আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৭- পানাহার ও পানীয় দ্রব্যাদীর বিবরণ

হাদীস নং: ৫০৮৯
১২. পানাহারের আদবসমূহ ও তার বিধান
৫০৮৯। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা ও আবু কুরায়ব (রাহঃ) ......... হুযাইফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন যিয়াফত উপলক্ষে আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে উপস্থিত হতাম, যতক্ষণ তিনি শুরু না করতেন ততক্ষণ আমরা নিজেদের হাত (খাবারে) রাখতাম না। একবার আমরা তাঁর সঙ্গে এক খাওয়ার মজলিসে হাযির হলাম। এমন সময় একটি মেয়ে এল। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়ানো হয়েছে। সে আহারে তার হাত দিতে গেলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর একজন বেদুঈন এল। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়িত করা হচ্ছিল। তিনি তাঁর হাত ধরে ফেললেন।

তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা না হলে শয়তান সে খাদ্যকে হালাল করে ফেলে। আর সে এ বালিকাটিকে নিয়ে এসেছে যাতে তার দ্বারা হালাল করতে পারে। তারপর আমি তার হাত ধরে ফেললে সে এ বেদুঈনকে নিয়ে এসেছে যাতে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে। আমি তারও হাত ধরে ফেলেছি। সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, নিঃসন্দেহে তার (শয়তানের) হাত বালিকার (এ দু’জনের হাতের সঙ্গে) আমার হাতের মুঠোয় রয়েছে।
باب آدَابِ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ وَأَحْكَامِهِمَا
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ خَيْثَمَةَ، عَنْ أَبِي حُذَيْفَةَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا لَمْ نَضَعْ أَيْدِيَنَا حَتَّى يَبْدَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَيَضَعَ يَدَهُ وَإِنَّا حَضَرْنَا مَعَهُ مَرَّةً طَعَامًا فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّهَا تُدْفَعُ فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهَا ثُمَّ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَأَخَذَ بِيَدِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لاَ يُذْكَرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ جَاءَ بِهَذِهِ الْجَارِيَةِ لِيَسْتَحِلَّ بِهَا فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا فَجَاءَ بِهَذَا الأَعْرَابِيِّ لِيَسْتَحِلَّ بِهِ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ يَدَهُ فِي يَدِي مَعَ يَدِهَا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সাহাবায়ে কেরামের নবীপ্রেম ছিল অসাধারণ। তাদের সকল কাজকর্মে নবীপ্রেমের নিদর্শন মেলে। তারা প্রতিটি বিষয়ে তাঁর আদব রক্ষা করতেন। এমনকি খাবার বেলায়ও। যেমনটা এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খানা খাওয়ার সময় তিনি নিজে খাওয়া শুরু না করা পর্যন্ত তারা খাবারে হাত লাগাতেন না। এটা আদব। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ
‘হে মুমিনগণ! (কোনও বিষয়ে) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের থেকে আগ বেড়ে যেয়ো না।’ (সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ১)

এ হুকুম সাধারণভাবে সকল বিষয়ের জন্য। খানা খাওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। তাই খানা খাওয়ার সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রে হাত না রাখা পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরাম হাত রাখতেন না।

একদিন এক বালিকা দ্রুত ছুটে আসছিল, যেন পেছন থেকে কেউ তাকে তাড়াচ্ছে। সে এসেই বিসমিল্লাহ না বলে পাত্রে হাত দিতে যাচ্ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চট করে তার হাত ধরে ফেলেন। একই কাজ করতে যাচ্ছিল এক বেদুঈন। তিনি তারও হাত ধরে ফেলেন। তারপর ইরশাদ করেন-
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ الله تَعَالَى عَلَيْهِ (খাদ্যে আল্লাহর নাম না নেওয়া হলে শয়তান তা হালাল করে নেয়)। অর্থাৎ সে খাদ্যে শরীক হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে একইসঙ্গে সেও সেই খাবার খেতে থাকে। ফলে খাবারের বরকত নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই খাবার নানা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তো শয়তান নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা খাবারে শরীক হতে চাচ্ছিল। এ লক্ষ্যেই সে প্রথমে বালিকাটিকে নিয়ে আসে, যাতে সে বিসমিল্লাহ না বলে খেতে শুরু করে আর এ অবকাশে শয়তানও তাতে শরীক হয়ে যায়। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালিকাটির হাত ধরে ফেলায় শয়তানের ইচ্ছা পূরণ হল না। সে ফের চেষ্টা করল। এবার বেদুঈনকে নিয়ে আসল। কিন্তু বেদুঈনও যখন বিসমিল্লাহ ছাড়া খেতে যাচ্ছিল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে তার হাতও ধরে ফেললেন। এভাবে শয়তানের দ্বিতীয়বারের চেষ্টাও ব্যর্থ হল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানকে তৃতীয়বার চেষ্টা করার সুযোগ দিলেন না। তিনি তার হাতও ধরে ফেললেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন-
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ يَدَهُ فِي يَدِه مَعَ يَدَيْهِمَا (এ দুজনের হাতের সঙ্গে তার হাতও আমার হাতের মধ্যে রয়েছে)। এভাবে শয়তানের হাত ধরে ফেলার ক্ষমতা আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়েছিলেন। শয়তান তাঁর বিরুদ্ধে চেষ্টা করে কখনও সফল হতে পারত না। তিনি তার চেষ্টা নস্যাৎ করে দিতেন। শয়তান আগুনের তৈরি। তারও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে। কিন্তু তা সূক্ষ্ম। সাধারণভাবে মানুষ দেখতে পায় না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা'আলা বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ফলে তিনি দেখতে পেতেন এবং তার বিরদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারতেন। এ সম্পর্কে হাদীছে বিভিন্ন ঘটনা আছে। কাজেই তিনি যে শয়তানের হাত পাকড়াও করেছেন, অথচ অন্য কেউ তা দেখতে পায়নি, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বড়দের সঙ্গে বসে খাওয়ার সময় তাদের আগে নিজে খাওয়া শুরু করতে নেই।

খ. খাওয়ার শুরুতে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলতে হবে।

গ. বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া হলে শয়তান থেকে খাবারের হেফাজত হয়। ফলে সে খাবার ক্ষতির কারণ হয় না এবং তাতে বরকত হয়।

ঘ. বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান খাওয়ায় শরীক হয়ে যায়। ফলে খাবারের বরকত নষ্ট হয়।

ঙ. আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শয়তানের উপর আধিপত্য বিস্তার করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ফলে শয়তান তাঁর কোনও ক্ষতি করতে পারত না। বরং তিনিই শয়তানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হতেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫০৮৯ | মুসলিম বাংলা