আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৪৮- সদ্ব্যবহার,আত্নীয়তা রক্ষা (মুআশারা) ও বিবিধ শিষ্টাচার
হাদীস নং: ৬৩০৮
৯. কু-ধারণা, দোষ অনুসন্ধান, (পার্থিব) লোভনীয় বিষয়ে প্রতিযোগিতা, ধোঁকাবাজী ইত্যাদি হারাম
৬৩০৮। আহমাদ ইবনে সাঈদ দারেমী (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষ পোষণ করবে না, একে অন্যের পেছনে শক্রতায় লিপ্ত হয়ো না, পরস্পরে (পার্থিব বিষয়ে) লভের প্রতিযোগিতা করবে না এবং তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে।
باب تَحْرِيمِ الظَّنِّ وَالتَّجَسُّسِ وَالتَّنَافُسِ وَالتَّنَاجُشِ وَنَحْوِهَا
وَحَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الدَّارِمِيُّ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا سُهَيْلٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ تَنَافَسُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আখলাক-চরিত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আখলাক-চরিত্র ইসলামী শিক্ষার অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এক হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا بُعِثْتُ لأتمم صالح الأخلاق
'আমাকে পাঠানো হয়েছে ভালো চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্য।[১]
আখলাক-চরিত্রের কিছু আছে ভালো দিক, যাকে 'আখলাকে হামীদাহ' বলে। কিছু আছে মন্দ দিক, যাকে 'আখলাকে যামীমাহ' বা 'রাযীলাহ' বলে। সব মানুষের মধ্যেই উভয়প্রকার চরিত্রই নিহিত আছে। তাই প্রত্যেকের কর্তব্য মন্দ চরিত্র দমন ও উত্তম চরিত্রের বিকাশ সাধনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন মুজাহাদা ও সাধনা চালানো। কোন কোন চরিত্র মন্দ এবং কোনগুলো ভালো, তার অনেকটাই আল্লাহপ্রদত্ত বোধ-বুদ্ধি দ্বারা নিরূপণ করা যায়। আবার কোনও কোনওটি বোঝার জন্য আসমানী শিক্ষার প্রয়োজন হয়। তবে মহান ইসলাম বিষয়টাকে কেবল মানববৃদ্ধির উপর ছেড়ে দেয়নি; বরং সুনির্দিষ্টভাবে প্রত্যেকটি স্পষ্ট করে দিয়েছে। যেসব গুণ ভালো, তা অর্জনের আদেশ করেছে এবং তার ফযীলত ও মাহাত্ম্য বর্ণনাপূর্বক তা অর্জনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। অপরদিকে যেগুলো মন্দ, তা বর্জন ও দমনের হুকুম দিয়েছে এবং তার ক্ষতি ও কদর্যতার উল্লেখপূর্বক তা পরিহারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। আলোচ্য হাদীছে বিশেষ কয়েকটি মন্দ চরিত্রের উল্লেখ আছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেগুলোর প্রতি নিষেধাজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ কেউ যাতে সেসব চরিত্রপ্রসূত আচরণ কারও সঙ্গে না করে, সে ব্যাপারে তাগিদ করেছেন।
পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণের অবৈধতা
ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণও একটি মন্দ স্বভাব। এটাও হারাম ও কঠিন পাপ। ইসলাম যেসকল মন্দ স্বভাব পরিহারের তাগিদ করেছে, ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণও তার একটি। যেমন আলোচ্য হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ولا تباغضوا 'তোমরা ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। تباغضوا ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি بغض থেকে। এর অর্থ ঘৃণা করা। কাউকে ঘৃণা করা যদি আল্লাহ তাআলার জন্য না হয়, তবে তা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলার জন্য ঘৃণা করার অর্থ কেউ যদি আল্লাহ তাআলার দীন ও শরীআতের বিরোধিতা করে, তবে সে বিরুদ্ধাচরণের জন্য তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করা। এটা ঈমানের অঙ্গ। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيْمَانَ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য দান করে এবং আল্লাহর জন্য দান করা হতে বিরত থাকে, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করল।[৭]
কিন্তু ঘৃণা করা যদি আল্লাহর জন্য না হয়, তবে তা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি হল এক মুসলিম অপর মুসলিমকে ভালোবাসবে, ব্যক্তিগত কোনও কারণে বা পার্থিব কোনও স্বার্থে তাকে ঘৃণা করবে না। এমনকি দীনী বিষয়েও যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে শরীআতবিরোধিতা প্রমাণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ঘৃণার কোনও সুযোগ নেই। কাজেই মাযহাবী মতভেদের ভিত্তিতে কাউকে ঘৃণা করা যাবে না। কেননা বিপরীত মাযহাবও কুরআন-সুন্নাহ'র ভিত্তিতেই গঠিত। এক পক্ষের কাছে যেমন দলীল আছে, তেমনি দলীল অন্য পক্ষের কাছেও আছে। এরূপ ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবকে শরীআতবিরোধী ঠাওরানো আর এর ভিত্তিতে তার অনুসারীকে ঘৃণার চোখে দেখা নিতান্তই ভুল; বরং এটা নিষিদ্ধ এর অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে সকলের সতর্ক হওয়া অতীব জরুরি। ইদানীং বিভিন্ন মহলকে এ জাতীয় ঘৃণা বিস্তারে তৎপর দেখা যায়। তাদের উচিত নিজেদের কর্মপন্থা বিচার- বিশ্লেষণ করা।
তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও
উপরের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ দান করেন- وكونوا عباد الله اخوانا ‘আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে থাকো'। অর্থাৎ তোমাদের পরস্পরের মধ্যে যে কাজ করতে নিষেধ করা হল, এগুলো ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। ভ্রাতৃত্বের দাবি এসব কাজে লিপ্ত না হওয়া। কাজেই তোমরা যদি ভাই ভাই হয়ে থাক, তবে কিছুতেই তোমাদের দ্বারা এগুলো সংঘটিত হবে না। অথবা এর অর্থ- তোমরা যদি এ কাজ বর্জন কর, তবে তোমাদের মধ্যে সত্যিকার ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তোমরা এগুলো পরিহার করে চলো।
বস্তুত ইসলামে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি অত্যন্ত মূল্যবান। এটা আল্লাহ তাআলার এক বিরাট নিআমতও বটে। আল্লাহ তাআলা সেই নিআমতের কথা স্মরণ করিয়ে ইরশাদ করেন-
وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا
‘আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ রাখ। একটা সময় ছিল, যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহকে জুড়ে দিলেন। ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ১০৩
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব যখন আল্লাহ তাআলার এক বিরাট দান ও অতি বড় নিআমত, তাই এটা রক্ষা করাও অতি জরুরি। যেসব কর্মকাণ্ড দ্বারা এটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিছুতেই তাতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কারও কোনও আচরণে দু'জনের সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হলে অন্যদের কর্তব্য তাদের মধ্যে মিলমিশ করে দেওয়া, যাতে অসদ্ভাব স্থায়ী হতে না পারে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ
‘প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুসলিম ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দু ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহকে ভয় কর। সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ১০
হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِم : لا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ، وَلَا يَخْذلُهُ، التَّقْوَى هَاهُنَا وَيُشِيرُ إِلى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِى مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِم عَلَى الْمُسْلِم حَرَامٌ، دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ
‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করে না, তাকে তুচ্ছ গণ্য করে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেয় না। তাকওয়া এখানে- তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথাটি তিনবার বললেন। কোনও ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে। এক মুসলিমের সবকিছু অপর মুসলিমের প্রতি হারাম- তার রক্ত, তার সম্পদ ও তার ইজ্জত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরূক রাখার প্রচেষ্ট অব্যাহত রাখা চাই। এর দ্বারা হিংসা বিদ্বেষমূলক কাজকর্ম থেকে বেঁচে থাকা যায়।
খ. ইসলামে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব কর্মকাণ্ড দ্বারা তা ক্ষুণ্ণ হয় তা পরিহার করে চলা অবশ্য কর্তব্য।
إِنَّمَا بُعِثْتُ لأتمم صالح الأخلاق
'আমাকে পাঠানো হয়েছে ভালো চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্য।[১]
আখলাক-চরিত্রের কিছু আছে ভালো দিক, যাকে 'আখলাকে হামীদাহ' বলে। কিছু আছে মন্দ দিক, যাকে 'আখলাকে যামীমাহ' বা 'রাযীলাহ' বলে। সব মানুষের মধ্যেই উভয়প্রকার চরিত্রই নিহিত আছে। তাই প্রত্যেকের কর্তব্য মন্দ চরিত্র দমন ও উত্তম চরিত্রের বিকাশ সাধনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন মুজাহাদা ও সাধনা চালানো। কোন কোন চরিত্র মন্দ এবং কোনগুলো ভালো, তার অনেকটাই আল্লাহপ্রদত্ত বোধ-বুদ্ধি দ্বারা নিরূপণ করা যায়। আবার কোনও কোনওটি বোঝার জন্য আসমানী শিক্ষার প্রয়োজন হয়। তবে মহান ইসলাম বিষয়টাকে কেবল মানববৃদ্ধির উপর ছেড়ে দেয়নি; বরং সুনির্দিষ্টভাবে প্রত্যেকটি স্পষ্ট করে দিয়েছে। যেসব গুণ ভালো, তা অর্জনের আদেশ করেছে এবং তার ফযীলত ও মাহাত্ম্য বর্ণনাপূর্বক তা অর্জনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। অপরদিকে যেগুলো মন্দ, তা বর্জন ও দমনের হুকুম দিয়েছে এবং তার ক্ষতি ও কদর্যতার উল্লেখপূর্বক তা পরিহারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। আলোচ্য হাদীছে বিশেষ কয়েকটি মন্দ চরিত্রের উল্লেখ আছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেগুলোর প্রতি নিষেধাজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ কেউ যাতে সেসব চরিত্রপ্রসূত আচরণ কারও সঙ্গে না করে, সে ব্যাপারে তাগিদ করেছেন।
পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণের অবৈধতা
ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণও একটি মন্দ স্বভাব। এটাও হারাম ও কঠিন পাপ। ইসলাম যেসকল মন্দ স্বভাব পরিহারের তাগিদ করেছে, ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণও তার একটি। যেমন আলোচ্য হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ولا تباغضوا 'তোমরা ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। تباغضوا ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি بغض থেকে। এর অর্থ ঘৃণা করা। কাউকে ঘৃণা করা যদি আল্লাহ তাআলার জন্য না হয়, তবে তা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলার জন্য ঘৃণা করার অর্থ কেউ যদি আল্লাহ তাআলার দীন ও শরীআতের বিরোধিতা করে, তবে সে বিরুদ্ধাচরণের জন্য তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করা। এটা ঈমানের অঙ্গ। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيْمَانَ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য দান করে এবং আল্লাহর জন্য দান করা হতে বিরত থাকে, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করল।[৭]
কিন্তু ঘৃণা করা যদি আল্লাহর জন্য না হয়, তবে তা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি হল এক মুসলিম অপর মুসলিমকে ভালোবাসবে, ব্যক্তিগত কোনও কারণে বা পার্থিব কোনও স্বার্থে তাকে ঘৃণা করবে না। এমনকি দীনী বিষয়েও যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে শরীআতবিরোধিতা প্রমাণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ঘৃণার কোনও সুযোগ নেই। কাজেই মাযহাবী মতভেদের ভিত্তিতে কাউকে ঘৃণা করা যাবে না। কেননা বিপরীত মাযহাবও কুরআন-সুন্নাহ'র ভিত্তিতেই গঠিত। এক পক্ষের কাছে যেমন দলীল আছে, তেমনি দলীল অন্য পক্ষের কাছেও আছে। এরূপ ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবকে শরীআতবিরোধী ঠাওরানো আর এর ভিত্তিতে তার অনুসারীকে ঘৃণার চোখে দেখা নিতান্তই ভুল; বরং এটা নিষিদ্ধ এর অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে সকলের সতর্ক হওয়া অতীব জরুরি। ইদানীং বিভিন্ন মহলকে এ জাতীয় ঘৃণা বিস্তারে তৎপর দেখা যায়। তাদের উচিত নিজেদের কর্মপন্থা বিচার- বিশ্লেষণ করা।
তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও
উপরের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ দান করেন- وكونوا عباد الله اخوانا ‘আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে থাকো'। অর্থাৎ তোমাদের পরস্পরের মধ্যে যে কাজ করতে নিষেধ করা হল, এগুলো ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। ভ্রাতৃত্বের দাবি এসব কাজে লিপ্ত না হওয়া। কাজেই তোমরা যদি ভাই ভাই হয়ে থাক, তবে কিছুতেই তোমাদের দ্বারা এগুলো সংঘটিত হবে না। অথবা এর অর্থ- তোমরা যদি এ কাজ বর্জন কর, তবে তোমাদের মধ্যে সত্যিকার ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তোমরা এগুলো পরিহার করে চলো।
বস্তুত ইসলামে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি অত্যন্ত মূল্যবান। এটা আল্লাহ তাআলার এক বিরাট নিআমতও বটে। আল্লাহ তাআলা সেই নিআমতের কথা স্মরণ করিয়ে ইরশাদ করেন-
وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا
‘আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ রাখ। একটা সময় ছিল, যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহকে জুড়ে দিলেন। ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ১০৩
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব যখন আল্লাহ তাআলার এক বিরাট দান ও অতি বড় নিআমত, তাই এটা রক্ষা করাও অতি জরুরি। যেসব কর্মকাণ্ড দ্বারা এটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিছুতেই তাতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কারও কোনও আচরণে দু'জনের সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হলে অন্যদের কর্তব্য তাদের মধ্যে মিলমিশ করে দেওয়া, যাতে অসদ্ভাব স্থায়ী হতে না পারে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ
‘প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুসলিম ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দু ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহকে ভয় কর। সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ১০
হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِم : لا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ، وَلَا يَخْذلُهُ، التَّقْوَى هَاهُنَا وَيُشِيرُ إِلى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِى مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِم عَلَى الْمُسْلِم حَرَامٌ، دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ
‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করে না, তাকে তুচ্ছ গণ্য করে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেয় না। তাকওয়া এখানে- তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথাটি তিনবার বললেন। কোনও ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে। এক মুসলিমের সবকিছু অপর মুসলিমের প্রতি হারাম- তার রক্ত, তার সম্পদ ও তার ইজ্জত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরূক রাখার প্রচেষ্ট অব্যাহত রাখা চাই। এর দ্বারা হিংসা বিদ্বেষমূলক কাজকর্ম থেকে বেঁচে থাকা যায়।
খ. ইসলামে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব কর্মকাণ্ড দ্বারা তা ক্ষুণ্ণ হয় তা পরিহার করে চলা অবশ্য কর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
