আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
২০- যাকাতের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৩৮২
আন্তর্জাতিক নং: ১৪৬৭
৯৩০. স্বামী ও পোষ্য ইয়াতীমকে যাকাত দেওয়া।
১৩৮২। উসমান ইবনে আবু শাঈবা (রাহঃ) ......... উম্মে সালামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (আমার স্বামী) আবু সালামার সন্তান, যারা আমারও সন্তান, তাদের প্রতি ব্যয় করলে আমার সাওয়াব হবে কি? তিনি বললেন, তাদের প্রতি ব্যয় কর। তাদের প্রতি ব্যয় করার সাওয়াব তুমি অবশ্যই পাবে।
باب الزَّكَاةِ عَلَى الزَّوْجِ وَالأَيْتَامِ فِي الْحَجْرِ
1467 - حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدَةُ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ زَيْنَبَ بِنْتِ أُمِّ سَلَمَةَ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَلِيَ أَجْرٌ أَنْ أُنْفِقَ عَلَى بَنِي أَبِي سَلَمَةَ، إِنَّمَا هُمْ بَنِيَّ؟ فَقَالَ: «أَنْفِقِي عَلَيْهِمْ، فَلَكِ أَجْرُ مَا أَنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. আবূ সালামা রাযি.-এর সন্তানদের পেছনে ব্যয় করার দ্বারা কোনও ছাওয়াব পাবেন কি না, সে সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন। আবূ সালামা রাযি. হচ্ছেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী, যার মূল নাম আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল আসাদ। এ স্বামীর সঙ্গে তিনি হাবশায় হিজরত করেছিলেন। সেখানে তাঁর বড় পুত্র উমর রাযি. জন্মগ্রহণ করেন। তারপর আবূ সালামা রাযি.-এর ঔরসে তিনি যথাক্রমে সালামা, যায়নাব ও বাররা নামে আরও তিন সন্তানের জন্মদান করেন। বদর যুদ্ধের পর হিজরী ৩য় সনে আবূ সালামা রাযি. ইন্তিকাল করেন। ফলে তাঁর চার সন্তান ইয়াতীম হয়ে যায়। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রস্তাবে তাঁরই সঙ্গে হযরত উম্মু সালামা রাযি.-এর বিবাহ হয়ে যায়। তিনি 'উম্মুল মুমিনীন'-এর মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। তিনি তাঁর ইয়াতীম সন্তানদের পেছনে ব্যয় করতেন। এ সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করেছেন যে, তাদের পেছনে ব্যয় করলে ছাওয়াব হবে কি না।
বিবাহের সময়ও তিনি এদের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, তোমার সন্তান আমারই সন্তানরূপে গণ্য হবে। সুতরাং বিবাহের পর তিনি তাদের খুব আদর-যত্ন করতেন।
যাহোক হযরত উম্মু সালামা রাযি. তাঁর সন্তানদের পেছনে খরচ করার কারণ হিসেবে বলেন- انما هم بني , (তারা তো আমারই সন্তান!)। তিনি বলতে চাচ্ছেন, আমি তাদের মা। মা হয়ে আমার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয় যে, খাদ্যের জন্য আমার সন্তানেরা এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবে। সে কারণেই আমি যতটুকু পারি তাদের পেছনে খরচ করে থাকি। এ খরচ করাতে আমি কি ছাওয়াব পাব?
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, তুমি তাদের পেছনে যাই খরচ কর তাতেই তুমি ছাওয়াব পাবে। অর্থাৎ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অল্প-বিস্তর যাই খরচ কর তাতেই ছাওয়াব আছে। ছাওয়াবের জন্য খরচের পরিমাণ বেশি হওয়া শর্ত নয়। এমনিভাবে মাতৃত্বের মমতায় খরচ কর বলে ছাওয়াব পাবে না এমন কোনও কথাও নেই। বরং তোমার খরচের উত্তম খাত তো তারাই। অন্য জায়গার তুলনায় তাদের পেছনে খরচ করলেই বরং ছাওয়াব বেশি হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজ সন্তানদের পেছনে খরচ করায়ও ছাওয়াব আছে। খরচের পেছনে পিতৃস্নেহ বা মাতৃমমতা সক্রিয় থাকাটা ছাওয়াবের পক্ষে বাধা নয়।
খ. সন্তানদেরকে এমন অসহায়ভাবে ছেড়ে দেওয়া কোনও পিতামাতার জন্য বাঞ্ছনীয় নয় যে, তারা খাদ্যের সন্ধানে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবে। আপন সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে সে অসহায়ত্ব থেকে হেফাজত করা চাই।
গ. কোনও মায়ের উচিত নয় নতুন স্বামীর ঘরে আসার পর আগের সংসারের ছেলেমেয়েদের ভুলে যাওয়া। অনুরূপ পিতার জন্যও নতুন বিবাহের পর আগের স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানদের অবহেলা করা বাঞ্ছনীয় নয়।
ঘ. স্ত্রী তার প্রাক্তন সন্তানদের খোঁজখবর রাখলে নতুন স্বামীর তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়; বরং যতটুকু সম্ভব তাতে উৎসাহ দেওয়া চাই।
বিবাহের সময়ও তিনি এদের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, তোমার সন্তান আমারই সন্তানরূপে গণ্য হবে। সুতরাং বিবাহের পর তিনি তাদের খুব আদর-যত্ন করতেন।
যাহোক হযরত উম্মু সালামা রাযি. তাঁর সন্তানদের পেছনে খরচ করার কারণ হিসেবে বলেন- انما هم بني , (তারা তো আমারই সন্তান!)। তিনি বলতে চাচ্ছেন, আমি তাদের মা। মা হয়ে আমার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয় যে, খাদ্যের জন্য আমার সন্তানেরা এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবে। সে কারণেই আমি যতটুকু পারি তাদের পেছনে খরচ করে থাকি। এ খরচ করাতে আমি কি ছাওয়াব পাব?
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, তুমি তাদের পেছনে যাই খরচ কর তাতেই তুমি ছাওয়াব পাবে। অর্থাৎ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অল্প-বিস্তর যাই খরচ কর তাতেই ছাওয়াব আছে। ছাওয়াবের জন্য খরচের পরিমাণ বেশি হওয়া শর্ত নয়। এমনিভাবে মাতৃত্বের মমতায় খরচ কর বলে ছাওয়াব পাবে না এমন কোনও কথাও নেই। বরং তোমার খরচের উত্তম খাত তো তারাই। অন্য জায়গার তুলনায় তাদের পেছনে খরচ করলেই বরং ছাওয়াব বেশি হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজ সন্তানদের পেছনে খরচ করায়ও ছাওয়াব আছে। খরচের পেছনে পিতৃস্নেহ বা মাতৃমমতা সক্রিয় থাকাটা ছাওয়াবের পক্ষে বাধা নয়।
খ. সন্তানদেরকে এমন অসহায়ভাবে ছেড়ে দেওয়া কোনও পিতামাতার জন্য বাঞ্ছনীয় নয় যে, তারা খাদ্যের সন্ধানে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবে। আপন সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে সে অসহায়ত্ব থেকে হেফাজত করা চাই।
গ. কোনও মায়ের উচিত নয় নতুন স্বামীর ঘরে আসার পর আগের সংসারের ছেলেমেয়েদের ভুলে যাওয়া। অনুরূপ পিতার জন্যও নতুন বিবাহের পর আগের স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানদের অবহেলা করা বাঞ্ছনীয় নয়।
ঘ. স্ত্রী তার প্রাক্তন সন্তানদের খোঁজখবর রাখলে নতুন স্বামীর তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়; বরং যতটুকু সম্ভব তাতে উৎসাহ দেওয়া চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
