আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৫. অধ্যায়ঃ নামাজ

হাদীস নং: ৫৯৪
জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে বের হওয়া এবং জামাআত না পাওয়া সত্ত্বেও মসজিদে আসার প্রতি অনুপ্রেরণা
৫৯৪. হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: একদা আমার রবের পক্ষ থেকে একজন আগন্তুক এলেন।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, আমি একবার আমার রবকে অতি উত্তম সূরতে (স্বপ্নে) দেখলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ হে মুহাম্মদ! আমি বললামঃ হে আমার রব! আপনার খিদমতে আমি উপস্থিত আছি। তিনি বললেন: মালায়ে আলায় (শীর্ষস্থানীয় ফিরিশতাগণ) কি বিষয় নিয়ে বাদানুবাদ করছে, তা কি তুমি জান? আমি বললাম: আমি জানি না। তখন তিনি আমার দুই কাঁধের মাঝখানে তাঁর (কুদরতের) হাত রাখলেন, যার শীতলতা আমি বুকে অনুভব করলাম অথবা তিনি বলেছেনঃ তিনি আমার গর্দানে হাত রাখলেন। ফলে আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় বিষয়ে অবগত হলাম, অথবা তিনি বলেছেনঃ পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যকার যাবতীয় বিষয়ে অবগত হলাম। এরপর তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মদ। তুমি কি জান মালায় আলায়ে কোন বিষয় নিয়ে বাদানুবাদ চলছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ দারাজাত, কাফ্ফারাত এবং এবং জামাআতে অংশগ্রহণের জন্য পদচারণা, প্রচণ্ড শীতের সময় পূর্ণরূপে উযু করা, এক সালাতের পর অন্য সালাতের অপেক্ষায় থাকা (ইত্যাদি বিষয়ে বাদানুবাদ চলছে)। এসব যে ব্যক্তি পুরোপুরি সংরক্ষণ করবে, সে লাভ করবে সুখময় জীবন এবং কল্যাণের সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং সে পাপরাশি থেকে পবিত্র হবে সে দিনের ন্যায়, যে দিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মদ! আমি বললামঃ আমি আপনার খিদমতে উপস্থিত আছি। তিনি বললেন: সালাত আদায়কালে এই দু'আ পড়বেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسأَلك فعل الْخيرَات وَترك الْمُنْكَرَات وَحب الْمَسَاكِين وَإِذا أردْت بعبادك فتْنَة فاقبضني إِلَيْك غير مفتون
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উত্তম কাজ করার (তাওফীক) প্রার্থনা করছি, প্রার্থনা করছি মন্দকাজসমূহ বর্জন করতে এবং দুঃস্থদের ভালবাসতে। (হে আল্লাহ)! যখন তুমি তোমার বান্দাদের পরীক্ষা করতে চাও, তখন আমাকে ফিতনামুক্ত রেখে তোমার দিকে উঠিয়ে নেবে।"
তিনি (রাসূলুল্লাহ সা.) বললেনঃ দারাজাত হল, সালামের ব্যাপক প্রচলন, অন্ন দান এবং রাতে সালাত আদায় করা যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে।
(তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং বলেন, এ হাদীসখানা হাসান-গরীব।)
التَّرْغِيب فِي صَلَاة الْجَمَاعَة وَمَا جَاءَ فِيمَن خرج يُرِيد الْجَمَاعَة فَوجدَ النَّاس قد صلوا
594 - وَعَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أَتَانِي اللَّيْلَة آتٍ من رَبِّي
وَفِي رِوَايَة رَأَيْت رَبِّي فِي أحسن صُورَة فَقَالَ لي يَا مُحَمَّد
قلت لبيْك رب وَسَعْديك
قَالَ هَل تَدْرِي فيمَ يخْتَصم الْمَلأ الْأَعْلَى قلت لَا أعلم فَوضع يَده بَين كَتِفي حَتَّى وجدت بردهَا بَين ثديي أَو قَالَ فِي نحري فَعلمت مَا فِي السَّمَوَات وَمَا فِي الأَرْض أَو قَالَ مَا بَين الْمشرق وَالْمغْرب
قَالَ يَا مُحَمَّد أَتَدْرِي فيمَ يخْتَصم الْمَلأ الْأَعْلَى قلت نعم
فِي الدَّرَجَات وَالْكَفَّارَات وَنقل الْأَقْدَام إِلَى الْجَمَاعَات
وإسباغ
الْوضُوء فِي السبرات وانتظار الصَّلَاة وَمن حَافظ عَلَيْهِنَّ عَاشَ بِخَير وَمَات بِخَير وَكَانَ من ذنُوبه كَيَوْم وَلدته أمه
قَالَ يَا مُحَمَّد قلت لبيْك وَسَعْديك فَقَالَ إِذا صليت قل اللَّهُمَّ إِنِّي أَسأَلك فعل الْخيرَات وَترك الْمُنْكَرَات وَحب الْمَسَاكِين وَإِذا أردْت بعبادك فتْنَة فاقبضني إِلَيْك غير مفتون
قَالَ والدرجات إفشاء السَّلَام وإطعام الطَّعَام وَالصَّلَاة بِاللَّيْلِ وَالنَّاس نيام
رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ حَدِيث حسن غَرِيب

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সালামের রেওয়াজদান
إفشاء السلام (সালামের প্রসার ঘটানো)। সালামের প্রসার ঘটানোর অর্থ বেশি বেশি সালাম দেওয়া। এমনভাবে এর প্রচার ও চর্চা করা, যাতে সালাম দেওয়া-নেওয়া সামাজিক রেওয়াজে পরিণত হয়ে যায়। তা সম্ভব হবে এভাবে যে, সালামের যতগুলো ক্ষেত্র আছে তার প্রত্যেকটিতেই আমরা সালাম বিনিময় করব। ঘরে প্রবেশকালে সালাম দেব। একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সালাম দেব। পরস্পর বিদায় গ্রহণকালে সালাম দেব। কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সালাম দেব। মজলিসে উপস্থিত হওয়ার সময় মজলিসের লোকদেরকে সালাম দেব। এমনিভাবে সালাম দেব বড় ছোটকে ও ছোট বড়কে। সালাম দেব পিতা-মাতাকে, ছেলেমেয়েকে, স্বামী তার স্ত্রীকে এবং স্ত্রী তার স্বামীকে। নিজে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করব। কাউকে সালাম দিতে লজ্জিত হব না, কুণ্ঠাবোধ করব না। যারা সালাম দেয় না তাদেরকে সালাম শেখাব। শিশুদেরকে সালামের তা'লীম দেব। ফোনালাপকালেও কথার সূচনা করব সালাম দ্বারা। আবার কথা শেষে সালাম দিয়েই ফোন রাখব। এভাবে নিজে সালামের চর্চা করার সাথে সাথে অন্যদেরকে সালাম দেওয়ার প্রতি উৎসাহ দিতে থাকলে এক পর্যায়ে ইসলামের এ সুন্নত সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, আমাদেরকে কেবল সালাম দিতে বা নিতেই বলা হয়নি; বরং সালামের প্রসার ঘটাতে, একে রেওয়াজে পরিণত করতে আদেশ করা হয়েছে। সর্বত্র সালামকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখার দ্বারাই এ আদেশ যথাযথভাবে পালন হতে পারে। আমরা জান্নাতকে আমাদের আসল ঠিকানা মনে করি। সে ঠিকানায় পৌঁছার জন্য এ প্রচেষ্টা এক শক্তিশালী অবলম্বন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কেবল সালাম দিয়েই ক্ষান্ত হওয়া উচিত নয়; মুসলিম সমাজে যাতে সালামের ব্যাপক চর্চা হয়, সে চেষ্টা করাও জরুরি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ৫৯৪ | মুসলিম বাংলা