لَو يعلم هَذَا المتخلف عَن الصَّلَاة فِي الْجَمَاعَة مَا لهَذَا الْمَاشِي إِلَيْهَا لأتاها وَلَو حبوا على يَدَيْهِ وَرجلَيْهِ

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ فِي حَدِيث يَأْتِي بِتَمَامِهِ فِي ترك الْجَمَاعَة إِن شَاءَ الله تَعَالَى

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাচ্ছেন যে, নিজ ঘরে বা বাজারের দোকানে একাকী নামায পড়া অপেক্ষা মসজিদে জামাতের সংগে নামায আদায় করলে তার অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন- কোন হাদীসে
বিশগুণেরও বেশি ফযীলতের কথা এসেছে। কোনও হাদীছে পঁচিশ এবং কোনও হাদীছে সাতাশ গুণের কথা স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে।
মসজিদে জামাতের সংগে নামায পড়লে তার ফযীলত যে এত বেশি, তার কারণ কি? এ হাদীছ দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, তার কারণ কেবল নামাযের নিয়তে পথচলা। ঘরে বা দোকানে নামায পড়লে নামায পড়া হয় বটে, কিন্তু নামাযের নিয়তে পথচলা হয় না। আবার কেউ যদি এমনিই পথ চলে কিন্তু নামাযের নিয়ত না থাকে, তা দ্বারাও এই বাড়তি ফযীলত হাসিল হয় না। এই বাড়তি ফযীলত কেবল নামাযের নিয়তে মসজিদে গমনের কারণে।
এই মহান নিয়তের কারণে পথ চলাটা এত দামি হয়ে যায় যে, মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে যতগুলি কদম ফেলা হয় তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা এক স্তর বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। বোঝাই যাচ্ছে মসজিদ পর্যন্ত যার পথ যতবেশি দূরে হবে, তার মর্যাদাও তত বাড়বে এবং ততবেশি গুনাহ মাফ হবে। অপর এক হাদীছে আছে, একবার বনূ সালিমা গোত্র তাদের মহল্লা ছেড়ে মসজিদের নিকটে এসে বসবাসের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিল। কারণ তাদের মহল্লা মসজিদ থেকে দূরে ছিল। মসজিদে যাতায়াতে বেশি সময় লাগত এবং অনেক সময় কষ্টও হত। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, তারা মসজিদের কাছাকাছি এসে বসবাস করতে চাচ্ছে, তখন তিনি তাদেরকে তা থেকে বারণ করলেন এবং বললেন, হে বনূ সালিমা! আপন জায়গায়ই বাস করতে থাক। তাতে তোমাদের কদমে কদমে ছওয়াব লেখা হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জামাতে নামায পড়ার ফযীলত জানা যায়। সুতরাং যতসম্ভব জামাতের সাথে নামায আদায়ে যত্নবান থাকা উচিত।

খ. মসজিদে গমনের উদ্দেশ্য যেহেতু নামায পড়া, তাই পথ চলাকালে সেই নিয়ত অন্তরে জাগ্রত রাখা উচিত, যাতে পথচলাটা ধীরশান্ত পদক্ষেপে হয় এবং গোটা পথ মুসল্লীসুলভ ভাবভঙ্গি বজায় থাকে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান