আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৭- পানাহার ও পানীয় দ্রব্যাদীর বিবরণ

হাদীস নং: ৫০৮৮
১১. পাত্র আচ্ছাদিত করে রাখা অর্থাৎ ঢেকে রাখা, মশকের মুখ বন্ধ করা, দরজা বন্ধ করা ও এ সময়ে আল্লাহর নাম লওয়া, শয়নকালে বাতির আগুন নিভিয়ে দেয়া এবং মাগরিবের পর ছেলেমেয়ে ও গৃহপালিত জন্তুগুলোকে আটকে রাখা মুস্তাহাব
৫০৮৮। সাঈদ ইবনে আমর আশআরী, আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে নুমাইর, আবু আমির আশ’আরী ও আবু কুরায়ব (রাহঃ) ......... আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, (একবার) রাতে মদীনায় এক বাড়িতে আগুন লেগে তা পুড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে তাদের অবস্থা সম্বন্ধে অবহিত করা হলে তিনি বললেনঃ এ আগুন তোমাদের শক্র। সুতরাং তোমরা শোয়ার সময় তা নিভিয়ে ফেলবে।
باب استحباب تخمير الإِنَاءِ وَإِيكَاءِ السِّقَاءِ وَإِغْلاَقِ الأَبْوَابِ وَذِكْرِ اسْمِ اللَّهِ عَلَيْهَا وَإِطْفَاءِ السِّرَاجِ وَالنَّارِ عِنْدَ النَّوْمِ وَكَفِّ الصِّبْيَانِ وَالْمَوَاشِي بَعْدَ الْمَغْرِبِ
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عَمْرٍو الأَشْعَثِيُّ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ وَأَبُو عَامِرٍ الأَشْعَرِيُّ وَأَبُو كُرَيْبٍ - وَاللَّفْظُ لأَبِي عَامِرٍ - قَالُوا حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ بُرَيْدٍ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ احْتَرَقَ بَيْتٌ عَلَى أَهْلِهِ بِالْمَدِينَةِ مِنَ اللَّيْلِ فَلَمَّا حُدِّثَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِشَأْنِهِمْ قَالَ " إِنَّ هَذِهِ النَّارَ إِنَّمَا هِيَ عَدُوٌّ لَكُمْ فَإِذَا نِمْتُمْ فَأَطْفِئُوهَا عَنْكُمْ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে ঘুমের একটি আদব শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, ঘরে যদি প্রদীপ জ্বালানো থাকে অথবা চুলার আগুন জ্বালানো থাকে, তবে ঘুমানোর আগে তা অবশ্যই নিভিয়ে রাখবে। কেননা ঘুমের অবস্থায় আগুন জ্বলতে থাকলে তা অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেক বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এভাবেও ঘটেছে বলে জানা যায়। এ হাদীছেও সেরকম একটি ঘটনার কথা বর্ণিত হয়েছে। মদীনা মুনাওয়ারার একটি বাড়ির লোকজন রাতের বেলা আগুন জ্বালিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কোনওভাবে সে আগুন ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে ঘরটিও পুড়ে যায় এবং পরিবারের লোকজনও দগ্ধিভূত হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই দয়ালু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা ঘুমানোর আগে আগুন নিভিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে আগুনকে মানুষের শত্রু সাব্যস্ত করেছেন। তা করেছেন এ কারণে যে, শত্রুর মতই আগুন মানুষের জান-মাল ক্ষতিগ্রস্ত করে। তার মানে এ নয় যে, আগুন মানুষের কোনও উপকারে আসে না। প্রকৃতপক্ষে আগুন মানুষের জন্য অতি বড় এক নি'আমতও বটে। এর মধ্যে মানুষের বহুবিধ উপকার রয়েছে। তাই তো কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা একটি বড় নি'আমত হিসেবে আগুনের কথা উল্লেখ করেছেন।

প্রশ্ন আসে, একটি উপকারী নি'আমত শত্রুরূপে গণ্য হয় কিভাবে? বস্তুত তা হয় মানুষের অসতর্কর্তা ও অসংযত ব্যবহারের কারণে। আগুন যদি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা হয়, তবে তা দ্বারা প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়। আবার এর অসতর্ক ব্যবহার সর্বনাশেরও কারণ হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা ঘুমের আদব জানা গেল যে, ঘুমানোর আগে জ্বলন্ত আগুন নিভিয়ে রাখা চাই।

খ. আরও শিক্ষা পাওয়া গেল, যে বস্তু দ্বারা কোনওরকম অনিষ্ট ও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, সে ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন অবশ্যকর্তব্য।

গ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি কতটা দরদী ছিলেন, সে ব্যাপারেও এ হাদীছ দ্বারা ধারণা পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫০৮৮ | মুসলিম বাংলা