আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৩৪- ইসলামী রাষ্ট্রনীতির অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৬২৯
১২. প্রাপ্য অধিকার না দিলেও শাসকের অনুগত থাকা
৪৬২৯। মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ......... ওয়াইল হাযরামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালামা ইবনে ইয়াযিদ আল জু’ফী (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে এ মর্মে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর নবী! যদি আমাদের উপর এমন শাসকেরা ক্ষমতাবান হয় যে, তারা তাদের হক তো আমাদের কাছে দাবী করে কিন্তু আমাদের হক তারা দেয়না। এমতাবস্থায় আপনি আমাদেরকে কি করতে বলেন? তিনি তার উত্তর এড়িয়ে গেলেন।
তিনি আবার তাকে প্রশ্ন করলেন, আর তিনি এড়িয়ে গেলেন। এভাবে প্রশ্নকারী দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারও একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন আশআস ইবনে কায়েস (রাযিঃ) তাকে (সালামাকে) টান দিলেন এবং বললেন, তোমরা শুনবে এবং মানবে। কেননা তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে আর তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে।
তিনি আবার তাকে প্রশ্ন করলেন, আর তিনি এড়িয়ে গেলেন। এভাবে প্রশ্নকারী দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারও একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন আশআস ইবনে কায়েস (রাযিঃ) তাকে (সালামাকে) টান দিলেন এবং বললেন, তোমরা শুনবে এবং মানবে। কেননা তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে আর তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে।
باب فِي طَاعَةِ الأُمَرَاءِ وَإِنْ مَنَعُوا الْحُقُوقَ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَمُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ الْحَضْرَمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَأَلَ سَلَمَةُ بْنُ يَزِيدَ الْجُعْفِيُّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ وَيَمْنَعُونَا حَقَّنَا فَمَا تَأْمُرُنَا فَأَعْرَضَ عَنْهُ ثُمَّ سَأَلَهُ فَأَعْرَضَ عَنْهُ ثُمَّ سَأَلَهُ فِي الثَّانِيَةِ أَوْ فِي الثَّالِثَةِ فَجَذَبَهُ الأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ وَقَالَ " اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কোনও শাসক যদি জনগণের হক আদায় না করে, কিন্তু তাদের কাছে নিজের হক দাবি করে, সে ক্ষেত্রে করণীয় কী, সে সম্পর্কেই এ হাদীছ। শাসকের হক ও অধিকার হল জনগণের আনুগত্য, জিহাদ ও ওইসকল কাজ, যা তাদের সহযোগিতা ছাড়া করা সম্ভব নয়, তাতে তাদের সক্রিয় সহযোগিতা। আর জনগণের হক হল শাসকের ন্যায় ও ইনসাফসম্মত শাসন, তাদের জান-মালের নিরাপত্তাবিধান, তাদের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন ও তাদের মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির ব্যবস্থাকরণ, আল্লাহর ভূমিতে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা এবং দীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা।
‘আমীর’ শব্দটির অর্থ ব্যাপক। আঞ্চলিক সর্বনিম্ন শাসনকর্তা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শাসক পর্যন্ত সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। জনগণের কর্তব্য এদের সকলেরই আনুগত্য করা। এখন কোনও শাসক-প্রশাসক যদি জনগণের হক আদায় না করে, কিন্তু নিজেদের হক পুরোপুরি পেতে চায়, সে ক্ষেত্রে করণীয় কী? সাহাবী হযরত সালামা ইবন ইয়াযীদ রাযি. এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে এর কোনও উত্তর দেননি। হয়তো ওহীর অপেক্ষা করেছিলেন অথবা ইচ্ছাকৃতই প্রশ্নটি উপেক্ষা করেছিলেন। তিনি সে উপেক্ষা দ্বারা সম্ভবত বোঝাতে চাচ্ছিলেন, এটা তো খুবই আপত্তিকর। এমন হবে কেন? কোনও শাসকেরই এমন করা উচিত নয়। তারপরও সাহাবী পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন। কেননা অনুচিত হলেও কোনও শাসক তো এরকম করতে পারে। সে ক্ষেত্রে জনগণের করণীয় কী, তা স্পষ্ট হওয়া উচিত। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিলেন-
اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا ، فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوْا، وَعَلَيْكُمْ مَا حملْتُمْ (তোমরা শুনবে ও মানবে। কারণ তাদের পাপভার তাদের উপর এবং তোমাদের পাপভার তোমাদের উপর)। অর্থাৎ তারা তোমাদের অধিকার আদায় না করলেও তোমরা অবশ্যই তাদের অধিকার আদায় করবে। তোমরা তাদের আনুগত্য করে যাবে। তাদের কর্তব্য তাদের দায়িত্ব পালন করা। তা পালন না করলে যে গুনাহ হবে, তা কেবল তাদের কাঁধেই চাপবে। তাদের সে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন থেকে নিষ্কৃতি পেতে পার না। তোমাদের দায়িত্ব তাদের আনুগত্য করে যাওয়া। তা করলে তোমরা ছাওয়াব পাবে, না করলে তোমরা গুনাহগার হবে। তোমাদের গুনাহের জন্য তারা দায়ী হবে না আর তাদের গুনাহের জন্যও তোমরা দায়ী হবে না। আখিরাতে প্রত্যেককেই আপন আপন কাজের হিসাব দিতে হবে। প্রত্যেককেই আপন আপন গুনাহের খেসারত দিতে হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসকের উপর যেমন জনগণের হক আছে, তেমনি জনগণের উপরও শাসকের হক আছে। প্রত্যেকের উচিত সে হক আদায়ে সচেষ্ট থাকা।
খ. শাসক যদি জনগণের হক আদায় না করে, তবুও জনগণের কর্তব্য শাসকের হক আদায় করা ও তার আনুগত্য করে যাওয়া।
গ. এক পক্ষের দায়িত্বপালনে অবহেলার কারণে অন্য পক্ষ আপন দায়িত্বপালন থেকে নিষ্কৃতি পায় না।
ঘ. প্রত্যেকের উচিত আপন দায়িত্বপালনে সচেতন থাকা। কেননা তাতে অবহেলা করলে যে গুনাহ হয়, তা কেবল তাকেই বহন করতে হবে, অন্য কেউ বহন করবে না, যেমন তাকে বহন করতে হবে না অন্যের অবহেলাজনিত গুনাহের বোঝা।
‘আমীর’ শব্দটির অর্থ ব্যাপক। আঞ্চলিক সর্বনিম্ন শাসনকর্তা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শাসক পর্যন্ত সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। জনগণের কর্তব্য এদের সকলেরই আনুগত্য করা। এখন কোনও শাসক-প্রশাসক যদি জনগণের হক আদায় না করে, কিন্তু নিজেদের হক পুরোপুরি পেতে চায়, সে ক্ষেত্রে করণীয় কী? সাহাবী হযরত সালামা ইবন ইয়াযীদ রাযি. এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে এর কোনও উত্তর দেননি। হয়তো ওহীর অপেক্ষা করেছিলেন অথবা ইচ্ছাকৃতই প্রশ্নটি উপেক্ষা করেছিলেন। তিনি সে উপেক্ষা দ্বারা সম্ভবত বোঝাতে চাচ্ছিলেন, এটা তো খুবই আপত্তিকর। এমন হবে কেন? কোনও শাসকেরই এমন করা উচিত নয়। তারপরও সাহাবী পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন। কেননা অনুচিত হলেও কোনও শাসক তো এরকম করতে পারে। সে ক্ষেত্রে জনগণের করণীয় কী, তা স্পষ্ট হওয়া উচিত। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিলেন-
اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا ، فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوْا، وَعَلَيْكُمْ مَا حملْتُمْ (তোমরা শুনবে ও মানবে। কারণ তাদের পাপভার তাদের উপর এবং তোমাদের পাপভার তোমাদের উপর)। অর্থাৎ তারা তোমাদের অধিকার আদায় না করলেও তোমরা অবশ্যই তাদের অধিকার আদায় করবে। তোমরা তাদের আনুগত্য করে যাবে। তাদের কর্তব্য তাদের দায়িত্ব পালন করা। তা পালন না করলে যে গুনাহ হবে, তা কেবল তাদের কাঁধেই চাপবে। তাদের সে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন থেকে নিষ্কৃতি পেতে পার না। তোমাদের দায়িত্ব তাদের আনুগত্য করে যাওয়া। তা করলে তোমরা ছাওয়াব পাবে, না করলে তোমরা গুনাহগার হবে। তোমাদের গুনাহের জন্য তারা দায়ী হবে না আর তাদের গুনাহের জন্যও তোমরা দায়ী হবে না। আখিরাতে প্রত্যেককেই আপন আপন কাজের হিসাব দিতে হবে। প্রত্যেককেই আপন আপন গুনাহের খেসারত দিতে হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসকের উপর যেমন জনগণের হক আছে, তেমনি জনগণের উপরও শাসকের হক আছে। প্রত্যেকের উচিত সে হক আদায়ে সচেষ্ট থাকা।
খ. শাসক যদি জনগণের হক আদায় না করে, তবুও জনগণের কর্তব্য শাসকের হক আদায় করা ও তার আনুগত্য করে যাওয়া।
গ. এক পক্ষের দায়িত্বপালনে অবহেলার কারণে অন্য পক্ষ আপন দায়িত্বপালন থেকে নিষ্কৃতি পায় না।
ঘ. প্রত্যেকের উচিত আপন দায়িত্বপালনে সচেতন থাকা। কেননা তাতে অবহেলা করলে যে গুনাহ হয়, তা কেবল তাকেই বহন করতে হবে, অন্য কেউ বহন করবে না, যেমন তাকে বহন করতে হবে না অন্যের অবহেলাজনিত গুনাহের বোঝা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: