আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৫৪- জান্নাতের নিআমত ও জান্নাতীদের বর্ণনা

হাদীস নং: ৬৯৪৬
১৬. দুনিয়াতে জান্নাতে ও জাহান্নামী লোকদের পরিচয় প্রদায়ক গুণ (বিষয়)-সমূহ
৬৯৪৬। আবু আম্মার হুসাইন ইবনে হুরায়স (রাহঃ) ......... বনু মুজাশি’ এর সদস্য ইয়ায ইবনে হিমার (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ভাষণ দানকালে আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ করেছেন। অতঃপর তিনি কাতাদা (রাহঃ) থেকে হিশামের সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি (রাবী) অধিক বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছেন যে, তোমরা নম্রতা প্রদর্শন কর, যেন কেউ কারো উপর গর্ব না করে এবং যেন কেউ কারো প্রতি সীমালংঘন না করে। এ হাদীসে একথাও রয়েছে যে, তারা তোমাদের এমন অনুগামী যে, না তারা স্ত্রী চায় আর না তারা ধন-সম্পদ চায়।

কাতাদা (রাহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু আব্দুল্লাহ! এমনটি কি হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। জাহিলীয়্যাতের যুগে আমি তাদেরকে পেয়েছি। এক গোত্রে কোন এক ব্যক্তি ছিল। সে বকরী চরাতো। মনিবের দাসী ব্যতীত সেখানে তার নিকট কেউ যেতো না। তার সাথেই সে সহবাস করতো।
باب الصِّفَاتِ الَّتِي يُعْرَفُ بِهَا فِي الدُّنْيَا أَهْلُ الْجَنَّةِ وَأَهْلُ النَّارِ
وَحَدَّثَنِي أَبُو عَمَّارٍ، حُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى، عَنِ الْحُسَيْنِ، عَنْ مَطَرٍ، حَدَّثَنِي قَتَادَةُ، عَنْ مُطَرِّفِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الشِّخِّيرِ، عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ، أَخِي بَنِي مُجَاشِعٍ قَالَ قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ خَطِيبًا فَقَالَ " إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي " . وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِمِثْلِ حَدِيثِ هِشَامٍ عَنْ قَتَادَةَ وَزَادَ فِيهِ " وَإِنَّ اللَّهَ أَوْحَى إِلَىَّ أَنْ تَوَاضَعُوا حَتَّى لاَ يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ وَلاَ يَبْغِي أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ " . وَقَالَ فِي حَدِيثِهِ " وَهُمْ فِيكُمْ تَبَعًا لاَ يَبْغُونَ أَهْلاً وَلاَ مَالاً " . فَقُلْتُ فَيَكُونُ ذَلِكَ يَا أَبَا عَبْدِ اللَّهِ قَالَ نَعَمْ وَاللَّهِ لَقَدْ أَدْرَكْتُهُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَرْعَى عَلَى الْحَىِّ مَا بِهِ إِلاَّ وَلِيدَتُهُمْ يَطَؤُهَا .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানান যে, ওহীর মাধ্যমে পারস্পরিক বিনয় অবলম্বন সম্পর্কে তাঁর প্রতি আদেশ এসেছে। প্রকাশ থাকে যে, ওহী দু'প্রকার- ওহী মাতলু ও ওহী গায়রে মাতলু। মাতলু হল কুরআন মাজীদ। আর গায়রে মাতলু হাদীছ। কুরআন মাজীদের ভাষা ও ভাব উভয়ই আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এসেছে। আর হাদীছের ভাব আল্লাহ তা'আলার, কিন্তু ভাষা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। সুতরাং এ হাদীছে যে বলা হয়েছে তাওয়াযু‘ বা বিনয় সম্পর্কে তাঁর কাছে ওহী এসেছে, তা এ উভয় প্রকার ওহীর যে-কোনওটি হতে পারে। হয়তো তাঁর অন্তরে এ আদেশ সম্পর্কিত ভাব সঞ্চার করা হয়েছিল। পরিভাষায় এ ভাবসঞ্চারকে ইলহাম বলা হয়ে থাকে। আবার এমনও হতে পারে যে, কুরআন মাজীদে বিনয় অবলম্বনের আদেশ সম্পর্কিত যেসব আয়াত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন। যেমন এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا (63)
রহমানের বান্দা তারা, যারা ভূমিতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।( সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৬৩)

এমনিভাবে ইরশাদ হয়েছে-
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ
নিজ পদচারণায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং নিজ কণ্ঠস্বর সংযত রাখো।(সূরা লুকমান (৩১), আয়াত ১৯)

হাদীছটিতে দু'টি বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে। তার একটি হল- لَا يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ (যাতে কেউ কারও প্রতি অহমিকা না দেখায়)। অর্থাৎ ধন, বংশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষমতা ইত্যাদি যে-কোনও দিক থেকেই অন্যের তুলনায় নিজেকে উপরে দেখলে সে কারণে নিজেকে বড় ও উত্তম ভাববে না। কেননা সেরকম ভাবাটাই অহংকার। বরং মনে করবে দুনিয়ার প্রত্যেকেই তোমার চেয়ে উত্তম, তুমি কারও চেয়ে উত্তম নও। এমনিভাবে মনে করবে দুনিয়ার প্রত্যেকেরই তোমার কাছে প্রাপ্য আছে, কারও কাছে তোমার কোনও প্রাপ্য নেই।

আর দ্বিতীয়টি হল- وَلَا يَبْغِي أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ (এবং কেউ কারও উপর জুলুম না করে)। يَبْغِي শব্দটির উৎপত্তি بغي থেকে। এর অর্থ সীমালঙ্ঘন করা। জুলুম করার দ্বারা অন্যের প্রতি সীমালঙ্ঘন করা হয়। অর্থাৎ তার প্রাপ্যের সীমানা অতিক্রম করে নিজে তার ভেতর প্রবেশ করা হয় এবং তাকে বঞ্চিত করা হয়। সুতরাং যে-কোনও সীমালঙ্ঘনই জুলুম। জুলুম করা অহংকারী ব্যক্তির স্বভাব। অহংকারী ব্যক্তি নিজেকে তার প্রকৃত মর্যাদার উপরে গণ্য করে। তাই সে কারও কোনও হক মেনে নিতে পারে না। সুতরাং জুলুম করার নিষেধাজ্ঞা দ্বারা প্রকারান্তরে অহংকারের প্রতিও নিষেধাজ্ঞা বটে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বিনয় ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক শিক্ষা।

খ. একজন ঈমানদারের অপর এক ঈমানদারের উপর অহমিকা দেখানোর কোনও সুযোগ নেই।

গ. কোনও অবস্থায়ই কারও উপর জুলুম করা যাবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৬৯৪৬ | মুসলিম বাংলা