আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
১. ইখলাস-সত্যবাদিতা ও সদিচ্ছা সম্পর্কিত
হাদীস নং: ১৮
অনুচ্ছেদ
১৮. হযরত আনাস ইব্ন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (সা) এর সংগে তাবুক অভিযান থেকে ফিরে এলাম, তিনি বললেন, কিছু সংখ্যক লোক মদীনায় আমাদের পিছনে রয়ে গিয়েছিল কিন্তু আমরা যখন যে পাহাড়ী পথ কিংবা কোন জনপদ অতিক্রম করেছি, তারা আমাদের সাথেই ছিল। কেননা ওযর তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল।
(ইমাম বুখারী ও আবূ দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তবে তাঁর শব্দমালা হ'ল; নবী করীম (সা) বলেছেন, তোমরা মদীনায় এমন একদল লোক রেখে এসেছ যে, তোমরা যেখানেই গিয়েছ, যে অর্থই ব্যয় করেছ এবং যে জনপদই অতিক্রম করেছ, তারা তোমাদের সাথেই ছিল। তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ তারা কেমন করে আমাদের সংগী হ'ল, অথচ তারা ছিল মদীনায়? তিনি বললেন, রোগব্যাধি তাদের প্রতিবন্ধক ছিল।)
(ইমাম বুখারী ও আবূ দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তবে তাঁর শব্দমালা হ'ল; নবী করীম (সা) বলেছেন, তোমরা মদীনায় এমন একদল লোক রেখে এসেছ যে, তোমরা যেখানেই গিয়েছ, যে অর্থই ব্যয় করেছ এবং যে জনপদই অতিক্রম করেছ, তারা তোমাদের সাথেই ছিল। তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ তারা কেমন করে আমাদের সংগী হ'ল, অথচ তারা ছিল মদীনায়? তিনি বললেন, রোগব্যাধি তাদের প্রতিবন্ধক ছিল।)
فصل
18 - وَعَن أنس بن مَالك رَضِي الله عَنهُ قَالَ رَجعْنَا من غَزْوَة تَبُوك مَعَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ إِن أَقْوَامًا خلفنا بِالْمَدِينَةِ مَا سلكنا شعبًا وَلَا وَاديا إِلَّا وهم مَعنا حَبسهم
الْعذر
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَأَبُو دَاوُد وَلَفظه إِن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لقد تركْتُم بِالْمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مسيرًا وَلَا أنفقتم من نَفَقَة وَلَا قطعْتُمْ من وَاد إِلَّا وهم مَعكُمْ
قَالُوا يَا رَسُول الله وَكَيف يكونُونَ مَعنا وهم بِالْمَدِينَةِ قَالَ حَبسهم الْمَرَض
الْعذر
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَأَبُو دَاوُد وَلَفظه إِن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لقد تركْتُم بِالْمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مسيرًا وَلَا أنفقتم من نَفَقَة وَلَا قطعْتُمْ من وَاد إِلَّا وهم مَعكُمْ
قَالُوا يَا رَسُول الله وَكَيف يكونُونَ مَعنا وهم بِالْمَدِينَةِ قَالَ حَبسهم الْمَرَض
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিও সহীহ নিয়তের ফযীলত ও মাহাত্ম্য ব্যক্ত করে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছটি বলেছিলেন তাবুকের যুদ্ধ থেকে ফেরার সময়। এ যুদ্ধের সফর ছিল অত্যন্ত কঠিন। একে তো পথের দূরত্ব, তদুপরি প্রচণ্ড গরম। শারীরিক এই কষ্টের সাথে ছিল প্রচণ্ড মানসিক ত্যাগও। কেননা যুদ্ধটি হয়েছিল খেজুর পাকার মৌসুমে। সারা বছরের খাদ্যের ব্যবস্থা ও অন্যান্য ব্যয়নির্বাহ সাধারণত খেজুর দ্বারাই হত। গাছের সেই পাকা খেজুর রেখে যুদ্ধাভিযানে যাওয়াটা কত বড়ই না ত্যাগের ব্যাপার ছিল! যুদ্ধও ছিল রোমানদের বিরুদ্ধে, যারা ছিল সেকালের অন্যতম প্রধান পরাশক্তি। এরকম শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়া প্রাণ নিয়ে খেলার নামান্তর। এর জন্য অনেক বড় হিম্মতের দরকার। কিন্তু প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উৎসর্গিতপ্রাণ সাহাবীগণ সবকিছু উপেক্ষা করে সেই যুদ্ধে রওয়ানা হয়ে গিয়েছিলেন। এটা যে কতবড় ছওয়াব ও পুণ্যের সফর ছিল তা বলাই বাহুল্য। যারা এ সফরে শরীক ছিলেন, হাদীছের বর্ণনামতে তারা তো সে ছওয়াবের অধিকারী ছিলেনই, কিন্তু যারা ওযরবশত তাতে শরীক হতে পারেননি, তারা কি সেই ছওয়াব থেকে বঞ্চিত থাকবেন? হাদীছ জানাচ্ছে, না, তারা বঞ্চিত থাকবেন না; বরং নিয়তের কারণে তারাও যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মত ছওয়াবের অধিকারী হবেন।
হাদীছের সারকথা এই যে, মানুষ যদি কোনও সৎকর্মের নিয়ত করে কিন্তু কোনও ওযরের কারণে তা সম্পন্ন করতে সক্ষম না হয়, তবে নিয়তের কারণে সেই সৎকর্ম করার ছওয়াব সে পেয়ে যাবে। যেমন কারও মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায পড়ার নিয়ত আছে, কিন্তু অসুস্থতা বা অন্য কোনও ওযরবশত সে যেতে পারল না, এ অবস্থায় একাকী নামায পড়া সত্ত্বেও সে জামাতে নামায পড়ার ছওয়াব পাবে। এক হাদীছে এর দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে এভাবে যে, এক ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা অর্থ- সম্পদ দিয়েছেন। সে তার অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে। অপর এক ব্যক্তি গরীব। সে মনে মনে বলে, আমার যদি অর্থ-সম্পদ থাকত তবে অমুক ব্যক্তি যা-কিছু করে আমিও তাই করতাম। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এই ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। সুতরাং তারা উভয়ে প্রতিদানে সমান গণ্য হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. প্রত্যেকের উচিত সর্বাবস্থায় সৎকাজের নিয়ত রাখা।
খ. যদি কখনও কোনও সৎকাজের সময় উপস্থিত হয় বা কোনও নেককাজের মৌসুম দেখা দেয়, আর তখন কোনও ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে বা তার কোনও দেয়, তখন তার এই ভেবে হতাশ হওয়া উচিত নয় যে, আহা! আমি ওই কাজ করতে পারলাম না, ফলে আমি ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম। বরং মনে মনে এই নিয়ত রাখা উচিত যে, ওযর না থাকলে আমি এই আমল অবশ্যই করতাম। এবং এখনও যদি আমার এই ওযর দূর হয়ে যায়, তবে অবিলম্বেই আমি এই নেককাজ করব। ব্যস এই নিয়তের দ্বারা সে সেই কাজের ছওয়াব পেয়ে যাবে।
গ. ছওয়াবের জন্য নিয়ত জরুরি। সুতরাং অসুস্থতাকালে আমলের ভাবনামুক্ত ও নিয়তবিহীন অবস্থায় কাটানো উচিত নয়। আমল করার নিয়ত থাকলেই তা করার লাভ হবে, যদিও অসুস্থতার কারণে তা করতে সক্ষম না হয়।
হাদীছের সারকথা এই যে, মানুষ যদি কোনও সৎকর্মের নিয়ত করে কিন্তু কোনও ওযরের কারণে তা সম্পন্ন করতে সক্ষম না হয়, তবে নিয়তের কারণে সেই সৎকর্ম করার ছওয়াব সে পেয়ে যাবে। যেমন কারও মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায পড়ার নিয়ত আছে, কিন্তু অসুস্থতা বা অন্য কোনও ওযরবশত সে যেতে পারল না, এ অবস্থায় একাকী নামায পড়া সত্ত্বেও সে জামাতে নামায পড়ার ছওয়াব পাবে। এক হাদীছে এর দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে এভাবে যে, এক ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা অর্থ- সম্পদ দিয়েছেন। সে তার অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে। অপর এক ব্যক্তি গরীব। সে মনে মনে বলে, আমার যদি অর্থ-সম্পদ থাকত তবে অমুক ব্যক্তি যা-কিছু করে আমিও তাই করতাম। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এই ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। সুতরাং তারা উভয়ে প্রতিদানে সমান গণ্য হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. প্রত্যেকের উচিত সর্বাবস্থায় সৎকাজের নিয়ত রাখা।
খ. যদি কখনও কোনও সৎকাজের সময় উপস্থিত হয় বা কোনও নেককাজের মৌসুম দেখা দেয়, আর তখন কোনও ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে বা তার কোনও দেয়, তখন তার এই ভেবে হতাশ হওয়া উচিত নয় যে, আহা! আমি ওই কাজ করতে পারলাম না, ফলে আমি ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম। বরং মনে মনে এই নিয়ত রাখা উচিত যে, ওযর না থাকলে আমি এই আমল অবশ্যই করতাম। এবং এখনও যদি আমার এই ওযর দূর হয়ে যায়, তবে অবিলম্বেই আমি এই নেককাজ করব। ব্যস এই নিয়তের দ্বারা সে সেই কাজের ছওয়াব পেয়ে যাবে।
গ. ছওয়াবের জন্য নিয়ত জরুরি। সুতরাং অসুস্থতাকালে আমলের ভাবনামুক্ত ও নিয়তবিহীন অবস্থায় কাটানো উচিত নয়। আমল করার নিয়ত থাকলেই তা করার লাভ হবে, যদিও অসুস্থতার কারণে তা করতে সক্ষম না হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
