আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১. ইখলাস-সত্যবাদিতা ও সদিচ্ছা সম্পর্কিত

হাদীস নং: ৫৩
ইখলাস-সত্যবাদিতা ও সদিচ্ছা সম্পর্কিত
রিয়া সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন এবং রিয়ার আশংকাকালীন দু'আ
৫৩. শাহর ইব্ন হাওশাব (র) থেকে আবদুর রহমান ইবন গুনম সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল-জাবিয়া মসজিদে প্রবেশ করে হযরত উবাদা ইব্‌ন সামিত (রা) এর সাক্ষাত পেলাম। তিনি আমাকে তাঁর বাম হাত দিয়ে এবং আবুদ-দারদা বাম হাত তাঁর ডান হাত দিয়ে চেপে ধরলেন, তারপর তিনি আমাদের দু'জনের উপর ভর করে হাঁটতে লাগলেন এবং আমরা মনে মনে কথাবার্তা বলছিলাম যা আল্লাহ্-ই ভাল জানেন। হযরত উবাদা ইব্ন সামিত (রা) বলেন, তোমাদের একজন যদি অপরজন অপেক্ষা দীর্ঘায়ু হও অথবা উভয়ে যদি দীর্ঘজীবী হও, অচিরেই মুসলমানদের মধ্যে হাফিযে কুরআনদের দেখতে পাবে যারা কুরআন হিফয করেছে এবং হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম জেনেছে, মুহাম্মদ (সা) এর ভাষায় রিয়া করছে তাদের অবস্থা মৃত গর্দভের মাথা তুল্য বৈ কিছু নয়। তিনি বললেন, ইতিমধ্যে আমাদের নিকট শাদ্দাদ ইব্‌ন আউস এবং আউফ ইব্‌ন মালিক (রা) এসে বসে পড়লেন। হযরত শাদ্দাদ (রা) বললেন হে লোকেরা! আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে যা শুনেছি, তন্মধ্যে তোমাদের জন্য সুপ্ত প্রবৃত্তি ও শিরককে সর্বাধিক ভয় করি। উবাদা ইব্‌ন সামিত ও আবু-দারদা (রা) বললেন, হে আল্লাহ্! আমাদের পাপরাশি ক্ষমা কর। রাসূলুল্লাহ (সা) কি আমাদের উদ্দেশ্যে বলেননি: আরব উপদ্বীপে শয়তান তার ইবাদত থেকে নিরাশ হয়েছে। সুপ্ত প্রবৃত্তি তো আমরা চিনি। তা হল পার্থিব লোভ ও নারীর প্রতি মোহ। ওহে শাদ্দাদ। তাহলে আপনি আমাদের কোন্ শিরক-এর ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করছেন? হযরত শাদ্দাদ (রা) বললেন, তোমরা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কি মনে কর, যে লোক দেখানোর নিমিত্তে সালাত আদায় করে, সিয়াম পালন করে এবং সাদকা প্রদান করে, সে তো নির্ঘাত শিরক করছে। হযরত আউফ ইব্‌ন মালিক (রা) বললেন, আল্লাহ্ তা'আলা কি তাঁর উদ্দেশ্যে কৃত খালিস আমলগুলো কবুল করবেন না যদি সে শিরক পরিহার করে? হযরত শাদ্দাদ (রা) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা) কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ "আমি হলাম তার উত্তম অংশীদার যে আমার সাথে শরীক করে।" যে আমার সাথে কিছু শরীক স্থাপন করে, তার আমল কম হোক আর বেশি হোক, তা কেবল ঐ শরীকের জন্যে যাকে সে শরীক করেছে, আমি তা থেকে পুতঃপবিত্র।
(হাদীসটি ইমাম আহমদ বর্ণনা করেছেন। আর শাহর সম্বন্ধে বর্ণনা সামনে আসছে। বায়হাকীও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর শব্দমালা হলঃ হযরত আবদুর রহমান ইব্‌ন গুনম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি দামেশকের একটি মসজিদে রাসূলুল্লাহ (সা) এর কয়েকজন আসহাবের সাথে উপবিষ্ট ছিলেন। তন্মধ্যে হযরত মু'আয ইব্ন জাবাল (রা)-ও ছিলেন। আবদুর রহমান বলেন, হে লোকেরা! তোমাদের জন্য আমি গুপ্ত শিরককে (শিরকে খফী) সর্বাধিক ভয় করি। হযরত মু'আয ইব্ন জাবাল (রা) বললেন, হে আল্লাহ্। ক্ষমা করুন। অতঃপর (তিনি বললেন) তুমি কি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শোননি যে, বিদায়ের সময় তিনি বলেছেনঃ তোমাদের এই একটা দ্বীপে শয়তান তার ইবাদত থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা যে আমলগুলোকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে, তাতেই শয়তান সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। হযরত আবদুর রহমান (রা) বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, হে মু'আয। আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেন নি যে, যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য সিয়াম পালন করে, সে শিরক করল এবং যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য সাদকা করল, সেও শিরক করল। তারপর তিনি হাদীসটি উল্লেখ করলেন। তবে সনদের দিক থেকে হাদীসটি শক্তিশালী নয়। উল্লেখিত হাদীসটি আহমদ (র)-ও বর্ণনা করেছেন।
ইমাম হাকিম (র) আবদুল ওয়াহিদ ইব্‌ন যায়দ সূত্রে উবাদা ইবন নুসাঈ (র) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত শাদ্দাদ ইব্‌ন আউস (রা) মুসাল্লায় বসে কাঁদছেন এ অবস্থায় আমি তাঁর নিকট গেলাম। আমি বললাম, হে আবূ আবদুর রহমান! কি সে আপনাকে কাঁদালো? তিনি বললেন, একটি হাদীস, যা আমি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে শুনেছি। আমি বললাম, সেটি কোন হাদীস? তিনি বললেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সা) -এর কাছে দণ্ডায়মান ছিলাম, ইত্যবসরে তাঁর চেহারায় বিবর্ণ ভাব ফুটে উঠতে দেখলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান, কিসে আপনার চেহারা বিমর্ষ করল? তিনি বললেনঃ আমার উম্মতের জন্য আমি শিরক ও সুপ্ত প্রবৃত্তি সম্পর্কে খুবই আশংকা করছি। আমি বললাম, আপনার পরে কি আপনার উম্মত শিরক করবে? তিনি বললেন, হে শাদ্দাদ। তারা সূর্য, মূর্তি ও প্রস্তরখণ্ডের পূজা করবে না কিন্তু তারা গায়রুল্লাহর (লোক দেখানোর) জন্য কাজ করবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। রিয়া কি শিরক? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, সুপ্ত প্রবৃত্তি কি? তিনি বললেন, তাদের কেউ ভোরে সিয়ামরত অবস্থায় উঠবে, তারপর দুনিয়ার মোহে পড়ে সিয়াম ভংগ করে ফেলবে। হাকিম হাদীসটি স্বীয় শব্দযোগে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন।)
[হাফিয মুনযিরী (র) বলেনঃ] কিভাবে হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত? অথচ আবদুল ওয়াহিদ ইব্ন যায়দ আয-যাহিদ মুহাদ্দিসগণের নিকট পরিত্যাক্ত। ইব্ন মাজাহ (র) সংক্ষেপে অন্য বর্ণনায় রাওয়াদ ইবনুল জাররাহ (র) হযরত শাদ্দাদ (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। রাওয়াদ ইব্‌ন জাররাহ (র) আমের ইবন আবদুল্লাহ-হাসান ইব্‌ন যাকওয়ান-উবাদা ইব্‌ন নাসাঈ হযরত শাদ্দাদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন: আমি আমার উম্মতের উপর সর্বাধিক ভয় করি শিরকের। তবে আমি একথা বলি না যে, তারা সূর্য, চন্দ্র ও মূর্তিপূজা করবে, বরং তারা গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে কাজ করবে, আর তাই হবে সুপ্ত প্রবৃত্তি। আমের ইব্ন আবদুল্লাহ অজ্ঞাত ব্যক্তি। ইমাম বায়হাকীর রিওয়ায়াতে আছে যে, ই'য়ালা ইব্ন শাদ্দাদ তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা নবী করীম (সা) এর যুগে রিয়াকে শিরকে আসগর (ছোট শিরক) বলে গণ্য করতাম।
كتاب الإخلاص
التَّرْهِيب من الرِّيَاء وَمَا يَقُوله من خَافَ شَيْئا مِنْهُ
53 - وَعَن شهر بن حَوْشَب عَن عبد الرَّحْمَن بن غنم قَالَ لما دخلت مَسْجِد الْجَابِيَة ألفينا عبَادَة بن الصَّامِت فَأخذ يَمِيني بِشمَالِهِ وشمال أبي الدَّرْدَاء بِيَمِينِهِ فَخرج يمشي بَيْننَا وَنحن ننتجي وَالله أعلم بِمَا نتناجى فَقَالَ عبَادَة بن الصَّامِت لَئِن طَال بكما عمر أَحَدكُمَا أَو كلاكما لتوشكان أَن تريا الرجل من ثبج الْمُسلمين يَعْنِي من وسط قراء الْقُرْآن على لِسَان مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قد أَعَادَهُ وأبداه فأحل حَلَاله وَحرم حرَامه وَنزل عِنْد مَنَازِله لَا يحور مِنْهُ إِلَّا كَمَا يحور رَأس الْحمار الْمَيِّت
قَالَ فَبَيْنَمَا نَحن كَذَلِك إِذْ طلع علينا شَدَّاد بن أَوْس وعَوْف بن مَالك رَضِي الله عَنْهُمَا فَجَلَسَا إِلَيْهِ فَقَالَ شَدَّاد إِن أخوف مَا أَخَاف عَلَيْكُم أَيهَا النَّاس لما سَمِعت من رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول من الشَّهْوَة الْخفية والشرك فَقَالَ عبَادَة بن الصَّامِت وَأَبُو الدَّرْدَاء اللَّهُمَّ غفرا أولم يكن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قد حَدثنَا أَن الشَّيْطَان قد يئس أَن يعبد فِي جَزِيرَة الْعَرَب فَأَما الشَّهْوَة الْخفية فقد عرفناها هِيَ شهوات الدُّنْيَا من نسائها وشهواتها فَمَا هَذَا الشّرك الَّذِي تخوفنا بِهِ يَا شَدَّاد فَقَالَ شَدَّاد أَرَأَيْتُم لَو رَأَيْتُمْ رجلا يُصَلِّي لرجل أَو يَصُوم لرجل أَو يتَصَدَّق لَهُ لقد أشرك قَالَ عَوْف بن مَالك عِنْد ذَلِك أَفلا يعمد الله إِلَى مَا ابْتغِي بِهِ وَجهه من ذَلِك الْعَمَل كُله فَيقبل مَا خلص لَهُ ويدع مَا أشرك بِهِ قَالَ شَدَّاد عِنْد ذَلِك فَإِنِّي سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول إِن الله عز وَجل قَالَ أَنا خير قسيم لمن أشرك بِي من أشرك بِي شَيْئا فَإِن جسده وَعَمله وقليله وَكَثِيره لشَرِيكه الَّذِي أشرك بِهِ أَنا عَنهُ غَنِي
رَوَاهُ أَحْمد وَشهر يَأْتِي ذكره وَرَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ وَلَفظه عَن عبد الرَّحْمَن بن غنم أَنه كَانَ
فِي مَسْجِد دمشق مَعَ نفر من أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فيهم معَاذ بن جبل فَقَالَ عبد الرَّحْمَن يَا أَيهَا النَّاس إِن أخوف مَا أَخَاف عَلَيْكُم الشّرك الْخَفي فَقَالَ معَاذ بن جبل اللَّهُمَّ غفرا أوما سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول حَيْثُ وَدعنَا إِن الشَّيْطَان قد يئس أَن يعبد فِي جزيرتكم هَذِه وَلَكِن يطاع فِيمَا تَحْتَقِرُونَ من أَعمالكُم فقد رَضِي بذلك فَقَالَ عبد الرَّحْمَن أنْشدك الله يَا معَاذ أما سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول من صَامَ رِيَاء فقد أشرك وَمن تصدق رِيَاء فقد أشرك
فَذكر الحَدِيث وَإِسْنَاده لَيْسَ بالقائم وَرَوَاهُ أَحْمد أَيْضا وَالْحَاكِم من رِوَايَة عبد الْوَاحِد بن زيد عَن عبَادَة بن نسي قَالَ دخلت على شَدَّاد بن أَوْس فِي مُصَلَّاهُ وَهُوَ يبكي فَقلت يَا أَبَا عبد الرَّحْمَن مَا الَّذِي أبكاك قَالَ حَدِيث سمعته من رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم
قلت وَمَا هُوَ قَالَ بَيْنَمَا أَنا عِنْد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِذْ رَأَيْت بِوَجْهِهِ أمرا سَاءَنِي فَقلت بِأبي وَأمي يَا رَسُول الله مَا الَّذِي أرى بِوَجْهِك
قَالَ أمرا أتخوفه على أمتِي الشّرك وشهوة خُفْيَة
قلت وتشرك أمتك من بعْدك قَالَ يَا شَدَّاد إِنَّهُم لَا يعْبدُونَ شمسا وَلَا وثنا وَلَا حجرا وَلَكِن يراؤون النَّاس بأعمالهم
قلت يَا رَسُول الله الرِّيَاء شرك هُوَ قَالَ نعم
قلت فَمَا الشَّهْوَة الْخفية قَالَ يصبح أحدهم صَائِما فتعرض لَهُ شَهْوَة من شهوات الدُّنْيَا فيفطر
قَالَ الْحَاكِم وَاللَّفْظ لَهُ صَحِيح الْإِسْنَاد
قلت كَيفَ وَعبد الْوَاحِد بن زيد الزَّاهِد مَتْرُوك وَرَوَاهُ ابْن مَاجَه مُخْتَصرا من رِوَايَة رواد بن الْجراح عَن عَامر بن عبد الله عَن الْحسن بن ذكْوَان عَن عبَادَة بن نسي عَن شَدَّاد قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِن أخوف مَا أَخَاف على أمتِي الْإِشْرَاك بِاللَّه أما إِنِّي لست أَقُول يعْبدُونَ شمسا وَلَا قمرا وَلَا وثنا وَلَكِن أعمالا لغير الله وشهوة خُفْيَة
وعامر بن عبد الله لَا يعرف ورواد يَأْتِي الْكَلَام عَلَيْهِ إِن شَاءَ الله تَعَالَى وروى الْبَيْهَقِيّ عَن يعلى بن شَدَّاد عَن أَبِيه قَالَ كُنَّا نعد الرِّيَاء فِي زمن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم الشّرك الْأَصْغَر
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ৫৩ | মুসলিম বাংলা