আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৪৭- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল
হাদীস নং: ৬২৬২
৫৬. মিসরবাসীদের ব্যাপারে নবী (ﷺ) এর ওসীয়্যত
৬২৬২। আবু তাহির ও হারুন ইবনে সাঈদ আইলী (রাহঃ) ......... আবু যর গিফারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ অচিরেই তোমরা এমন একটি দেশ জয় করবে, যেখানে কীরাতের প্রচলন রয়েছে। তোমরা সেখানকার অধিবাসীদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। কেননা (তোমাদের উপর) তাদের প্রতি রয়েছে যিম্মাদারী দায়বোধ এবং আত্মীয়তা। যদি তোমরা সেখানে দু’ ব্যক্তিকে একখানি ইটের জায়গার ব্যপারে ঝগড়া করতে দেখ তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়বে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি (আবু যর) সূরাহবীল ইবনে হাসানার দুই পুত্র রাবী’আ ও আব্দুর রহমানের নিকট দিয়ে যাবার সময় একটি ইটের জায়গা নিয়ে ঝগড়া করতে দেখলেন। তখন তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লেন।
باب وَصِيَّةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِأَهْلِ مِصْرَ
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي حَرْمَلَةُ، ح وَحَدَّثَنِي هَارُونُ بْنُ، سَعِيدٍ الأَيْلِيُّ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، حَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ، - وَهُوَ ابْنُ عِمْرَانَ التُّجِيبِيُّ - عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، بْنِ شُمَاسَةَ الْمَهْرِيِّ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا ذَرٍّ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ أَرْضًا يُذْكَرُ فِيهَا الْقِيرَاطُ فَاسْتَوْصُوا بِأَهْلِهَا خَيْرًا فَإِنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا فَإِذَا رَأَيْتُمْ رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلاَنِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ فَاخْرُجْ مِنْهَا " . قَالَ فَمَرَّ بِرَبِيعَةَ وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ ابْنَىْ شُرَحْبِيلَ بْنِ حَسَنَةَ يَتَنَازَعَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ فَخَرَجَ مِنْهَا .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি দেশ জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যে দেশে ‘কীরাত’ শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হয়। অপর এক বর্ণনায় দেশটির নাম বলা হয়েছে মিশর।
‘কীরাত’ শব্দটি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এক অর্থ অনুযায়ী এটি একটি পরিমাপের নাম, যা দিরহাম ও দীনারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এক কীরাত আধা দানিকের সমান। এক দানিক = ৭.২ রতি = ৮৭৪.৮ মি.গ্রা.। অঞ্চলভেদে এর মধ্যে পার্থক্যও আছে। কোনও কোনও অঞ্চলে এক কীরাত = ১.৮ রতি = ২১৮.৭ মি.গ্রা.।
‘কীরাত’ শব্দটির আরেক অর্থ হচ্ছে উৎসব। এ হাদীছটির এক বর্ণনাকারী হারমালা রহ. বলেন, মিশরের কিবতী সম্প্রদায় তাদের উৎসবসমূহকে ‘কীরাত’ নামে অভিহিত করে থাকে। এছাড়া তারা তাদের যে-কোনও জনসমাবেশের জন্যও শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।৯৮
এ হাদীছটি যেহেতু মিশর সম্পর্কিত, তাই খুবসম্ভব এ হাদীছে কীরাত দ্বারা এ দ্বিতীয় অর্থই বুঝানো উদ্দেশ্য।
মিশর লোহিত সাগরের পশ্চিমে ও ভূমধ্য সাগরের দক্ষিণে অবস্থিত আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত প্রাচীন সভ্যতার একটি দেশ। ফিরআউনের শাসনামলে (খ্রীষ্টপূর্ব ১২৩৫-১২৯০) এ দেশে হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে নবী করে পাঠানো হয়েছিল। তারও আগে খ্রীষ্টপূর্ব ১৭ শতাব্দিতে হযরত ইয়ুসুফ আলাইহিস সালামকে শৈশবে এ দেশে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি এ দেশের শাসনক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। তাঁর থেকে এ দেশে বনী ইসরাঈলের বংশবিস্তার হয়।
বলা হয়ে থাকে, দেশটির নাম হয়েছে এ দেশের সর্বপ্রথম বাসিন্দা ‘মিসর’-এর নামে। তিনি হযরত নূহ আলাইহিস সালামের পুত্র সামের পৌত্র।
হযরত উমর রাযি.-এর আমলে এ ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ হয়। হিজরী ১৯ সনে হযরত আমর ইবনুল আস রাযি. তিন হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী নিয়ে এ দেশে অভিযান চালান। তিনি খুব সহজেই এক অঞ্চলের পর আরেক অঞ্চল জয় করে সামনে অগ্রসর হতে থাকেন। তারপর হযরত যুবায়র ইবনুল আউওয়াম রাযি.-এর নেতৃত্বে আরও দশ হাজার সৈন্যের এক সাহায্যকারী বাহিনী তাঁর সঙ্গে যোগদান করে। তারপর তাদের সম্মিলিত বাহিনীর প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ মিশর ইসলামী খেলাফতের আওতায় চলে আসে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে অসিয়ত করলেন যে, মিশর জয় হলে মুসলিমগণ যেন সেখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। বিশেষভাবে তাদের প্রতি সদাচরণের অসিয়ত করার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন-
فان لهم ذمة ورحما (কেননা তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ অধিকার ও আত্মীয়তা)। ذمة অর্থ দায়িত্ব, মর্যাদা, অধিকার। এস্থলে ‘বিশেষ অধিকার' বুঝানো হয়েছে। সে বিশেষ অধিকারের ব্যাখ্যা করা হয়েছে পরবর্তী শব্দ رحم দ্বারা। رحم মানে আত্মীয়তা।
ইমাম নববী রহ. উলামায়ে কেরামের উদ্ধৃতিতে সে আত্মীয়তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই যে, হযরত ইসমা'ঈল আলাইহিস সালামের মা হাজার (হাজেরা) আলাইহাস সালাম ছিলেন মিশরের মেয়ে। তার মানে মিশর ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মামার দেশ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধর। কাজেই মিশরবাসীদের সঙ্গে তাঁর ঊর্ধ্বতন দাদীর দিক থেকে আত্মীয়তা রয়েছে। এদিকে ইঙ্গিত করেই তিনি বলেন যে, মিশরবাসীদের জন্য আত্মীয়তার বিশেষ অধিকার রয়েছে। সুতরাং মিশর জয়ের পর তোমরা সে দেশের অধিবাসীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে।
অন্য বর্ণনায় আছে- ذمة وصهرا (বিশেষ অধিকার ও বৈবাহিক আত্মীয়তা)। صهر বলা হয় স্ত্রীর দিকের আত্মীয়বর্গকে। মিশরবাসীদের সঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এরকম এক সম্পর্কও ছিল। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র ইবরাহীমের মা মারিয়া রাযি. ছিলেন মিশরের কিবতী বংশোদ্ভূত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিশরের বাদশা মুকাউকিসের কাছে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াতীপত্র পাঠালে মুকাউকিস ইসলাম গ্রহণ না করলেও অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে সে পত্র গ্রহণ করেছিলেন। তিনি শ্রদ্ধা ও ভক্তির নিদর্শনস্বরূপ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাঁর দূত মারফত বেশ কিছু উপহার- উপঢৌকনও পাঠিয়েছিলেন। সে উপহারসামগ্রীর মধ্যে ছিল মারিয়া ও সীরীন নামের দুই বোনও। হযরত মারিয়া রাযি.-কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত সম্মানজনকভাবে নিজের কাছেই রেখে দেন। সীরীন রাযি.-কে গ্রহণ করেছিলেন হযরত হাসান বিন ছাবিত আনসারী রাযি.। এই হযরত মারিয়া রাযি.-এর গর্ভেই হযরত ইবরাহীম রাযি.-এর জন্ম। এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিশরবাসীকে তাঁর শ্বশুর দিকের আত্মীয় সাব্যস্ত করেছেন আর সে আত্মীয়তার সুবাদেই তাদের বিশেষ অধিকার দান ও তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার উপদেশ দিয়েছেন।
প্রকাশ থাকে যে, হযরত ইবরাহীম রাযি. দুধপানের বয়সেই ইন্তিকাল করেন। তাঁর ইন্তিকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোকার্ত হয়ে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, হে ইবরাহীম, তোমার বিরহে আমরা শোকাগ্রস্ত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী একটি মু'জিযা। তা সত্য হয়ে থাকে এবং তা দ্বারা নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণিত হয়। মিশর জয়ের ভবিষ্যদ্বাণীটিও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি মু'জিযা, যা সত্য হয়েছিল।
খ. রাষ্ট্রপ্রধানের কর্তব্য সেনাবাহিনীকে অধিকৃত ভূমির জনগণের সঙ্গে সদাচরণের আদেশ করা।
গ. ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ বা নারীর সূত্রে যারা আত্মীয়, তাদের প্রতিও আত্মীয়তাসুলভ সদাচরণ করা চাই ।
ঘ. স্ত্রীর দিক থেকে যারা আত্মীয়, তাদেরও আত্মীয়তা সম্পর্কিত অধিকার থাকে। এ ব্যাপারেও সচেতন থাকা বাঞ্ছনীয়।
৯৮. সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৬৬৭৬
‘কীরাত’ শব্দটি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এক অর্থ অনুযায়ী এটি একটি পরিমাপের নাম, যা দিরহাম ও দীনারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এক কীরাত আধা দানিকের সমান। এক দানিক = ৭.২ রতি = ৮৭৪.৮ মি.গ্রা.। অঞ্চলভেদে এর মধ্যে পার্থক্যও আছে। কোনও কোনও অঞ্চলে এক কীরাত = ১.৮ রতি = ২১৮.৭ মি.গ্রা.।
‘কীরাত’ শব্দটির আরেক অর্থ হচ্ছে উৎসব। এ হাদীছটির এক বর্ণনাকারী হারমালা রহ. বলেন, মিশরের কিবতী সম্প্রদায় তাদের উৎসবসমূহকে ‘কীরাত’ নামে অভিহিত করে থাকে। এছাড়া তারা তাদের যে-কোনও জনসমাবেশের জন্যও শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।৯৮
এ হাদীছটি যেহেতু মিশর সম্পর্কিত, তাই খুবসম্ভব এ হাদীছে কীরাত দ্বারা এ দ্বিতীয় অর্থই বুঝানো উদ্দেশ্য।
মিশর লোহিত সাগরের পশ্চিমে ও ভূমধ্য সাগরের দক্ষিণে অবস্থিত আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত প্রাচীন সভ্যতার একটি দেশ। ফিরআউনের শাসনামলে (খ্রীষ্টপূর্ব ১২৩৫-১২৯০) এ দেশে হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে নবী করে পাঠানো হয়েছিল। তারও আগে খ্রীষ্টপূর্ব ১৭ শতাব্দিতে হযরত ইয়ুসুফ আলাইহিস সালামকে শৈশবে এ দেশে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি এ দেশের শাসনক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। তাঁর থেকে এ দেশে বনী ইসরাঈলের বংশবিস্তার হয়।
বলা হয়ে থাকে, দেশটির নাম হয়েছে এ দেশের সর্বপ্রথম বাসিন্দা ‘মিসর’-এর নামে। তিনি হযরত নূহ আলাইহিস সালামের পুত্র সামের পৌত্র।
হযরত উমর রাযি.-এর আমলে এ ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ হয়। হিজরী ১৯ সনে হযরত আমর ইবনুল আস রাযি. তিন হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী নিয়ে এ দেশে অভিযান চালান। তিনি খুব সহজেই এক অঞ্চলের পর আরেক অঞ্চল জয় করে সামনে অগ্রসর হতে থাকেন। তারপর হযরত যুবায়র ইবনুল আউওয়াম রাযি.-এর নেতৃত্বে আরও দশ হাজার সৈন্যের এক সাহায্যকারী বাহিনী তাঁর সঙ্গে যোগদান করে। তারপর তাদের সম্মিলিত বাহিনীর প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ মিশর ইসলামী খেলাফতের আওতায় চলে আসে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে অসিয়ত করলেন যে, মিশর জয় হলে মুসলিমগণ যেন সেখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। বিশেষভাবে তাদের প্রতি সদাচরণের অসিয়ত করার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন-
فان لهم ذمة ورحما (কেননা তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ অধিকার ও আত্মীয়তা)। ذمة অর্থ দায়িত্ব, মর্যাদা, অধিকার। এস্থলে ‘বিশেষ অধিকার' বুঝানো হয়েছে। সে বিশেষ অধিকারের ব্যাখ্যা করা হয়েছে পরবর্তী শব্দ رحم দ্বারা। رحم মানে আত্মীয়তা।
ইমাম নববী রহ. উলামায়ে কেরামের উদ্ধৃতিতে সে আত্মীয়তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই যে, হযরত ইসমা'ঈল আলাইহিস সালামের মা হাজার (হাজেরা) আলাইহাস সালাম ছিলেন মিশরের মেয়ে। তার মানে মিশর ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মামার দেশ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধর। কাজেই মিশরবাসীদের সঙ্গে তাঁর ঊর্ধ্বতন দাদীর দিক থেকে আত্মীয়তা রয়েছে। এদিকে ইঙ্গিত করেই তিনি বলেন যে, মিশরবাসীদের জন্য আত্মীয়তার বিশেষ অধিকার রয়েছে। সুতরাং মিশর জয়ের পর তোমরা সে দেশের অধিবাসীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে।
অন্য বর্ণনায় আছে- ذمة وصهرا (বিশেষ অধিকার ও বৈবাহিক আত্মীয়তা)। صهر বলা হয় স্ত্রীর দিকের আত্মীয়বর্গকে। মিশরবাসীদের সঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এরকম এক সম্পর্কও ছিল। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র ইবরাহীমের মা মারিয়া রাযি. ছিলেন মিশরের কিবতী বংশোদ্ভূত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিশরের বাদশা মুকাউকিসের কাছে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াতীপত্র পাঠালে মুকাউকিস ইসলাম গ্রহণ না করলেও অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে সে পত্র গ্রহণ করেছিলেন। তিনি শ্রদ্ধা ও ভক্তির নিদর্শনস্বরূপ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাঁর দূত মারফত বেশ কিছু উপহার- উপঢৌকনও পাঠিয়েছিলেন। সে উপহারসামগ্রীর মধ্যে ছিল মারিয়া ও সীরীন নামের দুই বোনও। হযরত মারিয়া রাযি.-কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত সম্মানজনকভাবে নিজের কাছেই রেখে দেন। সীরীন রাযি.-কে গ্রহণ করেছিলেন হযরত হাসান বিন ছাবিত আনসারী রাযি.। এই হযরত মারিয়া রাযি.-এর গর্ভেই হযরত ইবরাহীম রাযি.-এর জন্ম। এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিশরবাসীকে তাঁর শ্বশুর দিকের আত্মীয় সাব্যস্ত করেছেন আর সে আত্মীয়তার সুবাদেই তাদের বিশেষ অধিকার দান ও তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার উপদেশ দিয়েছেন।
প্রকাশ থাকে যে, হযরত ইবরাহীম রাযি. দুধপানের বয়সেই ইন্তিকাল করেন। তাঁর ইন্তিকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোকার্ত হয়ে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, হে ইবরাহীম, তোমার বিরহে আমরা শোকাগ্রস্ত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী একটি মু'জিযা। তা সত্য হয়ে থাকে এবং তা দ্বারা নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণিত হয়। মিশর জয়ের ভবিষ্যদ্বাণীটিও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি মু'জিযা, যা সত্য হয়েছিল।
খ. রাষ্ট্রপ্রধানের কর্তব্য সেনাবাহিনীকে অধিকৃত ভূমির জনগণের সঙ্গে সদাচরণের আদেশ করা।
গ. ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ বা নারীর সূত্রে যারা আত্মীয়, তাদের প্রতিও আত্মীয়তাসুলভ সদাচরণ করা চাই ।
ঘ. স্ত্রীর দিক থেকে যারা আত্মীয়, তাদেরও আত্মীয়তা সম্পর্কিত অধিকার থাকে। এ ব্যাপারেও সচেতন থাকা বাঞ্ছনীয়।
৯৮. সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৬৬৭৬
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: