কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩. যাকাতের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৬৪০
আন্তর্জাতিক নং: ১৬৪০
২৬. যে অবস্থায় যাঞ্ছা করা বৈধ।
১৬৪০. মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ..... কাবীসা ইবনে মুখারিক আল-হিলালী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (এক জনের) ঋণের জামিন হলাম। আমি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এলে তিনি বলেনঃ হে কাবীসা! তুমি যাকাতের মাল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আর আমি তা থেকে তোমাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিব। অতঃপর তিনি বলেন, হে কাবীসা! তিন শ্রেনীর লোক ব্যতীত কারো জন্য যাচ্ঞা করা হালাল নয়।

(১) যে ব্যক্তি যামিন হয়েছে তার জন্য তা পরিশোধিত না হওয়া পর্যন্ত অন্যের সাহায্য চাওয়া হালাল, অতঃপর সে তা পরিত্যাগ করবে।

(২) যদি কোন ব্যক্তির ধন-সম্পদ দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বিনষ্ট হয়, তবে সে ব্যক্তির জন্য এ বিপদ হতে নিষ্কৃতি লাভ না করা পর্যন্ত যাচ্ঞা করা হালাল।

(৩) ঐ ব্যক্তি যে ধনী হওয়া সত্ত্বেও দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে অভাবগ্রস্ত ও সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রমাণস্বরূপ যদি তার স্থানীয় তিনজন ব্যক্তি বলে যে, অমুক ব্যক্তিটি সর্বহারা হয়ে গিয়াছে তখন সেই ব্যক্তির জন্য চাওয়া (ভিক্ষা করা) ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ-যতক্ষণ না সে জীবন ধারণে স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী হয়।

অতঃপর তিনি বলেনঃ হে কাবীসা! উপরোক্ত তিন শ্রেনীর লোক ব্যতীত অন্যদের জন্য ভিক্ষা করা হারাম। যদি কেউ করে, তবে সে হারাম খায়।
باب مَا تَجُوزُ فِيهِ الْمَسْأَلَةُ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ هَارُونَ بْنِ رِيَابٍ، قَالَ حَدَّثَنِي كِنَانَةُ بْنُ نُعَيْمٍ الْعَدَوِيُّ، عَنْ قَبِيصَةَ بْنِ مُخَارِقٍ الْهِلاَلِيِّ، قَالَ تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " أَقِمْ يَا قَبِيصَةُ حَتَّى تَأْتِيَنَا الصَّدَقَةُ فَنَأْمُرَ لَكَ بِهَا " . ثُمَّ قَالَ " يَا قَبِيصَةُ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لاَ تَحِلُّ إِلاَّ لأَحَدِ ثَلاَثَةٍ رَجُلٌ تَحَمَّلَ حَمَالَةً فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيبَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ وَرَجُلٌ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ فَاجْتَاحَتْ مَالَهُ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ " . أَوْ قَالَ " سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ " . " وَرَجُلٌ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ حَتَّى يَقُولَ ثَلاَثَةٌ مِنْ ذَوِي الْحِجَا مِنْ قَوْمِهِ قَدْ أَصَابَتْ فُلاَنًا الْفَاقَةُ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ - أَوْ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ - ثُمَّ يُمْسِكُ وَمَا سِوَاهُنَّ مِنَ الْمَسْأَلَةِ يَا قَبِيصَةُ سُحْتٌ يَأْكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتًا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে বিপুল জ্ঞান ও শিক্ষণীয় বিষয় আছে। এর মূল শিক্ষা অন্যের কাছে অর্থসাহায্য চাওয়া সম্পর্কে। কার জন্য চাওয়া জায়েয এবং কার জন্য জায়েয নয়, সে বিষয়ে এতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনাটি দিয়েছেন হযরত কাবীসা ইবনুল মুখারিক রাযি.-কে সম্বোধন করে। তিনি তাঁর কাছে একটি আর্থিক দায় পরিশোধে সাহায্য প্রার্থনার জন্য এসেছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মূলনীতিরূপে নির্দেশনাটি দান করেন। হযরত কাবীসা রাযি. বলেন-
تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ أَسْأَلُهُ فِيهَا আমি একটি আর্থিক দায় বহন করলাম। তারপর সে ব্যাপারে সাহায্য চাইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম'। حَمَالَة অর্থ আর্থিক দায়। বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তৃতীয় কোনও ব্যক্তি যে আর্থিক দায় বহন করে, তাকে حَمَالَة বলে। উদাহরণত কোনও সম্পত্তি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ সে সম্পত্তিকে নিজের বলে দাবি করে, অপর পক্ষ সে দাবি অস্বীকার করে। এ অবস্থায় তৃতীয় কোনও ব্যক্তি যদি উভয়পক্ষের মধ্যে আপস-রফার লক্ষ্যে ওই পরিমাণ সম্পত্তির অর্থমূল্য দাবিদার ব্যক্তিকে দেবে বলে দায়িত্ব নেয়, তবে পরিভাষায় সে দায়গ্রহণকেই حَمَالَة বলা হয়। এ حَمَالَة হতে পারে মীরাছ বণ্টনের ক্ষেত্রে। এমনিভাবে তা হতে পারে রক্তপণ আদায়ের ক্ষেত্রেও। মোটকথা যেখানেই দুই পক্ষের মধ্যে আর্থিক দাবি-দাওয়া নিয়ে বিবাদ দেখা দেয়, আর তৃতীয় কোনও ব্যক্তি বিবাদ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নিজের পক্ষ থেকে সে পরিমাণ অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করে, সে দায়িত্ব গ্রহণই حَمَالَة -এর অন্তর্ভুক্ত। এরূপ দায়গ্রহণ অনেক বড় পুণ্যের কাজ। কেননা এর দ্বারা ঝগড়া-বিবাদের মিটমাট করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কুরআন-হাদীছে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে নিষ্পত্তি করে দেওয়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং একে অতি বড় পুণ্যের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যে ব্যক্তি অন্যের আর্থিক দায় নিজ কাঁধে তুলে নেয়, সমাজের বাকি সব লোকের কর্তব্য সে দায় পরিশোধে তাকে সাহায্য করা। কেননা সে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক মহান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর জন্য তাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেওয়া হবে কেন? সে যদি ধনীও হয়, তবুও এক মহৎ উদ্যোগের বিনিময়ে তাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায় না। ঝগড়া-বিবাদের মিটমাট দ্বারা কেবল বিবদমান দুই পক্ষই উপকৃত হয় না; উপকৃত হয় গোটা সমাজ, যেমন দুই পক্ষের ঝগড়া-বিবাদ দ্বারাও কেবল তারাই নয়; গোটা সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। সুতরাং শান্তির লক্ষ্যে অর্থদায় বহনকারী ব্যক্তি ধনী হলেও এমনকি যাকাতের অর্থ দ্বারাও তাকে সাহায্য করা যাবে এবং সে নিজেও দায়মুক্তির লক্ষ্যে যাকাতের অর্থ চাইতেও পারবে। হযরত কাবীসা রাযি. এরকমই কোনও অর্থদায় বহন করেছিলেন। তাই এ হাদীছে দেখা যাচ্ছে তিনি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তা পরিশোধের জন্য সাহায্য চাইলেন, তখন তিনি বললেন-
أقِمْ حَتَّى تَأتِيَنَا الصَّدَقَةُ فَنَأمُرَ لَكَ بِهَا (তুমি এখানে অবস্থান করো, যাবৎ না আমাদের কাছে সদাকার মাল আসে। তা আসলে আমি তোমাকে তা থেকে দিতে আদেশ করব)। অর্থাৎ তুমি মদীনায় অবস্থান করতে থাকো এবং অপেক্ষা করো কখন আমার কাছে সদাকা তথা যাকাতের অর্থ আসে। তখন আমি তোমার দায় পরিশোধ করার মতো অর্থ তোমাকে দিতে বলব। এ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সাহায্যের আশ্বাস দিলেন। তারপর কখন অর্থসাহায্য চাওয়া বৈধ হয় এবং কখন তা বৈধ হয় না, সে সম্পর্কে একটি নির্দেশনা দান করলেন। তিনি বললেন-
يَا قَبيصةُ، إنَّ المَسْأَلَةَ لاَ تَحِلُّ إِلاَّ لأَحَدِ ثلاثَةٍ (হে কাবীসা! তিনজনের কোনও একজন ছাড়া অন্য কারও জন্য অর্থসাহায্য চাওয়া বৈধ নয়)। অর্থাৎ কেবল তিন শ্রেণির লোকের জন্যই অন্যের কাছে অর্থসাহায্য চাওয়া বৈধ হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে তিন শ্রেণির লোক কারা, তার ব্যাখ্যাও দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন-
رَجُلٌ تَحَمَّلَ حَمَالَةً، فَحَلَّتْ لَهُ المَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَها، ثُمَّ يُمْسِكُ (ওই ব্যক্তি, যে কোনও আর্থিক ভার বহন করেছে। তার জন্য চাওয়া বৈধ, যাবৎ না সে তা পরিশোধ করতে পারে। তারপর সে ক্ষান্ত হবে)। অর্থাৎ এরূপ ব্যক্তি সরকারের কাছে কিংবা যাকাতদাতার কাছে এ পরিমাণ সাহায্য চাইতে পারবে, যা দ্বারা সে তার বহন করা দায় পরিশোধ করতে পারে। তা পরিশোধ হয়ে যাওয়ার পর আর চাইতে পারবে না। তবে হাঁ, অন্য কোনও প্রয়োজন দেখা দিলে ভিন্ন কথা।

وَرَجُلٌ أصَابَتْهُ جَائِحَةٌ اجْتَاحَتْ مَالَهُ، فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَاماً مِنْ عَيش - أَوْ قَالَ: سِدَاداً مِنْ عَيْشٍ এবং দুর্যোগকবলিত ব্যক্তি, যে দুর্যোগ তার সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছে। তার জন্যও চাওয়া জায়েয, যাবৎ না সে তার জীবনধারণ পরিমাণ সম্পদ পেয়ে যায় অথবা (বলেছেন,) জীবনরক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পেয়ে যায়। جَائِحَةٌ অর্থ দুর্যোগ। অর্থাৎ এমন আসমানী বা যমীনী মসিবত, যা দ্বারা ফল- ফসল ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন জলোচ্ছ্বাস, দাবানাল, অবিরাম বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড়, খরা ইত্যাদি। এরকম কোনও দুর্যোগের কারণে যদি কারও ফল ও ফসল নষ্ট হয়ে যায়, তবে সেও মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে পারবে।

قِوَامٌ শব্দটির ق হরফে যবর ও যের উভয়ই দেওয়া যায়। এর অর্থ অবলম্বন, ভিত্তি, প্রয়োজন পরিমাণ খাদ্য, নির্ভর ইত্যাদি। অবশ্য এসব অর্থে শব্দটিকে যেরযুক্ত 'ق'-এর সঙ্গে পড়াই অধিকতর শুদ্ধ। যবরের সঙ্গে পড়লে সাধারণত এর অর্থ হয় কাঠামো, স্থিরতা, মধ্যম পরিমাণ ও ন্যায্যতা। سِدَاد শব্দটিকেও যের ও যবর উভয়ের সঙ্গেই পড়া যায়। তবে যেরযুক্ত 'س'-এর সঙ্গে পড়লে তখন শব্দটির অর্থ হয় জীবনরক্ষা পরিমাণ খাদ্য, প্রয়োজন সমাধা হওয়ার মতো অর্থ-সম্পদ, যা দ্বারা কোনও শূন্যস্থান পূরণ হয়। আর যবরের সঙ্গে পড়লে অর্থ হয় যথার্থতা, উপযোগিতা। যেরের সঙ্গে سِدَادٌ ও قِوَامٌ উভয় শব্দ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শব্দদু'টি দ্বারা হাদীছে বোঝানো উদ্দেশ্য এ পরিমাণ খাদ্য বা অর্থ-সম্পদ, যা দ্বারা মানুষের প্রয়োজন সমাধা হয়ে যায়। তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোঝাচ্ছেন, যে পরিমাণ সাহায্য দ্বারা প্রয়োজন সমাধা হয়ে যায়, কেবল ততটুকুই অন্যের কাছে চাওয়া যাবে। এর পর আর চাওয়ার অনুমতি নেই।

وَرَجُلٌ أصَابَتْهُ فَاقَةٌ، حَتَّى يَقُولَ ثَلاَثَةٌ مِنْ ذَوِي الحِجَى مِنْ قَوْمِه: لَقَدْ أصَابَتْ فُلاناً فَاقَةٌ (আর দারিদ্র্যপীড়িত ব্যক্তি, যার সম্পর্কে তার গোত্রের তিনজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলবে যে, সত্যিই অমুক ব্যক্তি দারিদ্র্যগ্রস্ত হয়ে পড়েছে)। বোঝা যাচ্ছে এর দ্বারা এমন ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যে প্রথমে সচ্ছল ছিল, পরে কোনও কারণে অভাবে পড়ে গেছে। এ তৃতীয় ক্ষেত্রে স্বগোত্রীয় তিনজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির সত্যায়নের শর্ত করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এরূপ শর্ত করা হয়নি। কেননা বিবদমান দুই পক্ষের বিবাদ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আর্থিক দায় বহনের বিষয়টি প্রকাশ্যেই হয়ে থাকে। তা সকলেরই জানা থাকে। তাই এরূপ ক্ষেত্রে অসত্য বলার অবকাশ থাকে না। দুর্যোগের বিষয়েও সকলে অবহিত থাকে। তাই দুর্যোগকবলিত না হয়েও দুর্যোগের শিকার হওয়ার কথা বলার সুযোগ থাকে না। পক্ষান্তরে অর্থ-সম্পদ গোপন রেখে দরিদ্রের ভান করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে একদম কাছের লোক ছাড়া অন্যদের পক্ষে প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব হয় না। তাই কেউ চরম অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ার দাবিতে সাহায্যপ্রার্থী হলে তার স্বগোত্রীয় তিন ব্যক্তির সত্যায়নের শর্ত রাখা হয়েছে। তারা যদি বলে সত্যিই সে কঠিন অভাবের মধ্যে পড়ে গেছে, তবে তার কথা গ্রহণযোগ্য হবে। তখন তার সাহায্য চাওয়া বৈধ বলে গণ্য হবে এবং তাকে অর্থসাহায্য করা যাবে।

এরূপ শর্ত রাখার একটা বিশেষ ফায়দা হল এর ফলে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ অন্যের কাছে হাত পাতবে না। এটা ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের একটা কার্যকর ব্যবস্থা।

فَحلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَاماً مِن عَيش، أَوْ قَالَ: سِدَاداً مِن عَيشٍ ‘তার জন্যও চাওয়া জায়েয, যাবৎ না সে তার জীবনধারণ পরিমাণ সম্পদ পেয়ে যায় অথবা (বলেছেন,) জীবনরক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পেয়ে যায়'। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য- অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া বৈধ সাব্যস্ত হওয়ার পর কেবল ততটুকুই চাওয়া যাবে, যা জীবনরক্ষার জন্য যথেষ্ট হয়। এ পরিমাণ পাওয়ার পর ক্ষান্ত হয়ে যেতে হবে। ভালোভাবে থাকা-খাওয়ার জন্য কিংবা সম্পদ সঞ্চয়ের জন্য অন্যের কাছে হাত পাতার কোনও বৈধতা নেই। সুতরাং সে সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছটির উপসংহারে বলছেন-
فَمَا سِوَاهُنَّ مِنَ المسألَةِ يَا قَبِيصَةُ سُحْتٌ، يَأكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتاً (হে কাবীসা! এ তিন প্রকার চাওয়া ছাড়া অন্য যে-কোনও চাওয়া হারাম। যে ব্যক্তি সেরকম চাওয়া চায়, সে হারাম খায়)। অর্থাৎ অন্যের কাছে চাওয়া কেবল ওই তিন শ্রেণির লোকের জন্যই জায়েয, এছাড়া আর কারও জন্য জায়েয নয়। অন্য কেউ যদি চায়, তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধ সাব্যস্ত হবে। এভাবে চেয়ে খেলে সে খাওয়াটা হবে সম্পূর্ণ হারাম।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া অতি বড় পুণ্যের কাজ।

খ. বিবাদ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির আর্থিক দায় বহন করা একটি মহৎ কাজ।

গ. যে ব্যক্তি বিবাদ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আর্থিক দায় বহন করে, সে তা পরিশোধের জন্য অন্যের সাহায্য চাইতে পারে।

ঘ. উপরিউক্ত দায় বহনকারীকে অর্থসাহায্য করা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের কর্তব্য।

ঙ. উলামা ও দীনদার ব্যক্তিদের কর্তব্য সাহায্যপ্রার্থীকে সদুপদেশ দেওয়া এবং অন্যের কাছে হাত পাতার অনিষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া।

চ. কোনও দুর্যোগের কারণে যার সম্পদ বা ফসলাদি নষ্ট হয়ে যায়, সে তার জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য অন্যের কাছে সাহায্য চাইতে পারবে। সামর্থ্যবানদের উচিত এরূপ ব্যক্তির সাহায্য করা।

ছ. কোনও ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ার কথা বলে সাহায্য চাইলে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া চাই যে, সত্যিই সে অভাবে পড়েছে কি না। বিনা অনুসন্ধানে তাকে টাকা-পয়সা দেওয়া উচিত নয়।

জ. অর্থসংকটে পড়ে অন্যের কাছ থেকে কেবল ততটুকু পরিমাণই সাহায্য নেওয়া যাবে, যা দ্বারা জরুরি প্রয়োজন মিটে যায়।

ঝ. জরুরি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাহায্যগ্রহণ দ্বারা যা খাওয়া হয় তা সম্পূর্ণ হারাম। এর থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ১৬৪০ | মুসলিম বাংলা